ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে উভয়ই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যবহার করছে মানববিহীন উড়োহাজাজ বা ড্রোন। শত্রুপক্ষকে ঘায়েলে কার্যকর ভূমিকা রাখছে এসব ড্রোন। এমনকি রুশ কিংবা ইউক্রেনের স্থাপনায় বোমা বা গোলা হামলার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক-অসামরিক গ্রেডের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের ড্রোন।
ক্রিমিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে রুশ সামরিক ঘাঁটি কিংবা সেভাস্তোপোলের বিমানঘাঁটিতে সম্প্রতি যে হামলাগুলো চালানো হয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট কামিকেজ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়পক্ষই এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করেছে।
কামিকেজ সুইচব্লেড
ছোট কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর একটি ড্রোন কামিকেজ। সুইচব্লেড নামেও পরিচিত এ ড্রোনগুলোতে ক্যামেরা ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস যুক্ত থাকে। একজন ব্যবহারকারী লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে ড্রোনকে সেখানে উড়িয়ে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেন। এ ড্রোনের ভেতর বিস্ফোরকবোঝাই করা থাকে। এগুলো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আকাশে চক্কর দিতে থাকে।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স ইউক্রেনকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবস্থা সরবরাহ করছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ড্রোন এবং এর অপারেটরের মধ্যে একটি গোপন এবং নিরাপদ সংযোগ তৈরি করা যায়। ড্রোন বিশেষজ্ঞরা জানান, কামিকেজ বা সুইচব্লেড ড্রোনগুলো যানবাহন ও সাঁজোয়া বহরকে অনেক দূর থেকেও আঘাত করতে পারে।
তুর্কি বায়রাক্তার টিবি২
যুদ্ধে ব্যবহার করা ইউক্রেনের সামরিক গ্রেডের প্রধান ড্রোন হচ্ছে বায়রাক্তার টিবি২। তুরস্কের তৈরি এই ড্রোনটি দিয়ে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে ইউক্রেন। কার্যকারিতা বেশি হওয়ায় অনেক দেশই তুরস্কের এ ড্রোন কিনতে মরিয়া। বায়রাক্তার টিবি২ দেখতে ছোট একটি বিমানের মতো, যেটিতে ক্যামেরা ও লেজারগাইডযুক্ত বোমাও রয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এ হাতিয়ারের কাছে একরকম নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে। শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যানসহ বড়সড় ঘাঁটিও গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন। অস্ত্রের গুদামের মতো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করা এবং রাশিয়ার মস্কভা যুদ্ধজাহাজে হামলা চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দিতে এ ড্রোন ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি ইউক্রেনের। বায়রাক্তার টিবি২ আকাশে ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত ওপরে উড়তে সক্ষম। রুশ সেনাদের প্রতিরোধে ড্রোনগুলো এতটাই কার্যকর যে ইউক্রেনের সেনারা এটিকে সুপার উইপন হিসেবে আখ্যা দেয়।
ওরলান ১০
ইউক্রেনের যদি থাকে বায়রাক্তার টিবিটু, তাহলে রাশিয়ার রয়েছে সামরিক গ্রেডের ড্রোন ওরলান ১০। ইউক্রেনের অনেক বায়রাক্তার ড্রোন রাশিয়ার হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শত্রুপক্ষের অবস্থান খুঁজে পাওয়ার তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ওরলান ১০।
মানুষবিহীন উড়োজাহাজ ওরলান ১০ বানিয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গের রাশিয়ান ফার্ম স্পেশাল টেকনোলজি সেন্টার এলএলসি। এ ড্রোনটি একাধারে আকাশে টহল, পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, এটি কমব্যাট ট্রেনিং বা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, রেডিও সিগনাল শনাক্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও অভিযান চালাতে সক্ষম বলে দাবি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। ডে লাইট ক্যামেরার পাশাপাশি এটিতে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরাও যুক্ত থাকে। যে প্রযুক্তির সাহায্যে রাতের বেলা বা অন্ধকার ও ধোঁয়াতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম ওরলান ১০।
যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক ড্রোনও
সামরিক ড্রোনের দাম অনেক বেশি; সে কারণে সাধারণ ড্রোনও ব্যবহার করছে রাশিয়া-ইউক্রেন। একটি বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনের দামই ২০ লাখ ডলার। অন্যদিকে একটি ওরলান ১০-এর দাম ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের বেশি। ফলে দুপক্ষই বিশেষ করে ইউক্রেন ছোট বাণিজ্যিক মডেলের ড্রোন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এ রকম একটি ড্রোন হচ্ছে ডিজেআই ম্যাভিক-থ্রি, যেটির দাম ১৭০০ ডলার। ইউক্রেনের ড্রোন প্রস্তুতকারী একটি কোম্পানির হিসেবে, দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে আনুমানিক ৬ হাজারের মতো ডিজেআই ম্যাভিক-থ্রি ড্রোন আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামরিক ড্রোনের মতো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোনেও ছোট আকারের বোমা স্থাপন করা যায়। আবার ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ার মতো বিপুল সংখ্যক অস্ত্র নেই। তাই শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে বাণিজ্যিক এ ড্রোনগুলো অনেক বেশি ব্যবহার করছে ইউক্রেন।
বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২২
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে উভয়ই প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হামলায় ব্যবহার করছে মানববিহীন উড়োহাজাজ বা ড্রোন। শত্রুপক্ষকে ঘায়েলে কার্যকর ভূমিকা রাখছে এসব ড্রোন। এমনকি রুশ কিংবা ইউক্রেনের স্থাপনায় বোমা বা গোলা হামলার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হচ্ছে সামরিক-অসামরিক গ্রেডের অত্যাধুনিক প্রযুক্তির বিভিন্ন ধরনের ড্রোন।
ক্রিমিয়ার পশ্চিমাঞ্চলে রুশ সামরিক ঘাঁটি কিংবা সেভাস্তোপোলের বিমানঘাঁটিতে সম্প্রতি যে হামলাগুলো চালানো হয়েছে, তার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ছোট কামিকেজ ড্রোন ব্যবহার করা হয়েছে। রাশিয়া ও ইউক্রেন উভয়পক্ষই এ ধরনের ড্রোন ব্যবহার করেছে।
কামিকেজ সুইচব্লেড
ছোট কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর একটি ড্রোন কামিকেজ। সুইচব্লেড নামেও পরিচিত এ ড্রোনগুলোতে ক্যামেরা ও গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম বা জিপিএস যুক্ত থাকে। একজন ব্যবহারকারী লক্ষ্যবস্তুকে টার্গেট করে ড্রোনকে সেখানে উড়িয়ে নিয়ে বিস্ফোরণ ঘটাতে পারেন। এ ড্রোনের ভেতর বিস্ফোরকবোঝাই করা থাকে। এগুলো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত আকাশে চক্কর দিতে থাকে।
মার্কিন ধনকুবের ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেসএক্স ইউক্রেনকে স্টারলিংক স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবস্থা সরবরাহ করছে। এর মাধ্যমে বাণিজ্যিক ড্রোন এবং এর অপারেটরের মধ্যে একটি গোপন এবং নিরাপদ সংযোগ তৈরি করা যায়। ড্রোন বিশেষজ্ঞরা জানান, কামিকেজ বা সুইচব্লেড ড্রোনগুলো যানবাহন ও সাঁজোয়া বহরকে অনেক দূর থেকেও আঘাত করতে পারে।
তুর্কি বায়রাক্তার টিবি২
যুদ্ধে ব্যবহার করা ইউক্রেনের সামরিক গ্রেডের প্রধান ড্রোন হচ্ছে বায়রাক্তার টিবি২। তুরস্কের তৈরি এই ড্রোনটি দিয়ে রাশিয়াকে প্রতিহত করতে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে ইউক্রেন। কার্যকারিতা বেশি হওয়ায় অনেক দেশই তুরস্কের এ ড্রোন কিনতে মরিয়া। বায়রাক্তার টিবি২ দেখতে ছোট একটি বিমানের মতো, যেটিতে ক্যামেরা ও লেজারগাইডযুক্ত বোমাও রয়েছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে এ হাতিয়ারের কাছে একরকম নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে। শক্তিশালী আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, সাঁজোয়া যানসহ বড়সড় ঘাঁটিও গুঁড়িয়ে দিতে সক্ষম বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোন। অস্ত্রের গুদামের মতো লক্ষ্যবস্তু খুঁজে বের করা এবং রাশিয়ার মস্কভা যুদ্ধজাহাজে হামলা চালিয়ে সেটিকে ডুবিয়ে দিতে এ ড্রোন ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি ইউক্রেনের। বায়রাক্তার টিবি২ আকাশে ২৫ হাজার ফুট পর্যন্ত ওপরে উড়তে সক্ষম। রুশ সেনাদের প্রতিরোধে ড্রোনগুলো এতটাই কার্যকর যে ইউক্রেনের সেনারা এটিকে সুপার উইপন হিসেবে আখ্যা দেয়।
ওরলান ১০
ইউক্রেনের যদি থাকে বায়রাক্তার টিবিটু, তাহলে রাশিয়ার রয়েছে সামরিক গ্রেডের ড্রোন ওরলান ১০। ইউক্রেনের অনেক বায়রাক্তার ড্রোন রাশিয়ার হামলায় ধ্বংস হয়ে গেছে। শত্রুপক্ষের অবস্থান খুঁজে পাওয়ার তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে ওরলান ১০।
মানুষবিহীন উড়োজাহাজ ওরলান ১০ বানিয়েছে সেন্ট পিটার্সবার্গের রাশিয়ান ফার্ম স্পেশাল টেকনোলজি সেন্টার এলএলসি। এ ড্রোনটি একাধারে আকাশে টহল, পর্যবেক্ষণ, গবেষণা ও উদ্ধার কাজেও ব্যবহার করা হয়। শুধু তাই নয়, এটি কমব্যাট ট্রেনিং বা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ, রেডিও সিগনাল শনাক্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও অভিযান চালাতে সক্ষম বলে দাবি নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের। ডে লাইট ক্যামেরার পাশাপাশি এটিতে থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরাও যুক্ত থাকে। যে প্রযুক্তির সাহায্যে রাতের বেলা বা অন্ধকার ও ধোঁয়াতেও নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম ওরলান ১০।
যুদ্ধে ব্যবহৃত হচ্ছে বাণিজ্যিক ড্রোনও
সামরিক ড্রোনের দাম অনেক বেশি; সে কারণে সাধারণ ড্রোনও ব্যবহার করছে রাশিয়া-ইউক্রেন। একটি বায়রাক্তার টিবি২ ড্রোনের দামই ২০ লাখ ডলার। অন্যদিকে একটি ওরলান ১০-এর দাম ১ লাখ ২০ হাজার ডলারের বেশি। ফলে দুপক্ষই বিশেষ করে ইউক্রেন ছোট বাণিজ্যিক মডেলের ড্রোন ব্যবহারের দিকে ঝুঁকছে। এ রকম একটি ড্রোন হচ্ছে ডিজেআই ম্যাভিক-থ্রি, যেটির দাম ১৭০০ ডলার। ইউক্রেনের ড্রোন প্রস্তুতকারী একটি কোম্পানির হিসেবে, দেশটির প্রতিরক্ষা বাহিনীর কাছে আনুমানিক ৬ হাজারের মতো ডিজেআই ম্যাভিক-থ্রি ড্রোন আছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সামরিক ড্রোনের মতো বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত ড্রোনেও ছোট আকারের বোমা স্থাপন করা যায়। আবার ইউক্রেনের কাছে রাশিয়ার মতো বিপুল সংখ্যক অস্ত্র নেই। তাই শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করতে বাণিজ্যিক এ ড্রোনগুলো অনেক বেশি ব্যবহার করছে ইউক্রেন।