যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি -এএফপি
রণাঙ্গনে ইউক্রেনের সেনাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি ড্রোন হামলা। তাঁরা এ ধরনের হামলা মোকাবিলা ও রুশ ড্রোন ধ্বংস করতে শুরু হওয়া নতুন প্রশিক্ষণকে ‘ড্রোনোসাইড’ বলেন।ইউক্রেন বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ড্রোন হামলা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হতাহতের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এগুলো। যদি আজ শুক্রবার আলাস্কায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে না পারেন, তবে পূর্ব ইউক্রেনে চলমান ওই প্রশিক্ষণ হয়তো রণাঙ্গনে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়বে।
এদিকে রুশ সেনাদের লড়াইয়ের অব্যাহত প্রস্তুতিও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউক্রেনের খুব কম মানুষ এই যুদ্ধ শিগগির থামবে বলে আশা করছেন। ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণটি তেমন আধুনিক নয়, একটি শটগান তাঁদের প্রতিরক্ষার অস্ত্র। সেনারা প্রথমে মাটি থেকে, পরে চলমান অবস্থায় দ্রুতগামী লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালানোর মহড়া দেন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ইহর সেনাদের বলেন, কাছাকাছি দূরত্বে কোনো ড্রোন ভূপাতিত করতে এখন শটগানই তাঁদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
ইহর ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের পূর্ব রণাঙ্গনে লড়ছেন। ওই বছর রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল করে এবং দনবাসে সেনা পাঠায়। যুদ্ধে ইহরের কোডনেম ‘দ্য নাইফার’। তিনি সেনাদের মুষ্টিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেন। ইহর ১০ বছর ধরে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা থামানোর চেষ্টা করছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ‘ভূমি বিনিময়’ বা কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বা আমার সহযোদ্ধাদের কেউ এ জন্য প্রস্তুত নই। আমরা আমাদের ভূখণ্ড মুক্ত করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
ইউক্রেনীয় সেনারা স্বীকার করেছেন যে তাঁরা ক্লান্ত। তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ প্রশিক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
তবে ইহরের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিছু রণাঙ্গনে ইউক্রেনের সেনারা জনবল–সংকটে ভুগছেন। এক সেনা বলেন, নতুন করে আরও সেনা মেতায়নের চেষ্টা বিপর্যয়ের নামান্তর হবে। কেননা, তাঁরা জানেন, এখনো অস্ত্রশস্ত্র ও জনবলে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। ইউক্রেনীয় সেনারা স্বীকার করেছেন, তাঁরা ক্লান্ত। তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ওই প্রশিক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
শটগান চালানোর অনুশীলনরত ইউক্রেনীয় সেনা ওলেক্সি বলেন, যুদ্ধে ইতিমধ্যে তিনি তাঁর বাবা ও বন্ধুদের হারিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, যেভাবেই হোক এ যুদ্ধ থামাতে হবে। তবে রাশিয়াকে আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই পরামর্শ দেব না। আমি এটা পছন্দ করি না।’ ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেছেন, এ যুদ্ধে রাশিয়াও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছে। রাশিয়ার যুদ্ধের রসদও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা ইউক্রেনের শহর-গ্রামেও চলমান লড়াইয়ের ছাপ পড়ছে। যুদ্ধের পরিণতি সাধারণ মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে ছয় হাজারের বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪০০-এর কিছু বেশি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় মানুষের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট। পথচারী ওলেক্সান্দর বলেন, ‘আমরা না থামলে আরও ভূখণ্ড এবং মানুষ হারাব।’ তিনি যুদ্ধের সঙ্গে জুয়াখেলার তুলনা করে বলেন, ‘যত খেলবে, ততই হারবে।’
ইউক্রেনের গ্রামেও যুদ্ধের ছাপ পড়ছে। যুদ্ধের পরিণতি সাধারণ মানুষকে বেশি সরাসরি ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন আরেক পথচারী ভলোদিমির। তিনি মনে করেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে হয়তো আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড তিনি সমর্পণ করবেন না। জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।’ তবে সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এখন ইউক্রেনের অনেক মানুষ এ বিষয়টি মেনে নিয়েছেন যে শান্তির জন্য হয়তো তাঁদের কিছু এলাকা রাশিয়ার কাছে সমর্পণ করতে হতে পারে।
তবে রাশিয়া সত্যিকার অর্থে শান্তি চায় না বলে মনে করেন বেশির ভাগ ইউক্রেনীয়। কিয়েভের পার্লামেন্ট সদস্য ও বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান ওলেক্সান্দর মেরেজকো মনে করেন, আলাস্কার বৈঠক প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য শুধু একটি প্রচার কৌশল। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্পের কাছে কী চাচ্ছেন জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা
মেরেজকো বলেন, ‘পুতিন কোনো সমঝোতায় যেতে চান না। তিনি মনে করেন, যুদ্ধে তিনিই জিতবেন। তিনি পিছু হটবেন না।’ শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মেরেজকো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোটেও না। আমাদের ধ্বংস ডেকে আনে এমন কোনো চুক্তি ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’ শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা নৈতিক ও আইনিভাবে ভুল বলে মনে করেন তিনি।
অনেক ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যে বাড়িঘর ও জীবন হারিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ। তবে অনেক ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যে তাঁদের বাড়িঘর ও প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ।
গৃহহীন এসব মানুষের মধ্যে ৫০০ জন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে একটি অস্থায়ী গ্রামে বসবাস করছেন। ইট-কাঠের ঘরে নয়; দিন কাটছে ধাতব কনটেইনারে। বেশির ভাগই বৃদ্ধ, তাঁরা পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন। অস্থায়ী গ্রামটিতে শিশুদের জন্য ছোট একটি খেলার জায়গা আছে। এই শিশুরা হয়তো আর কখনো তাদের জন্মভূমির দেখা পাবে না। কারণ, শত্রুপক্ষ তাদের বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।
যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ভূখণ্ড হারানোর ভয়
ইউক্রেনের বন্দরনগরী মারিউপোলে যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত একটি ভবনের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এক ব্যক্তি -এএফপি
শুক্রবার, ১৫ আগস্ট ২০২৫
রণাঙ্গনে ইউক্রেনের সেনাদের জন্য এখন সবচেয়ে বড় হুমকি ড্রোন হামলা। তাঁরা এ ধরনের হামলা মোকাবিলা ও রুশ ড্রোন ধ্বংস করতে শুরু হওয়া নতুন প্রশিক্ষণকে ‘ড্রোনোসাইড’ বলেন।ইউক্রেন বলছে, যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ড্রোন হামলা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি হতাহতের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে এগুলো। যদি আজ শুক্রবার আলাস্কায় অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে না পারেন, তবে পূর্ব ইউক্রেনে চলমান ওই প্রশিক্ষণ হয়তো রণাঙ্গনে প্রাণ বাঁচানোর জন্য অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়বে।
এদিকে রুশ সেনাদের লড়াইয়ের অব্যাহত প্রস্তুতিও ইঙ্গিত দিচ্ছে, ইউক্রেনের খুব কম মানুষ এই যুদ্ধ শিগগির থামবে বলে আশা করছেন। ইউক্রেনের সেনাদের প্রশিক্ষণটি তেমন আধুনিক নয়, একটি শটগান তাঁদের প্রতিরক্ষার অস্ত্র। সেনারা প্রথমে মাটি থেকে, পরে চলমান অবস্থায় দ্রুতগামী লক্ষ্যবস্তুতে গুলি চালানোর মহড়া দেন। অভিজ্ঞ প্রশিক্ষক ইহর সেনাদের বলেন, কাছাকাছি দূরত্বে কোনো ড্রোন ভূপাতিত করতে এখন শটগানই তাঁদের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
ইহর ২০১৪ সাল থেকে ইউক্রেনের পূর্ব রণাঙ্গনে লড়ছেন। ওই বছর রাশিয়া অবৈধভাবে ক্রিমিয়া দখল করে এবং দনবাসে সেনা পাঠায়। যুদ্ধে ইহরের কোডনেম ‘দ্য নাইফার’। তিনি সেনাদের মুষ্টিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ দেন। ইহর ১০ বছর ধরে ইউক্রেনের অভ্যন্তরে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা থামানোর চেষ্টা করছেন। রাশিয়ার সঙ্গে ‘ভূমি বিনিময়’ বা কোনো অঞ্চল ছেড়ে দেওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি বা আমার সহযোদ্ধাদের কেউ এ জন্য প্রস্তুত নই। আমরা আমাদের ভূখণ্ড মুক্ত করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাব।’
ইউক্রেনীয় সেনারা স্বীকার করেছেন যে তাঁরা ক্লান্ত। তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে এ প্রশিক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
তবে ইহরের স্বপ্ন পূরণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। কিছু রণাঙ্গনে ইউক্রেনের সেনারা জনবল–সংকটে ভুগছেন। এক সেনা বলেন, নতুন করে আরও সেনা মেতায়নের চেষ্টা বিপর্যয়ের নামান্তর হবে। কেননা, তাঁরা জানেন, এখনো অস্ত্রশস্ত্র ও জনবলে পিছিয়ে আছেন তাঁরা। ইউক্রেনীয় সেনারা স্বীকার করেছেন, তাঁরা ক্লান্ত। তাঁরা পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এটি অস্বীকার করার উপায় নেই। তবে ওই প্রশিক্ষণ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে তাঁরা এখনো হাল ছাড়েননি।
শটগান চালানোর অনুশীলনরত ইউক্রেনীয় সেনা ওলেক্সি বলেন, যুদ্ধে ইতিমধ্যে তিনি তাঁর বাবা ও বন্ধুদের হারিয়েছেন। তিনি স্বীকার করেন, যেভাবেই হোক এ যুদ্ধ থামাতে হবে। তবে রাশিয়াকে আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই পরামর্শ দেব না। আমি এটা পছন্দ করি না।’ ইউক্রেনের সেনারা দাবি করেছেন, এ যুদ্ধে রাশিয়াও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় হাজার মানুষ হতাহত হচ্ছে। রাশিয়ার যুদ্ধের রসদও ধীরে ধীরে ফুরিয়ে আসছে।
যুদ্ধক্ষেত্রের বাইরে থাকা ইউক্রেনের শহর-গ্রামেও চলমান লড়াইয়ের ছাপ পড়ছে। যুদ্ধের পরিণতি সাধারণ মানুষকে বেশি ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে। গত মাসে রাশিয়া ইউক্রেনে ছয় হাজারের বেশি ড্রোন পাঠিয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে এ সংখ্যা ছিল ৪০০-এর কিছু বেশি। ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় মানুষের মধ্যে যুদ্ধ থামানোর আকাঙ্ক্ষা স্পষ্ট। পথচারী ওলেক্সান্দর বলেন, ‘আমরা না থামলে আরও ভূখণ্ড এবং মানুষ হারাব।’ তিনি যুদ্ধের সঙ্গে জুয়াখেলার তুলনা করে বলেন, ‘যত খেলবে, ততই হারবে।’
ইউক্রেনের গ্রামেও যুদ্ধের ছাপ পড়ছে। যুদ্ধের পরিণতি সাধারণ মানুষকে বেশি সরাসরি ভোগাচ্ছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে সারা দেশে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলার মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়েছে।আলাস্কায় ট্রাম্প-পুতিন বৈঠক নিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন আরেক পথচারী ভলোদিমির। তিনি মনে করেন, যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইউক্রেনকে হয়তো আরও ভূখণ্ড ছেড়ে দিতে হবে।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকে ইউক্রেনের কোনো প্রতিনিধি না থাকার বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যে হতাশা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, ইউক্রেনের কোনো ভূখণ্ড তিনি সমর্পণ করবেন না। জেলেনস্কি বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়।’ তবে সাম্প্রতিক জরিপ বলছে, এখন ইউক্রেনের অনেক মানুষ এ বিষয়টি মেনে নিয়েছেন যে শান্তির জন্য হয়তো তাঁদের কিছু এলাকা রাশিয়ার কাছে সমর্পণ করতে হতে পারে।
তবে রাশিয়া সত্যিকার অর্থে শান্তি চায় না বলে মনে করেন বেশির ভাগ ইউক্রেনীয়। কিয়েভের পার্লামেন্ট সদস্য ও বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটির চেয়ারম্যান ওলেক্সান্দর মেরেজকো মনে করেন, আলাস্কার বৈঠক প্রেসিডেন্ট পুতিনের জন্য শুধু একটি প্রচার কৌশল। পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের আগে ট্রাম্পের কাছে কী চাচ্ছেন জেলেনস্কি ও ইউরোপীয় নেতারা
মেরেজকো বলেন, ‘পুতিন কোনো সমঝোতায় যেতে চান না। তিনি মনে করেন, যুদ্ধে তিনিই জিতবেন। তিনি পিছু হটবেন না।’ শান্তিচুক্তির জন্য ইউক্রেনকে কিছু এলাকা ছেড়ে দিতে হতে পারে বলে ডোনাল্ড ট্রাম্প যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা প্রত্যাখ্যান করেছেন মেরেজকো। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মোটেও না। আমাদের ধ্বংস ডেকে আনে এমন কোনো চুক্তি ইউক্রেনের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যাবে না।’ শান্তি প্রতিষ্ঠায় মানুষকে বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য করা নৈতিক ও আইনিভাবে ভুল বলে মনে করেন তিনি।
অনেক ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যে বাড়িঘর ও জীবন হারিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ। তবে অনেক ইউক্রেনীয় ইতিমধ্যে তাঁদের বাড়িঘর ও প্রাণ হারিয়েছেন। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩ হাজারের বেশি বেসামরিক মানুষ নিহত হয়েছেন। গৃহহীন হয়েছেন ৩৫ লাখ মানুষ।
গৃহহীন এসব মানুষের মধ্যে ৫০০ জন ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভের উপকণ্ঠে একটি অস্থায়ী গ্রামে বসবাস করছেন। ইট-কাঠের ঘরে নয়; দিন কাটছে ধাতব কনটেইনারে। বেশির ভাগই বৃদ্ধ, তাঁরা পূর্বাঞ্চলের যুদ্ধকবলিত এলাকা থেকে পালিয়ে এসেছেন। অস্থায়ী গ্রামটিতে শিশুদের জন্য ছোট একটি খেলার জায়গা আছে। এই শিশুরা হয়তো আর কখনো তাদের জন্মভূমির দেখা পাবে না। কারণ, শত্রুপক্ষ তাদের বাড়িঘর দখল করে নিয়েছে।