alt

আন্তর্জাতিক

রাজনৈতিক বিবাদে দুর্গাপূজা, দুর্গার পায়ের নীচে অসুর রুপী মহাত্মা গান্ধী

দীপক মুখার্জী, কলকাতা: : সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/03Oct22/news/MG-Asur.jpg

তাবৎ বাঙালি হিন্দুধর্মাম্বলিদের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজা। প্রাচীন কাল থেকেই কলকাতার দুর্গাপূজা ঐতিহ্যবাহী। বর্তমানে আধুনিকতার ছাপেও সেই সাবেকিয়ান থিমের অনুকরণই চোখে পড়ে। সেইসব মন্ডপের ভাবনা কখনও রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার ধারে কাছেও ছিলনা। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে সেই রাজনীতির মানদন্ডে দুর্গাপূজাকে বিচার করা হচ্ছে।

এই বছরের দুর্গাপুজায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যোগ হলো নতুন মাত্রা। বেশ কয়েকটি পূজা রাজনৈতিক বিবাদের জড়িয়ে পড়ছে।

এবার রাজ্যজুড়ে সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে কসবার রুবি পার্কে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপূজাকে ঘিরে। হিন্দু মহাসভার পুজো মণ্ডপে যে দুর্গার মূর্তি পুজা করা হচ্ছে, সেখানে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদলে তৈরি করা হয়েছে মহিষাসুরকে। দেখা যায়, দেবী দুর্গার পায়ের নিচে গান্ধী। সেই মূর্তিকেই অসুর হিসেবে বধ করা হচ্ছে। তার চোখে গান্ধীর প্রতীকী চশমাও রয়েছে।

এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে হিন্দু মহাসভা। প্রথমে সপ্তমীর সন্ধ্যায় দুর্গাপ্রতিমার ওই বিতর্কিত ছবিটি সামনে আসে। পূজার উদ্যোক্তা ভারতের ডানপন্থি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা, যার নেতা নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালে গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন। তিনি আরেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘেরও (আরএসএস) সদস্য ছিলেন। নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয়েছিল। অর্থাৎ ভারত মেনে নিয়েছে যে তিনি একজন স্বীকৃত অপরাধী। কিন্তু কলকাতার পূজায় তাকে দেবী দুর্গা হিসেবে তুলে ধরেছে হিন্দু মহাসভা।

এ বিষয়ে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেছেন, ‘মহিষাসুরের মুখটা অনেকটা মহাত্মা গান্ধীর মতো দেখতে হয়েছে। তবে এটা কাকতালীয়, ইচ্ছাকৃত নয়। এই ছবি ভাইরাল হতেই পুলিশ নির্দেশ দিয়েছিল অসুরের চেহারা বদলানোর।’

এরপর সপ্তমীর রাতে চুল আর গোঁফ লাগিয়ে অসুরের চেহারা বদলে দেয় পুলিশই। খুলে নেয়া হয় গান্ধির প্রতিকী চশমাও, দাবি পুজা উদ্যোক্তাদের। এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র নিন্দা ছড়িয়েছে।তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে বলেছেন, ‘এরকম হয়ে থাকলে খারাপ বিষয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।’

তৃণমূল মুখপ্রাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘এবার ওরা (বিজেপিকে নাম না করে) নানাভাবে দোষ ঢাকতে নেমে পড়বে। কিন্তু তৃণমূল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’ কুনাল বলেন, ‘গান্ধীজিকে নিয়ে নানা গবেষণা হতে পারে। তিনি জাতির জনক।’ ‘গান্ধীজি আন্তর্জাতিক ইতিহাসে ভারতবর্ষের অন্যতম প্রতীক। তাঁকে নিয়ে এমন অবমাননা কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না।’

সামাজিক মাধ্যমেও এর বিরোধিতা করে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। শিল্পী কবীর সুমনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এ নিয়ে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এই নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন। বলেছেন, ‘হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী হয়ে আসলে তারা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।’

এদিন একাধিক জায়গায় তৃণমূল গান্ধী জয়ন্তী পালন করেছে। মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও বিধায়ক তাপস রায় শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। কলকাতা পুরসভাতেও মেয়র ফিরহাদ হাকিম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গান্ধীর প্রতিকৃতিতে। এর পরেই রুবি পার্কের দুর্গাপ্রতিমার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

দুর্গাপূজা নিয়ে তৃণমূলেও অন্য রকম রাজনীতি

এবার করোনার বন্দিদশা কাটিয়ে ফের পুজার আনন্দে মাতোয়ারা আট থেকে আশির সবাই। বোধনের আগে থেকেই বিভিন্ন মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এবছর মহালয়ার আগে থেকে পুজার উদ্বোধন শুরু করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে কয়েকশো পূজার উদ্বোধন করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, পূজার জন্য ক্লাবগুলিকে এবার ৬০ হাজার অনুদান দিয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে ৬০ শতাংশ বিদ্যু বিলে ছাড়।

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/03Oct22/news/image.png

ভ্যানে চাপিয়ে দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মণ্ডপে। সেই সময়ে দুর্গা প্রতিমার হাতে তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দেন গুড়াপের হাসানপুরর বাসিন্দা লক্ষ্মণ মণ্ডল। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য তিনি। লক্ষণের দাবি, ‘বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে পূজা করার জন্য মমতা দিদি ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে সেজন্যই আমরা পুজো করতে পারছি। দিদির এই পূজা অনুদান দিয়েছেন বলে আমরা প্রতিমার হাতে দলীয় পতাকা দিয়েছি। আমরা চাই, দেবীর শক্তি নিয়ে মমতা দিদি রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যান’।

দুর্গার হাতে দলীয় পতাকা ধরিয়ে দেয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধরি বলেছেন, ‘তৃনমূলের সমর্থকরা কয়েকটি পূজামন্ডপে গেল বারও দুর্গাদেবীর মুখের আদলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখ বসিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরী করেছিল সে সময় ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও সেই মুখ সরিয়ে নেয়া হয়নি তখন। এবার তৃণমূলের দলীয় পতাকা দেবীর হাতে তুলে দেয়ার দৃশ্য দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘ধর্মের মাঝে রাজনীতিকে টেনা আনা কোন রকমই বরদাস্ত করা হবেনা।’

এদিকে এই বিতর্কে ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। স্থানীয় নেতা সুরেশ সাউ বলেন, ‘এতদিন মা দুর্গাকে অস্ত্র নিয়ে যেতে দেখতাম। এই প্রথম দেখলাম, তৃণমূলের পতাকা নিয়ে মণ্ডপ পর্যন্ত যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই যুক্ত থাকেন। এই বারোয়ারি পুজোগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে। পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা দিয়ে বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’

সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাওড়াসহ বিভিন্নস্থানে তাদের দলীয় বুক স্টল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই পূজা উপলক্ষে বামপন্থী বই বিক্রির জন্য আস্থায়ীভাবে বুকস্টল দেয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। বুকস্টলের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ।

বেশ কিছু পূজা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। অধিকাংশ বড় পূজাই এখন কোনো না কোনো নামকরা তৃণমূল নেতার পূজা বলে স্বীকৃত। এই বিষয় নিয়েও কয়েক বছর ধরেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।

লেবানন-সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা

ছবি

ট্রাম্পের কঠোর শুল্ক আরোপের হুমকিতে চাপ নয়, বরং স্বস্তিতে রাশিয়া

মে মাসে ইরানের তেল রপ্তানিতে সর্বকালের রেকর্ড

ছবি

জোটে ভাঙন, অস্তিত্ব সংকটে নেতানিয়াহুর সরকার

ইসরায়েলিদের ঠিকাদার নিয়োগ দিয়ে গাজায় বাড়িঘর ধ্বংস করছে সেনারা

ছবি

বেপরোয়া হুতি, ২০ মাসে ৭০ জাহাজে হামলা

ছবি

দালাই লামার উত্তরাধিকারের ওপর বেইজিংয়ের অধিকার দাবি, নয়াদিল্লিকে সতর্ক থাকার পরামর্শ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপ সবচেয়ে বড় হুমকির মুখে : ম্যাখোঁ

ছবি

দুই হাজার বছর আগে ডুবে যাওয়া শহরের খোঁজ

কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দি করল ভারত

ছবি

আফগানিস্তানের তালেবান সরকারকে কী কারণে স্বীকৃতি দিল রাশিয়া

সিরিয়ায় সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ, নিহত ৩০

ছবি

গাজায় ইসরায়েলের বর্বরতা চলছেই, নিহত ৫৮ হাজার ছাড়াল

ছবি

সিরিয়ায় বেদুইন সুন্নি-দ্রুজ সংঘর্ষে নিহত অন্তত ৩০

ছবি

ইসরায়েলি হামলায় আহত হয়েছিলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট, জরুরি পথে পালিয়ে বাঁচেন

ছবি

নাইজেরিয়ার সাবেক প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদু বুহারি আর নেই

ছবি

ইসরায়েলের পদক্ষেপে উদ্বেগ, গাজার পরিস্থিতি ঠেকাতে ব্রিটিশ এমপিদের চিঠি

ছবি

গণহত্যা রুখতে ২০টির বেশি দেশের সম্মেলনে বাংলাদেশেরও অংশগ্রহণ

ছবি

শুল্কহার কমিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে যেতে চায় ভারত

ছবি

অভিযানের সময় আহত শ্রমিকের মৃত্যু, আক্রমণাত্মক কৌশল স্থগিতের নির্দেশ আদালতের

যুক্তরাষ্ট্র হামলা না চালানোর নিশ্চয়তা দিলে আলোচনায় বসবে ইরান

ছবি

বিশ্বের সর্বাধিক মুসলিম জনসংখ্যার দেশ হতে চলেছে ভারত

ইউক্রেনে রাশিয়ার যে কোন কাজের প্রতি নিঃশর্ত সমর্থনের ঘোষণা কিমের

ছবি

পুতিনকে নিয়ে ‘হতাশ’ ট্রাম্পের পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী হবে

মায়ানমারে সংঘাত, থাই সীমান্ত দিয়ে পালাল শতাধিক সেনা

ছবি

মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলছে ‘নীরব বিপ্লব’

ছবি

গাজায় ত্রাণ নিতে গিয়ে ২৪ জন নিহত, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গুলি চালানোর অভিযোগ

ছবি

এয়ার ইন্ডিয়া উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার কারণ: সুইচের অপ্রত্যাশিত বন্ধ হওয়া, তদন্তে জানা গেছে

ছবি

মাত্র ১২ দিনেই যুদ্ধবিরতি’, ইরানের পাল্টা হামলায় তেল আবিবে ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি

১২ দিনের যুদ্ধে ৫০০ ইসরায়েলি নিহত: ইরান

ছবি

ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ গেছে ৮০০ ফিলিস্তিনির

মায়ানমারে বৌদ্ধ মঠে বিমান হামলায় নিহত ২৩

ছবি

হুথিদের সাহায্য করে কারা, কীভাবে তারা অস্ত্র পায়?

কুর্দি বিদ্রোহীদের অস্ত্র সমর্পণে তুরস্কের জয় হয়েছে : এরদোয়ান

ছবি

‘বিধ্বস্ত হওয়ার আগে জ্বালানি সুইচ বন্ধ হয় এয়ার ইন্ডিয়ার প্লেনের’

ছবি

‘আমি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করিনি’: বিধ্বস্তের আগে পাইলট

tab

আন্তর্জাতিক

রাজনৈতিক বিবাদে দুর্গাপূজা, দুর্গার পায়ের নীচে অসুর রুপী মহাত্মা গান্ধী

দীপক মুখার্জী, কলকাতা:

সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/03Oct22/news/MG-Asur.jpg

তাবৎ বাঙালি হিন্দুধর্মাম্বলিদের প্রধান উৎসব দুর্গাপুজা। প্রাচীন কাল থেকেই কলকাতার দুর্গাপূজা ঐতিহ্যবাহী। বর্তমানে আধুনিকতার ছাপেও সেই সাবেকিয়ান থিমের অনুকরণই চোখে পড়ে। সেইসব মন্ডপের ভাবনা কখনও রাজনৈতিক চিন্তা-চেতনার ধারে কাছেও ছিলনা। কিন্তু বেশ কয়েকবছর ধরে সেই রাজনীতির মানদন্ডে দুর্গাপূজাকে বিচার করা হচ্ছে।

এই বছরের দুর্গাপুজায় রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে যোগ হলো নতুন মাত্রা। বেশ কয়েকটি পূজা রাজনৈতিক বিবাদের জড়িয়ে পড়ছে।

এবার রাজ্যজুড়ে সেই বিতর্ক শুরু হয়েছে কসবার রুবি পার্কে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার দুর্গাপূজাকে ঘিরে। হিন্দু মহাসভার পুজো মণ্ডপে যে দুর্গার মূর্তি পুজা করা হচ্ছে, সেখানে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধীর আদলে তৈরি করা হয়েছে মহিষাসুরকে। দেখা যায়, দেবী দুর্গার পায়ের নিচে গান্ধী। সেই মূর্তিকেই অসুর হিসেবে বধ করা হচ্ছে। তার চোখে গান্ধীর প্রতীকী চশমাও রয়েছে।

এই ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে হিন্দু মহাসভা। প্রথমে সপ্তমীর সন্ধ্যায় দুর্গাপ্রতিমার ওই বিতর্কিত ছবিটি সামনে আসে। পূজার উদ্যোক্তা ভারতের ডানপন্থি অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভা, যার নেতা নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালে গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন। তিনি আরেক হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘেরও (আরএসএস) সদস্য ছিলেন। নাথুরাম গডসের ফাঁসি হয়েছিল। অর্থাৎ ভারত মেনে নিয়েছে যে তিনি একজন স্বীকৃত অপরাধী। কিন্তু কলকাতার পূজায় তাকে দেবী দুর্গা হিসেবে তুলে ধরেছে হিন্দু মহাসভা।

এ বিষয়ে অখিল ভারতীয় হিন্দু মহাসভার রাজ্য সভাপতি চন্দ্রচূড় গোস্বামী বলেছেন, ‘মহিষাসুরের মুখটা অনেকটা মহাত্মা গান্ধীর মতো দেখতে হয়েছে। তবে এটা কাকতালীয়, ইচ্ছাকৃত নয়। এই ছবি ভাইরাল হতেই পুলিশ নির্দেশ দিয়েছিল অসুরের চেহারা বদলানোর।’

এরপর সপ্তমীর রাতে চুল আর গোঁফ লাগিয়ে অসুরের চেহারা বদলে দেয় পুলিশই। খুলে নেয়া হয় গান্ধির প্রতিকী চশমাও, দাবি পুজা উদ্যোক্তাদের। এ ঘটনায় রাজনৈতিক মহলে তীব্র নিন্দা ছড়িয়েছে।তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস।

বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এই ঘটনায় খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে বলেছেন, ‘এরকম হয়ে থাকলে খারাপ বিষয়। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত পুলিশের।’

তৃণমূল মুখপ্রাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ‘এবার ওরা (বিজেপিকে নাম না করে) নানাভাবে দোষ ঢাকতে নেমে পড়বে। কিন্তু তৃণমূল এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে।’ কুনাল বলেন, ‘গান্ধীজিকে নিয়ে নানা গবেষণা হতে পারে। তিনি জাতির জনক।’ ‘গান্ধীজি আন্তর্জাতিক ইতিহাসে ভারতবর্ষের অন্যতম প্রতীক। তাঁকে নিয়ে এমন অবমাননা কোনওভাবে বরদাস্ত করা যায় না।’

সামাজিক মাধ্যমেও এর বিরোধিতা করে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। শিল্পী কবীর সুমনের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিরা কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন এ নিয়ে।

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীও এই নিয়ে নিন্দায় সরব হয়েছেন। বলেছেন, ‘হিন্দুত্বের ধ্বজাধারী হয়ে আসলে তারা মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করছে।’

এদিন একাধিক জায়গায় তৃণমূল গান্ধী জয়ন্তী পালন করেছে। মেয়ো রোডে গান্ধী মূর্তির পাদদেশে দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও বিধায়ক তাপস রায় শ্রদ্ধার্ঘ্য জানান। কলকাতা পুরসভাতেও মেয়র ফিরহাদ হাকিম শ্রদ্ধা জানিয়েছেন গান্ধীর প্রতিকৃতিতে। এর পরেই রুবি পার্কের দুর্গাপ্রতিমার ছবি ভাইরাল হয়ে যায়।

দুর্গাপূজা নিয়ে তৃণমূলেও অন্য রকম রাজনীতি

এবার করোনার বন্দিদশা কাটিয়ে ফের পুজার আনন্দে মাতোয়ারা আট থেকে আশির সবাই। বোধনের আগে থেকেই বিভিন্ন মন্ডপে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়। এবছর মহালয়ার আগে থেকে পুজার উদ্বোধন শুরু করে দেন মুখ্যমন্ত্রী। কলকাতা ও জেলা মিলিয়ে কয়েকশো পূজার উদ্বোধন করেছেন মমতা বন্দোপাধ্যায়। শুধু তাই নয়, পূজার জন্য ক্লাবগুলিকে এবার ৬০ হাজার অনুদান দিয়েছে রাজ্য সরকার। সঙ্গে ৬০ শতাংশ বিদ্যু বিলে ছাড়।

https://sangbad.net.bd/images/2022/October/03Oct22/news/image.png

ভ্যানে চাপিয়ে দুর্গাপ্রতিমা নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মণ্ডপে। সেই সময়ে দুর্গা প্রতিমার হাতে তৃণমূলের পতাকা ধরিয়ে দেন গুড়াপের হাসানপুরর বাসিন্দা লক্ষ্মণ মণ্ডল। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য তিনি। লক্ষণের দাবি, ‘বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে পূজা করার জন্য মমতা দিদি ৬০ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে সেজন্যই আমরা পুজো করতে পারছি। দিদির এই পূজা অনুদান দিয়েছেন বলে আমরা প্রতিমার হাতে দলীয় পতাকা দিয়েছি। আমরা চাই, দেবীর শক্তি নিয়ে মমতা দিদি রাজ্যের উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যান’।

দুর্গার হাতে দলীয় পতাকা ধরিয়ে দেয়ায় তীব্র সমালোচনা করেছে বিজেপি, কংগ্রেস ও বামফ্রন্ট। এ ব্যাপারে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধরি বলেছেন, ‘তৃনমূলের সমর্থকরা কয়েকটি পূজামন্ডপে গেল বারও দুর্গাদেবীর মুখের আদলে মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মুখ বসিয়ে দুর্গা প্রতিমা তৈরী করেছিল সে সময় ব্যাপক প্রতিবাদ হলেও সেই মুখ সরিয়ে নেয়া হয়নি তখন। এবার তৃণমূলের দলীয় পতাকা দেবীর হাতে তুলে দেয়ার দৃশ্য দেখা যায়। তিনি বলেন, ‘ধর্মের মাঝে রাজনীতিকে টেনা আনা কোন রকমই বরদাস্ত করা হবেনা।’

এদিকে এই বিতর্কে ইতিমধ্যেই থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে বিজেপি। স্থানীয় নেতা সুরেশ সাউ বলেন, ‘এতদিন মা দুর্গাকে অস্ত্র নিয়ে যেতে দেখতাম। এই প্রথম দেখলাম, তৃণমূলের পতাকা নিয়ে মণ্ডপ পর্যন্ত যাচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপুজো। বারোয়ারি পুজোর সঙ্গে বেশিরভাগ মানুষই যুক্ত থাকেন। এই বারোয়ারি পুজোগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাচ্ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেটাই বাস্তবায়িত হচ্ছে। পঞ্চাশ-ষাট হাজার টাকা দিয়ে বারোয়ারি ক্লাবগুলিকে হাতের মুঠোয় রাখতে চাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী।’

সিপিআইএমের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হাওড়াসহ বিভিন্নস্থানে তাদের দলীয় বুক স্টল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। প্রতিবছরই পূজা উপলক্ষে বামপন্থী বই বিক্রির জন্য আস্থায়ীভাবে বুকস্টল দেয়া হয়। কিন্তু তৃণমূলের নির্দেশে পুলিশ দিয়ে তা বন্ধ করে দেয়। বুকস্টলের বিদ্যুৎ সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয় বলে সিপিএমের অভিযোগ।

বেশ কিছু পূজা নিয়ে বিতর্ক হয়েছে। অধিকাংশ বড় পূজাই এখন কোনো না কোনো নামকরা তৃণমূল নেতার পূজা বলে স্বীকৃত। এই বিষয় নিয়েও কয়েক বছর ধরেই প্রশ্ন তুলছেন সাধারণ মানুষ।

back to top