আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় তুরস্ক
খেরসনের নোভা কাখোভকা বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ইউক্রেনের বিশাল এলাকায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তাতে প্লাবিত হয়েছে বিপুল কৃষিজমি। এর ফলে দেশটির কৃষিখাতে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় ক্ষতি শুধু ইউক্রেনের হচ্ছে, তা নয়। এতে রাশিয়াকেও ভুগতে হবে। দিনিপ্রো নদীর ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত উত্তর তীরের তুলনায় রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ তীর বরাবর বন্যা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ।
তাছাড়া রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও কাখোভকা বাঁধের ওপর নির্ভরশীল। সেটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দ্বীপটিতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বাঁধ ধসের ঘটনা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। তার কার্যালয় এ খবর জানিয়েছে।
এরদোয়ান বলেছেন, কাকোভকা বাঁধে বিস্ফোরণের ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করতে যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের অংগ্রহণে এবং জাতিসংঘ ও তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কমিটি গড়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত চালানোর জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি তুরস্ক নিজেও একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গড়তে পারে।
ইউক্রেনীয় কৃষি মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাঠগুলো আগামী বছরের শুরুর দিকেই ‘মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে’। কারণ কাখোভকা জলাধারের ওপর নির্ভরশীল সেচ ব্যবস্থাগুলো আর কাজ করছে না। জলাধারটি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। আনুমানিক ৪ দশমিক ৪ ঘনমাইল পানি গর্জন করতে করতে দিনিপ্রো নদী বেয়ে কৃষ্ণসাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে ওই এলাকার ৩১টি সেচব্যবস্থার মাধ্যমে ৫ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ করা হতো। এই পানির একমাত্র উৎস ছিল কাখোভকা জলাধার।
মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট ডেপুটি মিনিস্টার তারাস ভিসোটস্কি বলেন, এই পানি নেওয়া এবং পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাঁধ ও পাম্পিং স্টেশনটি আমাদের প্রয়োজন ছিল। সেটি এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য যদি আবার পানির লাইন করতে হয়, তবে তা গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।
খেরসন ইউক্রেনের অন্যতম উর্বর এলাকা। সেখানকার তরমুজের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এছাড়া পেঁয়াজ, টমেটো, সূর্যমুখী, সয়াবিন এবং গমও উৎপাদন হয় প্রচুর। এগুলোর পাশাপাশি ডেইরি খাতেও কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাঁধটি ধ্বংসের পর যুদ্ধাঞ্চলসহ আশপাশের একটা বড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে হাজারো মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের হিসাবমতে, বাঁধ ধ্বংসের জেরে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
বাঁধটি থেকে খেরসন শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। গত বুধবারই শহরের নি¤œাঞ্চলের পানির স্তর ৩ দশমিক ৫ মিটার বেড়ে যেতে দেখা গেছে। নদীতীরবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা ওলেকসান্দার রিভা বলেন, ‘যদি পানি আরেক মিটার বাড়ে, তাহলে আমাদের ঘর ছাড়তে হবে।’ তিনি ইতিমধ্যে ঘরের জিনিসপত্র পাশের উঁচু জায়গায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে এসেছেন।
গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বাঁধটি ধসের ফলে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য, নিরাপদ পানি ও জীবিকা বিনষ্ট হবে। এই ঘটনা দক্ষিণ ইউক্রেনে উভয় পক্ষ নিয়ন্ত্রিত এলাকার হাজারো মানুষের জন্য মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, দিনিপ্রো নদী থেকে যে খালের মাধ্যমে ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহ করা হয়, সেটি ঠিক কাখোভকার ওপর অবস্থিত। কিন্তু জলাধারটি শুকিয়ে গেলে ওই খালে আর কোনো পানি পৌঁছাবে না। খালটিতে এরই মধ্যে পানিপ্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই ক্ষতিকেই তারা বাঁধ ধ্বংসের পেছনে ইউক্রেনের হাত রয়েছে, এমন দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।
বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় গতকাল ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন। বেইজিং বলছে, এ ঘটনায় মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সৃষ্ট মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
ওয়াং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে এবং বেসামরিক লোকজন ও স্থাপনার সুরক্ষায় নিজেদের সর্বোচ্চটা করতে আমরা বিবদমান সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত ও স্পষ্ট। তিনি বলেন, চীন আশা করে, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি সব পক্ষ প্রতিশ্রুতিশীল হবে এবং যৌথভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে।
আন্তর্জাতিক তদন্ত চায় তুরস্ক
বৃহস্পতিবার, ০৮ জুন ২০২৩
খেরসনের নোভা কাখোভকা বাঁধ গুঁড়িয়ে দেওয়ায় ইউক্রেনের বিশাল এলাকায় যে বন্যা দেখা দিয়েছে, তাতে প্লাবিত হয়েছে বিপুল কৃষিজমি। এর ফলে দেশটির কৃষিখাতে দীর্ঘস্থায়ী বিপর্যয় দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
বাঁধ ধ্বংস হওয়ায় ক্ষতি শুধু ইউক্রেনের হচ্ছে, তা নয়। এতে রাশিয়াকেও ভুগতে হবে। দিনিপ্রো নদীর ইউক্রেন নিয়ন্ত্রিত উত্তর তীরের তুলনায় রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত দক্ষিণ তীর বরাবর বন্যা পরিস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে খারাপ।
তাছাড়া রুশ অধিকৃত ক্রিমিয়া উপদ্বীপে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও কাখোভকা বাঁধের ওপর নির্ভরশীল। সেটি ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় দ্বীপটিতে পানির তীব্র সংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
বাঁধ ধসের ঘটনা তদন্তে একটি আন্তর্জাতিক কমিটি গঠনের আহ্বান জানিয়েছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়্যিপ এরদোয়ান। তার কার্যালয় এ খবর জানিয়েছে।
এরদোয়ান বলেছেন, কাকোভকা বাঁধে বিস্ফোরণের ঘটনার বিস্তারিত তদন্ত করতে যুদ্ধে লিপ্ত দুই পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের অংগ্রহণে এবং জাতিসংঘ ও তুরস্কসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিয়ে কমিটি গড়া যেতে পারে। তিনি আরো বলেন, তদন্ত চালানোর জন্য জাতিসংঘের পাশাপাশি তুরস্ক নিজেও একটি আন্তর্জাতিক কমিশন গড়তে পারে।
ইউক্রেনীয় কৃষি মন্ত্রণালয় সতর্ক করেছে, দক্ষিণ ইউক্রেনের মাঠগুলো আগামী বছরের শুরুর দিকেই ‘মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে’। কারণ কাখোভকা জলাধারের ওপর নির্ভরশীল সেচ ব্যবস্থাগুলো আর কাজ করছে না। জলাধারটি দ্রুত শুকিয়ে যাচ্ছে। আনুমানিক ৪ দশমিক ৪ ঘনমাইল পানি গর্জন করতে করতে দিনিপ্রো নদী বেয়ে কৃষ্ণসাগরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেনীয় কৃষি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধের আগে ওই এলাকার ৩১টি সেচব্যবস্থার মাধ্যমে ৫ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ করা হতো। এই পানির একমাত্র উৎস ছিল কাখোভকা জলাধার।
মন্ত্রণালয়ের ফার্স্ট ডেপুটি মিনিস্টার তারাস ভিসোটস্কি বলেন, এই পানি নেওয়া এবং পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাঁধ ও পাম্পিং স্টেশনটি আমাদের প্রয়োজন ছিল। সেটি এখন ধ্বংস হয়ে গেছে। কৃষকদের জন্য যদি আবার পানির লাইন করতে হয়, তবে তা গোড়া থেকে শুরু করতে হবে।
খেরসন ইউক্রেনের অন্যতম উর্বর এলাকা। সেখানকার তরমুজের খ্যাতি বিশ্বজোড়া। এছাড়া পেঁয়াজ, টমেটো, সূর্যমুখী, সয়াবিন এবং গমও উৎপাদন হয় প্রচুর। এগুলোর পাশাপাশি ডেইরি খাতেও কাখোভকা বাঁধ ধ্বংসের প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বাঁধটি ধ্বংসের পর যুদ্ধাঞ্চলসহ আশপাশের একটা বড় এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ কারণে ইতিমধ্যে হাজারো মানুষ এলাকা ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। তাঁরা অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের হিসাবমতে, বাঁধ ধ্বংসের জেরে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ বন্যার ঝুঁকির মুখে পড়েছেন। এই সংখ্যা বাড়তে পারে।
বাঁধটি থেকে খেরসন শহরের দূরত্ব প্রায় ৬০ কিলোমিটার। গত বুধবারই শহরের নি¤œাঞ্চলের পানির স্তর ৩ দশমিক ৫ মিটার বেড়ে যেতে দেখা গেছে। নদীতীরবর্তী একটি গ্রামের বাসিন্দা ওলেকসান্দার রিভা বলেন, ‘যদি পানি আরেক মিটার বাড়ে, তাহলে আমাদের ঘর ছাড়তে হবে।’ তিনি ইতিমধ্যে ঘরের জিনিসপত্র পাশের উঁচু জায়গায় একটি পরিত্যক্ত বাড়িতে রেখে এসেছেন।
গ্রিফিথস নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন, বাঁধটি ধসের ফলে ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খাদ্য, নিরাপদ পানি ও জীবিকা বিনষ্ট হবে। এই ঘটনা দক্ষিণ ইউক্রেনে উভয় পক্ষ নিয়ন্ত্রিত এলাকার হাজারো মানুষের জন্য মারাত্মক ও সুদূরপ্রসারী পরিণতি বয়ে আনবে।
রুশ কর্মকর্তারা বলছেন, দিনিপ্রো নদী থেকে যে খালের মাধ্যমে ক্রিমিয়ায় পানি সরবরাহ করা হয়, সেটি ঠিক কাখোভকার ওপর অবস্থিত। কিন্তু জলাধারটি শুকিয়ে গেলে ওই খালে আর কোনো পানি পৌঁছাবে না। খালটিতে এরই মধ্যে পানিপ্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। এই ক্ষতিকেই তারা বাঁধ ধ্বংসের পেছনে ইউক্রেনের হাত রয়েছে, এমন দাবির সপক্ষে প্রমাণ হিসেবে দাঁড় করাচ্ছে।
বাঁধ ধ্বংসের ঘটনায় গতকাল ‘গভীর উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছে চীন। বেইজিং বলছে, এ ঘটনায় মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা করছে তারা।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন বলেন, ‘কাখোভকা জলবিদ্যুৎকেন্দ্রের বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঘটনায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি।’ তিনি বলেন, ‘এ ঘটনায় সৃষ্ট মানবিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত প্রভাব নিয়ে আমরা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন।’
ওয়াং বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবিক আইন মেনে চলতে এবং বেসামরিক লোকজন ও স্থাপনার সুরক্ষায় নিজেদের সর্বোচ্চটা করতে আমরা বিবদমান সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আরও বলেন, ইউক্রেন সংকটের বিষয়ে বেইজিংয়ের অবস্থান অপরিবর্তিত ও স্পষ্ট। তিনি বলেন, চীন আশা করে, ইউক্রেন সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের প্রতি সব পক্ষ প্রতিশ্রুতিশীল হবে এবং যৌথভাবে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাবে।