গাজার ধ্বংসস্তুপে সন্তান নিয়ে বসে আছেন বিমর্ষ এক মা -সংগৃহীত
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরম দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার লরা লুমারের একের পর এক পোস্টের পর গাজাবাসীদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে এক পোস্টে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমিতসংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা-মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া ও নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার পূর্ণ ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করছি। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকবে।’
ওই ইনফ্লুয়েন্সারের নাম লরা লুমার । তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। লুমার গত শুক্রবার এক্সে গাজার ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একের পর এক পোস্ট দেন। লুমার বর্ণবাদী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার ও ৯/১১ হামলা ‘ভেতরের কাজ’ ছিল বলে দাবি করার জন্যও পরিচিত।
লরা লুমার এক্সে শুক্রবার তাঁর পোস্টগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি গাজার ফিলিস্তিনিদের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘হামাসপন্থী...মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কাতারের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্ত’ বলে বর্ণনা করেন। যদিও তিনি তাঁর এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
লুমারের সমালোচনার তীর ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিল প্যালেস্টাইন। গত সপ্তাহে সংস্থাটি বলেছে, তারা গাজার গুরুতর আহত ১১টি শিশুকে নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। ওই শিশুদের সঙ্গে তাদের পরিচর্যাকারী ও ভাইবোনেরা রয়েছে।
হিল প্যালেস্টাইন তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, এটা গাজা থেকে একবারে বেশিসংখ্যক আহত শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর ঘটনা।
এ নিয়ে এক্সে এক পোস্টে লুমার লেখেন, ‘সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। মার্কো রুবিও (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যখন খুঁজে বের করবেন কে ওই ভিসাগুলো অনুমোদন করেছে, তখন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউকে বরখাস্ত করতে হবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘কাতার গাজার এসব বাসিন্দাকে কাতার এয়ারওয়েজে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে। কাতার আক্ষরিক অর্থেই আমাদের দেশ ‘সন্ত্রাসী’ দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে।’
লুমার সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর টম কটনের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ওই গাজাবাসীরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা পেলেন, তাঁরা তা খতিয়ে দেখছেন।
ভিসা স্থগিতের ঘোষণার পর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি ফাইন স্পষ্টভাবে লুমারের প্রশংসা করেছেন।
র?্যান্ডি ফাইন এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘এটি উদ্?ঘাটন করার জন্য এবং আমাকে ও অন্য কর্মকর্তাদের সচেতন করার জন্য লরা লুমার বড় প্রশংসার দাবিদার। ভালো কাজ, লরা।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক ও অমানবিক’ বলে বর্ণনা করে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, গত ৩০ বছরে তারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম একটি উপায়, তাদের চিকিৎসার জন্য উদ্ধার করা। অন্যথায় গাজার ধসে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে তাদের কল্পনাতীত কষ্ট সহ্য করতে হবে বা তারা মারা যাবে।’
লুমার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কোনো পদ নেই। কিন্তু সরকার পরিচালনায় তাঁর বড় প্রভাব রয়েছে। খবর অনুযায়ী, তিনি বেশ কয়েকজন শীর্ষ মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়েছেন। তাঁদের তিনি ট্রাম্পের প্রতি আস্থাহীন ব্যক্তি বলে মনে করেন।
এর আগে গত মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলের একজন কর্মকর্তা লুমারের আক্রোশের শিকার হন। যোগ্যতাসম্পন্ন ওই কর্মকর্তাকে ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। লুমারের সমালোচনার এক দিন পর পেন্টাগন সেই চাকরির প্রস্তাব বাতিল করে।
গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প অত্যন্ত সংবেদনশীল ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান টিমোথি হফ ও তাঁর সহকারী ওয়েন্ডি নোবেলকে বরখাস্ত করেন। টিমোথি হফ ‘ইউএস সাইবার কমান্ড’-এর প্রধান ছিলেন। লুমারের অনুরোধেই এটা ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। লুমার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরই হফকে বরখাস্ত করা হয়।
শনিবার লুমার এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘আর কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা সাংবাদিক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে এতজন বাইডেনকালীন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করাতে সক্ষম হননি!’
গাজার ধ্বংসস্তুপে সন্তান নিয়ে বসে আছেন বিমর্ষ এক মা -সংগৃহীত
রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চরম দক্ষিণপন্থী ইনফ্লুয়েন্সার লরা লুমারের একের পর এক পোস্টের পর গাজাবাসীদের জন্য সব ধরনের ভ্রমণ ভিসা স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শনিবার দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ঘোষণা দেয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক্সে এক পোস্টে বলেছে, ‘সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সীমিতসংখ্যক অস্থায়ী চিকিৎসা-মানবিক ভিসা দেওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়া ও নীতিমালা ব্যবহার করা হয়েছে, আমরা তার পূর্ণ ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করছি। এ সময় গাজার বাসিন্দাদের জন্য সব ভ্রমণ ভিসা বন্ধ থাকবে।’
ওই ইনফ্লুয়েন্সারের নাম লরা লুমার । তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। লুমার গত শুক্রবার এক্সে গাজার ফিলিস্তিনিদের যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে একের পর এক পোস্ট দেন। লুমার বর্ণবাদী ষড়যন্ত্রতত্ত্ব প্রচার ও ৯/১১ হামলা ‘ভেতরের কাজ’ ছিল বলে দাবি করার জন্যও পরিচিত।
লরা লুমার এক্সে শুক্রবার তাঁর পোস্টগুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতি গাজার ফিলিস্তিনিদের ভ্রমণ ভিসা দেওয়া বন্ধ করার আহ্বান জানান। তিনি গাজার ফিলিস্তিনিদের ‘হামাসপন্থী...মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং কাতারের কাছ থেকে অর্থ প্রাপ্ত’ বলে বর্ণনা করেন। যদিও তিনি তাঁর এসব দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেননি।
লুমারের সমালোচনার তীর ছিল যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা হিল প্যালেস্টাইন। গত সপ্তাহে সংস্থাটি বলেছে, তারা গাজার গুরুতর আহত ১১টি শিশুকে নিরাপদে যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসার জন্য পৌঁছাতে সাহায্য করেছে। ওই শিশুদের সঙ্গে তাদের পরিচর্যাকারী ও ভাইবোনেরা রয়েছে।
হিল প্যালেস্টাইন তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, এটা গাজা থেকে একবারে বেশিসংখ্যক আহত শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানোর ঘটনা।
এ নিয়ে এক্সে এক পোস্টে লুমার লেখেন, ‘সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। মার্কো রুবিও (পররাষ্ট্রমন্ত্রী) যখন খুঁজে বের করবেন কে ওই ভিসাগুলো অনুমোদন করেছে, তখন পররাষ্ট্র দপ্তরের কাউকে বরখাস্ত করতে হবে।’ তিনি আরও লেখেন, ‘কাতার গাজার এসব বাসিন্দাকে কাতার এয়ারওয়েজে করে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এসেছে। কাতার আক্ষরিক অর্থেই আমাদের দেশ ‘সন্ত্রাসী’ দিয়ে ভরিয়ে দিচ্ছে।’
লুমার সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির চেয়ারম্যান রিপাবলিকান সিনেটর টম কটনের স্টাফদের সঙ্গে কথা বলার কথাও বলেছেন। তিনি বলেন, ওই গাজাবাসীরা কীভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আসার ভিসা পেলেন, তাঁরা তা খতিয়ে দেখছেন।
ভিসা স্থগিতের ঘোষণার পর রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান র্যান্ডি ফাইন স্পষ্টভাবে লুমারের প্রশংসা করেছেন।
র?্যান্ডি ফাইন এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘এটি উদ্?ঘাটন করার জন্য এবং আমাকে ও অন্য কর্মকর্তাদের সচেতন করার জন্য লরা লুমার বড় প্রশংসার দাবিদার। ভালো কাজ, লরা।’
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতব্য সংস্থা প্যালেস্টাইন চিলড্রেনস রিলিফ ফান্ড ট্রাম্প প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক ও অমানবিক’ বলে বর্ণনা করে তা থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়েছে।
এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, গত ৩০ বছরে তারা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘গাজার শিশুদের বাঁচিয়ে রাখার অন্যতম একটি উপায়, তাদের চিকিৎসার জন্য উদ্ধার করা। অন্যথায় গাজার ধসে পড়া স্বাস্থ্য পরিকাঠামোতে তাদের কল্পনাতীত কষ্ট সহ্য করতে হবে বা তারা মারা যাবে।’
লুমার যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি কোনো পদ নেই। কিন্তু সরকার পরিচালনায় তাঁর বড় প্রভাব রয়েছে। খবর অনুযায়ী, তিনি বেশ কয়েকজন শীর্ষ মার্কিন নিরাপত্তা কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার চেষ্টা চালিয়ে সফল হয়েছেন। তাঁদের তিনি ট্রাম্পের প্রতি আস্থাহীন ব্যক্তি বলে মনে করেন।
এর আগে গত মাসে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমলের একজন কর্মকর্তা লুমারের আক্রোশের শিকার হন। যোগ্যতাসম্পন্ন ওই কর্মকর্তাকে ওয়েস্ট পয়েন্ট মিলিটারি একাডেমিতে একটি মর্যাদাপূর্ণ পদে চাকরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। লুমারের সমালোচনার এক দিন পর পেন্টাগন সেই চাকরির প্রস্তাব বাতিল করে।
গত এপ্রিল মাসে ট্রাম্প অত্যন্ত সংবেদনশীল ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির প্রধান টিমোথি হফ ও তাঁর সহকারী ওয়েন্ডি নোবেলকে বরখাস্ত করেন। টিমোথি হফ ‘ইউএস সাইবার কমান্ড’-এর প্রধান ছিলেন। লুমারের অনুরোধেই এটা ঘটেছিল বলে ধারণা করা হয়। লুমার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পরই হফকে বরখাস্ত করা হয়।
শনিবার লুমার এক্সে এক পোস্টে লেখেন, ‘আর কোনো কনটেন্ট ক্রিয়েটর বা সাংবাদিক ট্রাম্প প্রশাসন থেকে এতজন বাইডেনকালীন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করাতে সক্ষম হননি!’