alt

আন্তর্জাতিক

শুল্কে রাজস্ব বাড়লেও পণ্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি, বৈরী বাণিজ্য ঘাটতিও

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে একের পর এক জোর ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছেন।

মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট গত ২ এপ্রিল, তথাকথিত ‘মুক্তির দিনে’ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে নতুন আমদানি শুল্ক চাপান।

এসবের বেশিরভাগই পরে স্থগিত রাখা হয়, দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বাণিজ্য চুক্তির পথ খোলা রাখতে। ওই পথ ধরে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক অংশীদারের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে, যাতে শুল্ক আগের থেকে কমানো হয়েছে।

কিন্তু কিছু কিছু সেবা এবং অটোমোবাইল ও ইস্পাতের মতো পণ্যে ওয়াশিংটনের শুল্ক এখনও চড়া, মোটাদাগে গড় মার্কিন শুল্কহার এখন প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, বলছে বিবিসি।

ট্রাম্প যে শুল্ক বসিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তা দিতে হবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকেই, যারা বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অর্থনীতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তের প্রভাব একরকম হবে না।

রাজস্ব আয় বাড়বে

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৮ জুলাই আমদানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত গড় কার্যকর শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশে, ১৯৩৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, ২০২৪ সালে এই গড় কার্যকর শুল্ক ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই বাড়তি শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় ব্যাপক পরিমাণ বাড়বে।

দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক রাজস্ব পেয়েছে দু্ই হাজার ৮০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৪২ হাজার ৯১ কোটি টাকা), যা ২০২৪ সালের একই মাসে পাওয়া রাজস্বের তিনগুণ।

মার্কিন অর্থনীতির ওপর নজরদারি করা স্বাধীন সংস্থা কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) জুনে যে ধারণা দিয়েছিল, তাতে ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কল্যাণে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ধারের পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলার কমবে।

সিবিও এও বলেছে, শুল্ক না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার যতটা হতো, শুল্কের কারণে তারচেয়ে কম হবে।

তাদের হিসাব বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে কর ছাড় দিয়েছে তার ফলে সরকার আগামী এক দশকে যে পরিমাণ রাজস্ব হারাবে, তা শুল্ক থেকে পাওয়া অতিরিক্ত রাজস্বের পুরোটা দিয়েও মেটানো যাবে না, বরং ঘাটতি থেকেই যাবে।

ট্রাম্প অবশ্য ৩১ জুলাই বেশ কিছু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে কিছু দেশের জন্য আগের তুলনায় শুল্ক কমলেও, কিছু দেশের জন্য বেড়েছে। তাতেও ঘাটতি মিটবে কিনা, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই

ট্রাম্পের হিসাবে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতিই প্রমাণ করে যে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা নিচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পণ্য বিক্রি করছে, কিনছে কম।

তার শুল্ক আরোপের একটি যুক্তি হলো—এই ভারসাম্যহীনতা দূর করা। অর্থাৎ, আমদানি কমিয়ে আনা এবং অন্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যে দেওয়া শুল্কসহ নানা ধরনের বাধা কমাতে বাধ্য করা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল হুট করে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। মূলত, বাড়তি শুল্ক এড়াতে মার্কিন কোম্পানিগুলো আগেভাগে বেশি পণ্য এনে মজুত করায় এ কাণ্ড হয়েছে। আর রপ্তানির পরিমাণে দেখা গেছে খুবই সামান্য পরিমাণ উল্লম্ফন।

ফলাফল, বাণিজ্য ঘাটতি তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। এ বছরের মার্চে এই ঘাটতি পৌঁছায় রেকর্ড ১৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারে, পরে জুনে তা নামে ৮ হাজার ৬০০ কোটিতে। কারণ, ততদিনে মজুত পণ্য শেষ হয়ে এসেছে।

বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনকে হিমশিম খেতেই হবে।

এর কারণ মার্কিন অর্থনীতির কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা, বলছেন তারা।

দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের খরচ তার দেশীয় উৎপাদনের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। এটাই মূল কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর অনৈতিক বাণিজ্য চর্চা নয়, যুক্তি তাদের।

রপ্তানি কমাচ্ছে চীন

ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের ওপরও শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছেন, এক পর্যায়ে এই শুল্ক পৌঁছে গিয়েছিল ১৪৫ শতাংশে।

এখন ৩০ শতাংশে নামলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যে যে বৈরিতা, তাতে এর প্রভাবও কম নয়।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে টাকার অঙ্কে চীনের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।

অন্যদিকে, চীনা রপ্তানিকারকরা অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে রপ্তানি বাড়িয়েছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, চীনা কোম্পানিগুলো অন্য দেশে ক্রেতা খুঁজে নিচ্ছে।

ভারতে এ বছর চীনের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে বেড়েছে ৭% ও ৮%।

একই সময়ে আসিয়ান দেশগুলোতেও টাকার অঙ্কে চীনা রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ, এই আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এড়াতে চীন তার প্রতিবেশী দক্ষিণপূর্বের আসিয়ান দেশগুলোতে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার মতো ‘অপকৌশলের’ আশ্রয় নিতে পারে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর উদ্বেগও রয়েছে।

এক্ষেত্রে বেইজিং আধা-প্রস্তুত পণ্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রপ্তানি করবে, পরে সেখানে পুরোপুরি প্রস্তুত শেষে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে।

এ ধরনের ‘ট্যারিফ জাম্পিং’ ঘটেছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, সেসময় তিনি চীনের সৌরপ্যানেলের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন।

আসিয়ানের দেশগুলোতে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি এমন কৌশলের অংশ হতে পারে বলেও সন্দেহ অনেক অর্থনীতিবিদের।

অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় অনেক দেশ পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পথে হাঁটছে।

যুক্তরাজ্য ও ভারত নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ৩ বছর ধরে আলোচনা চলছিল।

ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এসোসিয়েশন (ইএফটিএ) নামে পরিচিত জোটভুক্ত দেশ নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও লিখটেনস্টেইন মার্কোসুর নামে পরিচিত লাতিন আমেরিকার অনেকগুলো দেশের একটি জোটের সঙ্গেও নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি করে ফেলেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেষ্টা করছে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে। কানাডা আসিয়ানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথা ভাবছে।

অনেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে ধরা ফাটলের সুবিধাও নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন, এটি এশিয়ার দেশটির ৪৪ কোটি শূকরের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং ব্রাজিলের কাছ থেকে সয়াবিন কেনা বাড়িয়েছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্য যুদ্ধ এবং মার্কিন কৃষি পণ্যে চীন যে পাল্টা শুল্ক দিয়েছে তাতেই লাতিনের দেশটির সয়াবিন রপ্তানি অনেকগুণ বেড়ে গেছে।

২০২৫ সালের জুনে চীন ব্রাজিল থেকে ১ কোটি ৬ লাখ টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে করেছে মাত্র ১৬ লাখ টন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কৃষকদের সরাসরি নতুন ভর্তুকির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে শুরু করেছে পণ্যের দাম

অর্থনীতিবিদরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে, যা প্রকারান্তরে পণ্যের দাম বাড়াবে।

সরকারি হিসাবে জুনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ, মে-তে ছিল এর চেয়ে আরেকটু কম, ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে জানুয়ারিতে বেশি ছিল, ৩ শতাংশ।

বছরের শুরুর দিকে কোম্পানিগুলো আগেভাগে পণ্য এনে মজুত করেছিল, ফলে কয়েক মাস বাড়তি শুল্কের খড়্গ তাদের ওপর পড়েনি, যে কারণে পণ্যের খুচরা মূল্য বাড়ানোর দরকার অনুভূত হয়নি।

কিন্তু সর্বশেষ সরকারি তথ্যে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার লক্ষণ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মানে হল, ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা মার্কিন বাজারে পড়তে শুরু করেছে।

জুনে বড় গৃহস্থালি সরঞ্জাম, কম্পিউটার, ক্রীড়া উপকরণ, বই ও খেলনাসহ বেশ কিছু আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইসিং ল্যাবের গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া অনলাইন তথ্য ব্যবহার করে মার্কিন বাজারে ট্রাম্পের ২০২৫ সালে দেওয়া শুল্কের প্রভাব খতিয়ে দেখেছেন।

তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্য এবং শুল্কপ্রভাবিত দেশীয় পণ্যের দাম শুল্কপ্রভাবিত নয় এমন দেশীয় পণ্যের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে।

ছবি

ইসরায়েলি কূটনীতিকদের আমিরাত ছাড়ার নির্দেশ

নির্বাচনকে সামনে রেখে মায়ানমারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন

ছবি

পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিচ্ছে তুর্কমিনিস্তান

পশ্চিমাদের সতর্ক করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

বন্ধু থেকে প্রতিবেশী, কাউকেই ছাড় দেননি ট্রাম্প

পাকিস্তানে ইমরান খানের দলের শতাধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন তীব্র ক্ষুধায় ঝুঁকিতে এক প্রজন্মের ‘স্বাস্থ্য ও সুস্থতা’

ছবি

কয়েক ডজন দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক দিলো ট্রাম্প

জনগণের সমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

ছবি

মায়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচন

ভারত-রাশিয়া তাদের অর্থনীতি ডোবাক, মাথা ঘামাই না : ট্রাম্প

ছবি

রাশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পেও সুনামির ধাক্কা প্রবল হলো না যে কারণে

ছবি

ভারতের ওপর শুল্ক, পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি ট্রাম্পের

ছবি

ইরানের পণ্য বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা

ছবি

ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেওয়ার পরিকল্পনা কানাডার

ছবি

ব্রাজিলের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

ছবি

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় ১০৪ জনের মৃত্যু, অপুষ্টিতেই ৭

গাজার দৃশ্য নাৎসি ক্যাম্পের চেয়েও ভয়াবহ : এরদোয়ান

ছবি

গাজায় হামলার নিন্দা জানালেও ইসরায়েলের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে যেসব দেশ

ভারতের ওপর এবার ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

ছবি

বিশ্বজুড়ে ‘ভালো থাকা’ মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, পিছিয়ে দক্ষিণ এশিয়া

জন্মহার বাড়াতে চীনের নতুন উদ্যোগ

ছবি

জাপান সরাচ্ছে ১৯ লাখ মানুষ, লণ্ডভণ্ড রুশ বন্দর

ছবি

সুনামি: জাপানে ১৯ লাখ মানুষকে সরানো হয়েছে, রুশ বন্দর লণ্ডভণ্ড

ছবি

রাশিয়ায় ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামি: সরানো হলো ফুকুশিমা পারমাণবিক কেন্দ্রের কর্মীদের

ছবি

রাশিয়ায় ৮.৮ মাত্রার ভূমিকম্পের পর জাপানে সুনামি, প্রশান্ত মহাসাগরজুড়ে সতর্কতা

গাজার মানুষ প্রকৃত অনাহারে : ট্রাম্প

ছবি

মায়ানমারের বিরল খনিজে নজর, বিদ্রোহীদের সঙ্গে হাত মেলাতে চায় যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনে রাশিয়ার মুহুর্মুহু হামলা, নিহত ২০

ছবি

যুক্তরাজ্যে অভিবাসনবিরোধী বিক্ষোভ ঘিরে ফের সহিংসতার আশঙ্কা

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা ছাড়া ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নয় : সৌদি আরব

ছবি

গাজায় পানিও এখন মারণাস্ত্র

ছবি

চীনে বন্যায় নিহত অন্তত ৩০, ক্ষতিগ্রস্ত লাখো মানুষ

ছবি

নিউ ইয়র্কে বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত ৪, পরে হামলাকারীর আত্মহত্যা

ছবি

গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে ইসরায়েল: ইসরায়েলভিত্তিক দুই মানবাধিকার সংস্থা

গাজায় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে ইসরায়েল: অস্ট্রেলিয়ান প্রধানমন্ত্রী

tab

আন্তর্জাতিক

শুল্কে রাজস্ব বাড়লেও পণ্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি, বৈরী বাণিজ্য ঘাটতিও

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

শুক্রবার, ০১ আগস্ট ২০২৫

দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউজে ফেরার পর ডনাল্ড ট্রাম্প বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থাকে একের পর এক জোর ধাক্কা দিয়েই যাচ্ছেন।

মার্কিন এ প্রেসিডেন্ট গত ২ এপ্রিল, তথাকথিত ‘মুক্তির দিনে’ বিশ্বের প্রায় সব দেশের পণ্যে নতুন আমদানি শুল্ক চাপান।

এসবের বেশিরভাগই পরে স্থগিত রাখা হয়, দেশগুলোর সঙ্গে আলাদা আলাদা বাণিজ্য চুক্তির পথ খোলা রাখতে। ওই পথ ধরে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে যুক্তরাজ্য, ভিয়েতনাম, জাপান ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ একাধিক অংশীদারের সঙ্গে নতুন চুক্তি করেছে, যাতে শুল্ক আগের থেকে কমানো হয়েছে।

কিন্তু কিছু কিছু সেবা এবং অটোমোবাইল ও ইস্পাতের মতো পণ্যে ওয়াশিংটনের শুল্ক এখনও চড়া, মোটাদাগে গড় মার্কিন শুল্কহার এখন প্রায় এক শতাব্দীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, বলছে বিবিসি।

ট্রাম্প যে শুল্ক বসিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তা দিতে হবে মার্কিন কোম্পানিগুলোকেই, যারা বিভিন্ন পণ্য বিদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে নিচ্ছেন।

যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অর্থনীতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এ সিদ্ধান্তের প্রভাব একরকম হবে না।

রাজস্ব আয় বাড়বে

ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ল্যাবের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের ২৮ জুলাই আমদানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত গড় কার্যকর শুল্ক দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ২ শতাংশে, ১৯৩৪ সালের পর যা সর্বোচ্চ।

ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে, ২০২৪ সালে এই গড় কার্যকর শুল্ক ছিল মাত্র ২ দশমিক ৪ শতাংশ। এই বাড়তি শুল্কের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব আয় ব্যাপক পরিমাণ বাড়বে।

দেশটির সরকারি তথ্যে দেখা যাচ্ছে, এ বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক রাজস্ব পেয়েছে দু্ই হাজার ৮০০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় তিন লাখ ৪২ হাজার ৯১ কোটি টাকা), যা ২০২৪ সালের একই মাসে পাওয়া রাজস্বের তিনগুণ।

মার্কিন অর্থনীতির ওপর নজরদারি করা স্বাধীন সংস্থা কংগ্রেসনাল বাজেট অফিস (সিবিও) জুনে যে ধারণা দিয়েছিল, তাতে ৬ জানুয়ারি থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ট্রাম্পের নতুন শুল্কের কল্যাণে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত পরবর্তী ১০ বছরে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ধারের পরিমাণ প্রায় আড়াই লাখ কোটি ডলার কমবে।

সিবিও এও বলেছে, শুল্ক না থাকলে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতির আকার যতটা হতো, শুল্কের কারণে তারচেয়ে কম হবে।

তাদের হিসাব বলছে, ট্রাম্প প্রশাসন যে কর ছাড় দিয়েছে তার ফলে সরকার আগামী এক দশকে যে পরিমাণ রাজস্ব হারাবে, তা শুল্ক থেকে পাওয়া অতিরিক্ত রাজস্বের পুরোটা দিয়েও মেটানো যাবে না, বরং ঘাটতি থেকেই যাবে।

ট্রাম্প অবশ্য ৩১ জুলাই বেশ কিছু দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন, তাতে কিছু দেশের জন্য আগের তুলনায় শুল্ক কমলেও, কিছু দেশের জন্য বেড়েছে। তাতেও ঘাটতি মিটবে কিনা, সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।

বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছেই

ট্রাম্পের হিসাবে, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ঘাটতিই প্রমাণ করে যে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ফায়দা নিচ্ছে, তারা যুক্তরাষ্ট্রে বেশি পণ্য বিক্রি করছে, কিনছে কম।

তার শুল্ক আরোপের একটি যুক্তি হলো—এই ভারসাম্যহীনতা দূর করা। অর্থাৎ, আমদানি কমিয়ে আনা এবং অন্য দেশগুলোকে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানি পণ্যে দেওয়া শুল্কসহ নানা ধরনের বাধা কমাতে বাধ্য করা।

কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল হুট করে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানির পরিমাণ বেড়ে গেছে। মূলত, বাড়তি শুল্ক এড়াতে মার্কিন কোম্পানিগুলো আগেভাগে বেশি পণ্য এনে মজুত করায় এ কাণ্ড হয়েছে। আর রপ্তানির পরিমাণে দেখা গেছে খুবই সামান্য পরিমাণ উল্লম্ফন।

ফলাফল, বাণিজ্য ঘাটতি তো কমেইনি, উল্টো বেড়েছে। এ বছরের মার্চে এই ঘাটতি পৌঁছায় রেকর্ড ১৬ হাজার ২০০ কোটি ডলারে, পরে জুনে তা নামে ৮ হাজার ৬০০ কোটিতে। কারণ, ততদিনে মজুত পণ্য শেষ হয়ে এসেছে।

বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদই বলছেন, দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসনকে হিমশিম খেতেই হবে।

এর কারণ মার্কিন অর্থনীতির কাঠামোগত ভারসাম্যহীনতা, বলছেন তারা।

দীর্ঘদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের খরচ তার দেশীয় উৎপাদনের তুলনায় অনেক অনেক বেশি। এটাই মূল কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে অন্য দেশগুলোর অনৈতিক বাণিজ্য চর্চা নয়, যুক্তি তাদের।

রপ্তানি কমাচ্ছে চীন

ট্রাম্প বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি চীনের ওপরও শাস্তিমূলক শুল্ক চাপিয়েছেন, এক পর্যায়ে এই শুল্ক পৌঁছে গিয়েছিল ১৪৫ শতাংশে।

এখন ৩০ শতাংশে নামলেও যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যে যে বৈরিতা, তাতে এর প্রভাবও কম নয়।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে টাকার অঙ্কে চীনের রপ্তানি কমেছে প্রায় ১১ শতাংশ।

অন্যদিকে, চীনা রপ্তানিকারকরা অন্য বাণিজ্য অংশীদারদের কাছে রপ্তানি বাড়িয়েছে। এর মানে দাঁড়াচ্ছে, চীনা কোম্পানিগুলো অন্য দেশে ক্রেতা খুঁজে নিচ্ছে।

ভারতে এ বছর চীনের রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৪ শতাংশ বেড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্যে বেড়েছে ৭% ও ৮%।

একই সময়ে আসিয়ান দেশগুলোতেও টাকার অঙ্কে চীনা রপ্তানি বেড়েছে ১৩ শতাংশ, এই আসিয়ান দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি শুল্ক এড়াতে চীন তার প্রতিবেশী দক্ষিণপূর্বের আসিয়ান দেশগুলোতে কারখানা সরিয়ে নেওয়ার মতো ‘অপকৌশলের’ আশ্রয় নিতে পারে বলে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেতর উদ্বেগও রয়েছে।

এক্ষেত্রে বেইজিং আধা-প্রস্তুত পণ্য পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রপ্তানি করবে, পরে সেখানে পুরোপুরি প্রস্তুত শেষে যুক্তরাষ্ট্রে যাবে।

এ ধরনের ‘ট্যারিফ জাম্পিং’ ঘটেছিল ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে, সেসময় তিনি চীনের সৌরপ্যানেলের ওপর শুল্ক বসিয়েছিলেন।

আসিয়ানের দেশগুলোতে চীনের রপ্তানি বৃদ্ধি এমন কৌশলের অংশ হতে পারে বলেও সন্দেহ অনেক অর্থনীতিবিদের।

অন্যদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি

ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের প্রতিক্রিয়ায় অনেক দেশ পাল্টা শুল্ক বাড়ানোর পরিবর্তে অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক জোরদারের পথে হাঁটছে।

যুক্তরাজ্য ও ভারত নিজেদের মধ্যে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যা নিয়ে তাদের মধ্যে ৩ বছর ধরে আলোচনা চলছিল।

ইউরোপিয়ান ফ্রি ট্রেড এসোসিয়েশন (ইএফটিএ) নামে পরিচিত জোটভুক্ত দেশ নরওয়ে, আইসল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড ও লিখটেনস্টেইন মার্কোসুর নামে পরিচিত লাতিন আমেরিকার অনেকগুলো দেশের একটি জোটের সঙ্গেও নতুন বাণিজ্যিক চুক্তি করে ফেলেছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেষ্টা করছে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে নতুন একটি বাণিজ্য চুক্তিতে পৌঁছাতে। কানাডা আসিয়ানের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার কথা ভাবছে।

অনেকে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্কে ধরা ফাটলের সুবিধাও নিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিনের সবচেয়ে বড় ক্রেতা ছিল চীন, এটি এশিয়ার দেশটির ৪৪ কোটি শূকরের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেইজিং ব্রাজিলের কাছ থেকে সয়াবিন কেনা বাড়িয়েছে। ট্রাম্পের সাম্প্রতিক বাণিজ্য যুদ্ধ এবং মার্কিন কৃষি পণ্যে চীন যে পাল্টা শুল্ক দিয়েছে তাতেই লাতিনের দেশটির সয়াবিন রপ্তানি অনেকগুণ বেড়ে গেছে।

২০২৫ সালের জুনে চীন ব্রাজিল থেকে ১ কোটি ৬ লাখ টন সয়াবিন আমদানি করেছে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে করেছে মাত্র ১৬ লাখ টন।

ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে চীন যখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন আমদানিতে পাল্টা শুল্ক আরোপ করেছিল তখন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন কৃষকদের সরাসরি নতুন ভর্তুকির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেছিল।

যুক্তরাষ্ট্রে বাড়তে শুরু করেছে পণ্যের দাম

অর্থনীতিবিদরা আগেই সতর্ক করেছিলেন, ট্রাম্পের শুল্কের কারণে আমদানির খরচ বেড়ে যাবে, যা প্রকারান্তরে পণ্যের দাম বাড়াবে।

সরকারি হিসাবে জুনে যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি ছিল ২ দশমিক ৭ শতাংশ, মে-তে ছিল এর চেয়ে আরেকটু কম, ২ দশমিক ৪ শতাংশ। তুলনামূলকভাবে জানুয়ারিতে বেশি ছিল, ৩ শতাংশ।

বছরের শুরুর দিকে কোম্পানিগুলো আগেভাগে পণ্য এনে মজুত করেছিল, ফলে কয়েক মাস বাড়তি শুল্কের খড়্গ তাদের ওপর পড়েনি, যে কারণে পণ্যের খুচরা মূল্য বাড়ানোর দরকার অনুভূত হয়নি।

কিন্তু সর্বশেষ সরকারি তথ্যে পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার লক্ষণ দেখছেন অর্থনীতিবিদরা। এর মানে হল, ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা মার্কিন বাজারে পড়তে শুরু করেছে।

জুনে বড় গৃহস্থালি সরঞ্জাম, কম্পিউটার, ক্রীড়া উপকরণ, বই ও খেলনাসহ বেশ কিছু আমদানি পণ্যের দাম বেড়েছে।

হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাইসিং ল্যাবের গবেষকরা যুক্তরাষ্ট্রের চারটি বড় খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওয়া অনলাইন তথ্য ব্যবহার করে মার্কিন বাজারে ট্রাম্পের ২০২৫ সালে দেওয়া শুল্কের প্রভাব খতিয়ে দেখেছেন।

তাদের পর্যবেক্ষণ বলছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি হওয়া পণ্য এবং শুল্কপ্রভাবিত দেশীয় পণ্যের দাম শুল্কপ্রভাবিত নয় এমন দেশীয় পণ্যের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে।

back to top