ইরানের রাজধানী তেহরানের শরীফ তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেশটির দাঙ্গা পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলন করছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দেশটিতে নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের ১৫০টির বেশি শহরে সমাবেশ হয়েছে।
ইরানি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থান নেন। তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
স্লোগানের পরিমাণ বাড়তে থাকলে দাঙ্গা পুলিশ আসে। তারা এসেই কয়েক ঘণ্টার জন্য ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলে। এতে আটকে যান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে দেখা যায় আহত অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাছাড়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে নিরাপত্তাকর্মীদের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।
মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়ানো বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। আমিনির শেষকৃত্য চলাকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরানে বেশ কয়েক বছর এমন অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে। কিছুটা দূর থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মীরা মোটরসাইকেলে এসে একটি গাড়িতে গুলি করছেন। ওই গাড়িতে থাকা একজন পুরো ঘটনার ভিডিও করছিলেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে, শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের রাস্তায় জড়ো হন। তারাও তখন আটকে যান।
পুলিশ মূলত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দিতে আসে। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির আশপাশে মানুষ ছিল।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে পাঠদান স্থগিত করে দেয়। এর বদলে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোমবার দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে কুর্দি মাসা আমিনির মৃত্যুর পর সৃষ্ট বিক্ষোভের তিন সপ্তাহ পর তিনি এ বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করলেন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দখলদার মিথ্যা ইহুদি শাসকের কূটচাল। এ ছাড়া বিদেশে থাকা কিছু ইরানি দেশদ্রোহীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পালিত এজেন্ট এতে যুক্ত রয়েছে।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আরও বলেন, তরুণীর মৃত্যু আমাদের সবার হৃদয়ে আঘাত করেছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক নয় যে কিছু মানুষ তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই সড়ককে বিপজ্জনক করে তুলবে, কোরআন শরিফ পোড়াবে, পর্দানশিন নারীদের হিজাব তুলে দেবে, গাড়ি ও মসজিদে আগুন দেবে।
সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় খামেনি বলেন, পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাদের দুর্বল করা মানে অপরাধীদের শক্তিশালী করা। যারা পুলিশকে আক্রমণ করে, তারা অপরাধী, ঠগ ও অপরাধীদের সামনে মানুষকে নিরীহ করে তোলে।
এদিকে নরওয়ে ভিত্তিক ইরানের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে শুধু শুক্রবারই বালুচের জাহেরদান শহরে ৪১ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।
সোমবার, ০৩ অক্টোবর ২০২২
ইরানের রাজধানী তেহরানের শরীফ তথ্য ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেশটির দাঙ্গা পুলিশের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়েছে।
পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাসা আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে আন্দোলন করছিলেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে মাসা আমিনির মৃত্যু হয়। এরপর থেকে দেশটিতে নারীরা বিক্ষোভ শুরু করেন। তাদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিশ্বের ১৫০টির বেশি শহরে সমাবেশ হয়েছে।
ইরানি সংবাদ সংস্থা মেহের নিউজের বরাতে বিবিসি জানিয়েছে, আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় রোববার শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের ভেতর অবস্থান নেন। তারা সরকার বিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেওয়া শুরু করেন। এক পর্যায়ে ধর্মীয় নেতাদের বিরুদ্ধেও স্লোগান দেন।
স্লোগানের পরিমাণ বাড়তে থাকলে দাঙ্গা পুলিশ আসে। তারা এসেই কয়েক ঘণ্টার জন্য ক্যাম্পাস ঘিরে ফেলে। এতে আটকে যান শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে দেখা যায় আহত অবস্থায় বেশ কয়েকজনকে বের করে নিয়ে আসা হচ্ছে। তাছাড়া অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে নিরাপত্তাকর্মীদের শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে।
মাসা আমিনির মৃত্যুকে কেন্দ্র করে ছড়ানো বিক্ষোভ তৃতীয় সপ্তাহে গড়িয়েছে। আমিনির শেষকৃত্য চলাকালে বিক্ষোভ শুরু হয়। পরে বিক্ষোভ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ইরানে বেশ কয়েক বছর এমন অস্থিতিশীলতা দেখা যায়নি।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে শরিফ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দৌড়ে পালাতে দেখা গেছে। কিছুটা দূর থেকে গুলির শব্দ শোনা গেছে। আরেকটি ভিডিওতে দেখা গেছে, নিরাপত্তাকর্মীরা মোটরসাইকেলে এসে একটি গাড়িতে গুলি করছেন। ওই গাড়িতে থাকা একজন পুরো ঘটনার ভিডিও করছিলেন।
ইরানের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম আইআরএনএ জানিয়েছে, শরীফ বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশ-শিক্ষার্থী সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এ সময় উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও আশপাশের রাস্তায় জড়ো হন। তারাও তখন আটকে যান।
পুলিশ মূলত শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে সরিয়ে দিতে আসে। তবে মধ্যরাত পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়টির আশপাশে মানুষ ছিল।
উত্তপ্ত পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাসে পাঠদান স্থগিত করে দেয়। এর বদলে অনলাইনে শ্রেণি কার্যক্রম চালানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি সোমবার দেশটিতে অস্থিরতা সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলকে দায়ী করেছেন। গত ১৬ সেপ্টেম্বর পুলিশ হেফাজতে কুর্দি মাসা আমিনির মৃত্যুর পর সৃষ্ট বিক্ষোভের তিন সপ্তাহ পর তিনি এ বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করলেন।
ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা বলেন, আমি স্পষ্টভাবে বলছি, এই দাঙ্গা এবং নিরাপত্তাহীনতা যুক্তরাষ্ট্র এবং দখলদার মিথ্যা ইহুদি শাসকের কূটচাল। এ ছাড়া বিদেশে থাকা কিছু ইরানি দেশদ্রোহীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের পালিত এজেন্ট এতে যুক্ত রয়েছে।
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি আরও বলেন, তরুণীর মৃত্যু আমাদের সবার হৃদয়ে আঘাত করেছে। কিন্তু এটা স্বাভাবিক নয় যে কিছু মানুষ তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়াই সড়ককে বিপজ্জনক করে তুলবে, কোরআন শরিফ পোড়াবে, পর্দানশিন নারীদের হিজাব তুলে দেবে, গাড়ি ও মসজিদে আগুন দেবে।
সামরিক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় খামেনি বলেন, পুলিশ অপরাধীদের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং সমাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাধ্য। তাদের দুর্বল করা মানে অপরাধীদের শক্তিশালী করা। যারা পুলিশকে আক্রমণ করে, তারা অপরাধী, ঠগ ও অপরাধীদের সামনে মানুষকে নিরীহ করে তোলে।
এদিকে নরওয়ে ভিত্তিক ইরানের একটি মানবাধিকার সংস্থা জানিয়েছে, মাসা আমিনির মৃত্যুকে ঘিরে শুরু হওয়া আন্দোলনে এখন পর্যন্ত ১৩৩ জন নিহত হয়েছেন। এরমধ্যে শুধু শুক্রবারই বালুচের জাহেরদান শহরে ৪১ জন নিহত হওয়ার কথা জানিয়েছে তারা।