সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে নারীর শিক্ষা ও কাজের পরিধি। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পেশা, ব্যবসা ও আয়ের নতুন ক্ষেত্র, যা নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হল ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাড়ছে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা। সরাসরি ভূক্তভোগী হচ্ছেন নারী রাজনৈতিক অধিকার কর্মী, অভিনেত্রী, নারী কবি ও লেখক, নারী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সহ সাধারন ও প্রান্তিক নারীরা।
এ প্রেক্ষিতে গবেষণাভিত্তিক এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ভয়েসেস ফর ইন্টারএকটিভ চয়েস এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) এর আয়োজনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ভয়েস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ প্রকাশ’ শীর্ষক এক তথ্যবিনিময় সভা। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভয়েসের ‘পাওয়ার: প্রমোটিং উইমেনস ইকুয়ালিটি এন্ড রাইটস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করা হয় ।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভয়েসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রমিতি প্রভা চৌধুরী। গত বছর অক্টোবর থেকে ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতার ১৩টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, যেসব নারীরা কোন আদর্শগত কাজে জড়িত, যেমন: সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী, অথবা নিজ নিজ কার্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন, তারা সাইবার আক্রমনের শিকার বেশি হচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নারী সমন্বয়ক এবং সাধারন নারী যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন, তাদের প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হয়রানিমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হয় যা তাদের বাস্তব জীবনেও চরম প্রভাব ফেলেছে। তাই সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই অনলাইনে রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা এবং বাক স্বাধীনতার প্রয়োগ থেকে বিরত আছেন। এছাড়াও এসব নারীরা অনলাইনে আরো বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হন, যার মধ্যে তাদের আদর্শ, জীবনযাত্রা বা পেশগত কারনে লজ্জিত ও দোষী সাব্যস্ত করা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপতথ্য প্রচার উল্লেখযোগ্য।
তথ্যবিনিময় সভার আলোচনায় আরো উঠে আসে, সাইবার স্পেসে নারীদের হয়রানির সমাধানকল্পে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে গত সাড়ে তিন বছরে (২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত) সাইবার অপরাধের শিকার ৬০ হাজার ৮০৮ জন নারী প্রতিকার চেয়েছেন। সাইবার স্পেসে ভূক্তভোগী এসব নারীর ৪১ ভাগ ডক্সিংয়ের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ১৮ ভাগ ফেসবুক আইডি হ্যাক, ১৭ ভাগ ব্ল্যাক মেইলিং, ৯ ভাগ ইমপার্সোনেশন, ৮ ভাগ সাইবার বুলিং জনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে সরকার পতনের পর, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে, নারীর বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিযোগ দাখিল হয়।
সভায় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর জোর দেন। এছাড়াও পুলিশের সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, সামাজিক হয়রানির ভয় ও প্রশাসনিক জটিলতার কারনে, অনেকেই আইন প্রয়োগকারীদের সাহায্য নিতে চান না।
ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না কী করবেন বা কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন এবং অভিভাবক বা পরিচিতজনকেও জানাতে চান না। অন্যদিকে যে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন, তারা সঠিক বিচার পান না, যার ফলে অনেকেই আতœহননের মত পথ বেছে নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধের মধ্যে রয়েছে অপতথ্য ছড়ানো, ঘৃণামূলক মন্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বানানো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, ভীতি প্রদর্শন, সাইবার স্টকিং, মর্ফিং (কোন নারীর ছবি বিকৃত করা, ফেইক প্রোফাইল তৈরি করা, যৌন উত্তেজক ক্ষুদে বার্তা পাঠানো), আর্থিক প্রতারণা, ইমেল আইডি হ্যাক করা, ইমপার্সোনেশন বাক্যাট ফিশিং (ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা), ডক্সিং (নারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন: ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল, পারিবারিক তথ্য অনলাইনে ফাঁস)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানি মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার হল জন সচেতনতা। অনলাইন সহিংসতার বিভিন্ন ধরন, এর প্রভাব এবং সম্পৃক্ত আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযান, কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি। ভুক্তভোগীদেও কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিয়ে অনলাইনে যৌন সহিংসতার ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভুক্তভোগীদের সমর্থন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যকে সহজলভ্য করতে হবে।
মঙ্গলবার, ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টারনেট ও ডিজিটাল যন্ত্রপাতির ব্যবহার বৃদ্ধির সাথে সাথে বাড়ছে নারীর শিক্ষা ও কাজের পরিধি। তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন পেশা, ব্যবসা ও আয়ের নতুন ক্ষেত্র, যা নারীর ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। কিন্তু এর নেতিবাচক দিক হল ইন্টারনেট ও মোবাইল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে বাড়ছে নারীর প্রতি যৌন হয়রানি ও সহিংসতা। সরাসরি ভূক্তভোগী হচ্ছেন নারী রাজনৈতিক অধিকার কর্মী, অভিনেত্রী, নারী কবি ও লেখক, নারী ক্রীড়া ব্যক্তিত্ব সহ সাধারন ও প্রান্তিক নারীরা।
এ প্রেক্ষিতে গবেষণাভিত্তিক এডভোকেসি প্রতিষ্ঠান ভয়েসেস ফর ইন্টারএকটিভ চয়েস এন্ড এমপাওয়ারমেন্ট (ভয়েস) এর আয়োজনে গত ১৫ ফেব্রুয়ারী ভয়েস কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে ‘ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনাসমূহ প্রকাশ’ শীর্ষক এক তথ্যবিনিময় সভা। সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে ভয়েসের ‘পাওয়ার: প্রমোটিং উইমেনস ইকুয়ালিটি এন্ড রাইটস’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে এ সভার আয়োজন করা হয় ।
সভায় মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন ভয়েসের প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রমিতি প্রভা চৌধুরী। গত বছর অক্টোবর থেকে ঘটে যাওয়া নারীর প্রতি অনলাইন সহিংসতার ১৩টি ঘটনা বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, যেসব নারীরা কোন আদর্শগত কাজে জড়িত, যেমন: সাংবাদিক এবং মানবাধিকারকর্মী, অথবা নিজ নিজ কার্যক্ষেত্রে অসামান্য অবদান রাখছেন, তারা সাইবার আক্রমনের শিকার বেশি হচ্ছেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নারী সমন্বয়ক এবং সাধারন নারী যারা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহন করেছিলেন, তাদের প্রতি বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক হয়রানিমূলক আচরণ পরিলক্ষিত হয় যা তাদের বাস্তব জীবনেও চরম প্রভাব ফেলেছে। তাই সরকার পরিবর্তনের পর অনেকেই অনলাইনে রাজনৈতিক মতাদর্শের চর্চা এবং বাক স্বাধীনতার প্রয়োগ থেকে বিরত আছেন। এছাড়াও এসব নারীরা অনলাইনে আরো বিভিন্নভাবে বৈষম্যের শিকার হন, যার মধ্যে তাদের আদর্শ, জীবনযাত্রা বা পেশগত কারনে লজ্জিত ও দোষী সাব্যস্ত করা এবং উদ্দেশ্যমূলকভাবে অপতথ্য প্রচার উল্লেখযোগ্য।
তথ্যবিনিময় সভার আলোচনায় আরো উঠে আসে, সাইবার স্পেসে নারীদের হয়রানির সমাধানকল্পে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে গত সাড়ে তিন বছরে (২০২৪ সালের মে মাস পর্যন্ত) সাইবার অপরাধের শিকার ৬০ হাজার ৮০৮ জন নারী প্রতিকার চেয়েছেন। সাইবার স্পেসে ভূক্তভোগী এসব নারীর ৪১ ভাগ ডক্সিংয়ের শিকার হয়েছেন। এছাড়া ১৮ ভাগ ফেসবুক আইডি হ্যাক, ১৭ ভাগ ব্ল্যাক মেইলিং, ৯ ভাগ ইমপার্সোনেশন, ৮ ভাগ সাইবার বুলিং জনিত সমস্যা নিয়ে অভিযোগ করেছেন। উল্লেখ্য, গত বছর আগস্টে সরকার পতনের পর, সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনে, নারীর বিরুদ্ধে সাইবার ক্রাইমের সর্বোচ্চ সংখ্যক অভিযোগ দাখিল হয়।
সভায় উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নারীর প্রতি সহিংসতা বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ওপর জোর দেন। এছাড়াও পুলিশের সাইবার সাপোর্ট সেন্টারে কর্মরত ব্যক্তিদের জেন্ডার সংবেদনশীলতা বিষয়ক প্রশিক্ষণের আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তারা বলেন, সামাজিক হয়রানির ভয় ও প্রশাসনিক জটিলতার কারনে, অনেকেই আইন প্রয়োগকারীদের সাহায্য নিতে চান না।
ভুক্তভোগীদের বেশিরভাগই প্রাথমিক পর্যায়ে বুঝতে পারেন না কী করবেন বা কোথায় গেলে প্রতিকার পাবেন এবং অভিভাবক বা পরিচিতজনকেও জানাতে চান না। অন্যদিকে যে ভুক্তভোগীরা মামলা করেন, তারা সঠিক বিচার পান না, যার ফলে অনেকেই আতœহননের মত পথ বেছে নেন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, বর্তমানে নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধের মধ্যে রয়েছে অপতথ্য ছড়ানো, ঘৃণামূলক মন্তব্য, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে বানানো আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেয়া, ভীতি প্রদর্শন, সাইবার স্টকিং, মর্ফিং (কোন নারীর ছবি বিকৃত করা, ফেইক প্রোফাইল তৈরি করা, যৌন উত্তেজক ক্ষুদে বার্তা পাঠানো), আর্থিক প্রতারণা, ইমেল আইডি হ্যাক করা, ইমপার্সোনেশন বাক্যাট ফিশিং (ছদ্মবেশ ধারণ করে প্রতারণা), ডক্সিং (নারীর ব্যক্তিগত তথ্য যেমন: ঠিকানা, ফোন নম্বর, ইমেইল, পারিবারিক তথ্য অনলাইনে ফাঁস)।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ভয়েসের নির্বাহী পরিচালক আহমেদ স্বপন মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রযুক্তির মাধ্যমে যৌন হয়রানি মোকাবিলার অন্যতম হাতিয়ার হল জন সচেতনতা। অনলাইন সহিংসতার বিভিন্ন ধরন, এর প্রভাব এবং সম্পৃক্ত আইন সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে সামাজিক মাধ্যমে প্রচারাভিযান, কর্মশালা এবং সচেতনতা বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রম চালানো জরুরি। ভুক্তভোগীদেও কণ্ঠস্বরকে প্রাধান্য দিয়ে অনলাইনে যৌন সহিংসতার ক্ষতিকর প্রভাব সর্ম্পকে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। ভুক্তভোগীদের সমর্থন প্রদানের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যকে সহজলভ্য করতে হবে।