গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ - ইপিএ
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে নেতানিয়াহুর সরকার পরিকল্পনাটি অনুমোদনের পর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের কাজও জোরেশোরে চলছে। তবে ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ উঠেছে বিশ্বব্যাপী।
বিশ্বনেতারাও এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছেন। শনিবার রাতে ইসরায়েলের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পরাশক্তি দেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে মুখ খুললেও তা অগ্রাহ্য করছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, গাজায় ক্ষুধায় শিশুসহ নারী-পুরুষের করুণ মৃত্যু হচ্ছে। এই অবস্থায় কয়েকটি দেশের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৫০টি দেশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
গার্ডিয়ান বলছে, বৈশ্বিক কূটনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েল সরকার আরও কয়েক হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সৈন্য ডাকার পরিকল্পনা অনুমোদন করতে যাচ্ছে। নতুন সেনা যুক্ত হলে রিজার্ভ সেনা বেড়ে ৪ লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়াবে।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল গাজা সিটি, মধ্য গাজায় হামাসের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে। হামাস নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই হামাসকে পরাজিত করা ছাড়া ইসরায়েলের হাতে বিকল্প কিছু নেই। এটিই যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম উপায় বলে তিনি জানান।
এদিকে জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে। এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে ফরসা ইনস্টিটিউট ফর ফরেন পলিসি জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স। এতে গড়ে ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ জবাব দিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৫ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ৬১ জনের প্রাণ গেছে। ক্ষুধায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ শিশু মারা গেছে। সর্বশেষ আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬১ হাজার ৪৩০ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৫৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন।
হামলা বন্ধে ইসরায়েলের পাঁচ দাবি: আলজাজিরা জানায়, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার পরিকল্পনায় পাঁচটি দাবি রয়েছে। এর মধ্যে হামাসকে নিরস্ত্র করা, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া, গাজা উপত্যকাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং গাজায় একটি নতুন বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত: নেতানিয়াহুর গাজা দখলে সর্বাত্মক অভিযানের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় এক লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছে। গাজায় সামরিক আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করার এবং জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানান তারা। জনমত জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ৫০ জিম্মির মুক্তি চান ইসরায়েলিরা। তাদের একটি বিশাল অংশ যুদ্ধের অবিলম্বে সমাপ্তির পক্ষে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, এখনও প্রায় ২০ জন জিম্মি জীবিত রয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলেও বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ।
ব্রিটিশ চিকিৎসকের হৃদয়বিদারক বর্ণনা: গাজা পরিস্থিতির হৃদয়বিদারক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যাম সিয়ার্স। তিনি গাজায় দুটি মৃত শিশুকে ব্যাগে রাখার মুহূর্ত সম্পর্কে কথা বলছিলেন। গাজায় পরিচালিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তিন সপ্তাহ কাজ করেছেন তিনি।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গাজা এখন একটি হত্যাক্ষেত্র। সেখানে প্রতিদিন বিস্ফোরণ, জখম ও গুলিবিদ্ধ রোগীর সারি। তিনি এক রাতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বিস্ফোরণে নিহত ১১ বছর বয়সী দুটি শিশু তার হাতের কাছে আসে। একটি শিশুকে শেষবারের মতো বডি ব্যাগে ভরে রাখা অবস্থায় তার মুখ দেখেন তিনি। দৃশ্যটি হৃদয়বিদারক ছিল। শিশু দুটির পুরো পরিবারও যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত ছিল।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা নগরী পুরোপুরি দখল করা হলে তা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও জিম্মিদের জন্য ‘‘বিপর্যয়কর পরিণতি’’ ডেকে আনবে। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস রয়েছে। যদিও যুদ্ধের আগে ওই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল শহর ছিল এটি।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও আরও কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের গাজা দখলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় ইসরায়েলে সামরিক রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে জার্মানি। রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
গাজা নগরী দখলের পরিকল্পনার বিরুদ্ধে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন হাজার হাজার মানুষ - ইপিএ
সোমবার, ১১ আগস্ট ২০২৫
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা পুরোপুরি দখল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু করেছে ইসরায়েল। ইতোমধ্যে নেতানিয়াহুর সরকার পরিকল্পনাটি অনুমোদনের পর অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের কাজও জোরেশোরে চলছে। তবে ইসরায়েলি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ উঠেছে বিশ্বব্যাপী।
বিশ্বনেতারাও এই পরিকল্পনার নিন্দা করেছেন। শনিবার রাতে ইসরায়েলের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানিসহ পরাশক্তি দেশগুলো ফিলিস্তিনের পক্ষে মুখ খুললেও তা অগ্রাহ্য করছে ইসরায়েল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও স্বীকার করেছেন, গাজায় ক্ষুধায় শিশুসহ নারী-পুরুষের করুণ মৃত্যু হচ্ছে। এই অবস্থায় কয়েকটি দেশের অনুরোধে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। জাতিসংঘের ১৯৩ সদস্য রাষ্ট্রের মধ্যে প্রায় ১৫০টি দেশই ইতোমধ্যে ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দিয়েছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য ও কানাডা স্বীকৃতি দেওয়ার কথা জানিয়েছে।
গার্ডিয়ান বলছে, বৈশ্বিক কূটনৈতিক চাপ উপেক্ষা করে ইসরায়েল সরকার আরও কয়েক হাজার অতিরিক্ত রিজার্ভ সৈন্য ডাকার পরিকল্পনা অনুমোদন করতে যাচ্ছে। নতুন সেনা যুক্ত হলে রিজার্ভ সেনা বেড়ে ৪ লাখ ৩০ হাজারে দাঁড়াবে।
রোববার সংবাদ সম্মেলনে নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল গাজা সিটি, মধ্য গাজায় হামাসের অবশিষ্ট ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাবে। হামাস নিরস্ত্রীকরণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই হামাসকে পরাজিত করা ছাড়া ইসরায়েলের হাতে বিকল্প কিছু নেই। এটিই যুদ্ধ শেষ করার সর্বোত্তম উপায় বলে তিনি জানান।
এদিকে জার্মানির সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়ার পক্ষে। এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি পরিচালনা করেছে ফরসা ইনস্টিটিউট ফর ফরেন পলিসি জার্নাল ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্স। এতে গড়ে ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা ফিলিস্তিনের স্বীকৃতির ব্যাপারে ‘হ্যাঁ’ জবাব দিয়েছেন।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলি হামলায় ৩৫ ত্রাণপ্রত্যাশীসহ ৬১ জনের প্রাণ গেছে। ক্ষুধায় এ পর্যন্ত কমপক্ষে ১০০ শিশু মারা গেছে। সর্বশেষ আরও পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের মধ্যে দুটি শিশুও রয়েছে। এ নিয়ে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২১৭ জনে দাঁড়িয়েছে। ইসরায়েলি হামলায় কমপক্ষে ৬১ হাজার ৪৩০ ফিলিস্তিনি নিহত ও এক লাখ ৫৩ হাজার ২১৩ জন আহত হয়েছেন।
হামলা বন্ধে ইসরায়েলের পাঁচ দাবি: আলজাজিরা জানায়, গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলি নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার পরিকল্পনায় পাঁচটি দাবি রয়েছে। এর মধ্যে হামাসকে নিরস্ত্র করা, সব জিম্মিকে ফিরিয়ে দেওয়া, গাজা উপত্যকাকে সামরিকীকরণমুক্ত করা, অঞ্চলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করা এবং গাজায় একটি নতুন বেসামরিক প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা, যা হামাস বা ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ নয়।
নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে বিক্ষোভ অব্যাহত: নেতানিয়াহুর গাজা দখলে সর্বাত্মক অভিযানের বিরুদ্ধে শনিবার রাতে তেল আবিবের রাস্তায় এক লাখের বেশি মানুষ বিক্ষোভ করেছে। গাজায় সামরিক আক্রমণ অবিলম্বে বন্ধ করার এবং জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানান তারা। জনমত জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের হাতে আটক অবশিষ্ট ৫০ জিম্মির মুক্তি চান ইসরায়েলিরা। তাদের একটি বিশাল অংশ যুদ্ধের অবিলম্বে সমাপ্তির পক্ষে। ইসরায়েলি কর্মকর্তারা বিশ্বাস করেন, এখনও প্রায় ২০ জন জিম্মি জীবিত রয়েছে। তুরস্কের ইস্তাম্বুলেও বিক্ষোভ করেছে হাজারো মানুষ।
ব্রিটিশ চিকিৎসকের হৃদয়বিদারক বর্ণনা: গাজা পরিস্থিতির হৃদয়বিদারক দৃশ্যের বর্ণনা দিয়েছেন ব্রিটিশ চিকিৎসক স্যাম সিয়ার্স। তিনি গাজায় দুটি মৃত শিশুকে ব্যাগে রাখার মুহূর্ত সম্পর্কে কথা বলছিলেন। গাজায় পরিচালিত যুক্তরাজ্যভিত্তিক চিকিৎসা দাতব্য প্রতিষ্ঠানে তিন সপ্তাহ কাজ করেছেন তিনি।
গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, গাজা এখন একটি হত্যাক্ষেত্র। সেখানে প্রতিদিন বিস্ফোরণ, জখম ও গুলিবিদ্ধ রোগীর সারি। তিনি এক রাতের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বলেন, বিস্ফোরণে নিহত ১১ বছর বয়সী দুটি শিশু তার হাতের কাছে আসে। একটি শিশুকে শেষবারের মতো বডি ব্যাগে ভরে রাখা অবস্থায় তার মুখ দেখেন তিনি। দৃশ্যটি হৃদয়বিদারক ছিল। শিশু দুটির পুরো পরিবারও যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তাদের দেহ ক্ষতবিক্ষত ছিল।
চলতি সপ্তাহে জাতিসংঘের শীর্ষ এক কর্মকর্তা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, গাজা নগরী পুরোপুরি দখল করা হলে তা ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ও জিম্মিদের জন্য ‘‘বিপর্যয়কর পরিণতি’’ ডেকে আনবে। গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনির বসবাস রয়েছে। যদিও যুদ্ধের আগে ওই অঞ্চলের সর্বাধিক জনবহুল শহর ছিল এটি।
যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, কানাডা ও আরও কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের গাজা দখলের সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়েছে। এই পরিকল্পনার বিরোধিতায় ইসরায়েলে সামরিক রপ্তানি বন্ধের হুমকি দিয়েছে জার্মানি। রোববার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইসরায়েলের পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।