ত্রাণ নিয়ে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা -এএপপি
শুধুমাত্র বেঁচে থাকার খাবার আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ১ হাজার ৩৭৩ জন মানুষ। শুক্রবার (১ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক মানবাধিকার অফিস। তারা বলেছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে বিতর্কিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে খাবারের আশায় গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। যারমধ্যে বেশিরভাগকেই গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা।
বিবৃতিতে জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, “গত ২৭ মে থেকে খাবারের খোঁজে গিয়ে ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন। যারমধ্যে ৮৫৯ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের ত্রাণকেন্দ্রের মধ্যে। অপরদিকে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার সময় হত্যার শিকার হয়েছেন ৫১৪ জন। এই হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই সংঘটিত করেছে ইসরায়েলি সেনারা।”
ত্রাণকেন্দ্রে খাবার আনতে যাওয়া প্রায় দেড় হাজার মানুষকে মেরে ফেলা দখলদার ইসরায়েল দাবি করে থাকে, তারা শুধুমাত্র সতর্কতার জন্য গুলি ছোড়ে। কিন্তু সত্যিকারের বাস্তব চিত্র বেরিয়ে আসছে। ইসরায়েল চাইলেও তা চেপে রাখতে পারছে না। এতে করে বাধ্য হয়ে দখলদাররা এখন গাজায় আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) তথ্য উদ্ধৃত করে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, গাজার মানুষ এখনো বড় ধরনের খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং তাদের অনেকেই খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে। ফারহান হক জানান, ‘গত দুই দিনেই ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে এবং আরও শত শত মানুষ আহত হয়েছে ত্রাণবাহী বহরের পথে বা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিতরণকেন্দ্রের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে যেন জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয়–এটা সবার জন্যই মৌলিক অধিকার।’ ফারহান হকের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় কয়েক মাস ধরে টিকে থাকার মতো ন্যূনতম উপকরণের অভাবও চলমান সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এই সংকট কাটাতে ‘মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ’ নিশ্চিত করতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের সব সময় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা বিতরণে বাধা না দিয়ে বরং তা সহজ করতে হবে।’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত রুট ব্যবহার করে ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এখনো নানা রকম বাধা ও ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলেও জানান হক।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যেসব পথ ব্যবহার করতে আমাদের বলছে, সেগুলো প্রায়ই অপ্রতুল, বিপজ্জনক, যানজটে ভরা কিংবা চলাচলের অযোগ্য।’
মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর গতি এখনো ‘অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের দলগুলো এখনো ইসরায়েল নির্ধারিত পথগুলোয় নানা রকম ‘প্রতিবন্ধকতা ও বিপদের মুখে’ পড়ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমানের মাধ্যমে খাবার ফেলেছে ছয়টি দেশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) ১২৬টি প্যাকেজ ফেলা হয়। এগুলো পাঠিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, মিসর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গাজার মানুষের জন্য দিনে যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন সেগুলোর তুলনায় ১২৬টি প্যাকেজ খুবই নগন্য। দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শুক্রবার ছয়টি দেশকে তারা গাজায় খাদ্য সহায়তা ফেলতে দেয়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, গাজায় একটি ট্রাকে করে গাজায় সহায়তা পাঠাতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, বিমান দিয়ে সেটি করলে ১০০ গুণের বেশি অর্থ লাগে। এছাড়া বিমানের চেয়ে ট্রাক দ্বিগুণ ত্রাণ পরিবহণ করতে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি বিমান থেকে খাদ্য ফেলাকে ‘অপর্যাপ্ত’ ও ‘অকার্যকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে যে রাজনৈতিক ইচ্ছা আছে সেটি যেন স্থল দিয়ে করার ব্যাপারেও প্রয়োগ করা হয়। লাজ্জারি জানিয়েছেন, গাজা সীমান্তে ত্রাণ নিয়ে ৬ হাজার ট্রাক অপেক্ষা করছে। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলের কারণে সেগুলো প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের আগে সবগুলো ট্রাক পরীক্ষা করতে চায় বলেও জানান তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৬০ হাজার ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি। শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে পৌঁছেছে ৮৩টি মরদেহ। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৫৫৪ জন।
এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। সড়ক ও আশপাশের এলাকায় পড়ে থাকা অনেকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উদ্ধারকর্মীরা সেখানে যেতে পারছেন না।
ত্রাণ নিয়ে ফিরছে ফিলিস্তিনিরা -এএপপি
শনিবার, ০২ আগস্ট ২০২৫
শুধুমাত্র বেঁচে থাকার খাবার আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকার ১ হাজার ৩৭৩ জন মানুষ। শুক্রবার (১ আগস্ট) এ তথ্য জানিয়েছে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক মানবাধিকার অফিস। তারা বলেছে, মে মাসের শেষ দিক থেকে বিতর্কিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে খাবারের আশায় গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তারা। যারমধ্যে বেশিরভাগকেই গুলি করে হত্যা করেছে দখলদার ইসরায়েলের সেনারা।
বিবৃতিতে জাতিসংঘের সংস্থাটি বলেছে, “গত ২৭ মে থেকে খাবারের খোঁজে গিয়ে ১ হাজার ৩৭৩ ফিলিস্তিনি হত্যার শিকার হয়েছেন। যারমধ্যে ৮৫৯ জন নিহত হয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সমর্থিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের ত্রাণকেন্দ্রের মধ্যে। অপরদিকে ত্রাণকেন্দ্রে যাওয়ার সময় হত্যার শিকার হয়েছেন ৫১৪ জন। এই হত্যাকাণ্ডের বেশিরভাগই সংঘটিত করেছে ইসরায়েলি সেনারা।”
ত্রাণকেন্দ্রে খাবার আনতে যাওয়া প্রায় দেড় হাজার মানুষকে মেরে ফেলা দখলদার ইসরায়েল দাবি করে থাকে, তারা শুধুমাত্র সতর্কতার জন্য গুলি ছোড়ে। কিন্তু সত্যিকারের বাস্তব চিত্র বেরিয়ে আসছে। ইসরায়েল চাইলেও তা চেপে রাখতে পারছে না। এতে করে বাধ্য হয়ে দখলদাররা এখন গাজায় আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণে বাধ্য হচ্ছে।
জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সমন্বয় দপ্তরের (ওসিএইচএ) তথ্য উদ্ধৃত করে জাতিসংঘ মহাসচিবের উপমুখপাত্র ফারহান হক বলেন, গাজার মানুষ এখনো বড় ধরনের খাদ্যসংকটে ভুগছে এবং তাদের অনেকেই খাবারের জন্য জীবন ঝুঁকিতে ফেলছে। ফারহান হক জানান, ‘গত দুই দিনেই ১০০ জনের বেশি নিহত হয়েছে এবং আরও শত শত মানুষ আহত হয়েছে ত্রাণবাহী বহরের পথে বা ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বিতরণকেন্দ্রের কাছে।’
তিনি বলেন, ‘খাবার সংগ্রহ করতে গিয়ে যেন জীবনের ঝুঁকি নিতে না হয়–এটা সবার জন্যই মৌলিক অধিকার।’ ফারহান হকের ভাষ্য অনুযায়ী, গাজায় কয়েক মাস ধরে টিকে থাকার মতো ন্যূনতম উপকরণের অভাবও চলমান সংকটকে আরও গভীর করে তুলেছে। এই সংকট কাটাতে ‘মানবিক সহায়তার অবাধ প্রবাহ’ নিশ্চিত করতেই হবে।
তিনি বলেন, ‘নাগরিকদের সব সময় সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সহায়তা বিতরণে বাধা না দিয়ে বরং তা সহজ করতে হবে।’
ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত রুট ব্যবহার করে ত্রাণ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে জাতিসংঘ এখনো নানা রকম বাধা ও ঝুঁকির মুখে পড়ছে বলেও জানান হক।
তিনি বলেন, ‘ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ যেসব পথ ব্যবহার করতে আমাদের বলছে, সেগুলো প্রায়ই অপ্রতুল, বিপজ্জনক, যানজটে ভরা কিংবা চলাচলের অযোগ্য।’
মানবিক সহায়তা পৌঁছানোর গতি এখনো ‘অপর্যাপ্ত’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, জাতিসংঘের দলগুলো এখনো ইসরায়েল নির্ধারিত পথগুলোয় নানা রকম ‘প্রতিবন্ধকতা ও বিপদের মুখে’ পড়ছে।
এদিকে, ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় বিমানের মাধ্যমে খাবার ফেলেছে ছয়টি দেশ। শুক্রবার (১ আগস্ট) ১২৬টি প্যাকেজ ফেলা হয়। এগুলো পাঠিয়েছে ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, মিসর, জর্ডান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত।
গাজার মানুষের জন্য দিনে যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন সেগুলোর তুলনায় ১২৬টি প্যাকেজ খুবই নগন্য। দখলদার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, শুক্রবার ছয়টি দেশকে তারা গাজায় খাদ্য সহায়তা ফেলতে দেয়।
জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক দাতব্য সংস্থা ফিলিপ লাজ্জারিনি জানিয়েছেন, গাজায় একটি ট্রাকে করে গাজায় সহায়তা পাঠাতে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হয়, বিমান দিয়ে সেটি করলে ১০০ গুণের বেশি অর্থ লাগে। এছাড়া বিমানের চেয়ে ট্রাক দ্বিগুণ ত্রাণ পরিবহণ করতে পারে বলেও জানান তিনি।
তিনি বিমান থেকে খাদ্য ফেলাকে ‘অপর্যাপ্ত’ ও ‘অকার্যকর’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। জাতিসংঘের এ কর্মকর্তা বলেছেন, বিমান থেকে ত্রাণ ফেলার ক্ষেত্রে সবার মধ্যে যে রাজনৈতিক ইচ্ছা আছে সেটি যেন স্থল দিয়ে করার ব্যাপারেও প্রয়োগ করা হয়। লাজ্জারি জানিয়েছেন, গাজা সীমান্তে ত্রাণ নিয়ে ৬ হাজার ট্রাক অপেক্ষা করছে। কিন্তু দখলদার ইসরায়েলের কারণে সেগুলো প্রবেশ করানো যাচ্ছে না। ইসরায়েল গাজায় প্রবেশের আগে সবগুলো ট্রাক পরীক্ষা করতে চায় বলেও জানান তিনি।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের ধারাবাহিক হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৩ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ৬০ হাজার ৩৩২ জন ফিলিস্তিনি। শুক্রবার ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে পৌঁছেছে ৮৩টি মরদেহ। আহত হয়েছে আরও অন্তত ৫৫৪ জন।
এ নিয়ে ইসরায়েলি হামলায় মোট আহতের সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৪৭ হাজার ৬৪৩।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, অনেক মরদেহ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে আছে। সড়ক ও আশপাশের এলাকায় পড়ে থাকা অনেকের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। কারণ উদ্ধারকর্মীরা সেখানে যেতে পারছেন না।