মৃত্যু ২৩শ ছাড়িয়েছে, চলছে উদ্ধার কাজ
তুরস্কে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অগণন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৮। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৩০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এপি। উদ্ধার অভিযান চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়।
এক প্রতিবেদনে বিবিসির জানায়, ভূমিকম্পে উভয় দেশে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এতে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা ও তুরস্কের অন্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কয়েকবার শক্তিশালী কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হয়। সবশেষ কম্পনটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবো। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস। অনেক ভবন ধসে পড়েছে ও অনেক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছেন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী দেশটিতে অন্তত ২ হাজার ৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। এতে নিহত ২০০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। জন ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এই ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বিবৃতিতে জানিয়েছে, পর পর দু’টি ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্কে। প্রথমটি হয়েছে ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮ এবং দ্বিতীয়টি ঘটে তার ১৫ মিনিট পর। সেটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ৮১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, তুরস্কের যেসব এলাকায় রাতভর ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে কোন খবর পাওয়া যায়নি, সেগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
ডব্লিউএইচওর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, জাতীয় কর্তৃপক্ষগেুলো এই মুহূর্তে অনুসন্ধান ও উদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করছে। এরপর আমরা আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তার জন্য বাড়তি ট্রমা কেয়ারের দিকে নজর দেবো।
৪৫ দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে : এরদোয়ান
এরদোয়ান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৪৫টি দেশ তাদের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে সহায়তাসহ তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। তবে তুরস্ক ও সিরিয়া উভয়েই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সহায়তার প্রস্তাব এসেছে তুরস্কের প্রতি।
জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সোমবার এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গুরুতর আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উপকরণসহ ডব্লিউএইচওর একটি চিকিৎসক দল ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ার যেসব এলাকায় গুরুতর আহতের সংখ্যা বেশি, সেসব এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেবে ডব্লিউএইচওর দলটি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর ১০০ জন কর্মীর সমন্বয়ে দুটি দল গঠন করে শীঘ্রই তুরস্কে পাঠানো হবে। এই দলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের কর্মীরা ছাড়াও থাকবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, ওষুধ ও অন্য চিকিৎসা উপকরণ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে তিনি বলেছেন, ১০০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দল ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তুরস্ক যখনই চাইবে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এছাড়া সিরিয়ার সেনাদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে বেশ কয়েক কোম্পানি রুশ সেনাসদস্য বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন। তাদেরকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র ও প্রশাসনমন্ত্রী মারিউসজ কামিনস্কি বলেছেন ৭৬ জন উদ্ধারকর্মী ও ৮টি প্রশিক্ষত কুকুরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল শীঘ্রই তুরস্কে পাঠানো হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বার্তায় বলেছেন, ‘তুরস্কের এই বিপদের দিনে ইউক্রেনের জনগণ তাদের পাশে আছে এবং যে কোন প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত।’
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিকোস মিটসোটাকিস তুরস্কের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, গ্রিস ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী ও উদ্ধারকর্মীদের একত্র করা শুরু করেছে। এই কাজ শেষ হলেই তাদের পাঠানো হবে তুরস্কে।
স্পেন ও তাইওয়ানের সরকারও তুরস্কে শীঘ্রই ত্রাণ, উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় আমরা চিকিৎসা সহায়তা ও চিকিৎসকদের দল পাঠাব।’
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় যেকোন ধরনের সহায়তার জন্য তারা প্রস্তুত। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় আজকের ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের খবরে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা যেকোন ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএআইডি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য অংশীদারদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তুরস্কে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনার জেনেজ লেনারসিক টুইটারে বলেছেন, নেদারল্যান্ডস এবং রোমানিয়ার উদ্ধারকারী দলগুলো পাঠিয়েছে। ইইউ’র ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার তাদের তদারকি করছে।
ভুক্তভোগী তুরস্ক ও সিরিয়াকে প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুটি দেশই রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত।
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, আপনার দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহত এবং বড় ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পাঠানো পৃথক বার্তায় তিনি বলেন, যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের দুঃখ ও বেদনা ভাগাভাগি এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া।
ইস্তাম্বুল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছে, বাজে আবহাওয়ার কারণে তুরস্কে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তার দেশ তুরস্ক ও সিরিয়াকে জরুরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এক টুইটে তিনি বলেন, অভূতপূর্ব শক্তির ভূমিকম্পের পর আমরা তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়ানক চিত্র দেখছি। সেখানে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত ফ্রান্স।
এছাড়া, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক-সিরিয়াকে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে আজারবাইজান, ইসরায়েল, জার্মানির মতো দেশগুলোও।
মৃত্যু ২৩শ ছাড়িয়েছে, চলছে উদ্ধার কাজ
তুরস্কে ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান
সোমবার, ০৬ ফেব্রুয়ারী ২০২৩
তুরস্ক-সিরিয়া সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ভূমিকম্পে অগণন মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ৭ দশমিক ৮। সোমবার (৬ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টা পর্যন্ত ভূমিকম্পে নিহতের সংখ্যা ২৩০০ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম এপি। উদ্ধার অভিযান চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় সময় সোমবার ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে এই ভূমিকম্প হয়।
এক প্রতিবেদনে বিবিসির জানায়, ভূমিকম্পে উভয় দেশে অনেক ভবন ধসে পড়েছে। এতে অনেকেই আটকা পড়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান চলছে।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানায়, স্থানীয় সময় সোমবার ভোররাত ৪টা ১৭ মিনিটে তুরস্কের নুরদাগি এলাকা থেকে ২৩ কিলোমিটার পূর্বে এই ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮। ভূম্পিকম্পটি রাজধানী আঙ্কারা ও তুরস্কের অন্য শহরেও অনুভূত হয়েছে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট পুরো অঞ্চল জুড়েই কম্পন অনুভূত হয়েছে। গাজিয়ানতেপ শহরের কাছে এর গভীরতা ছিল মাত্র ১৭ দশমিক ৯ কিলোমিটার।
সংস্থাটি আরও জানায়, প্রথম ভূমিকম্পের পর আরও কয়েকবার শক্তিশালী কম্পন (আফটার শক) অনুভূত হয়। সবশেষ কম্পনটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭ মাত্রার।
ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে এক টুইট বার্তায় তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ান বলেন, যত দ্রুত সম্ভব আমরা একসঙ্গে এই বিপর্যয় কাটিয়ে উঠবো। ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় তাৎক্ষণিক অনুসন্ধান ও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য ইউনিট সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
তুরস্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেইমন সইলু বলেন, ১০টি শহর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গাজিয়ানতেপ, কাহরামানমারাস, হাতায়, ওসমানিয়ে, আদিয়ামান, মালাতিয়া, সানলিউরফা, আদানা, দিয়ারবাকির ও কিলিস। অনেক ভবন ধসে পড়েছে ও অনেক মানুষ ভেতরে আটকা পড়েছেন।
এখন পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী দেশটিতে অন্তত ২ হাজার ৮১৮টি ভবন ধসে পড়েছে। এতে নিহত ২০০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয়েছেন ১ হাজারেরও বেশি মানুষ। জন ৪০ সেকেন্ড ধরে চলা এই ভূমিকম্পের কম্পন পৌঁছায় লেবানন ও সাইপ্রাসেও। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস বিবৃতিতে জানিয়েছে, পর পর দু’টি ভূমিকম্প হয়েছে তুরস্কে। প্রথমটি হয়েছে ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে যার মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৮ এবং দ্বিতীয়টি ঘটে তার ১৫ মিনিট পর। সেটির মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৭।
বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সিরিয়ায় ভূমিকম্পে ৮১০ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়ার পর এখন পর্যন্ত মোট মৃতের সংখ্যা ২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, তুরস্কের যেসব এলাকায় রাতভর ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর থেকে কোন খবর পাওয়া যায়নি, সেগুলো নিয়ে উদ্বিগ্ন তারা।
ডব্লিউএইচওর এক মুখপাত্র রয়টার্সকে বলেছেন, জাতীয় কর্তৃপক্ষগেুলো এই মুহূর্তে অনুসন্ধান ও উদ্ধারের দিকে মনোনিবেশ করছে। এরপর আমরা আহতদের চিকিৎসা ও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গোটা স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় সহায়তার জন্য বাড়তি ট্রমা কেয়ারের দিকে নজর দেবো।
৪৫ দেশ সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে : এরদোয়ান
এরদোয়ান জানিয়েছেন, এ পর্যন্ত ৪৫টি দেশ তাদের সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও বহু মানুষ আটকা পড়ে রয়েছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভয়াবহ ভূমিকম্পে বিধ্বস্ত তুরস্ক ও সিরিয়ার পাশে দাঁড়াতে ইতোমধ্যে সহায়তাসহ তাদের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশ। তবে তুরস্ক ও সিরিয়া উভয়েই ভূমিকম্পে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ সহায়তার প্রস্তাব এসেছে তুরস্কের প্রতি।
জাতিসংঘের অঙ্গসংগঠন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক তেদ্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস সোমবার এক তাৎক্ষণিক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভূমিকম্পে গুরুতর আহতদের চিকিৎসাসেবা দিতে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা উপকরণসহ ডব্লিউএইচওর একটি চিকিৎসক দল ইতোমধ্যে গঠন করা হয়েছে। তুরস্ক-সিরিয়ার যেসব এলাকায় গুরুতর আহতের সংখ্যা বেশি, সেসব এলাকায় চিকিৎসাসেবা দেবে ডব্লিউএইচওর দলটি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তর ১০০ জন কর্মীর সমন্বয়ে দুটি দল গঠন করে শীঘ্রই তুরস্কে পাঠানো হবে। এই দলে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা দপ্তরের কর্মীরা ছাড়াও থাকবে বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত কুকুর, বেশ কয়েকজন চিকিৎসক, ওষুধ ও অন্য চিকিৎসা উপকরণ।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়েছেন। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোয়ানকে তিনি বলেছেন, ১০০ জন উদ্ধারকর্মীর একটি দল ইতোমধ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে। তুরস্ক যখনই চাইবে তাদের পাঠিয়ে দেয়া হবে।
এছাড়া সিরিয়ার সেনাদের সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে বেশ কয়েক কোম্পানি রুশ সেনাসদস্য বর্তমানে সিরিয়ায় অবস্থান করছেন। তাদেরকে সিরিয়ার সরকারি বাহিনীর সঙ্গে যোগ দিয়ে ত্রাণ তৎপরতা চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
পোল্যান্ডের স্বরাষ্ট্র ও প্রশাসনমন্ত্রী মারিউসজ কামিনস্কি বলেছেন ৭৬ জন উদ্ধারকর্মী ও ৮টি প্রশিক্ষত কুকুরের সমন্বয়ে গঠিত একটি দল শীঘ্রই তুরস্কে পাঠানো হবে।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এক বার্তায় বলেছেন, ‘তুরস্কের এই বিপদের দিনে ইউক্রেনের জনগণ তাদের পাশে আছে এবং যে কোন প্রয়োজনীয় সহায়তা দিতে তারা প্রস্তুত।’
গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী কাইরিকোস মিটসোটাকিস তুরস্কের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, গ্রিস ইতোমধ্যে ত্রাণ সামগ্রী ও উদ্ধারকর্মীদের একত্র করা শুরু করেছে। এই কাজ শেষ হলেই তাদের পাঠানো হবে তুরস্কে।
স্পেন ও তাইওয়ানের সরকারও তুরস্কে শীঘ্রই ত্রাণ, উদ্ধারকর্মী ও চিকিৎসা সামগ্রী পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনঞ্জামিন নেতানিয়াহু তুরস্ক ও সিরিয়া উভয় দেশের হতাহতদের প্রতি শোক জানিয়ে বলেছেন, ‘আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যে প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শীঘ্রই উপদ্রুত বিভিন্ন এলাকায় আমরা চিকিৎসা সহায়তা ও চিকিৎসকদের দল পাঠাব।’
যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তুরস্ক-সিরিয়ায় যেকোন ধরনের সহায়তার জন্য তারা প্রস্তুত। মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভান এক বিবৃতিতে বলেন, তুরস্ক ও সিরিয়ায় আজকের ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্পের খবরে যুক্তরাষ্ট্র গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। তিনি বলেন, আমরা যেকোন ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য ইউএসএআইডি এবং কেন্দ্রীয় সরকারের অন্য অংশীদারদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
তুরস্কে উদ্ধারকাজে সহায়তার জন্য উদ্ধারকারী দল পাঠিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপীয় কমিশনার জেনেজ লেনারসিক টুইটারে বলেছেন, নেদারল্যান্ডস এবং রোমানিয়ার উদ্ধারকারী দলগুলো পাঠিয়েছে। ইইউ’র ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার তাদের তদারকি করছে।
ভুক্তভোগী তুরস্ক ও সিরিয়াকে প্রয়োজনীয় জরুরি সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। দুটি দেশই রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে পরিচিত।
সোমবার রুশ প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানকে পাঠানো বার্তায় বলেছেন, আপনার দেশে শক্তিশালী ভূমিকম্পে অসংখ্য মানুষ হতাহত এবং বড় ধ্বংসযজ্ঞের জন্য আমার গভীর সমবেদনা গ্রহণ করুন। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদকে পাঠানো পৃথক বার্তায় তিনি বলেন, যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের দুঃখ ও বেদনা ভাগাভাগি এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য করতে প্রস্তুত রাশিয়া।
ইস্তাম্বুল থেকে আল-জাজিরার সংবাদদাতা জানিয়েছে, বাজে আবহাওয়ার কারণে তুরস্কে উদ্ধারকাজ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁ বলেছেন, তার দেশ তুরস্ক ও সিরিয়াকে জরুরি সহায়তা দিতে প্রস্তুত। এক টুইটে তিনি বলেন, অভূতপূর্ব শক্তির ভূমিকম্পের পর আমরা তুরস্ক এবং সিরিয়ায় ভয়ানক চিত্র দেখছি। সেখানে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করতে প্রস্তুত ফ্রান্স।
এছাড়া, ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত তুরস্ক-সিরিয়াকে সহায়তা করার প্রস্তাব দিয়েছে আজারবাইজান, ইসরায়েল, জার্মানির মতো দেশগুলোও।