ক্যাপশন: কলকাতার নিউ মার্কেটের লিন্ডসে স্ট্রিটের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকায় সাম্প্রতিক চিত্র এটি। বাংলাদেশী পর্যটকের অভাবে প্রায় জনশূন্য পুরো এলাকা।
কলকাতার নিউ মার্কেটের কাছে—এক প্রান্তে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং আরেক প্রান্তে মার্কুইস স্ট্রিটের মাঝের জায়গাটি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত।
দীর্ঘদিন ধরে এটি বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রিয় স্থান। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে হোটেলে থাকা যায়। ‘ওপার বাংলা’র খাবার পাওয়া যায়। কলকাতার প্রধান প্রধান রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো কাছে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতেও যাওয়া যায় দ্রুত।
গত এক বছরে এই স্থানের দৃশ্যপট একেবারে উল্টে গেছে।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে এই এলাকার গলিগুলোতে এখন শুধুই নীরবতা।
এই এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের যে পদচারণা ছিল তা প্রায় নেই হয়ে গেছে।
এ বছর ৫ই আগস্টের প্রাক্কালে টাইমস অব ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই এক বছরে এই এলাকায় বাংলাদেশিদের পর্যটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে।
এটা সেখানকার পর্যটনসেবায় নিয়োজিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণশীল হিসাব। তবে অনেকেই বলছেন, প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়েও বেশি হবে।
এই সময়ে কলকাতার হোটেল, খাবারের দোকান, খুচরা বিক্রয়, ট্রাভেল এজেন্ট, বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবহন খাত প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি হায়দার আলী খান বলেন, “নিউ মার্কেট আর বউবাজারের কথা যদি ধরি, তাহলে বছরের এই ক্ষতির পরিমাণ আসলে ৫০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে।”
এই সময়ের মধ্যে এখানকার বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অথবা টিকে থাকার জন্য কেবল স্থানীয়দের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
মার্কুইস স্ট্রিটের একটি পরিবহন সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “এক বছর আগে একই সময়ে একসঙ্গে অনেকগুলো বাস আসত পর্যটকদের নিয়ে, পার্কিংয়ের ঝামেলা হয়ে যেতো। এখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও একটি পর্যটকবাহী বাস আসে না।”
বর্তমানে সেখানে বিদেশি মুদ্রার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে আছে। মার্কুইস স্ট্রিটের মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইনতেজার বলেন, “আমরা এখন টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশের পর্যটকদের ওপরই নির্ভরশীল ছিলাম।”
ব্যবসায়ীদের মতে, এখানে ছোট ছোট জায়গার ওপর মাঝারি আকারের যত রেস্তোরাঁ ছিল, এখন তার প্রায় ৪০ শতাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি বড় ব্যবসা এখন কোনো মতে টিকে আছে।
রাধুনি রেস্তোরাঁর এনসি ভৌমিক বলেন, “২০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে ব্যবসা। এখন আর এগুলো চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কোনো মতে লেগে আছি, আবার ঘুরে দাঁড়াবে সেই অপেক্ষায় রয়েছি।”
ঢাকার ঘটনার প্রভাব এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ছিল মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এর আগে আরেক দফা ধকল গেছে করোনার সময়। তিনি বলেন, “অনেকের মতো আমরাও ভেবেছিলাম, করোনার পর ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হবে। আমরা আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ঋণও নিয়েছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবস্থা ভালোই চলছিল করোনার আগে। এতটা চাপ ছিল যে আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখন আমাদের প্রতি মাসে দেড় লাখ রুপি ব্যাংকে শোধ করতে হয়, কিন্তু কোনো আয়ই হচ্ছে না।”
শুধু এরকম বড় বড় ব্যবসা নয়, বাংলাদেশিদের পর্যটনকে ঘিরে আরও যেসব অনানুষ্ঠানিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে চলতো—যেমন বাড়িতে রান্না করা খাবার, বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা, ট্যুর গাইড—এগুলোর ব্যবসাও ধসে গেছে। এখানকার শত শত রেস্তোরাঁ কর্মী, বাবুর্চি, গাড়ি চালক, খুচরা দোকানদারের সবার ওপরই মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তাদের আয়ে ধস নেমেছে।
এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল জানান, “আমি করোনার পর দু’টি গাড়ি কিনেছিলাম ব্যবসা করার জন্য। তখন অনেক ক্লায়েন্টকে চাপের কারণে ফিরিয়ে দিতে হতো। আর এখন মাসে ৫–৬টার বেশি বুকিং পাই না, এর বেশিরভাগই এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা, যাদের কাছ থেকে তেমন আয় হয় না। এছাড়া আমারও ঋণের টাকা শোধ করতে হয়।”
গত ৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ভারত বাংলাদেশে ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে সেগুলোর কার্যক্রম শুরু করে ভারত। তবে চিকিৎসা ভিসা এবং কিছু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা ইস্যু বলা চলে প্রায় বন্ধই রেখেছে ভারত।
ক্যাপশন: কলকাতার নিউ মার্কেটের লিন্ডসে স্ট্রিটের ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এলাকায় সাম্প্রতিক চিত্র এটি। বাংলাদেশী পর্যটকের অভাবে প্রায় জনশূন্য পুরো এলাকা।
মঙ্গলবার, ০৫ আগস্ট ২০২৫
কলকাতার নিউ মার্কেটের কাছে—এক প্রান্তে ফ্রি স্কুল স্ট্রিট এবং আরেক প্রান্তে মার্কুইস স্ট্রিটের মাঝের জায়গাটি ‘মিনি বাংলাদেশ’ হিসেবে পরিচিত।
দীর্ঘদিন ধরে এটি বাংলাদেশি পর্যটকদের প্রিয় স্থান। এখানে সাশ্রয়ী মূল্যে হোটেলে থাকা যায়। ‘ওপার বাংলা’র খাবার পাওয়া যায়। কলকাতার প্রধান প্রধান রেলওয়ে স্টেশন ও বাস টার্মিনালগুলো কাছে। হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলোতেও যাওয়া যায় দ্রুত।
গত এক বছরে এই স্থানের দৃশ্যপট একেবারে উল্টে গেছে।
২০২৪ সালের ৫ই আগস্ট অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পতনের পর থেকে এই এলাকার গলিগুলোতে এখন শুধুই নীরবতা।
এই এলাকায় বাংলাদেশের মানুষের যে পদচারণা ছিল তা প্রায় নেই হয়ে গেছে।
এ বছর ৫ই আগস্টের প্রাক্কালে টাইমস অব ইন্ডিয়া-য় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই এক বছরে এই এলাকায় বাংলাদেশিদের পর্যটন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে ক্ষতির পরিমাণ কমপক্ষে ১০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে।
এটা সেখানকার পর্যটনসেবায় নিয়োজিত কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের রক্ষণশীল হিসাব। তবে অনেকেই বলছেন, প্রকৃত ক্ষতি এর চেয়েও বেশি হবে।
এই সময়ে কলকাতার হোটেল, খাবারের দোকান, খুচরা বিক্রয়, ট্রাভেল এজেন্ট, বিদেশি মুদ্রা বিনিময়, স্বাস্থ্যসেবা এবং পরিবহন খাত প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি রুপির ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
ফ্রি স্কুল স্ট্রিট ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি হায়দার আলী খান বলেন, “নিউ মার্কেট আর বউবাজারের কথা যদি ধরি, তাহলে বছরের এই ক্ষতির পরিমাণ আসলে ৫০০০ কোটি রুপি ছাড়িয়ে গেছে।”
এই সময়ের মধ্যে এখানকার বেশ কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে, অথবা টিকে থাকার জন্য কেবল স্থানীয়দের ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
মার্কুইস স্ট্রিটের একটি পরিবহন সেবা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক প্রবীর বিশ্বাস বলেন, “এক বছর আগে একই সময়ে একসঙ্গে অনেকগুলো বাস আসত পর্যটকদের নিয়ে, পার্কিংয়ের ঝামেলা হয়ে যেতো। এখন দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও একটি পর্যটকবাহী বাস আসে না।”
বর্তমানে সেখানে বিদেশি মুদ্রার ব্যবসাও বন্ধ হয়ে আছে। মার্কুইস স্ট্রিটের মুদ্রা বিনিময় প্রতিষ্ঠানগুলোর সংগঠন কারেন্সি এক্সচেঞ্জার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইনতেজার বলেন, “আমরা এখন টিকে থাকার চেষ্টা করছি। আমরা পুরোপুরি বাংলাদেশের পর্যটকদের ওপরই নির্ভরশীল ছিলাম।”
ব্যবসায়ীদের মতে, এখানে ছোট ছোট জায়গার ওপর মাঝারি আকারের যত রেস্তোরাঁ ছিল, এখন তার প্রায় ৪০ শতাংশই বন্ধ হয়ে গেছে। কয়েকটি বড় ব্যবসা এখন কোনো মতে টিকে আছে।
রাধুনি রেস্তোরাঁর এনসি ভৌমিক বলেন, “২০ শতাংশের নিচে নেমে গেছে ব্যবসা। এখন আর এগুলো চালানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা কোনো মতে লেগে আছি, আবার ঘুরে দাঁড়াবে সেই অপেক্ষায় রয়েছি।”
ঢাকার ঘটনার প্রভাব এই এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর ছিল মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এর আগে আরেক দফা ধকল গেছে করোনার সময়। তিনি বলেন, “অনেকের মতো আমরাও ভেবেছিলাম, করোনার পর ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো হবে। আমরা আমাদের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ঋণও নিয়েছিলাম।”
তিনি আরও বলেন, “ব্যবস্থা ভালোই চলছিল করোনার আগে। এতটা চাপ ছিল যে আমার বড় ভাই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এখন আমাদের প্রতি মাসে দেড় লাখ রুপি ব্যাংকে শোধ করতে হয়, কিন্তু কোনো আয়ই হচ্ছে না।”
শুধু এরকম বড় বড় ব্যবসা নয়, বাংলাদেশিদের পর্যটনকে ঘিরে আরও যেসব অনানুষ্ঠানিক ব্যবসা-বাণিজ্য এখানে চলতো—যেমন বাড়িতে রান্না করা খাবার, বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা, ট্যুর গাইড—এগুলোর ব্যবসাও ধসে গেছে। এখানকার শত শত রেস্তোরাঁ কর্মী, বাবুর্চি, গাড়ি চালক, খুচরা দোকানদারের সবার ওপরই মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। তাদের আয়ে ধস নেমেছে।
এলিয়ট রোডের বাসিন্দা ফারহান রসুল জানান, “আমি করোনার পর দু’টি গাড়ি কিনেছিলাম ব্যবসা করার জন্য। তখন অনেক ক্লায়েন্টকে চাপের কারণে ফিরিয়ে দিতে হতো। আর এখন মাসে ৫–৬টার বেশি বুকিং পাই না, এর বেশিরভাগই এখানকার স্থানীয় বাসিন্দা, যাদের কাছ থেকে তেমন আয় হয় না। এছাড়া আমারও ঋণের টাকা শোধ করতে হয়।”
গত ৫ আগস্টের পর অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করে ভারত বাংলাদেশে ভিসা আবেদন কেন্দ্রগুলো অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেয়।
দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সীমিত পরিসরে সেগুলোর কার্যক্রম শুরু করে ভারত। তবে চিকিৎসা ভিসা এবং কিছু জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা ইস্যু বলা চলে প্রায় বন্ধই রেখেছে ভারত।