alt

আন্তর্জাতিক

বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম : সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জলসীমার কাছে দুটি কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, আর নেটোর মিত্রদেশগুলো সতর্ক অবস্থানে গেছে।

সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বরাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জোরদার হচ্ছে।

দিমিত্রি মেদভেদেভ কী বলেছেন: গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কল্পিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত। মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। মেদভেদেভের এই বক্তব্যে দারুণ চটে যান ট্রাম্প, এরপরই তিনি রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মেদভেদেভের ওই বক্তব্যকে ট্রাম্প ‘বোকামিপূর্ণ ও উসকানিমূলক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

মেদভেদেভ এবং ট্রাম্পের এই কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

ট্রাম্প তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও এটি স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের নেওয়া সবচেয়ে সাহসী পারমাণবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তা হলো—মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন।

তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু রাশিয়াকে সামরিকভাবে বিরত রাখার জন্য নয়; বরং এটি একটি বিস্তৃত চাপ প্রয়োগের অংশ, যার মধ্যে কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও রয়েছে। সাবমেরিন মোতায়েনের পাশাপাশি ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও বাড়াচ্ছেন। তিনি নানা বৈশ্বিক জোট ও বিভিন্ন দেশের আচরণের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সরাসরি তাঁর কৌশলে যুক্ত করছেন। যেমন—যেসব দেশ রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকছে বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, তাদের ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্যে ভারতও রয়েছে। ব্রিকস জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। দেশটি এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র আমদানি অব্যাহত রেখেছে মেদভেদেভ-ট্রাম্পের কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি যেসব সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহরের অংশ। সেগুলো বেশ কয়েকটি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের ওই স্টেলথ সাবমেরিনগুলো যেকোনো রাডার বা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম। দারুণ শক্তিশালী এই সাবমেরিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অস্ত্রাগারের অন্যতম মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র।

মেদভেদেভ কি স্নায়ুযুদ্ধকালের পারমাণবিক হুঁশিয়ারি পুনরুজ্জীবিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন ও মস্কোর মধ্যে এই উত্তেজনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইউক্রেনের দীর্ঘায়িত যুদ্ধ, সাইবার হুমকি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ আগেই চড়ছিল। এর মধ্যে এই ঘটনা উত্তেজনার পারদকে চূড়ান্তে পৌঁছে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক এই উচ্চ সতর্ক অবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি কয়েক মাস ধরে যুদ্ধংদেহী এবং আগ্রাসী কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। নিজের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মেদভেদেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর পরিবর্তে রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কথা উল্লেখ করেছেন।

এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মুহূর্ত। সাবমেরিন মোতায়েনের খবর প্রচার করে, ট্রাম্প একদিকে যেমন আগ্রাসন রোধ করছেন, অন্যদিকে রুশদের (যুদ্ধ নিয়ে) ভুল–বোঝাবুঝি বা ভুল গণনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলেনা পেত্রোভ, আটলান্টিক ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক কৌশলবিষয়ক বিশ্লেষক

মেদভেদেভ তাঁর বক্তব্যে ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশলের কথাও উল্লেখ করেন। এটি স্নায়ুযুদ্ধ যুগের একটি পুরোনো কৌশল।

এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, যদি রাশিয়ার জাতীয় নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসও হয়ে যায়, তবে এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।

ছবি

‘একদিনে প্রায় ১ হাজার ২৫০ সেনাকে হারিয়েছে ইউক্রেন’

ছবি

ট্রাম্পের সঙ্গে পাকিস্তানি সেনাপ্রধানের ঘনিষ্ঠতা: ভূরাজনীতিতে নতুন মোড়

ছবি

অস্ট্রেলিয়ায় ফিলিস্তিনের পক্ষে লাখো মানুষের মিছিলে অ্যাসাঞ্জ

ছবি

পাকিস্তানের সঙ্গে ১২টি সহযোগিতা চুক্তি সই করল ইরান

ছবি

রাশিয়াকে যুদ্ধে অর্থায়ন করছে ভারত, অভিযোগ যুক্তরাষ্ট্রের

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা, বিশ্ব কোন ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে

ছবি

আল-আকসা প্রাঙ্গণে প্রথম কোনো ইসরায়েলি মন্ত্রীর প্রকাশ্যে প্রার্থনা

ছবি

‘সুয়েবা ০১’ পিএইচডি করছে

ছবি

সিডনি হারবার ব্রিজে ফিলিস্তিনপন্থীদের বিক্ষোভ, শামিল হলেন অ্যাসাঞ্জও

ফিলিস্তিন রাষ্ট্র না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান হামাসের

ছবি

গাজায় ‘অত্যন্ত অপর্যাপ্ত’ সাহায্য ঢুকছে: জার্মানি

ছবি

পাকিস্তানে শেল বিস্ফোরণ ও ড্রোন হামলায় শিশুসহ নিহত ৬

ছবি

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত অস্ত্র ছাড়বে না হামাস

ফের হামলা হলে ‘ভুতুড়ে শহরে’ পরিণত হবে তেল আবিব : ইরান

ছবি

শুল্কের অর্থে ঘাটতি সামলাতে পারবে কি যুক্তরাষ্ট্র

‘অস্তিত্ব সংকটের’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র : বাইডেন

ছবি

পাকিস্তানে তেলের বিশাল ভাণ্ডার কী আদৌ আছে?

ইসরায়েলি কূটনীতিকদের আরব আমিরাত ছাড়ার নির্দেশ

ছবি

এক টুকরো খাবারের জন্য প্রাণ গেছে দেড় হাজার ফিলিস্তিনির

ছবি

হামলার হুমকিতে করাচির হোটেলগুলোতে মার্কিন কর্মকর্তাদের যাতায়াত সীমিত

ছবি

মেদভেদেভের হুঁশিয়ারিতে ক্ষুব্ধ ট্রাম্প, রাশিয়ার কাছে দুটি পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ

ছবি

ইসরায়েলি কূটনীতিকদের আমিরাত ছাড়ার নির্দেশ

নির্বাচনকে সামনে রেখে মায়ানমারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন

ছবি

পর্যটকদের জন্য দ্বার খুলে দিচ্ছে তুর্কমিনিস্তান

পশ্চিমাদের সতর্ক করলেন জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

বন্ধু থেকে প্রতিবেশী, কাউকেই ছাড় দেননি ট্রাম্প

পাকিস্তানে ইমরান খানের দলের শতাধিক নেতাকর্মীর কারাদণ্ড

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন তীব্র ক্ষুধায় ঝুঁকিতে এক প্রজন্মের ‘স্বাস্থ্য ও সুস্থতা’

ছবি

শুল্কে রাজস্ব বাড়লেও পণ্যমূল্যে ঊর্ধ্বগতি, বৈরী বাণিজ্য ঘাটতিও

ছবি

কয়েক ডজন দেশের পণ্যে নতুন শুল্ক দিলো ট্রাম্প

জনগণের সমর্থন হারাচ্ছেন ট্রাম্প

ছবি

মায়ানমারে জরুরি অবস্থা প্রত্যাহার, ডিসেম্বরে নির্বাচন

ভারত-রাশিয়া তাদের অর্থনীতি ডোবাক, মাথা ঘামাই না : ট্রাম্প

ছবি

রাশিয়ায় ভয়াবহ ভূমিকম্পেও সুনামির ধাক্কা প্রবল হলো না যে কারণে

ছবি

ভারতের ওপর শুল্ক, পাকিস্তানের সঙ্গে তেল চুক্তি ট্রাম্পের

ছবি

ইরানের পণ্য বাণিজ্যে জড়িত থাকার অভিযোগে ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর ট্রাম্প প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা

tab

আন্তর্জাতিক

বিশ্ব কি পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকির মুখে পড়তে যাচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া উত্তেজনা

বিদেশী সংবাদ মাধ্যম

সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়ার জলসীমার কাছে দুটি কৌশলগত পারমাণবিক সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন। ট্রাম্পের এ নির্দেশকে বিশ্ব পরিস্থিতির নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন অনেকে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বজুড়ে খবরের শিরোনাম হয়েছে। বিশ্ববাজারে উদ্বেগ ছড়িয়েছে, আর নেটোর মিত্রদেশগুলো সতর্ক অবস্থানে গেছে।

সেই সঙ্গে ইউক্রেন যুদ্ধ ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে পারমাণবিক উত্তেজনা বৃদ্ধির শঙ্কা আবারও ঘনীভূত হচ্ছে। ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বরাজনীতির দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে পারে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আগে কূটনৈতিক উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জোরদার হচ্ছে।

দিমিত্রি মেদভেদেভ কী বলেছেন: গত বৃহস্পতিবার রাশিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমানে নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান দিমিত্রি মেদভেদেভ যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, কল্পিত ‘ডেড হ্যান্ড’ কতটা বিপজ্জনক হতে পারে, সে বিষয়ে ট্রাম্পের সচেতন থাকা উচিত। মূলত রাশিয়ার স্নায়ুযুদ্ধকালীন পারমাণবিক অস্ত্রব্যবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি এ সতর্কবার্তা দেন। মেদভেদেভের এই বক্তব্যে দারুণ চটে যান ট্রাম্প, এরপরই তিনি রাশিয়ার কাছে সাবমেরিন মোতায়েনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। মেদভেদেভের ওই বক্তব্যকে ট্রাম্প ‘বোকামিপূর্ণ ও উসকানিমূলক হুমকি’ বলে উল্লেখ করেছেন।

মেদভেদেভ এবং ট্রাম্পের এই কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

ট্রাম্প তাঁর এই পদক্ষেপকে ‘সতর্কতামূলক ব্যবস্থা’ হিসেবে উপস্থাপন করলেও এটি স্নায়ুযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্টের নেওয়া সবচেয়ে সাহসী পারমাণবিক সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন মস্কোকে একটি স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে। সেই বার্তা হলো—মস্কোর উসকানিমূলক হুমকি সহ্য করবে না ওয়াশিংটন।

তবে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ শুধু রাশিয়াকে সামরিকভাবে বিরত রাখার জন্য নয়; বরং এটি একটি বিস্তৃত চাপ প্রয়োগের অংশ, যার মধ্যে কঠোর অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গ্রহণও রয়েছে। সাবমেরিন মোতায়েনের পাশাপাশি ট্রাম্প রাশিয়ার ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞাও বাড়াচ্ছেন। তিনি নানা বৈশ্বিক জোট ও বিভিন্ন দেশের আচরণের সঙ্গে রাশিয়ার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণকে সরাসরি তাঁর কৌশলে যুক্ত করছেন। যেমন—যেসব দেশ রাশিয়ার পক্ষে ঝুঁকছে বা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী অবস্থান নিচ্ছে, তাদের ওপর শুল্ক ও বাণিজ্যিক চাপ বাড়ানো হচ্ছে।

এর মধ্যে ভারতও রয়েছে। ব্রিকস জোটের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ভারত। দেশটি এখনো রাশিয়ার কাছ থেকে ছাড়মূল্যে তেল ও অস্ত্র আমদানি অব্যাহত রেখেছে মেদভেদেভ-ট্রাম্পের কথার লড়াই স্নায়ুযুদ্ধের সময়ের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার নিয়ে উত্তেজনার কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি বিশ্বব্যাপী বাড়তে থাকা উত্তেজনা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে একটি শক্তিশালী ভূরাজনৈতিক বার্তাও।

ট্রাম্প রাশিয়ার কাছাকাছি যেসব সাবমেরিন মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছেন, সেগুলো যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ওহাইও-ক্লাস ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র বহরের অংশ। সেগুলো বেশ কয়েকটি পারমাণবিক যুদ্ধাস্ত্র বহন করতে সক্ষম। যুক্তরাষ্ট্রের ওই স্টেলথ সাবমেরিনগুলো যেকোনো রাডার বা শনাক্তকরণ ব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম। দারুণ শক্তিশালী এই সাবমেরিনগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত অস্ত্রাগারের অন্যতম মারাত্মক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র।

মেদভেদেভ কি স্নায়ুযুদ্ধকালের পারমাণবিক হুঁশিয়ারি পুনরুজ্জীবিত করেছেন ট্রাম্প প্রশাসন ও মস্কোর মধ্যে এই উত্তেজনা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, ইউক্রেনের দীর্ঘায়িত যুদ্ধ, সাইবার হুমকি এবং অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়া সম্পর্কে উত্তেজনার পারদ আগেই চড়ছিল। এর মধ্যে এই ঘটনা উত্তেজনার পারদকে চূড়ান্তে পৌঁছে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে সাম্প্রতিক এই উচ্চ সতর্ক অবস্থার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দিমিত্রি মেদভেদেভ। তিনি কয়েক মাস ধরে যুদ্ধংদেহী এবং আগ্রাসী কথাবার্তা বলে যাচ্ছেন। নিজের সাম্প্রতিক বিবৃতিতে মেদভেদেভ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রস্তাবিত ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং এর পরিবর্তে রাশিয়ার বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের কথা উল্লেখ করেছেন।

এটি একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল মুহূর্ত। সাবমেরিন মোতায়েনের খবর প্রচার করে, ট্রাম্প একদিকে যেমন আগ্রাসন রোধ করছেন, অন্যদিকে রুশদের (যুদ্ধ নিয়ে) ভুল–বোঝাবুঝি বা ভুল গণনার আশঙ্কাকে বাড়িয়ে দিচ্ছেন এলেনা পেত্রোভ, আটলান্টিক ইনস্টিটিউটের পারমাণবিক কৌশলবিষয়ক বিশ্লেষক

মেদভেদেভ তাঁর বক্তব্যে ‘ডেড হ্যান্ড’ কৌশলের কথাও উল্লেখ করেন। এটি স্নায়ুযুদ্ধ যুগের একটি পুরোনো কৌশল।

এই ব্যবস্থা সম্পর্কে বলা হয়, যদি রাশিয়ার জাতীয় নেতৃত্ব সম্পূর্ণভাবে ধ্বংসও হয়ে যায়, তবে এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে সক্ষম।

back to top