গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে ১৪ বছর বয়সী মোসাব আল-দেবস -এএফপি
ফিলিস্তিনের গাজার কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টির রোগী পাচ্ছেন। গাজা শহরের একটি ৩৫ দিনের শিশু ও দেইর এল-বালাহতে চার মাস বয়সী এক শিশু আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে অপুষ্টিতে মারা গেছে। হাসপাতালে এক মা তার সন্তানের শরীর ছুঁয়ে আর্তনাদ করছিলেন, ‘আমি দুঃখিত, আমি তোমাকে খাওয়াতে পারিনি। আমার চোখের সামনে তোমাকে মরতে দেখা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।’ প্রতিনিয়ত শিশুদের এমন মৃত্যু দেখতে হচ্ছে গাজার মায়েদের।
এই দুটি ঘটনাই কেবল নয়। গত ৭২ ঘণ্টায় আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। শিশুদের অনাহার থেকে বাঁচাতে বাবা-মায়েরা মার্কিন-ইসরায়েলের তৈরি জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। কারণ, তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। বাবা-মায়েরা বলছেন, নারী-শিশুসহ তারা সবাই ক্ষুধার্ত এবং তারা নিজ সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে অক্ষম। অনেক শিশুকে শুধুই পানি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, আটা কেনার সাধ্য তাদের নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত এবং ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। গত ২১ মাসে দখলদার বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৮৯৫ জন ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন।
আলজাজিরা জানায়, আরও এক ইসরায়েলি সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন। দখলদার বাহিনী জানিয়েছে, এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে চারজন সেনার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। নরওয়ের বাসিন্দা ও প্রশিক্ষণরত সৈনিকের নাম ড্যান ফিলিপসন। দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে মারা যান। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের মতে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৯ জন এবং গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২১ মাসে ৪২ জন সৈন্য আত্মহত্যা করেছেন।
গাজা যুদ্ধের নামে ‘বর্বরতার’ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও। গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার পর রোববার এক প্রার্থনা সভায় পোপ লিও এই আহ্বান জানান। ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিডিয়ন লেভি সরকারকে গাজায় জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি জনাকীর্ণ অংশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত মানবাধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ৫৫ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
গাজা এখন যেন ‘কারবালার প্রান্তর’ : আনাদোলু এজেন্সি জানায়, কারবালার প্রান্তরে এজিদের বাহিনী ইমাম হুসাইনের শিবির অবরোধ করে ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ যেমন বন্ধ করে দিয়েছিল, ঠিক একই কৌশলে গাজার পানি সরবরাহ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। আর ইসরায়েল সৃষ্টি সেই কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে প্রাণ হারাল দুই সহোদর ৯ বছরের কারাম আল-ঘুসাইন ও ১০ বছরের লানা ওরফে লুলু।
নয় বছর বয়সী কারাম আল-ঘুসাইন, তার ছোট্ট হাতে পাত্র নিয়ে যাচ্ছিল পরিবারের জন্য একটুখানি পানি সংগ্রহের আশায়। এ সময় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র তার দেহকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। ১০ বছর বয়সী বোন লানা ছুটে এসেছিল ছোট ভাইকে সাহায্য করতে। তার দেহও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
ক্ষুধায় ভুগছে ১০ লাখ শিশু : ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখছে, যাদের মধ্যে ১০ লাখ শিশুও রয়েছে। জিএইচএফ চারটি পয়েন্টে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। খাদ্য নিতে আসা ক্ষুধার্তদের ওপর প্রতিদিন গুলি করছে দখলদার বাহিনী। গত মে মাসের শেষ দিকে বিএইচএফ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৯০০ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আজ ভোর থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ৫১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে ‘এখনই যুদ্ধ থামানোর’ আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ২৮টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় ‘মানুষের দুর্ভোগ এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে’। বিবৃতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে এই বিবৃতিকে ‘বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল।
গাজা নগরীর আল-শিফা হাসপাতালে তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে ১৪ বছর বয়সী মোসাব আল-দেবস -এএফপি
বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫
ফিলিস্তিনের গাজার কেন্দ্রীয় হাসপাতালের চিকিৎসকরা প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টির রোগী পাচ্ছেন। গাজা শহরের একটি ৩৫ দিনের শিশু ও দেইর এল-বালাহতে চার মাস বয়সী এক শিশু আল-আকসা শহীদ হাসপাতালে অপুষ্টিতে মারা গেছে। হাসপাতালে এক মা তার সন্তানের শরীর ছুঁয়ে আর্তনাদ করছিলেন, ‘আমি দুঃখিত, আমি তোমাকে খাওয়াতে পারিনি। আমার চোখের সামনে তোমাকে মরতে দেখা ছাড়া আমার আর কোনো উপায় ছিল না।’ প্রতিনিয়ত শিশুদের এমন মৃত্যু দেখতে হচ্ছে গাজার মায়েদের।
এই দুটি ঘটনাই কেবল নয়। গত ৭২ ঘণ্টায় আরও বেশি ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, প্রতি ঘণ্টায় অপুষ্টিতে ভোগা শিশু ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। শিশুদের অনাহার থেকে বাঁচাতে বাবা-মায়েরা মার্কিন-ইসরায়েলের তৈরি জিএইচএফ বিতরণ কেন্দ্রে যেতে বাধ্য হন। কারণ, তাদের সামনে আর কোনো বিকল্প নেই। বাবা-মায়েরা বলছেন, নারী-শিশুসহ তারা সবাই ক্ষুধার্ত এবং তারা নিজ সন্তানদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে অক্ষম। অনেক শিশুকে শুধুই পানি খাইয়ে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা হচ্ছে। কারণ, আটা কেনার সাধ্য তাদের নেই।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৫৪ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ কমপক্ষে ১৩০ জন নিহত এবং ৪৯৫ জন আহত হয়েছেন। গত ২১ মাসে দখলদার বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত ৫৮ হাজার ৮৯৫ জন ও ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৮০ জন আহত হয়েছেন।
আলজাজিরা জানায়, আরও এক ইসরায়েলি সৈনিক আত্মহত্যা করেছেন। দখলদার বাহিনী জানিয়েছে, এ নিয়ে গত দুই সপ্তাহে চারজন সেনার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটল। নরওয়ের বাসিন্দা ও প্রশিক্ষণরত সৈনিকের নাম ড্যান ফিলিপসন। দক্ষিণ ইসরায়েলের একটি প্রশিক্ষণ ঘাঁটিতে গুলি চালিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। পরে হাসপাতালে মারা যান। ইসরায়েলি গণমাধ্যমের মতে, বছরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ১৯ জন এবং গাজায় যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২১ মাসে ৪২ জন সৈন্য আত্মহত্যা করেছেন।
গাজা যুদ্ধের নামে ‘বর্বরতার’ অবসানের আহ্বান জানিয়েছেন পোপ লিও। গত বৃহস্পতিবার গাজার একমাত্র ক্যাথলিক গির্জায় ইসরায়েলি হামলার পর রোববার এক প্রার্থনা সভায় পোপ লিও এই আহ্বান জানান। ইসরায়েলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক গিডিয়ন লেভি সরকারকে গাজায় জাতিগত নির্মূলের পরিকল্পনার অভিযোগ করেছেন। অন্যদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী গাজার মধ্যাঞ্চলের একটি জনাকীর্ণ অংশ থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ জারি করেছে। যুক্তরাজ্যে নিষিদ্ধ ঘোষিত মানবাধিকার সংগঠন প্যালেস্টাইন অ্যাকশন গ্রুপের ৫৫ জন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।
গাজা এখন যেন ‘কারবালার প্রান্তর’ : আনাদোলু এজেন্সি জানায়, কারবালার প্রান্তরে এজিদের বাহিনী ইমাম হুসাইনের শিবির অবরোধ করে ফোরাত নদীর পানি সরবরাহ যেমন বন্ধ করে দিয়েছিল, ঠিক একই কৌশলে গাজার পানি সরবরাহ ধ্বংস করে দিয়েছে ইসরায়েল। আর ইসরায়েল সৃষ্টি সেই কারবালার প্রান্তরে নির্মমভাবে প্রাণ হারাল দুই সহোদর ৯ বছরের কারাম আল-ঘুসাইন ও ১০ বছরের লানা ওরফে লুলু।
নয় বছর বয়সী কারাম আল-ঘুসাইন, তার ছোট্ট হাতে পাত্র নিয়ে যাচ্ছিল পরিবারের জন্য একটুখানি পানি সংগ্রহের আশায়। এ সময় ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র তার দেহকে ছিন্নভিন্ন করে দিল। ১০ বছর বয়সী বোন লানা ছুটে এসেছিল ছোট ভাইকে সাহায্য করতে। তার দেহও ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল।
ক্ষুধায় ভুগছে ১০ লাখ শিশু : ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে দিয়েছে, ইসরায়েল গাজায় পরিকল্পিতভাবে বেসামরিক নাগরিকদের অনাহারে রাখছে, যাদের মধ্যে ১০ লাখ শিশুও রয়েছে। জিএইচএফ চারটি পয়েন্টে খাদ্য সহায়তা দিয়ে থাকে। খাদ্য নিতে আসা ক্ষুধার্তদের ওপর প্রতিদিন গুলি করছে দখলদার বাহিনী। গত মে মাসের শেষ দিকে বিএইচএফ প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রায় ৯০০ ত্রাণপ্রত্যাশীকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনিদের এমন অসহায় অবস্থার মধ্যে গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। আজ ভোর থেকে উপত্যকাটিতে অন্তত ৫১ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। তাদের মধ্যে ১৪ জন ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায় সেখানে ৫৯ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে ‘এখনই যুদ্ধ থামানোর’ আহ্বান জানিয়ে গত সোমবার যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, কানাডাসহ ২৮টি দেশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। তাদের মতে, গাজায় ‘মানুষের দুর্ভোগ এক নতুন গভীরতায় পৌঁছেছে’। বিবৃতিতে সমঝোতার ভিত্তিতে যুদ্ধবিরতি, জিম্মিদের মুক্তি এবং জরুরি মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহের আহ্বান জানানো হয়েছে।
তবে এই বিবৃতিকে ‘বাস্তবতা বিচ্ছিন্ন’ বলে উল্লেখ করেছে ইসরায়েল।