প্লাস্টিক পৃথিবীর পরিবেশ ও মানবজাতির স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমাগত এক বড় ধরনের বিপদ হয়ে উঠছে। আর এ বিপদের আশঙ্কাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শৈশব থেকে শুরু করে বুড়ো বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ প্লাস্টিক। প্রতিবছর প্লাস্টিকের কারণে শুধু স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত নতুন এক বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনায় এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশ্ব এখন প্লাস্টিকজনিত সংকটের মধ্যে আছে। প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বেড়ে যাওয়াটাই এই সংকটের প্রধান কারণ। ১৯৫০ সালের পর থেকে প্লাস্টিক উৎপাদন ২০০ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০৬০ সালের মধ্যে তা তিন গুণ বেড়ে বছরে ১০০ কোটি টনের বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্লাস্টিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। তবে পানীয়র বোতল, ফাস্ট ফুডের পাত্রসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন খুব দ্রুত বাড়ছে। আর এতে প্লাস্টিক দূষণও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে সাগরের গভীরতম খাদ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে এবং পুরো বিশ্বকে দূষিত করছে।
প্লাস্টিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। তবে পানীয়র বোতল, ফাস্ট ফুডের পাত্রসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন খুব দ্রুত বাড়ছে। আর এতে প্লাস্টিক দূষণও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে সাগরের গভীরতম খাদ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং পুরো বিশ্বকে দূষিত করছে। পুনর্ব্যবহার করা প্লাস্টিকের পরিমাণ ১০ শতাংশের কম।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিক মানুষের জীবন ও পরিবেশকে প্রতিটি ধাপে হুমকির মুখে ফেলছে। প্লাস্টিক তৈরির জন্য ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন থেকে এ হুমকির শুরু। এরপর প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার এবং অবশেষে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আরও কয়েক ধাপে হুমকি তৈরি হয়। এতে বায়ুদূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ এবং শরীরের মধ্যে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ঢুকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
প্লাস্টিক দূষণের কারণে রোগবাহী মশার সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। কারণ, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের ভেতরে জমে থাকা পানি মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত স্থান তৈরি করে। ল্যানসেটে এমন এক সময়ে পর্যালোচনাটি প্রকাশ করা হলো, যখন কিনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক একটি চুক্তির লক্ষ্যে ষষ্ঠ ও সম্ভবত চূড়ান্ত দফার আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। আলোচনায় বড় ধরনের মতবিরোধ থাকায় তা এগোতে পারছে না। ১০০টির বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদনের সীমা নির্ধারণের প্রস্তাবকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। কীভাবে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ও প্লাস্টিক শিল্পের লবিস্টরা এসব আলোচনাকে ভেস্তে দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, তা সম্প্রতি গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের শিশুবিষয়ক চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ডরিগানের নেতৃত্বে নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ মানুষ ও পরিবেশের ওপর কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে, তা আমরা ভালোভাবেই জানি।’ এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকবিষয়ক চুক্তিতে পৃথিবী এবং মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বিশেষ করে নবজাতক ও শিশুদের ওপর প্লাস্টিকের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এতে সমাজের ওপর বিশাল আর্থিক বোঝা তৈরি হয়। আমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
৯৮ শতাংশের বেশি প্লাস্টিক জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে তৈরি হয়। জ্বালানি-নির্ভর এ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বছরে প্রায় ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইডের নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। কার্বন নিঃসরণের এ পরিমাণ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দূষণকারী দেশ রাশিয়ার মোট নির্গমনের চেয়ে বেশি। তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং প্লাস্টিকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন কমানো নয়, বরং পুনর্ব্যবহারের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। তবে রাসায়নিকভাবে জটিল প্লাস্টিককে কাগজ, কাচ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো করে সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যায় না।
ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এখন পরিষ্কার যে প্লাস্টিককে শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মধ্য দিয়ে দূষণ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ৯৮ শতাংশের বেশি প্লাস্টিক জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে তৈরি হয়। জ্বালানি-নির্ভর এ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বছরে প্রায় ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। কার্বন নিঃসরণের এ পরিমাণ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দূষণকারী দেশ রাশিয়ার মোট নির্গমনের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় বাতাসে দূষণ ছড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক বর্জ্যের অর্ধেকের বেশি খোলা আকাশের নিচে পোড়ানো হয়, যা বাতাসের দূষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। প্লাস্টিকে ১৬ হাজারের বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব রাসায়নিক মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্লাস্টিকে ঠিক কোন কোন রাসায়নিক আছে, তা নিয়ে স্বচ্ছতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে।
গর্ভের শিশু, নবজাতক ও ছোট শিশুদের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে। প্লাস্টিকের প্রভাবে গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃত শিশুর জন্ম, জন্মগত ত্রুটি, ফুসফুসের বিকাশে সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতাজনিত সমস্যা এবং শিশু বয়সে ক্যানসারের মতো জটিলতা হতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্য অনেক সময় ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়, যা পানি, খাবার ও প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে যায়। মানুষের রক্ত, মস্তিষ্ক, মায়ের বুকের দুধ, গর্ভফুল, শুক্রাণু ও অস্থিমজ্জায় এ ধরনের প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মানবস্বাস্থ্যের ওপর এগুলোর প্রভাব এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এগুলোর সংযোগ থাকতে পারে। গবেষকেরা এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্লাস্টিককে অনেক সময় সস্তা উপকরণ হিসেবে দেখা হয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতির আর্থিক খরচ ধরলে এটি আসলে খুবই ব্যয়বহুল। পিবিডিই, বিপিএ এবং ডিইএইচপি—শুধু এই ৩ ধরনের প্লাস্টিক রাসায়নিক থেকে ৩৮টি দেশে স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার।
নতুন বিশ্লেষণটি একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সূচনা পর্ব। ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোয় নিয়মিত প্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। প্রতিবেদনের সহলেখক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মার্গারেট স্প্রিং বলেন, এসব প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সব পর্যায়ে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা তৈরি করতে পারবেন।
মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫
প্লাস্টিক পৃথিবীর পরিবেশ ও মানবজাতির স্বাস্থ্যের জন্য ক্রমাগত এক বড় ধরনের বিপদ হয়ে উঠছে। আর এ বিপদের আশঙ্কাকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। শৈশব থেকে শুরু করে বুড়ো বয়স পর্যন্ত বিভিন্ন রোগ ও মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এ প্লাস্টিক। প্রতিবছর প্লাস্টিকের কারণে শুধু স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে অন্তত ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় চিকিৎসা সাময়িকী দ্য ল্যানসেটে প্রকাশিত নতুন এক বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনায় এমন সতর্কবার্তা দেওয়া হয়েছে।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বিশ্ব এখন প্লাস্টিকজনিত সংকটের মধ্যে আছে। প্লাস্টিক উৎপাদনের পরিমাণ বিপুল মাত্রায় বেড়ে যাওয়াটাই এই সংকটের প্রধান কারণ। ১৯৫০ সালের পর থেকে প্লাস্টিক উৎপাদন ২০০ গুণের বেশি বেড়েছে। ২০৬০ সালের মধ্যে তা তিন গুণ বেড়ে বছরে ১০০ কোটি টনের বেশি হওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্লাস্টিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। তবে পানীয়র বোতল, ফাস্ট ফুডের পাত্রসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন খুব দ্রুত বাড়ছে। আর এতে প্লাস্টিক দূষণও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে সাগরের গভীরতম খাদ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে–ছিটিয়ে আছে এবং পুরো বিশ্বকে দূষিত করছে।
প্লাস্টিকের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার রয়েছে। তবে পানীয়র বোতল, ফাস্ট ফুডের পাত্রসহ একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের উৎপাদন খুব দ্রুত বাড়ছে। আর এতে প্লাস্টিক দূষণও ভয়াবহভাবে বেড়েছে। পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, বর্তমানে এভারেস্টের চূড়া থেকে শুরু করে সাগরের গভীরতম খাদ পর্যন্ত প্রায় ৮০০ কোটি টন প্লাস্টিক ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে এবং পুরো বিশ্বকে দূষিত করছে। পুনর্ব্যবহার করা প্লাস্টিকের পরিমাণ ১০ শতাংশের কম।
পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, প্লাস্টিক মানুষের জীবন ও পরিবেশকে প্রতিটি ধাপে হুমকির মুখে ফেলছে। প্লাস্টিক তৈরির জন্য ব্যবহৃত জীবাশ্ম জ্বালানির উত্তোলন থেকে এ হুমকির শুরু। এরপর প্লাস্টিক উৎপাদন, ব্যবহার এবং অবশেষে বর্জ্য হিসেবে ফেলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে আরও কয়েক ধাপে হুমকি তৈরি হয়। এতে বায়ুদূষণ, বিষাক্ত রাসায়নিকের সংস্পর্শ এবং শরীরের মধ্যে ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা ঢুকে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।
প্লাস্টিক দূষণের কারণে রোগবাহী মশার সংখ্যাও বেড়ে যেতে পারে। কারণ, ফেলে দেওয়া প্লাস্টিকের ভেতরে জমে থাকা পানি মশার প্রজননের জন্য উপযুক্ত স্থান তৈরি করে। ল্যানসেটে এমন এক সময়ে পর্যালোচনাটি প্রকাশ করা হলো, যখন কিনা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক একটি চুক্তির লক্ষ্যে ষষ্ঠ ও সম্ভবত চূড়ান্ত দফার আলোচনায় বসতে যাচ্ছে। আলোচনায় বড় ধরনের মতবিরোধ থাকায় তা এগোতে পারছে না। ১০০টির বেশি দেশ প্লাস্টিক উৎপাদনের সীমা নির্ধারণের প্রস্তাবকে সমর্থন দিচ্ছে। অন্যদিকে সৌদি আরবের মতো তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে। কীভাবে তেলসমৃদ্ধ দেশগুলো ও প্লাস্টিক শিল্পের লবিস্টরা এসব আলোচনাকে ভেস্তে দিতে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, তা সম্প্রতি গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন কলেজের শিশুবিষয়ক চিকিৎসক ও রোগতত্ত্ববিদ অধ্যাপক ফিলিপ ল্যান্ডরিগানের নেতৃত্বে নতুন প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ানকে তিনি বলেন, ‘প্লাস্টিক দূষণ মানুষ ও পরিবেশের ওপর কতটা মারাত্মক প্রভাব ফেলে, তা আমরা ভালোভাবেই জানি।’ এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘প্লাস্টিকবিষয়ক চুক্তিতে পৃথিবী এবং মানুষের স্বাস্থ্যের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। ঝুঁকিতে থাকা মানুষ বিশেষ করে নবজাতক ও শিশুদের ওপর প্লাস্টিকের সবচেয়ে মারাত্মক প্রভাব পড়ে। এতে সমাজের ওপর বিশাল আর্থিক বোঝা তৈরি হয়। আমাদের অবশ্যই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে হবে।’
৯৮ শতাংশের বেশি প্লাস্টিক জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে তৈরি হয়। জ্বালানি-নির্ভর এ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বছরে প্রায় ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই–অক্সাইডের নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। কার্বন নিঃসরণের এ পরিমাণ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দূষণকারী দেশ রাশিয়ার মোট নির্গমনের চেয়ে বেশি। তেলসমৃদ্ধ রাষ্ট্র এবং প্লাস্টিকশিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্লাস্টিক সংকট মোকাবিলায় উৎপাদন কমানো নয়, বরং পুনর্ব্যবহারের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত। তবে রাসায়নিকভাবে জটিল প্লাস্টিককে কাগজ, কাচ, ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের মতো করে সহজে পুনর্ব্যবহারযোগ্য করা যায় না।
ল্যানসেটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এটা এখন পরিষ্কার যে প্লাস্টিককে শুধু পুনর্ব্যবহারযোগ্য করে তোলার মধ্য দিয়ে দূষণ সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। ৯৮ শতাংশের বেশি প্লাস্টিক জীবাশ্ম তেল, গ্যাস ও কয়লা থেকে তৈরি হয়। জ্বালানি-নির্ভর এ উৎপাদনপ্রক্রিয়ায় বছরে প্রায় ২০০ কোটি টন কার্বন ডাই-অক্সাইডের নিঃসরণ হয়, যা জলবায়ু সংকটকে বাড়িয়ে তুলছে। কার্বন নিঃসরণের এ পরিমাণ বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম দূষণকারী দেশ রাশিয়ার মোট নির্গমনের চেয়ে বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্লাস্টিক উৎপাদনের সময় বাতাসে দূষণ ছড়ায়। অনিয়ন্ত্রিত প্লাস্টিক বর্জ্যের অর্ধেকের বেশি খোলা আকাশের নিচে পোড়ানো হয়, যা বাতাসের দূষণ আরও বাড়িয়ে দেয়। প্লাস্টিকে ১৬ হাজারের বেশি রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এসব রাসায়নিক মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তবে প্লাস্টিকে ঠিক কোন কোন রাসায়নিক আছে, তা নিয়ে স্বচ্ছতার যথেষ্ট ঘাটতি আছে।
গর্ভের শিশু, নবজাতক ও ছোট শিশুদের ওপর প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব বেশি পড়ে। প্লাস্টিকের প্রভাবে গর্ভপাত, অপরিণত ও মৃত শিশুর জন্ম, জন্মগত ত্রুটি, ফুসফুসের বিকাশে সমস্যা, প্রজনন ক্ষমতাজনিত সমস্যা এবং শিশু বয়সে ক্যানসারের মতো জটিলতা হতে পারে। প্লাস্টিক বর্জ্য অনেক সময় ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়, যা পানি, খাবার ও প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানুষের শরীরে ঢুকে যায়। মানুষের রক্ত, মস্তিষ্ক, মায়ের বুকের দুধ, গর্ভফুল, শুক্রাণু ও অস্থিমজ্জায় এ ধরনের প্লাস্টিক কণার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। মানবস্বাস্থ্যের ওপর এগুলোর প্রভাব এখনো পুরোপুরি জানা যায়নি। তবে ধারণা করা হয় যে স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সঙ্গে এগুলোর সংযোগ থাকতে পারে। গবেষকেরা এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
প্লাস্টিককে অনেক সময় সস্তা উপকরণ হিসেবে দেখা হয়। তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন, স্বাস্থ্যজনিত ক্ষতির আর্থিক খরচ ধরলে এটি আসলে খুবই ব্যয়বহুল। পিবিডিই, বিপিএ এবং ডিইএইচপি—শুধু এই ৩ ধরনের প্লাস্টিক রাসায়নিক থেকে ৩৮টি দেশে স্বাস্থ্যজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ বছরে ১ লাখ ৫০ হাজার কোটি ডলার।
নতুন বিশ্লেষণটি একটি ধারাবাহিক প্রতিবেদনের সূচনা পর্ব। ধারাবাহিক প্রতিবেদনগুলোয় নিয়মিত প্লাস্টিকের প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। প্রতিবেদনের সহলেখক ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মার্গারেট স্প্রিং বলেন, এসব প্রতিবেদন বিশ্বজুড়ে নীতিনির্ধারকদের জন্য একটি নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী তথ্যসূত্র হিসেবে কাজ করবে। এর মধ্য দিয়ে তাঁরা সব পর্যায়ে প্লাস্টিক দূষণ মোকাবিলায় কার্যকর নীতিমালা তৈরি করতে পারবেন।