বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভয়েসের আয়োজনে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপি ইন্টারনেট ‘শাটডাউন ও বাংলাদেশ: সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের অনলাইন সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে ভয়েস। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ।
কর্মশালার শুরুতে প্রশিক্ষনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ভয়েসের উপ-পরিচালক, মুশাররাত মাহেরা। এ সময় তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ^জুড়ে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, মতপ্রকাশ, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ সহ দৈনন্দিন কর্মকান্ডের জন্য ইন্টারনেট জনপ্রিয় ও অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। ইন্টারনেট মানুষকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে, মানুষ ইন্টারনেট কেন্দ্রিক একটি আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে।
কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে মানুষের প্রবেশাধিকার স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাহত হলেও তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, মত প্রকাশের অধিকার সহ প্রায় সমস্ত বিষয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অনেকে মনে করেন পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলেই শুধু ইন্টারনেট শাটডাউন বলে। বাস্তবে ইন্টারনেট শাটডাউনের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ম্যাসেজিং অ্যাপ সাময়িক বা পুরোপুরি ব্লক করে রাখা, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া, নির্দিষ্ট ওয়েবপোর্টালে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া, ইত্যাদিও ইন্টারনেট শাটডাউনের অন্তর্ভূক্ত। শাটডাউন নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসী প্রতিষ্ঠান, একসেসনাউ এর #কিপইটঅন কোয়ালিশন এ ধরনের ৮টি ইন্টারনেট শাটডাউনের প্রকারভেদ চিহ্নিত করেছে। উল্লেখ্য, বেসরকারী সংস্থা ভয়েসের সাথে একসেসনাউ একযোগে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, বিশ^জুুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট বন্ধ করে, যেমন রাজনৈতিক কর্মসূচী, গণ আন্দোলন, ধর্মীয় বিবাদের প্রসার, অপতথ্যের বিস্তার রোধে, পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন ঠেকাতে, বা জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবেলায়। অনেকক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থরক্ষায়ও ইন্টারনেট বন্ধ করার মত হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। নির্বাচনের সময় বা আগে, প্রতিবাদ সমাবেশ বা বিক্ষোভ সামাল দিতে, এবং এমনকি বিকল্প মতামত প্রকাশ ও প্রচার ঠেকাতে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায় যা গণতান্ত্রিক চর্চার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
২০১১ সালে জাতিসংঘের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিশেষদূতের প্রতিবেদনে, ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং বিশে^র সকল রাষ্ট্রকে আহ্বান করা হয় যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় অতি জরুরী কারণ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানে কোন ধরনের বাধা বিঘ্ন না ঘটানো হয়।
কর্মশালাটিতে সেন্সরশিপ এবং বিভিন্ন উৎস ও সোর্স পরিমান করা বিষয়ে আলোচনা করেন ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ আশরাফুল হক। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট বন্ধের আইনি বিষয়গুলো আলোচনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যাললের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার সাইমুম রেজা তালুকদার। ইন্টারনেট সেন্সরশীপের কুফল সম্পর্কে গবেষনা উপাত্ত ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন ডিজিটাল রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ চৌধুরী। ইন্টারনেট বন্ধের সময় ও পরে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন রেজওয়ান ইসলাম।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৩৫ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।
মঙ্গলবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভয়েসের আয়োজনে গণমাধ্যম কর্মীদের জন্য গত ১৬ সেপ্টেম্বর দিনব্যাপি ইন্টারনেট ‘শাটডাউন ও বাংলাদেশ: সার্বিক পরিস্থিতি’ শীর্ষক একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক, নারী ও মানবাধিকার কর্মীদের অনলাইন সুরক্ষা ও ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার্থে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে ভয়েস। তারই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা প্রবাহের প্রেক্ষিতে এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করা হয়। কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ।
কর্মশালার শুরুতে প্রশিক্ষনের মূল উদ্দেশ্য নিয়ে একটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন ভয়েসের উপ-পরিচালক, মুশাররাত মাহেরা। এ সময় তিনি বলেন, তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে ইন্টারনেট এখন মানুষের জীবনযাপনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। বিশ^জুড়ে মানুষের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসা, মতপ্রকাশ, সংস্কৃতি ও ব্যক্তিগত যোগাযোগ সহ দৈনন্দিন কর্মকান্ডের জন্য ইন্টারনেট জনপ্রিয় ও অপরিহার্য মাধ্যম হিসেবে সর্বজন স্বীকৃত। ইন্টারনেট মানুষকে এমনভাবে প্রভাবিত করেছে যে, মানুষ ইন্টারনেট কেন্দ্রিক একটি আলাদা জগৎ তৈরি করে নিয়েছে।
কর্মশালায় আলোচকরা বলেন, বর্তমান সময়ে ইন্টারনেটে মানুষের প্রবেশাধিকার স্বল্প সময়ের জন্য ব্যাহত হলেও তা সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ব্যবসা, চিকিৎসা, শিক্ষা, বিনোদন, মত প্রকাশের অধিকার সহ প্রায় সমস্ত বিষয়ের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
অনেকে মনে করেন পুরোপুরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলেই শুধু ইন্টারনেট শাটডাউন বলে। বাস্তবে ইন্টারনেট শাটডাউনের পরিধি অনেক বিস্তৃত। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং ম্যাসেজিং অ্যাপ সাময়িক বা পুরোপুরি ব্লক করে রাখা, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে দেয়া, নির্দিষ্ট ওয়েবপোর্টালে প্রবেশ করতে বাধা দেয়া, ইত্যাদিও ইন্টারনেট শাটডাউনের অন্তর্ভূক্ত। শাটডাউন নিয়ে আন্তর্জাতিক অ্যাডভোকেসী প্রতিষ্ঠান, একসেসনাউ এর #কিপইটঅন কোয়ালিশন এ ধরনের ৮টি ইন্টারনেট শাটডাউনের প্রকারভেদ চিহ্নিত করেছে। উল্লেখ্য, বেসরকারী সংস্থা ভয়েসের সাথে একসেসনাউ একযোগে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ শীর্ষক একটি প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে।
কর্মশালায় আরও বলা হয়, বিশ^জুুড়ে ইন্টারনেটের ব্যবহার যেমন বাড়ছে, তেমনি ইন্টারনেট শাটডাউনের ঘটনাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সরকার নানা ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইন্টারনেট বন্ধ করে, যেমন রাজনৈতিক কর্মসূচী, গণ আন্দোলন, ধর্মীয় বিবাদের প্রসার, অপতথ্যের বিস্তার রোধে, পরীক্ষায় অসাধু উপায় অবলম্বন ঠেকাতে, বা জন নিরাপত্তার জন্য হুমকি মোকাবেলায়। অনেকক্ষেত্রে সরকারের স্বার্থরক্ষায়ও ইন্টারনেট বন্ধ করার মত হাতিয়ার ব্যবহার করা হয়। নির্বাচনের সময় বা আগে, প্রতিবাদ সমাবেশ বা বিক্ষোভ সামাল দিতে, এবং এমনকি বিকল্প মতামত প্রকাশ ও প্রচার ঠেকাতে এ ধরনের উদ্যোগ নিতে দেখা যায় যা গণতান্ত্রিক চর্চার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
২০১১ সালে জাতিসংঘের মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করা বিশেষদূতের প্রতিবেদনে, ইন্টারনেটে প্রবেশাধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং বিশে^র সকল রাষ্ট্রকে আহ্বান করা হয় যেন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের আওতায় অতি জরুরী কারণ ছাড়া ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদানে কোন ধরনের বাধা বিঘ্ন না ঘটানো হয়।
কর্মশালাটিতে সেন্সরশিপ এবং বিভিন্ন উৎস ও সোর্স পরিমান করা বিষয়ে আলোচনা করেন ইন্টারনেট বিশেষজ্ঞ আশরাফুল হক। বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ইন্টারনেট বন্ধের আইনি বিষয়গুলো আলোচনা করেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যাললের আইন বিভাগের সিনিয়র লেকচারার সাইমুম রেজা তালুকদার। ইন্টারনেট সেন্সরশীপের কুফল সম্পর্কে গবেষনা উপাত্ত ও এর প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন ডিজিটাল রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ চৌধুরী। ইন্টারনেট বন্ধের সময় ও পরে সাংবাদিকদের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন রেজওয়ান ইসলাম।
প্রশিক্ষণ কর্মশালায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার ৩৫ জন সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।