ভারতের নানা শহরে গড়ে উঠছে ‘গার্বেজ ক্যাফে’ (আবর্জনার রেস্তোরাঁ)। প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসলে কতা কার্যকর হতে পারে এ উদ্যোগ, তা দেখতে ছত্তিশগড় রাজ্যের আম্বিকাপুরে হাজির হয়েছিল বিবিসি।
২০২৫ সালের শুরুর দিকের এক মেঘলা শীতের দিনে বিবিসির প্রতিনিধি পৌঁছান ভারতের প্রথম গার্বেজ ক্যাফেতে। গরম সমুচার সুগন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে জায়গাটিকে করে তুলেছিল তৃপ্তিদায়ক। ভেতরে কাঠের বেঞ্চে বসে কেউ শান্তভাবে খাচ্ছেন, কেউ আবার গল্প করছেন। সবার হাতে ধোঁয়া ওঠা খাবারের স্টিলের প্লেট।
প্রতিদিন আম্বিকাপুরের এ ক্যাফেতে আসেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ। কিন্তু এখানে খাবারের দাম মেটানো হয় না টাকা বা রুপিতে। বরং প্লাস্টিকের পুরোনো ব্যাগ, খাবারের মোড়ক বা পানির বোতল দিয়েই পাওয়া যায় গরম ভাত-রুটি।
আম্বিকাপুর পৌর করপোরেশনের (এএমসি) হয়ে ক্যাফেটি চালান বিনোদ কুমার প্যাটেল। তিনি জানান, এক কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য দিলে পাওয়া যাবে ভাত, ডাল, দুই রকম সবজি, রুটি, সালাদ, আচারসহ পুরো খাবার। আর আধা কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পাওয়া যায় সকালের নাশতা, যেমন সমুচা বা বড়া পাঁও (আলুর বড়া-পাউরুটি বা আলুর চপ-রুটি)।
মধ্য ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের শহর আম্বিকাপুর প্লাস্টিক দূষণকে ব্যবহার করেছে ক্ষুধা মেটানোর উপায় হিসেবে। ২০১৯ সালে চালু হয় এই গার্বেজ ক্যাফে। স্লোগান ছিল-‘অধিক বর্জ্য, উন্নত স্বাদ’। পৌর করপোরেশনের স্বাস্থ্যবাজেট থেকে অর্থায়ন করে এটি চালু করা হয় শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ডের কাছে।
বিনোদ কুমার বলেন, ‘আম্বিকাপুরে দুটি বড় সমস্যা ছিল- প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধা। আমাদের ধারণা ছিল সহজ। দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন আর র?্যাগপিকারদের (আবর্জনাকুড়ানি) রাস্তাঘাট ও ল্যান্ডফিল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা এবং বিনিময়ে তাদের গরম খাবার দেওয়া।’
প্রতিদিন আম্বিকাপুরের এ ক্যাফেতে আসেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ। কিন্তু এখানে খাবারের দাম মেটানো হয় না টাকা বা রুপিতে; বরং প্লাস্টিকের পুরোনো ব্যাগ, খাবারের মোড়ক বা পানির বোতল দিয়েই পাওয়া যায় গরম ভাত-রুটি।
রাশমি মণ্ডল স্থানীয় এক নারী। তিনি প্রতিদিন প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসেন এ ক্যাফেতে। এমন বর্জ্যের খোঁজে সকালেই তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। খাবারের পুরোনো মোড়ক থেকে শুরু করে পানির বোতল; যেকোনো ফেলনা প্লাস্টিকসামগ্রীই তার সংগ্রহের লক্ষ্য। তার কাছে এটি জীবিকার মাধ্যম।
রাশমি বলেন, ‘বছরের পর বছর এ কাজ করছি।’ তিনি জানান, আগে কেজিপ্রতি মাত্র ১০ রুপি দামে প্লাস্টিক বিক্রি করতেন স্থানীয় ভাঙারির দোকানে। তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব ছিল না। এখন তিনি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পরিবারকে খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে।
ক্যাফেতে আসা ব্যক্তিদের অনেকেই দরিদ্র পরিবার থেকে আসেন বলে জানালেন শারদা সিং প্যাটেল। তিনি শুরু থেকেই এখানে কাজ করছেন। বলেন, ‘প্লাস্টিকের বদলে খাবার দিয়ে আমরা শুধু ক্ষুধা মেটাচ্ছি না, পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখছি।’ বিনোদ প্যাটেলের হিসাবে, গড়ে প্রতিদিন ২০ জনের বেশি মানুষ এখানে এসে খাবার পান।
শহরের স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেখভাল করেন রিতেশ সাইনি। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান’-এর এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে গার্বেজ ক্যাফে প্রায় ২৩ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। ফলে শহরের ল্যান্ডফিলে যাওয়া প্লাস্টিকের পরিমাণ কমে এসেছে। যেখানে ২০১৯ সালে বছরে প্লাস্টিক বর্জ্য আসার পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৪ টন, সেখানে ২০২৪ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে বছরে ২ টনে। ২০১৪ সালে ভারত সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান’ নামের ওই উদ্যোগ হাতে নেয়।
আম্বিকাপুরে দুটি বড় সমস্যা ছিল। প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধা। আমাদের ধারণা ছিল সহজ। দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন আর র্যাগপিকারদের (আবর্জনাকুড়ানি) রাস্তাঘাট ও ল্যান্ডফিল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা এবং বিনিময়ে তাদের গরম খাবার দেওয়া।
বুধবার, ২০ আগস্ট ২০২৫
ভারতের নানা শহরে গড়ে উঠছে ‘গার্বেজ ক্যাফে’ (আবর্জনার রেস্তোরাঁ)। প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসলে কতা কার্যকর হতে পারে এ উদ্যোগ, তা দেখতে ছত্তিশগড় রাজ্যের আম্বিকাপুরে হাজির হয়েছিল বিবিসি।
২০২৫ সালের শুরুর দিকের এক মেঘলা শীতের দিনে বিবিসির প্রতিনিধি পৌঁছান ভারতের প্রথম গার্বেজ ক্যাফেতে। গরম সমুচার সুগন্ধ চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে জায়গাটিকে করে তুলেছিল তৃপ্তিদায়ক। ভেতরে কাঠের বেঞ্চে বসে কেউ শান্তভাবে খাচ্ছেন, কেউ আবার গল্প করছেন। সবার হাতে ধোঁয়া ওঠা খাবারের স্টিলের প্লেট।
প্রতিদিন আম্বিকাপুরের এ ক্যাফেতে আসেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ। কিন্তু এখানে খাবারের দাম মেটানো হয় না টাকা বা রুপিতে। বরং প্লাস্টিকের পুরোনো ব্যাগ, খাবারের মোড়ক বা পানির বোতল দিয়েই পাওয়া যায় গরম ভাত-রুটি।
আম্বিকাপুর পৌর করপোরেশনের (এএমসি) হয়ে ক্যাফেটি চালান বিনোদ কুমার প্যাটেল। তিনি জানান, এক কেজি প্লাস্টিক বর্জ্য দিলে পাওয়া যাবে ভাত, ডাল, দুই রকম সবজি, রুটি, সালাদ, আচারসহ পুরো খাবার। আর আধা কেজি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পাওয়া যায় সকালের নাশতা, যেমন সমুচা বা বড়া পাঁও (আলুর বড়া-পাউরুটি বা আলুর চপ-রুটি)।
মধ্য ভারতের ছত্তিশগড় রাজ্যের শহর আম্বিকাপুর প্লাস্টিক দূষণকে ব্যবহার করেছে ক্ষুধা মেটানোর উপায় হিসেবে। ২০১৯ সালে চালু হয় এই গার্বেজ ক্যাফে। স্লোগান ছিল-‘অধিক বর্জ্য, উন্নত স্বাদ’। পৌর করপোরেশনের স্বাস্থ্যবাজেট থেকে অর্থায়ন করে এটি চালু করা হয় শহরের প্রধান বাসস্ট্যান্ডের কাছে।
বিনোদ কুমার বলেন, ‘আম্বিকাপুরে দুটি বড় সমস্যা ছিল- প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধা। আমাদের ধারণা ছিল সহজ। দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন আর র?্যাগপিকারদের (আবর্জনাকুড়ানি) রাস্তাঘাট ও ল্যান্ডফিল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা এবং বিনিময়ে তাদের গরম খাবার দেওয়া।’
প্রতিদিন আম্বিকাপুরের এ ক্যাফেতে আসেন অনেক ক্ষুধার্ত মানুষ। কিন্তু এখানে খাবারের দাম মেটানো হয় না টাকা বা রুপিতে; বরং প্লাস্টিকের পুরোনো ব্যাগ, খাবারের মোড়ক বা পানির বোতল দিয়েই পাওয়া যায় গরম ভাত-রুটি।
রাশমি মণ্ডল স্থানীয় এক নারী। তিনি প্রতিদিন প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে আসেন এ ক্যাফেতে। এমন বর্জ্যের খোঁজে সকালেই তিনি বেরিয়ে পড়েন রাস্তায়। খাবারের পুরোনো মোড়ক থেকে শুরু করে পানির বোতল; যেকোনো ফেলনা প্লাস্টিকসামগ্রীই তার সংগ্রহের লক্ষ্য। তার কাছে এটি জীবিকার মাধ্যম।
রাশমি বলেন, ‘বছরের পর বছর এ কাজ করছি।’ তিনি জানান, আগে কেজিপ্রতি মাত্র ১০ রুপি দামে প্লাস্টিক বিক্রি করতেন স্থানীয় ভাঙারির দোকানে। তা দিয়ে সংসার চালানো সম্ভব ছিল না। এখন তিনি প্লাস্টিক বর্জ্যের বিনিময়ে পরিবারকে খাবার খাওয়াতে পারেন। এতে তাদের জীবনে বড় পরিবর্তন এসেছে।
ক্যাফেতে আসা ব্যক্তিদের অনেকেই দরিদ্র পরিবার থেকে আসেন বলে জানালেন শারদা সিং প্যাটেল। তিনি শুরু থেকেই এখানে কাজ করছেন। বলেন, ‘প্লাস্টিকের বদলে খাবার দিয়ে আমরা শুধু ক্ষুধা মেটাচ্ছি না, পরিবেশও পরিচ্ছন্ন রাখছি।’ বিনোদ প্যাটেলের হিসাবে, গড়ে প্রতিদিন ২০ জনের বেশি মানুষ এখানে এসে খাবার পান।
শহরের স্যানিটেশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা দেখভাল করেন রিতেশ সাইনি। ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান’-এর এই কর্মকর্তা বলেন, ২০১৯ সালে শুরু হওয়ার পর থেকে গার্বেজ ক্যাফে প্রায় ২৩ টন প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করেছে। ফলে শহরের ল্যান্ডফিলে যাওয়া প্লাস্টিকের পরিমাণ কমে এসেছে। যেখানে ২০১৯ সালে বছরে প্লাস্টিক বর্জ্য আসার পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ৪ টন, সেখানে ২০২৪ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে বছরে ২ টনে। ২০১৪ সালে ভারত সরকার ‘স্বচ্ছ ভারত মিশন আরবান’ নামের ওই উদ্যোগ হাতে নেয়।
আম্বিকাপুরে দুটি বড় সমস্যা ছিল। প্লাস্টিক বর্জ্য আর ক্ষুধা। আমাদের ধারণা ছিল সহজ। দরিদ্র মানুষ, বিশেষ করে গৃহহীন আর র্যাগপিকারদের (আবর্জনাকুড়ানি) রাস্তাঘাট ও ল্যান্ডফিল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহে উৎসাহিত করা এবং বিনিময়ে তাদের গরম খাবার দেওয়া।