alt

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ৩ জুলাই স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। ২০২১ সালের আগস্টে সংগঠনটি কাবুলে সরকার গঠন করার পর এই প্রথম কোনো দেশের স্বীকৃতি এল। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় মস্কো বলেছিল, তাদের এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে আসছে রাশিয়া। বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের কারণেই রাশিয়া এ কূটনীতি গ্রহণ করেছে। রাশিয়া ২০১৫-১৬ সালে তালেবানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ শুরু করে। তালেবানের এক কর্মকর্তার মতে, সংগঠনটির রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্যরা গোপনে বিভিন্ন সময় রাশিয়া সফর করেছেন।

তালেবান আফগানিস্তানে সরকার গঠনের পর থেকে রাশিয়া তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। পাশাপাশি শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ ও মানবাধিকার রক্ষায় পরামর্শ দিয়ে আসছে। মূলত তালেবান সরকারকে মূলধারায় নিয়ে আসা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের পথ প্রশস্ত করতেই এমনটি করেছে রাশিয়া। কাবুলে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান বলেন, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার ফল, যেখানে দেশটি প্রথমে ১২ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর ‘মস্কো ফরম্যাট’ ফোরাম চালু করে তাতে তালেবানকে অন্তর্ভুক্ত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়।

যাতে তারা নিজেরাই আইএস-খোরাসানের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি মাদক পাচার রোধ করতে পারে এবং এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়। যাতে তারা নিজেরাই আইএস-খোরাসানের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি মাদক পাচার রোধ করতে পারে এবং এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে।

রাশিয়া চায়, আফগানিস্তান যেন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ না হয়। মস্কোভিত্তিক আফগান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শের হাসান বলেন, আফগানিস্তান আবার যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তির দখলে চলে যাক, রাশিয়া তা চায় না। তিনি বলেন, সব দেশ, বিশেষ করে প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলো নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টা করছে, যেন আফগানিস্তানকে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো না যায়। হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও একই লক্ষ্যে কাজ করছে। আর বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। দেশটি তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।

শের হাসান বলেন, রাশিয়া চায় না, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করুক বা কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন করুক। কারণ, এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।তালেবান সরকার নিয়ে আপত্তি থাকলেও রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মাঝখানে থাকা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো শান্তিপূর্ণভাবে চলার পথ বেছে নিয়েছে। তারা আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক জোরদার করছে।

জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে মধ্য এশিয়ায় নিজেদের মিত্রদের সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী মতাদর্শ থেকে রক্ষা করতে চায় রাশিয়া। শের হাসান বলেন, মধ্য এশিয়ায় যদি সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শ গড়ে ওঠে এবং সেখান থেকে তা রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, তাতে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তা ঠেকাতে পারবে না।

তালেবান সরকার নিয়ে আপত্তি থাকলেও রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মাঝখানে থাকা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো শান্তিপূর্ণভাবে চলার পথ বেছে নিয়েছে। তারা আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক জোরদার করছে। আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষাবিদ ড. উবায়দুল্লাহ বুরহানির মতে, তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী কোনো ইঙ্গিত নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু।

বুরহানি বলেন, এটি রাশিয়ার একটি পরিকল্পিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে দূরে রাখা এবং মধ্য এশিয়ায় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি তালেবানের জন্য তাদের শাসনপদ্ধতি পুনর্বিবেচনার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে, বিশেষ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন, মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার মতো বিষয়।

আফগানিস্তানের সব বিরোধী দলের নেতারা একজোট হয়ে রাশিয়ার এ স্বীকৃতির কড়া নিন্দা করেছেন। তাঁরা এটিকে ‘বিপজ্জনক খেলা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তালেবানবিরোধী নেতাদের আশঙ্কা, রাশিয়ার এ স্বীকৃতির ফলে আফগানিস্তানকে ঘিরে বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী কোনো ইঙ্গিত নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু।

আহমদ শাহ মাসউদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) বলেছে, তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে তাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধী অংশীদারদের হাত আরও শক্তিশালী করা। তালেবান সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত আরও বেশি দেশের স্বীকৃতি অর্জন করা, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর ও জাতিসংঘে একটি আসন লাভ করা।

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খানের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ধাপে ধাপে সম্পর্ক উন্নয়নপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই রাশিয়ার স্বীকৃতি এসেছে। তবে তালেবানের অধীন আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এখনো একটি জটিল ভূরাজনৈতিক বিষয়। এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হলো তালেবান ও তাদের নেতারা এখনো অনেক দেশের সন্ত্রাসী তালিকায় আছেন।

ছবি

দালাই লামার উত্তরাধিকারের ওপর বেইজিংয়ের অধিকার দাবি, নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে : ম্যাখোঁ

ছবি

দুই হাজার বছর আগে ডুবে যাওয়া শহরের খোঁজ

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করল ভারত

সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, নিহত ৩০

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

ছবি

সিরিয়ায় বেদুইন সুন্নি-দ্রুজ সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩০

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, জরুরি পথে পালিয়ে বাঁচেন

ছবি

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই

ছবি

ইসরায়েলের পদক্ষেপে উদ্বেগ, গাজার পরিস্থিতি ঠেকাতে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

ছবি

গণহত্যা রুখতে ২০টির বেশি দেশের সম্মেলনে বাংলাদেশেরও অংশগ্রহণ

ছবি

শুল্কহার কমিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে চায় ভারত

ছবি

অভিযানের সময় আহত শ্রমিকের মৃত্যু, আক্রমণাত্মক কৌশল স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

যুক্তরাষ্ট্র হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে আলোচনায় বসবে ইরান

ছবি

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে চলেছে ভারত

ইউক্রেনে রাশিয়ার যে কোন কাজের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের ঘোষণা কিমের

ছবি

পুতিনকে নিয়ে ‘হতাশ’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে

মায়ানমারে সংঘাত, থাই সীমান্ত দিয়ে পালাল শতাধিক সেনা

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে ‘নীরব বিপ্লব’

ছবি

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৪ জন নিহত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ

ছবি

এয়ার ইন্ডিয়া উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ: সুইচের অপ্রত্যাশিত বন্ধ হওয়া, তদন্তে জানা গেছে

ছবি

মাত্র ১২ দিনেই যুদ্ধবিরতি’, ইরানের পাল্টা হামলায় তেল আবিবে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

১২ দিনের যুদ্ধে ৫০০ ইসরায়েলি নিহত: ইরান

ছবি

ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৮০০ ফিলিস্তিনির

মায়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় নিহত ২৩

ছবি

হুথিদের সাহায্য করে কারা, কীভাবে তারা অস্ত্র পায়?

কুর্দি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণে তুরস্কের জয় হয়েছে : এরদোয়ান

ছবি

‘বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয় এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনের’

ছবি

‘আমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করিনি’: বিধ্বস্তের আগে পাইলট

ছবি

‘মিথ্যা অভিযোগে আটক ও মানহানি’, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে আদালতে গেলেন ফিলিস্তিনি ছাত্রনেতা

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের মুখে বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্যঝুঁকিতে বয়স্করা

গাজায় যুদ্ধবিরতির বিষয়ে ‘আশাবাদী’ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ইউক্রেইনে যাবে, নেটো দেবে অর্থ: প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প

ছবি

সৌদিতে বিদেশিদের জন্য সুখবর, কিনতে পারবেন সম্পত্তি

রাশিয়ার ওপর দ্রুত নিষেধাজ্ঞা চান জেলেনস্কি

ছবি

সিন্ধুর পানিপ্রবাহ বন্ধ নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কি সংঘাত অনিবার্য

tab

আন্তর্জাতিক

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে ৩ জুলাই স্বীকৃতি দিয়েছে রাশিয়া। ২০২১ সালের আগস্টে সংগঠনটি কাবুলে সরকার গঠন করার পর এই প্রথম কোনো দেশের স্বীকৃতি এল। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার সময় মস্কো বলেছিল, তাদের এ সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা আরও জোরদার করবে। তবে তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই সংগঠনটির সঙ্গে সম্পর্কের ভিত্তি তৈরি করে আসছে রাশিয়া। বিশ্লেষকদের মতে, নিজেদের নিরাপত্তা ও ভূরাজনৈতিক উদ্বেগের কারণেই রাশিয়া এ কূটনীতি গ্রহণ করেছে। রাশিয়া ২০১৫-১৬ সালে তালেবানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে যোগাযোগ শুরু করে। তালেবানের এক কর্মকর্তার মতে, সংগঠনটির রাজনৈতিক দপ্তরের সদস্যরা গোপনে বিভিন্ন সময় রাশিয়া সফর করেছেন।

তালেবান আফগানিস্তানে সরকার গঠনের পর থেকে রাশিয়া তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে। পাশাপাশি শাসনব্যবস্থার উন্নয়ন, সন্ত্রাসবিরোধী পদক্ষেপ ও মানবাধিকার রক্ষায় পরামর্শ দিয়ে আসছে। মূলত তালেবান সরকারকে মূলধারায় নিয়ে আসা এবং আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের পথ প্রশস্ত করতেই এমনটি করেছে রাশিয়া। কাবুলে নিযুক্ত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খান বলেন, রাশিয়ার এ সিদ্ধান্ত একটি পরিকল্পিত প্রক্রিয়ার ফল, যেখানে দেশটি প্রথমে ১২ বছর ধরে তালেবানের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরপর ‘মস্কো ফরম্যাট’ ফোরাম চালু করে তাতে তালেবানকে অন্তর্ভুক্ত করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়।

যাতে তারা নিজেরাই আইএস-খোরাসানের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি মাদক পাচার রোধ করতে পারে এবং এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, রাশিয়া আফগানিস্তানে একটি স্থিতিশীল সরকার চায়। যাতে তারা নিজেরাই আইএস-খোরাসানের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে। পাশাপাশি মাদক পাচার রোধ করতে পারে এবং এশিয়ার দেশগুলোতে ধর্মীয় উগ্রবাদ ও চরমপন্থা ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে পারে।

রাশিয়া চায়, আফগানিস্তান যেন যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের পশ্চিমা মিত্রদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ না হয়। মস্কোভিত্তিক আফগান রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. শের হাসান বলেন, আফগানিস্তান আবার যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা শক্তির দখলে চলে যাক, রাশিয়া তা চায় না। তিনি বলেন, সব দেশ, বিশেষ করে প্রধান ক্ষমতাধর দেশগুলো নিজেদের জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তা রক্ষার চেষ্টা করছে, যেন আফগানিস্তানকে তাদের বিরুদ্ধে কাজে লাগানো না যায়। হাসান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রও একই লক্ষ্যে কাজ করছে। আর বিষয়টি নিয়ে রাশিয়া উদ্বিগ্ন। দেশটি তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করছে।

শের হাসান বলেন, রাশিয়া চায় না, যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করুক বা কৌশলগত অস্ত্র মোতায়েন করুক। কারণ, এটি রাশিয়ার নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে উঠবে।তালেবান সরকার নিয়ে আপত্তি থাকলেও রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মাঝখানে থাকা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো শান্তিপূর্ণভাবে চলার পথ বেছে নিয়েছে। তারা আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক জোরদার করছে।

জাতীয় নিরাপত্তাসংক্রান্ত উদ্বেগের কারণে মধ্য এশিয়ায় নিজেদের মিত্রদের সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসী মতাদর্শ থেকে রক্ষা করতে চায় রাশিয়া। শের হাসান বলেন, মধ্য এশিয়ায় যদি সন্ত্রাসবাদী মতাদর্শ গড়ে ওঠে এবং সেখান থেকে তা রাশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে, তাতে রাশিয়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং তা ঠেকাতে পারবে না।

তালেবান সরকার নিয়ে আপত্তি থাকলেও রাশিয়া ও আফগানিস্তানের মাঝখানে থাকা মধ্য এশিয়ার দেশগুলো শান্তিপূর্ণভাবে চলার পথ বেছে নিয়েছে। তারা আফগানিস্তান ও দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করতে অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত সম্পর্ক জোরদার করছে। আফগান বংশোদ্ভূত মার্কিন শিক্ষাবিদ ড. উবায়দুল্লাহ বুরহানির মতে, তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী কোনো ইঙ্গিত নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু।

বুরহানি বলেন, এটি রাশিয়ার একটি পরিকল্পিত কূটনৈতিক পদক্ষেপ, যার লক্ষ্য তালেবানকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব থেকে দূরে রাখা এবং মধ্য এশিয়ায় চরমপন্থী গোষ্ঠীগুলোর ছড়িয়ে পড়া ঠেকানো। তিনি বলেন, এ স্বীকৃতি তালেবানের জন্য তাদের শাসনপদ্ধতি পুনর্বিবেচনার একটি সুযোগ এনে দিয়েছে, বিশেষ করে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক ব্যবস্থা গঠন, মেয়েদের শিক্ষার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার ও মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার মতো বিষয়।

আফগানিস্তানের সব বিরোধী দলের নেতারা একজোট হয়ে রাশিয়ার এ স্বীকৃতির কড়া নিন্দা করেছেন। তাঁরা এটিকে ‘বিপজ্জনক খেলা’ বলে আখ্যা দিয়েছেন। তালেবানবিরোধী নেতাদের আশঙ্কা, রাশিয়ার এ স্বীকৃতির ফলে আফগানিস্তানকে ঘিরে বিশ্ব ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মধ্যে নতুন প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। তালেবান সরকারকে রাশিয়ার স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু প্রতীকী কোনো ইঙ্গিত নয়, বরং তার চেয়ে বেশি কিছু।

আহমদ শাহ মাসউদের নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (এনআরএফ) বলেছে, তালেবানকে স্বীকৃতি দেওয়া মানে তাদের সন্ত্রাসী ও অপরাধী অংশীদারদের হাত আরও শক্তিশালী করা। তালেবান সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত আরও বেশি দেশের স্বীকৃতি অর্জন করা, বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোর ও জাতিসংঘে একটি আসন লাভ করা।

পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত মনসুর আহমদ খানের মতে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ধাপে ধাপে সম্পর্ক উন্নয়নপ্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই রাশিয়ার স্বীকৃতি এসেছে। তবে তালেবানের অধীন আফগানিস্তানের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পাওয়া এখনো একটি জটিল ভূরাজনৈতিক বিষয়। এ ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা হলো তালেবান ও তাদের নেতারা এখনো অনেক দেশের সন্ত্রাসী তালিকায় আছেন।

back to top