alt

আন্তর্জাতিক

দ্রুজ কারা, তাদের রক্ষায় কেন সিরিয়ায় বোমা ফেলছে ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

ইসরায়েলি হামলার পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের কাছে ধোঁয়ার কু-লী দেখা যায় -এএফপি

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সুয়েইদা প্রদেশে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সামরিক বাহিনী প্রবেশ করে। সরকারি এই হস্তক্ষেপ সেখানে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সিরিয়ার সরকারবিরোধী ও সম্প্রদায়গত সংঘাতের মধ্যে এই পদক্ষেপে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সম্ভাবনা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। কারণ এই ঘটনার জের ধরে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

বুধবার (১৬ জুলাই) সিএনএন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সুয়েইদা শহরে দ্রুজ বাহিনী ও বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত এবং বহু আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিরিয়ার সরকার সেখানে সেনা পাঠালে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত ১৮ জন সরকারি সৈন্য প্রাণ হারায়। এই সংঘর্ষে সরকারের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি বাহিনীগুলোও অংশ নেয়, যা দ্রুজদের আরও আতঙ্কিত করে তোলে। প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা হিকমত আল-হিজরি এই পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ নিধন যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকার ও মিত্র বাহিনী সব উপায়ে দ্রুজদের নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

এদিকে সিরিয়ার সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেয় ইসরায়েল। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সামরিক যানবাহনে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েল সরকার জানায়, তাদের নিজ দেশে বসবাস করা দ্রুজ নাগরিকদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক বন্ধনের প্রকাশ হিসেবে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ভেতরেও প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার দ্রুজ বাস করেন। তবে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের হামলাকে দেশের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বিদেশি আগ্রাসনের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইসরায়েলের হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে সিরিয়া। যদিও নিহতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেনি দেশটি।

দ্রুজ কারা : দ্রুজরা একটি আরব ধর্মীয় গোষ্ঠী। পৃথিবীতে তাদের মোট সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। প্রায় এক হাজার বছর ধরে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি নিয়ে গবেষকেরা নানা তর্ক-বিতর্ক করে আসছেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুজদের পূর্বপুরুষেরা মূলত উত্তর-পূর্ব তুরস্ক, দক্ষিণ-পশ্চিম আর্মেনিয়া ও উত্তর ইরাক সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন। দ্রুজ ধর্ম ৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামি ধারার একটি আন্দোলন হিসেবে মিশরে শুরু হয়েছিল। আল-হাকিম বিআমর আল্লাহ নামে এক শাসক এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যু বা অন্তর্ধানের পর ধর্মটি মিশরে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে তত দিনে এই ধর্ম লেভান্তে অঞ্চলে (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল ও জর্ডান) ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বাদশ শতকে ইহুদি পর্যটক বেঞ্জামিন অব তুদেলা দ্রুজদের পাহাড়বাসী সাহসী যোদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করেন, যারা ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। নানা নির্যাতনের কারণে এই সম্প্রদায় বাইরের ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ করে এবং তাদের ধর্মে নতুন কাউকে গ্রহণও বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছিল। এখন সেখানে প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ বাস করেন। তাদের অধিকাংশই নিজেদের সিরিয়ান পরিচয়ে গর্ববোধ করেন এবং ইসরায়েলি নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করেন।

সিরিয়ার নতুন সরকার বনাম দ্রুজ : গত বছরের (২০২৪ সাল) ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারআ ক্ষমতায় আসেন। তিনি সব সম্প্রদায়ের সম্মিলনের অঙ্গীকার করলেও ইসলামপন্থি মিত্রদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে দ্রুজদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে।

গত মার্চে লাতাকিয়ায় আলাউই সম্প্রদায়ের ওপর সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর দমনপীড়নে শত শত মানুষ নিহত হন। গত এপ্রিলেও সরকারপন্থী বাহিনী ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি প্রাণ হারায়। সিরিয়ায় বর্তমানে প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো দ্রুজদের অস্ত্রসমর্পণ না করা এবং দ্রুজ মিলিশিয়ার বিলুপ্তি না ঘটানো। প্রেসিডেন্ট শারআ জাতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে সব মিলিশিয়াকে আনতে চাইলেও দ্রুজরা এতে রাজি হয়নি। তাদের মতে, সরকারে দ্রুজ প্রতিনিধিত্ব সীমিত এবং অনেক প্রবীণ নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের কৌশল ও বিরোধ : ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ‘নিরস্ত্রীকরণ এলাকা’ স্থাপন করেছে। এখানে কোনো বাহিনী বা অস্ত্র মোতায়েন চলবে না। তবে সিরিয়া এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইসরায়েলের প্রতি বারবার আক্রমণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

ইতঃপূর্বে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় থাকলেও বর্তমানে তারা প্রেসিডেন্ট শারআ-কে ‘চরমপন্থি ইসলামি শাসক’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। গত মে মাসে সিরিয়ার সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা হলেও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা শুধু সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকেই বিঘিœত করছে না, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকেও দুর্বল করছে। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যায়—ইসরায়েল কি সত্যিই দ্রুজদের রক্ষা করছে, না কি এই সুরক্ষার নামে তারা একটি ভঙ্গুর অঞ্চলে আরও বিভক্তি এবং সংঘাতের বীজ বপন করছে?

ছবি

জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করাই এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার কারণ: তদন্ত

নতুন হামলার জবাব দিতে প্রস্তুত ইরান, খামেনির হুঁশিয়ারি

ছবি

ইউক্রেনে মার্কিন অস্ত্র সরবরাহে নজর রাখছে রাশিয়া

গাজায় ত্রাণ আনতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে নিহত ২১

ছবি

ইউরোপে রেকর্ডভাঙা তাপপ্রবাহ কেন

২৭ হাজার ক্ষুধার্ত শিশুর পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য ধ্বংস করছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

ইরাকে বিপণিবিতানে অগ্নিকাণ্ড, নিহত অন্তত ৬০

সংঘাতে থমথমে সিরিয়া, নিহত বেড়ে ২০৩

ছবি

ভারত-মিয়ানমার বাণিজ্য করিডরের প্রস্তাব রাশিয়ার, লক্ষ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া

নতুন রাজনৈতিক দল খুললেন ইমরানের প্রাক্তন স্ত্রী

ছবি

ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁসের পর হাজারো আফগানকে সরিয়ে নেয় যুক্তরাজ্য

হঠাৎ ট্রাম্পের ফোন, ঘুম থেকে তুলে সাংবাদিককে দিলেন সাক্ষাৎকার

ছবি

তাইওয়ান নিয়ে উত্তেজনায় নিরাপত্তা শঙ্কার কথা জানাল জাপান

লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকিতে চাপ নয়, বরং স্বস্তিতে রাশিয়া

মে মাসে ইরানের তেল রপ্তানিতে সর্বকালের রেকর্ড

ছবি

জোটে ভাঙন, অস্তিত্ব সংকটে নেতানিয়াহুর সরকার

ইসরায়েলিদের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে গাজায় বাড়িঘর ধ্বংস করছে সেনারা

ছবি

বেপরোয়া হুতি, ২০ মাসে ৭০ জাহাজে হামলা

ছবি

দালাই লামার উত্তরাধিকারের ওপর বেইজিংয়ের অধিকার দাবি, নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে : ম্যাখোঁ

ছবি

দুই হাজার বছর আগে ডুবে যাওয়া শহরের খোঁজ

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করল ভারত

ছবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, নিহত ৩০

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

ছবি

সিরিয়ায় বেদুইন সুন্নি-দ্রুজ সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩০

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, জরুরি পথে পালিয়ে বাঁচেন

ছবি

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই

ছবি

ইসরায়েলের পদক্ষেপে উদ্বেগ, গাজার পরিস্থিতি ঠেকাতে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

ছবি

গণহত্যা রুখতে ২০টির বেশি দেশের সম্মেলনে বাংলাদেশেরও অংশগ্রহণ

ছবি

শুল্কহার কমিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে চায় ভারত

ছবি

অভিযানের সময় আহত শ্রমিকের মৃত্যু, আক্রমণাত্মক কৌশল স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

যুক্তরাষ্ট্র হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে আলোচনায় বসবে ইরান

ছবি

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে চলেছে ভারত

ইউক্রেনে রাশিয়ার যে কোন কাজের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের ঘোষণা কিমের

tab

আন্তর্জাতিক

দ্রুজ কারা, তাদের রক্ষায় কেন সিরিয়ায় বোমা ফেলছে ইসরায়েল

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

ইসরায়েলি হামলার পর সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে সেনাবাহিনী ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দপ্তরের কাছে ধোঁয়ার কু-লী দেখা যায় -এএফপি

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫

সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে দ্রুজ সম্প্রদায়ের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত সুয়েইদা প্রদেশে গতকাল মঙ্গলবার দেশটির সামরিক বাহিনী প্রবেশ করে। সরকারি এই হস্তক্ষেপ সেখানে নতুন করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। সিরিয়ার সরকারবিরোধী ও সম্প্রদায়গত সংঘাতের মধ্যে এই পদক্ষেপে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার সম্ভাবনা এবং বিদেশি হস্তক্ষেপ এই উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে। কারণ এই ঘটনার জের ধরে সিরিয়ার সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

বুধবার (১৬ জুলাই) সিএনএন জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সুয়েইদা শহরে দ্রুজ বাহিনী ও বেদুইন উপজাতিদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০ জন নিহত এবং বহু আহত হন। পরিস্থিতি সামাল দিতে সিরিয়ার সরকার সেখানে সেনা পাঠালে আবারও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে এবং অন্তত ১৮ জন সরকারি সৈন্য প্রাণ হারায়। এই সংঘর্ষে সরকারের সঙ্গে যুক্ত ইসলামপন্থি বাহিনীগুলোও অংশ নেয়, যা দ্রুজদের আরও আতঙ্কিত করে তোলে। প্রভাবশালী দ্রুজ নেতা হিকমত আল-হিজরি এই পরিস্থিতিকে ‘সম্পূর্ণ নিধন যুদ্ধ’ আখ্যা দিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সরকার ও মিত্র বাহিনী সব উপায়ে দ্রুজদের নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে।

এদিকে সিরিয়ার সুয়েইদা প্রদেশে দ্রুজদের সুরক্ষায় পদক্ষেপ নেয় ইসরায়েল। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সামরিক যানবাহনে আঘাত হেনেছে। ইসরায়েল সরকার জানায়, তাদের নিজ দেশে বসবাস করা দ্রুজ নাগরিকদের সঙ্গে ভ্রাতৃত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও ঐতিহাসিক বন্ধনের প্রকাশ হিসেবে ওই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইসরায়েলের ভেতরেও প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার দ্রুজ বাস করেন। তবে সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইসরায়েলের হামলাকে দেশের সার্বভৌমত্বের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং বিদেশি আগ্রাসনের জঘন্য উদাহরণ হিসেবে অভিহিত করেছে। ইসরায়েলের হামলায় বেসামরিক নাগরিক ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেছে সিরিয়া। যদিও নিহতদের নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করেনি দেশটি।

দ্রুজ কারা : দ্রুজরা একটি আরব ধর্মীয় গোষ্ঠী। পৃথিবীতে তাদের মোট সংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। প্রায় এক হাজার বছর ধরে দ্রুজ জনগোষ্ঠীর উৎপত্তি নিয়ে গবেষকেরা নানা তর্ক-বিতর্ক করে আসছেন। এই সম্প্রদায়ের মানুষ মূলত সিরিয়া, লেবানন ও ইসরায়েলের পাহাড়ি এলাকায় বসবাস করেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, দ্রুজদের পূর্বপুরুষেরা মূলত উত্তর-পূর্ব তুরস্ক, দক্ষিণ-পশ্চিম আর্মেনিয়া ও উত্তর ইরাক সীমান্ত অঞ্চলের অধিবাসী ছিলেন। দ্রুজ ধর্ম ৯৮৬ খ্রিষ্টাব্দে ইসলামি ধারার একটি আন্দোলন হিসেবে মিশরে শুরু হয়েছিল। আল-হাকিম বিআমর আল্লাহ নামে এক শাসক এই ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু তার মৃত্যু বা অন্তর্ধানের পর ধর্মটি মিশরে নিষিদ্ধ হয়ে যায়। তবে তত দিনে এই ধর্ম লেভান্তে অঞ্চলে (সিরিয়া, লেবানন, ফিলিস্তিন, ইসরায়েল ও জর্ডান) ছড়িয়ে পড়ে।

দ্বাদশ শতকে ইহুদি পর্যটক বেঞ্জামিন অব তুদেলা দ্রুজদের পাহাড়বাসী সাহসী যোদ্ধা হিসেবে বর্ণনা করেন, যারা ইহুদিদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। নানা নির্যাতনের কারণে এই সম্প্রদায় বাইরের ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে বিয়ে নিষিদ্ধ করে এবং তাদের ধর্মে নতুন কাউকে গ্রহণও বন্ধ করে দেয়। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ইসরায়েল সিরিয়ার গোলান মালভূমি দখল করে নিয়েছিল। এখন সেখানে প্রায় ২০ হাজার দ্রুজ বাস করেন। তাদের অধিকাংশই নিজেদের সিরিয়ান পরিচয়ে গর্ববোধ করেন এবং ইসরায়েলি নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করেন।

সিরিয়ার নতুন সরকার বনাম দ্রুজ : গত বছরের (২০২৪ সাল) ডিসেম্বরে বাশার আল-আসাদের পতনের পর সিরিয়ায় নতুন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারআ ক্ষমতায় আসেন। তিনি সব সম্প্রদায়ের সম্মিলনের অঙ্গীকার করলেও ইসলামপন্থি মিত্রদের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ধর্মীয় সংখ্যালঘু, বিশেষ করে দ্রুজদের মধ্যে আশঙ্কা তৈরি করেছে।

গত মার্চে লাতাকিয়ায় আলাউই সম্প্রদায়ের ওপর সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর দমনপীড়নে শত শত মানুষ নিহত হন। গত এপ্রিলেও সরকারপন্থী বাহিনী ও দ্রুজ মিলিশিয়াদের সংঘর্ষে ১০০ জনের বেশি প্রাণ হারায়। সিরিয়ায় বর্তমানে প্রধান সমস্যাগুলোর একটি হলো দ্রুজদের অস্ত্রসমর্পণ না করা এবং দ্রুজ মিলিশিয়ার বিলুপ্তি না ঘটানো। প্রেসিডেন্ট শারআ জাতীয় সেনাবাহিনীর অধীনে সব মিলিশিয়াকে আনতে চাইলেও দ্রুজরা এতে রাজি হয়নি। তাদের মতে, সরকারে দ্রুজ প্রতিনিধিত্ব সীমিত এবং অনেক প্রবীণ নেতাকে বাদ দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের কৌশল ও বিরোধ : ইসরায়েল ঘোষণা করেছে, তারা সিরিয়ার দক্ষিণাঞ্চলে একটি ‘নিরস্ত্রীকরণ এলাকা’ স্থাপন করেছে। এখানে কোনো বাহিনী বা অস্ত্র মোতায়েন চলবে না। তবে সিরিয়া এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করেছে এবং ইসরায়েলের প্রতি বারবার আক্রমণ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।

ইতঃপূর্বে ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়ায় থাকলেও বর্তমানে তারা প্রেসিডেন্ট শারআ-কে ‘চরমপন্থি ইসলামি শাসক’ বলে আখ্যা দিচ্ছে। গত মে মাসে সিরিয়ার সঙ্গে পরোক্ষ আলোচনা হলেও ইসরায়েলের বোমাবর্ষণ বন্ধ হয়নি।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের হামলা শুধু সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকেই বিঘিœত করছে না, বরং পুরো অঞ্চলজুড়ে একটি স্থায়ী শান্তিচুক্তির সম্ভাবনাকেও দুর্বল করছে। শেষ পর্যন্ত প্রশ্ন থেকেই যায়—ইসরায়েল কি সত্যিই দ্রুজদের রক্ষা করছে, না কি এই সুরক্ষার নামে তারা একটি ভঙ্গুর অঞ্চলে আরও বিভক্তি এবং সংঘাতের বীজ বপন করছে?

back to top