alt

আন্তর্জাতিক

ভেঙে পড়েছে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক : বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১

ভারতের করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। কারোরই এখন সন্দেহ নেই যে বেসরকারি হিসাব এর অনেক বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বে গত এক সপ্তাহে মোট কোভিড সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ভারতে। এ সময় বিশ্বে যত কোভিড রোগী মারা গেছে তার ২৫ শতাংশই হয়েছে ভারতে। খবর বিবিসির

রাজধানী দিল্লিসহ বহু জায়গা থেকে হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কটের খবর এখনও আসছে। ডাক্তাররা খোলাখুলি তাদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন। বিরোধী দলগুলো নতুন করে দেশজুড়ে লক-ডাউন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে একের পর এক উচ্চ আদালত কোভিড সামাল দিতে সরকারের ব্যবস্থাপনাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে।

কিন্তু এই চরম দুরবস্থার মধ্যে ভারত পড়লো কীভাবে? ভুল কোথায় হয়েছে? সরকারের মধ্যে এই আত্ম-জিজ্ঞাসা বা আত্ম-সমালোচনার কোনো লক্ষণ এখনও চোখে পড়ছে না।

সোমবারও ভারতের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে জোর গলায় দাবি করেন যে দিল্লি বা দেশের কোথাও অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পীযুষ গয়াল বলেন, অক্সিজেনের কোনো কমতি নেই, শুধু পরিবহনে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

দিল্লির যে জায়গায় বসে যখন তিনি একথা বলছিলেন সে সময় তার মাত্র কয়েক মাইল দূরে কয়েকটি ছোট হাসপাতাল এসওএস বার্তা পাঠাচ্ছিল যে তাদের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে এবং অনেক রোগীর জীবন হুমকির সামনে। তেমন একটি হাসপাতালের উদ্বিগ্ন একজন চিকিৎসক বলেন, বিশেষ করে শিশুদের জীবন নিয়ে ভয়ে আমাদের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। একজন স্থানীয় রাজনীতিকের চেষ্টায় ওই হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে কিছু অক্সিজেন পৌঁছায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন অক্সিজেনের সঙ্কট পুরো সমস্যার একটি মাত্র দিক, কিন্তু তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারগুলো প্রস্তুত ছিল না।

কিন্তু অনেক আগে থেকেই বার বার এর জন্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। গত বছর নভেম্বরে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটি সরকারকে সতর্ক করে যে অক্সিজেনের যথেষ্ট মজুদ নেই এবং হাসপাতাল বেডের বড় সংকট রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেন যে আরেক দফা ‘কোভিড সুনামি‘র সম্ভাবনা নিয়ে তারা শঙ্কিত।

মার্চের শুরুর দিকে সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি সতর্ক করে যে করোনাভাইরাসের অধিকতর সংক্রামক একটি ভ্যারিয়্যান্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এসব হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ৮ই মার্চ স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন ভারত এই প্যানডেমিক প্রায় জয় করে ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ঘোষণা দেন কোভিড পরাজিত এবং সব ধরনের সমাবেশের জন্য সমস্ত জায়গা খুলে দেওয়া হয়। সরকারের একদম শীর্ষ মহল থেকে এ ধরনের কথাবার্তা, কাজকর্ম দেখে সাধারন মানুষজনও কোভিডের প্রটোকল অগ্রাহ্য করতে শুরু করে।

যদিও মোদি মানুষকে মাস্ক পরতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে পাঁচটি রাজ্যে গিয়ে বড় বড় নির্বাচনী জনসভা করেন যেখানে সিংহভাগ মানুষের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। ওই সব জনসভায় হাজির সরকারের অনেক সিনিয়র মন্ত্রীও মাস্ক পরেননি।

তারপর, অনুমতি দেওয়া হলো কুম্ভ মেলায় যেখানে লাখ লাখ হিন্দু পূণ্যার্থী গিয়ে হাজির হয়। প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ড. শহিদ জামিল বলেন, সরকার দেখতেই পারেনি যে কোভিডের দ্বিতীয় আরেকটি ঢেউ আসছে। আগেভাগেই তারা বিজয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছিল।

তবে এর পাশাপাশি আরো কাহিনী রয়েছে: কোভিডের এই বিপর্যয় চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা উপেক্ষিত, কতটা নাজুক।

হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে - এমন করুণ দৃশ্য ভারতের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বেহাল দশা নগ্ন করে দিয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞের ভাষায়, ভারতের জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো সবসময়ই ভঙ্গুর ছিল। ধনী এবং মধ্যবিত্তরা সেটা এখন টের পাচ্ছে।

ভারতে অবস্থাপন্নরা সবসময় বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছে, কিন্তু দরিদ্র জনগণ সবসময় এমনকি একজন ডাক্তারের দেখা পেতেও চরম ভুগেছে। ভারতে গত ছয় বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে জিডিপির ৩.৬ শতাংশের মত।

ব্রিকস জোটের পাঁচটি দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম - ব্রাজিলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যায় সবচেয়ে বেশি ৯.২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮.১ শতাংশ, রাশিয়ায় ৫.১ শতাংশ এবং চীনে ৫ শতাংশ (২০১৮ সালের হিসাবে)।

সেই তুলনায় উন্নত দেশগুলো তাদের স্বাস্থ্যখাতে অনেক বেশি খরচ করে। যেমন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে তাদের জিডিপির ১৯.৯ শতাংশ এবং জার্মানি করেছে ১১.২ শতাংশ।

এমনকি শ্রীলংকা বা থাইল্যান্ডের মত দেশও ভারতের চেয়ে স্বাস্থ্যখাতে বেশি খরচ করে। ভারতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ১০ জনেরও কম ডাক্তার। কোনো কোনো রাজ্যে এই সংখ্যা পাঁচেরও কম।

ছবি

‘গাজায় ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির শর্তে রাজি ইসরায়েল’

তৃতীয় দফা ভোটেও জয়, জোহরান এখন নিউইয়র্ক সিটির আনুষ্ঠানিক মেয়র প্রার্থী

ছবি

পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে ইরানের বড় ঘোষণা

মুসলিম দেশ কাজাখস্তানে বোরকা ও নিকাব পরা নিষিদ্ধ

ইরান ভ্রমণে আবারও নাগরিকদের সতর্ক করল চীন

ছবি

হরমুজ প্রণালিতে ইরানের মাইন পাতার প্রস্তুতি, উদ্বেগে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

গাজায় ৬০ দিনের অস্ত্রবিরতিতে রাজি ইসরায়েল: ট্রাম্প

ছবি

তেলেঙ্গানায় ভয়াবহ বিস্ফোরণ: নিহত ৪৪, নিখোঁজ ১২ শ্রমিক

ছবি

আরও উত্তপ্ত হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-ইরান সম্পর্ক

জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব নিল পাকিস্তান

ফোনালাপ ফাঁসের জেরে বরখাস্ত থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী

সিরিয়ার ওপর থেকে সব নিষেধাজ্ঞা তুলে নিল যুক্তরাষ্ট্র

ভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিস্ফোরণে নিহত ৩৪

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রক্রিয়া কতদূর

ছবি

সীমান্ত বিরোধ নিয়ে অডিও ফাঁস: থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বরখাস্ত

ছবি

ইসরায়েলের যুদ্ধবিমানের হামলা থেকে বাদ গেল না ক্যাফেও, গাজায় এক দিনে নিহত ৯৫

ছবি

ইসরায়েলকে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ: বিনিয়োগ প্রত্যাহার করল নরওয়ের বৃহৎ পেনশন কোম্পানি কেএলপি

ছবি

‘শুকিয়ে যাচ্ছে কাস্পিয়ান সাগর, দেখা যায় খালি চোখেও’

ছবি

গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মিদের মুক্ত করার দাবিতে ইসরায়েলে ব্যাপক বিক্ষোভ

ইরান শান্তি চাইলে উঠে যেতে পারে নিষেধাজ্ঞা: ট্রাম্প

যুক্তরাষ্ট্রকে নতুন হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

হুমকি ও শান্তির বার্তা, গাজা নিয়ে দ্বৈত নীতি

পাকিস্তানের জন্য ৩৪০ কোটি ডলারের ঋণ নবায়ন করলো চীন

ছবি

আলোচনা চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে হামলার চিন্তা বাদ দিতে হবে: ইরান

ছবি

গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত অন্তত ৭২

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় ফায়ার সার্ভিসের ২ কর্মী নিহত

ছবি

সার্বিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, উত্তাল বেলগ্রেড

‘রাজনৈতিক আত্মহত্যা’ : ফের ট্রাম্পের সমালোচনায় ইলন মাস্ক

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে জাতিসংঘে অভিযোগ ইরানের

ইরান কয়েক মাসের মধ্যেই সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে

নেতানিয়াহুর দুর্নীতির বিচার বন্ধ করতে চান ট্রাম্প

ছবি

ট্রাম্পের যুদ্ধবিরতি চুক্তির উদ্যোগের পরও গাজায় থেমে নেই হত্যাযজ্ঞ

ছবি

পাকিস্তানে ভারি বৃষ্টি ও হঠাৎ বন্যায় দুই দিনে ৩২ জনের মৃত্যু

ছবি

পুরিতে রথযাত্রায় ভিড়ের চাপে পিষ্ট হয়ে নিহত ৩, আহত ১০

ছবি

নর্থ ওয়াজিরিস্তানে সামরিক বহরে আত্মঘাতী হামলা, শিশু আহত ছয়

কানাডার সঙ্গে বাণিজ্য আলোচনা বন্ধ করছেন ট্রাম্প

tab

আন্তর্জাতিক

ভেঙে পড়েছে ভারতের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা

সংবাদ অনলাইন ডেস্ক

বৃহস্পতিবার, ০৬ মে ২০২১

ভারতের করোনা পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। ভেঙে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য ব্যবস্থা। গত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৩ হাজার ৯৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। যা একদিনে মৃত্যুর নতুন রেকর্ড। কারোরই এখন সন্দেহ নেই যে বেসরকারি হিসাব এর অনেক বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সারা বিশ্বে গত এক সপ্তাহে মোট কোভিড সংক্রমণের প্রায় অর্ধেকই হয়েছে ভারতে। এ সময় বিশ্বে যত কোভিড রোগী মারা গেছে তার ২৫ শতাংশই হয়েছে ভারতে। খবর বিবিসির

রাজধানী দিল্লিসহ বহু জায়গা থেকে হাসপাতালে অক্সিজেনের সঙ্কটের খবর এখনও আসছে। ডাক্তাররা খোলাখুলি তাদের অসহায়ত্বের কথা বলছেন। বিরোধী দলগুলো নতুন করে দেশজুড়ে লক-ডাউন দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের ওপর চাপ তৈরি করেছে।

পরিস্থিতি এতটাই গুরুতর যে একের পর এক উচ্চ আদালত কোভিড সামাল দিতে সরকারের ব্যবস্থাপনাকে কঠোর ভাষায় তিরস্কার করছে, নির্দেশনা দিচ্ছে।

কিন্তু এই চরম দুরবস্থার মধ্যে ভারত পড়লো কীভাবে? ভুল কোথায় হয়েছে? সরকারের মধ্যে এই আত্ম-জিজ্ঞাসা বা আত্ম-সমালোচনার কোনো লক্ষণ এখনও চোখে পড়ছে না।

সোমবারও ভারতের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের কাছে জোর গলায় দাবি করেন যে দিল্লি বা দেশের কোথাও অক্সিজেনের কোনো অভাব নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা পীযুষ গয়াল বলেন, অক্সিজেনের কোনো কমতি নেই, শুধু পরিবহনে কিছু সমস্যা হচ্ছে।

দিল্লির যে জায়গায় বসে যখন তিনি একথা বলছিলেন সে সময় তার মাত্র কয়েক মাইল দূরে কয়েকটি ছোট হাসপাতাল এসওএস বার্তা পাঠাচ্ছিল যে তাদের অক্সিজেন শেষ হয়ে আসছে এবং অনেক রোগীর জীবন হুমকির সামনে। তেমন একটি হাসপাতালের উদ্বিগ্ন একজন চিকিৎসক বলেন, বিশেষ করে শিশুদের জীবন নিয়ে ভয়ে আমাদের কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। একজন স্থানীয় রাজনীতিকের চেষ্টায় ওই হাসপাতালে শেষ মুহূর্তে কিছু অক্সিজেন পৌঁছায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন অক্সিজেনের সঙ্কট পুরো সমস্যার একটি মাত্র দিক, কিন্তু তা চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় বা রাজ্য সরকারগুলো প্রস্তুত ছিল না।

কিন্তু অনেক আগে থেকেই বার বার এর জন্য সরকারকে সতর্ক করা হয়েছিল। গত বছর নভেম্বরে স্বাস্থ্য বিষয়ক সংসদীয় কমিটি সরকারকে সতর্ক করে যে অক্সিজেনের যথেষ্ট মজুদ নেই এবং হাসপাতাল বেডের বড় সংকট রয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে কয়েকজন বিশেষজ্ঞ বিবিসিকে বলেন যে আরেক দফা ‘কোভিড সুনামি‘র সম্ভাবনা নিয়ে তারা শঙ্কিত।

মার্চের শুরুর দিকে সরকারের তৈরি বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি সতর্ক করে যে করোনাভাইরাসের অধিকতর সংক্রামক একটি ভ্যারিয়্যান্ট সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। কিন্তু এসব হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও ৮ই মার্চ স্বয়ং স্বাস্থ্যমন্ত্রী ঘোষণা দেন ভারত এই প্যানডেমিক প্রায় জয় করে ফেলেছে।

প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজে ঘোষণা দেন কোভিড পরাজিত এবং সব ধরনের সমাবেশের জন্য সমস্ত জায়গা খুলে দেওয়া হয়। সরকারের একদম শীর্ষ মহল থেকে এ ধরনের কথাবার্তা, কাজকর্ম দেখে সাধারন মানুষজনও কোভিডের প্রটোকল অগ্রাহ্য করতে শুরু করে।

যদিও মোদি মানুষকে মাস্ক পরতে এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছিলেন, কিন্তু তিনি নিজে পাঁচটি রাজ্যে গিয়ে বড় বড় নির্বাচনী জনসভা করেন যেখানে সিংহভাগ মানুষের মুখে কোনো মাস্ক ছিল না। ওই সব জনসভায় হাজির সরকারের অনেক সিনিয়র মন্ত্রীও মাস্ক পরেননি।

তারপর, অনুমতি দেওয়া হলো কুম্ভ মেলায় যেখানে লাখ লাখ হিন্দু পূণ্যার্থী গিয়ে হাজির হয়। প্রখ্যাত ভাইরোলজিস্ট ড. শহিদ জামিল বলেন, সরকার দেখতেই পারেনি যে কোভিডের দ্বিতীয় আরেকটি ঢেউ আসছে। আগেভাগেই তারা বিজয়ের উৎসব শুরু করে দিয়েছিল।

তবে এর পাশাপাশি আরো কাহিনী রয়েছে: কোভিডের এই বিপর্যয় চোখে আঙ্গুল দেখিয়ে দিয়েছে ভারতে জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থা কতটা উপেক্ষিত, কতটা নাজুক।

হাসপাতালের বাইরে চিকিৎসার অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে - এমন করুণ দৃশ্য ভারতের স্বাস্থ্য অবকাঠামোর বেহাল দশা নগ্ন করে দিয়েছে। একজন বিশেষজ্ঞের ভাষায়, ভারতের জনস্বাস্থ্য অবকাঠামো সবসময়ই ভঙ্গুর ছিল। ধনী এবং মধ্যবিত্তরা সেটা এখন টের পাচ্ছে।

ভারতে অবস্থাপন্নরা সবসময় বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর নির্ভর করেছে, কিন্তু দরিদ্র জনগণ সবসময় এমনকি একজন ডাক্তারের দেখা পেতেও চরম ভুগেছে। ভারতে গত ছয় বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে স্বাস্থ্যখাতে ব্যয় হচ্ছে জিডিপির ৩.৬ শতাংশের মত।

ব্রিকস জোটের পাঁচটি দেশের মধ্যে এটি সবচেয়ে কম - ব্রাজিলে স্বাস্থ্যখাতে ব্যায় সবচেয়ে বেশি ৯.২ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮.১ শতাংশ, রাশিয়ায় ৫.১ শতাংশ এবং চীনে ৫ শতাংশ (২০১৮ সালের হিসাবে)।

সেই তুলনায় উন্নত দেশগুলো তাদের স্বাস্থ্যখাতে অনেক বেশি খরচ করে। যেমন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেছে তাদের জিডিপির ১৯.৯ শতাংশ এবং জার্মানি করেছে ১১.২ শতাংশ।

এমনকি শ্রীলংকা বা থাইল্যান্ডের মত দেশও ভারতের চেয়ে স্বাস্থ্যখাতে বেশি খরচ করে। ভারতে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য রয়েছে ১০ জনেরও কম ডাক্তার। কোনো কোনো রাজ্যে এই সংখ্যা পাঁচেরও কম।

back to top