নির্দিষ্ট কিছু দেশের ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জামানত (ভিসা বন্ড) জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে এ পরীক্ষামূলক কর্মসূচি ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলবে ১২ মাস।
নতুন নিয়মটি যুক্তরাষ্ট্রের বি-১ (ব্যবসায়িক) ও বি-২ (পর্যটন) ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। প্রাথমিকভাবে জাম্বিয়া ও মালাবির ভ্রমণকারীদের এই নীতির আওতায় আনা হচ্ছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের ৫ আগস্ট প্রকাশিত অস্থায়ী চূড়ান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার (ওভারস্টে) হার ঐতিহাসিকভাবে বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই জামানত দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে এলে জমা রাখা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
তবে কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার কর্মসূচিতে থাকা ৪০টির বেশি দেশের নাগরিকদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ভিসা ওয়েভার চুক্তির আওতায় থাকা দেশের নাগরিকরা ৯০ দিন পর্যন্ত ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিসা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেন।
ভিসা বন্ড কী?
ভিসা বন্ড হলো এক ধরনের আর্থিক নিশ্চয়তা, যা কিছু দেশ নির্দিষ্ট বিদেশি নাগরিকদের সাময়িক ভিসা দেওয়ার আগে নিয়ে থাকে—যাতে ভিসাধারীরা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক ও কর্মীকে অস্থায়ী নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা দেয়, যার মেয়াদ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের বেশি থাকা হলে সেটিকে ‘ভিসা ওভারস্টে’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নিউজিল্যান্ড একসময় ওভারস্টে নিয়ন্ত্রণে ভিসা বন্ড চালু করলেও পরে তা বাতিল করে। যুক্তরাজ্যও ২০১৩ সালে কিছু ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা নেয়, কিন্তু কার্যকর করেনি।
নতুন নীতির কাঠামো
মার্কিন ভিসা বন্ডের তিনটি স্তর থাকছে—৫ হাজার, ১০ হাজার এবং ১৫ হাজার ডলার। কনস্যুলার কর্মকর্তারা আবেদনকারীর ভ্রমণের কারণ, চাকরি, আয়, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করে জামানতের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কর্মসূচি চলাকালে প্রায় দুই হাজার আবেদনকারীকে এই জামানত দিতে হতে পারে। যদি গড়ে ১০ হাজার ডলার ধরা হয়, তবে মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি ডলার।
কিছু ক্ষেত্রে জামানত মওকুফের সুযোগ থাকবে, যেমন—মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ বা জরুরি মানবিক পরিস্থিতি।
অতীতের চেষ্টা
ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সালেও একই ধরনের কর্মসূচি চালুর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। অতীতে পররাষ্ট্র দপ্তর কনস্যুলার কর্মকর্তাদের ভিসা বন্ড গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছিল, কারণ প্রক্রিয়াটি ‘জটিল’ এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
সরকারি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারীর প্রস্থানের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, যা নির্দেশ করে তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেননি।
কোন দেশগুলো প্রভাবিত হতে পারে
প্রাথমিকভাবে মালাবি ও জাম্বিয়ার বি-১ ও বি-২ ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এই নীতি কার্যকর হবে। ভবিষ্যতে যেসব দেশের ভিসা ওভারস্টে হার বেশি, স্ক্রিনিং দুর্বল, বা ‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ কর্মসূচি চালায়—তাদের তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে।
‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ হলো বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার একটি কর্মসূচি, যা অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, অস্ট্রিয়া, জর্ডান, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্কে চালু আছে।
ওভারস্টে হার কারা বেশি
২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার ও ইয়েমেনের বি-১ ও বি-২ ভিসাধারীদের মধ্যে ওভারস্টে হার সবচেয়ে বেশি। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যেও, যেমন চাদ ও ইরিত্রিয়া, এই হার বেশি।
অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ওভারস্টে হার
২০২৩ সালে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ ভিসাধারীর প্রস্থান করার কথা ছিল, কিন্তু প্রায় ৪ লাখ মানুষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের একটি বড় অংশ ভিসা ওভারস্টে করেছে।
২০০২ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ৪১ শতাংশ ভিসা ওভারস্টে ছিল। সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ এবং ২০২৪ সালেও এই হার প্রায় ৪২ শতাংশে স্থির রয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জ্যেষ্ঠ জনসংখ্যাবিদ জেফ্রি প্যাসেল বলেন, সীমান্ত অতিক্রমের ধরণ ও উৎস দেশ বদলে যাওয়ায় ওভারস্টে শনাক্ত ও নজরদারি করা এখনও কঠিন।
---
রোববার, ১০ আগস্ট ২০২৫
নির্দিষ্ট কিছু দেশের ভ্রমণকারীদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের আগে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত জামানত (ভিসা বন্ড) জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা চালু করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসনবিরোধী নীতির অংশ হিসেবে এ পরীক্ষামূলক কর্মসূচি ২০ আগস্ট থেকে শুরু হয়ে চলবে ১২ মাস।
নতুন নিয়মটি যুক্তরাষ্ট্রের বি-১ (ব্যবসায়িক) ও বি-২ (পর্যটন) ভিসাধারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। প্রাথমিকভাবে জাম্বিয়া ও মালাবির ভ্রমণকারীদের এই নীতির আওতায় আনা হচ্ছে বলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
পররাষ্ট্র দপ্তরের ৫ আগস্ট প্রকাশিত অস্থায়ী চূড়ান্ত নীতিমালায় বলা হয়েছে, যেসব দেশের নাগরিকদের ভিসা মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার (ওভারস্টে) হার ঐতিহাসিকভাবে বেশি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই জামানত দিতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে এলে জমা রাখা অর্থ ফেরত দেওয়া হবে।
তবে কানাডা, মেক্সিকো এবং যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা ওয়েভার কর্মসূচিতে থাকা ৪০টির বেশি দেশের নাগরিকদের জন্য এ নিয়ম প্রযোজ্য নয়। ভিসা ওয়েভার চুক্তির আওতায় থাকা দেশের নাগরিকরা ৯০ দিন পর্যন্ত ব্যবসা বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে ভিসা ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারেন।
ভিসা বন্ড কী?
ভিসা বন্ড হলো এক ধরনের আর্থিক নিশ্চয়তা, যা কিছু দেশ নির্দিষ্ট বিদেশি নাগরিকদের সাময়িক ভিসা দেওয়ার আগে নিয়ে থাকে—যাতে ভিসাধারীরা নির্ধারিত মেয়াদের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেন।
যুক্তরাষ্ট্র প্রতিবছর হাজারো বিদেশি শিক্ষার্থী, পর্যটক ও কর্মীকে অস্থায়ী নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা দেয়, যার মেয়াদ কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক বছর পর্যন্ত হতে পারে। নির্ধারিত সময়ের বেশি থাকা হলে সেটিকে ‘ভিসা ওভারস্টে’ হিসেবে গণ্য করা হয়।
নিউজিল্যান্ড একসময় ওভারস্টে নিয়ন্ত্রণে ভিসা বন্ড চালু করলেও পরে তা বাতিল করে। যুক্তরাজ্যও ২০১৩ সালে কিছু ‘উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ দেশের জন্য এ ধরনের পরিকল্পনা নেয়, কিন্তু কার্যকর করেনি।
নতুন নীতির কাঠামো
মার্কিন ভিসা বন্ডের তিনটি স্তর থাকছে—৫ হাজার, ১০ হাজার এবং ১৫ হাজার ডলার। কনস্যুলার কর্মকর্তারা আবেদনকারীর ভ্রমণের কারণ, চাকরি, আয়, দক্ষতা ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিবেচনা করে জামানতের পরিমাণ নির্ধারণ করবেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কর্মসূচি চলাকালে প্রায় দুই হাজার আবেদনকারীকে এই জামানত দিতে হতে পারে। যদি গড়ে ১০ হাজার ডলার ধরা হয়, তবে মোট অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় দুই কোটি ডলার।
কিছু ক্ষেত্রে জামানত মওকুফের সুযোগ থাকবে, যেমন—মার্কিন সরকারি কর্মকর্তাদের ভ্রমণ বা জরুরি মানবিক পরিস্থিতি।
অতীতের চেষ্টা
ট্রাম্প প্রশাসন ২০২০ সালেও একই ধরনের কর্মসূচি চালুর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। অতীতে পররাষ্ট্র দপ্তর কনস্যুলার কর্মকর্তাদের ভিসা বন্ড গ্রহণে নিরুৎসাহিত করেছিল, কারণ প্রক্রিয়াটি ‘জটিল’ এবং জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে পারে।
সরকারি প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০০০ সাল থেকে বিপুল সংখ্যক নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসাধারীর প্রস্থানের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, যা নির্দেশ করে তাঁরা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেননি।
কোন দেশগুলো প্রভাবিত হতে পারে
প্রাথমিকভাবে মালাবি ও জাম্বিয়ার বি-১ ও বি-২ ভিসা আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে এই নীতি কার্যকর হবে। ভবিষ্যতে যেসব দেশের ভিসা ওভারস্টে হার বেশি, স্ক্রিনিং দুর্বল, বা ‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ কর্মসূচি চালায়—তাদের তালিকায় যুক্ত করা হতে পারে।
‘সিটিজেনশিপ বাই ইনভেস্টমেন্ট’ হলো বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার একটি কর্মসূচি, যা অ্যান্টিগুয়া ও বারবুডা, অস্ট্রিয়া, জর্ডান, সেন্ট লুসিয়া ও তুরস্কে চালু আছে।
ওভারস্টে হার কারা বেশি
২০২৩ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটির তথ্য অনুযায়ী, আফ্রিকার কয়েকটি দেশ, হাইতি, লাওস, মিয়ানমার ও ইয়েমেনের বি-১ ও বি-২ ভিসাধারীদের মধ্যে ওভারস্টে হার সবচেয়ে বেশি। ট্রাম্পের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার আওতাধীন দেশগুলোর মধ্যেও, যেমন চাদ ও ইরিত্রিয়া, এই হার বেশি।
অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ওভারস্টে হার
২০২৩ সালে প্রায় ৩ কোটি ৯০ লাখ ভিসাধারীর প্রস্থান করার কথা ছিল, কিন্তু প্রায় ৪ লাখ মানুষ ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও যুক্তরাষ্ট্রে থেকে যান। মাইগ্রেশন পলিসি ইনস্টিটিউট বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে থাকা অভিবাসীদের একটি বড় অংশ ভিসা ওভারস্টে করেছে।
২০০২ সালের সরকারি হিসাব বলছে, ১৯৯০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের ৪১ শতাংশ ভিসা ওভারস্টে ছিল। সেন্টার ফর মাইগ্রেশন স্টাডিজের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ এবং ২০২৪ সালেও এই হার প্রায় ৪২ শতাংশে স্থির রয়েছে।
পিউ রিসার্চ সেন্টারের জ্যেষ্ঠ জনসংখ্যাবিদ জেফ্রি প্যাসেল বলেন, সীমান্ত অতিক্রমের ধরণ ও উৎস দেশ বদলে যাওয়ায় ওভারস্টে শনাক্ত ও নজরদারি করা এখনও কঠিন।
---