alt

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ডিজিটাল কমার্সে আস্থা ও প্রবৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: ইক্যাব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১

দেশের ই-কমার্স সেক্টরের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা প্রবাহের আলোকে সৃষ্ট সমস্যা ও তার সমাধানের মাধ্যমে ক্রেতার আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও কাংখিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের নিয়ে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। গতকাল ৮ নভেম্বর রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত এক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে ই-ক্যাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০১৪ সাল থেকে ই-কমার্সখাতের উন্নয়নে সংগঠনটি অনবরত যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সরকারের সাথে যেসব নীতিগত সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে এবং এই খাতের যেসব সমস্যার সমাধান করেছে তা তুলে ধরা হয় উক্ত অনুষ্ঠানে।

স্বাগত বক্তব্যে ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, সূচনালগ্ন থেকে এই খাতের নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে উদ্যোক্তারা কাজ করে আসছে। যোগাযোগ ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে আমাদের যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তারচেয়ে বেশী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ই-কমার্স খাতে। এর কারণ মূলত সঠিক সেবা দেয়া। করেনাকালীন সময়ে সেবার মাধ্যমে যে আস্থা ও বিশ্বাস এখাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা তৈরী করেছে সেটা কোনোভাবে নষ্ট হতে দিতে চায়না ই-ক্যাব। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং ক্রেতাদের সঠিক ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধিতে আমরা ফিরে আসতে পারব। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ ব্যবসা পদ্ধতির কারণে শুধু যে ক্রেতা এবং মার্চেন্টরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয়। বরং নেতিবাচক বার্তাও ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে এই খাতে যে বিদেশী বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে তা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে ব্যবসা করছে যাদের সফলতার গল্প আছে সেগুলোও তুলে আনা প্রয়োজন।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এখনো এই খাত লাভের মুখ দেখেনি। তারপরও একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত দেড়বছর কর্মীরা সেবা দিয়ে গেছে। ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে ই-কমার্স খাত তা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন এই খাতের প্রতি ক্রেতার আস্থা ও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এর উল্লেখ করে তমাল বলেন, সদস্যদের সাথে নিয়ে আমরা সরকারের সাথে কাজ করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ই-কমার্স আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মেহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেন, এখনো নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এখাতের উদ্যোক্তারা কাজ করছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে বিনিয়োগে অনীহা দেখায়। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা দেয়া এখনো সহজ হয়ে উঠেনি। এসময় এ ধরনের ধাক্কা এ খাতের গতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে ক্রেতাদের সেবা দিতে চায় তারা কিন্তু পিছু হটেনি। আর ক্রেতারাও সেবা গ্রহণ করছে। সঠিক সেবার মাধ্যমে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আনতে আমরা কাজ করে যাব।

ই-ক্যাবের যুগ্ম ম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ই-কমার্সে বেশীরভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যাদের একটা বড়ো অংশ আবার নারী। এই খাতের প্রসারে সরকারের নীতিগত সহযোগিতা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এখনো বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর কাজ করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সেবার মাধ্যমে জনগনের যে আস্থা তৈরী করেছে তা ধরে রাখতেও তারা কাজ করবে। প্রকৃত ই-কমার্স থেকে সঠিক নিয়মে কেনাকাটা করার মাধ্যমে ক্রেতারাও এই খাতের পাশে থাকতে পারেন।

ই-ক্যাবের পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী বলেন, এই সময় ক্রেতা এবং উদ্যোক্তা সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা জানি ট্রেড এসোসিয়েশন কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব দেখতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে। ই-ক্যাব থেকেও অনবরত দাবী ও চিঠি দেয়ার মাধ্যমে বিষয়গুলো কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই সকলের উচিৎ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা।

ই-ক্যাবের পরিচালক জিয়া আশরাফ বলেন, ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনে সেবা নেয়ার জন্যই ই-কমার্সের উপর ভরসা করেছেন। সঠিক সেবা দেয়ার মাধ্যমে সে ভরসা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা সেবা দানে যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনি সংকট উত্তরণে সবাই একতাবদ্ধ। তাই সঠিক সেবার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এছাড়া ক্রেতাদের উচিৎ যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিক সেবা দেয় তাদের কাছ থেকে সেবা গ্রহণের মাধ্যমে পাশে থাকা। তাহলে আমরা সকলে মিলে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবো। বিক্রোতারা যেমন নিজেদের স্বার্থে সঠিক সেবা দিবে তেমনি ক্রেতারাও নিজেদের প্রয়োজনে ই-কমার্সের সেবা গ্রহণ করবে।

ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, ক্রেতা হলো যেকোনো ব্যবসার প্রাণ। ক্রেতাদের আস্থাই পারে ডিজিটাল কমার্সের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে। আর এ কারণেই একটি বাণিজ্য সংগঠন হওয়া সত্বেও বিগত সময়ে ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বিরামহীনভাবে কাজ করছে ই-ক্যাব। সরকার যে নির্দেশিকা ঘোষনা করেছে তা ক্রেতা ও উদ্যোক্তা উভয়ের স্বার্থরক্ষা করার জন্য। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে যেমন বিতর্কিত পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রয় বন্ধ হয়েছে। তেমনি এটি বাস্তবায়নের মাধ্যকে এই খাতে ছন্দ ফিরে আসবে।

ই-ক্যাবের পরিচালক সাঈদ রহমান বলেন, ২/১ জনের জন্য পুরো ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে না। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের শত শত কোটি টাকা আটকে আছে আইনি প্রক্রিয়ার কারণে। এই অবস্থা হয়তো বেশীদিন থাকবেনা। কিন্তু এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অনেক উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু নীতি পলিসি নয় আর্থিক বিনিয়োগ ও ঋণ সুবিধার মাধ্যমে তাদের পাশে থাকা উচিৎ সরকারের। তিনি আটকে থাকা অর্থ দ্রুত ছাড় করার আবেদন জানান।

ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রণকারী কতৃপক্ষ সৃষ্টি না করে প্রচলিত আইন সংশোধন ও মনিটরিং এর কথা বলা হয়। এছাড়া ডিজিটাল কমার্স সেল এর সক্ষমতা বাড়িয়ে, ইউবিআইডি, সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম তৈরী করার মাধ্যমে এই খাতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয় তুলে ধরা হয়। বর্তমানে গেটওয়ে আটকে থাকা অর্থ ছাড়, ডিজিটাল মার্কেটিং ৩০% ভ্যাট রহিতকরণ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে অনুরোধ ও সহযোগিতার কথা জানানো হয়।

ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভনের সঞ্ছালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।

ছবি

হুয়াওয়ে ‘সিডস ফর দ্য ফিউচার বাংলাদেশের’ বিজয়ীদের নাম ঘোষণা

ছবি

গ্রামীণফোনের নতুন ইকোসিস্টেম ‘গ্রামীণফোন ওয়ান’ চালু

ছবি

তরুণদের নিয়ে প্রেনিউর ল্যাবের ‘ডিজিটাল ইশতেহার’

ছবি

বর্ষায় ভিভোর ফটোগ্রাফি ক্যাম্পেইন

ছবি

বাজারে ওয়াইফাই ৭ প্রযুক্তি সমৃদ্ধ কিউডি রাউটার

ছবি

ওয়ানপ্লাস বাংলাদেশে আনল নতুন নর্ড ৫ সিরিজের স্মার্টফোন ও আইওটি ডিভাইস

ছবি

বিকাশ মার্চেন্ট পয়েন্ট থেকে বিদ্যুৎ বিল দেয়ার সুযোগ

ছবি

সারাদেশে পাঠাও-পে সেবা চালু

ছবি

রকেট অ্যাডভেঞ্চার ডে অনুষ্ঠিত

ছবি

ফোনের সুরক্ষায় আইপি রেটিংয়ের গুরুত্ব

ছবি

বিকাশ থেকে বাংলালিংকে সর্বোচ্চ রিচার্জকারীরা জিতলেন পুরস্কার

ছবি

ফিলিপাইনে অনুষ্ঠেয় এশিয়া-প্যাসিফিক ওপেন চ্যাম্পিয়নশিপ ২০২৫ এর বাংলাদেশ দল চূড়ান্ত

ছবি

দারাজের লাকি ৭.৭ ক্যাম্পেইন

ছবি

ইডটকো বাংলাদেশ ও টাইগার নিউ এনার্জির মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত

ছবি

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য পিএমসিসি ২০২৫-এর নিবন্ধন শুরু

ছবি

আন্তর্জাতিক রোবট অলিম্পিয়াড বাংলাদেশ ওপেন ২০২৫ : রোবট অলিম্পিয়াডের নতুন অধ্যায় শুরু

ছবি

সেমিকন্ডাক্টর খাত উন্নয়নে জাতীয় টাস্কফোর্সের সুপারিশকে স্বাগত জানাল বিএসআইএ

ছবি

পাবজিকে ঘিরে জেগে উঠছে বাংলাদেশের গেমিং কমিউনিটি

ছবি

র‌্যানসমওয়্যার হামলা : গড়ে ১০ লাখ ডলার গুনছে প্রতিষ্ঠানগুলো

ছবি

অপারেশনাল প্রফিটে প্রিয়শপ

ছবি

ফিক্সড ইন্টারনেটের ৭০০ টাকার প্যাকেজ ন্যূনতম ৫০০ টাকায়

ছবি

ডাক বিভাগের কোষাগার ব্যবস্থাপনা ডিজিটাল রূপান্তরের উদ্বোধন

ছবি

কানেক্ট লাইভ টোকিও ২০২৫-এ অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশি দম্পতি পাভেল-সুমাইয়া

ছবি

ল্যাগ-ফ্রি গেমিং নিশ্চয়তায় রিয়েলমি ১৪ ৫জি স্মার্টফোন

ছবি

এয়ার টিকেট জিতলেন পাঠাও কুরিয়ার মার্চেন্টরা

ছবি

নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটিকে আরও শক্তিশালী করছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ফাইভজি অ্যাডভান্সড

ছবি

সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করল ভয়েস

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশে চালু হলো ক্রাউডশিপিং সেবা ‘ডিমহাম’

ছবি

এআই ইনোভেশন ইন এশিয়া অ্যাওয়ার্ড পেল হুয়াওয়ে ও চায়না মোবাইল

ছবি

আইএসপিএবি ও বিপিসির যৌথ আয়োজনে রাজশাহীতে প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত.

ছবি

ডেলিভারি পার্টনারদের জন্য ফুডপ্যান্ডার বিনামূল্যে হেলথ ক্যাম্প

ছবি

স্থানীয়ভাবে হোস্টকৃত টিয়ার-৪ ক্লাউড প্ল্যাটফর্ম চালু করল এক্সেনটেক

ছবি

চট্টগ্রাম ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি ও বিডিওএসএন এর মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত

ছবি

বাক্কো ও আকিজ টেলিকমের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত

ছবি

যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশে চালু হলো ক্রাউডশিপিং সেবা ‘ডিমহাম’

ছবি

বাংলাদেশের বাজারে সিটিজেন ব্র্যান্ডের পস, বারকোড ও লেভেল প্রিন্টার

tab

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

ডিজিটাল কমার্সে আস্থা ও প্রবৃদ্ধির জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে: ইক্যাব

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০৯ নভেম্বর ২০২১

দেশের ই-কমার্স সেক্টরের সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা প্রবাহের আলোকে সৃষ্ট সমস্যা ও তার সমাধানের মাধ্যমে ক্রেতার আস্থা ফিরিয়ে আনতে ও কাংখিত প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে উদ্যোক্তাদের নিয়ে সরকারের সাথে একযোগে কাজ করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে ই-কমার্স ব্যবসায়ীদের সংগঠন ই-কমার্স এ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। গতকাল ৮ নভেম্বর রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁ হোটেলে অনুষ্ঠিত এক মিট দ্যা প্রেস অনুষ্ঠানে ই-ক্যাবের কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্যরা উপস্থিত হয়ে এই প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০১৪ সাল থেকে ই-কমার্সখাতের উন্নয়নে সংগঠনটি অনবরত যেসব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে, সরকারের সাথে যেসব নীতিগত সিদ্ধান্তে ভূমিকা রেখেছে এবং এই খাতের যেসব সমস্যার সমাধান করেছে তা তুলে ধরা হয় উক্ত অনুষ্ঠানে।

স্বাগত বক্তব্যে ই-ক্যাবের সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন বলেন, সূচনালগ্ন থেকে এই খাতের নানা সমস্যা ও সীমাবদ্ধতার ভেতর দিয়ে উদ্যোক্তারা কাজ করে আসছে। যোগাযোগ ও ডিজিটাল অবকাঠামোতে আমাদের যে পরিমাণ উন্নতি হয়েছে তারচেয়ে বেশী প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে ই-কমার্স খাতে। এর কারণ মূলত সঠিক সেবা দেয়া। করেনাকালীন সময়ে সেবার মাধ্যমে যে আস্থা ও বিশ্বাস এখাতের উদ্যোক্তা ও কর্মীরা তৈরী করেছে সেটা কোনোভাবে নষ্ট হতে দিতে চায়না ই-ক্যাব। তিনি বলেন, এই মুহুর্তে নীতিমালা মেনে ব্যবসা পরিচালনা করে এবং ক্রেতাদের সঠিক ও মানসম্পন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে ক্রমাগত প্রবৃদ্ধিতে আমরা ফিরে আসতে পারব। তিনি আরো বলেন, ঝুকিপূর্ণ ব্যবসা পদ্ধতির কারণে শুধু যে ক্রেতা এবং মার্চেন্টরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে তা নয়। বরং নেতিবাচক বার্তাও ছড়িয়ে পড়েছে এতে করে এই খাতে যে বিদেশী বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা তৈরী হয়েছে তা এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিকভাবে ব্যবসা করছে যাদের সফলতার গল্প আছে সেগুলোও তুলে আনা প্রয়োজন।

ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, এখনো এই খাত লাভের মুখ দেখেনি। তারপরও একদিকে যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে অন্যদিকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গত দেড়বছর কর্মীরা সেবা দিয়ে গেছে। ই-বাণিজ্যের মাধ্যমে ডিজিটাল অর্থনীতি ও দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে যে অবদান রেখেছে ই-কমার্স খাত তা অনস্বীকার্য। তিনি বলেন এই খাতের প্রতি ক্রেতার আস্থা ও ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে আমরা সকলকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এ ব্যাপারে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ এর উল্লেখ করে তমাল বলেন, সদস্যদের সাথে নিয়ে আমরা সরকারের সাথে কাজ করছি। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে ই-কমার্স আবার ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেছে।

ই-ক্যাবের অর্থ সম্পাদক মেহাম্মদ আব্দুল হক অনু বলেন, এখনো নানা সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে এখাতের উদ্যোক্তারা কাজ করছে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো এই খাতে বিনিয়োগে অনীহা দেখায়। প্রান্তিক পর্যায়ে সেবা দেয়া এখনো সহজ হয়ে উঠেনি। এসময় এ ধরনের ধাক্কা এ খাতের গতিকে ক্ষতিগ্রস্থ করেছে। কিন্তু যারা সঠিকভাবে ক্রেতাদের সেবা দিতে চায় তারা কিন্তু পিছু হটেনি। আর ক্রেতারাও সেবা গ্রহণ করছে। সঠিক সেবার মাধ্যমে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আনতে আমরা কাজ করে যাব।

ই-ক্যাবের যুগ্ম ম্পাদক নাসিমা আক্তার নিশা বলেন, ই-কমার্সে বেশীরভাগই ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা যাদের একটা বড়ো অংশ আবার নারী। এই খাতের প্রসারে সরকারের নীতিগত সহযোগিতা অবশ্যই ইতিবাচক। তবে এখনো বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে প্রচুর কাজ করতে হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা সেবার মাধ্যমে জনগনের যে আস্থা তৈরী করেছে তা ধরে রাখতেও তারা কাজ করবে। প্রকৃত ই-কমার্স থেকে সঠিক নিয়মে কেনাকাটা করার মাধ্যমে ক্রেতারাও এই খাতের পাশে থাকতে পারেন।

ই-ক্যাবের পরিচালক আশীষ চক্রবর্তী বলেন, এই সময় ক্রেতা এবং উদ্যোক্তা সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। আমরা জানি ট্রেড এসোসিয়েশন কোনো প্রতিষ্ঠানের আর্থিক হিসাব দেখতে বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে যেসব সমস্যা হয়েছে সেগুলো সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা কাজ করছে। ই-ক্যাব থেকেও অনবরত দাবী ও চিঠি দেয়ার মাধ্যমে বিষয়গুলো কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। তাই সকলের উচিৎ পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করা।

ই-ক্যাবের পরিচালক জিয়া আশরাফ বলেন, ক্রেতারা তাদের প্রয়োজনে সেবা নেয়ার জন্যই ই-কমার্সের উপর ভরসা করেছেন। সঠিক সেবা দেয়ার মাধ্যমে সে ভরসা অব্যাহত থাকবে। বর্তমানে ই-কমার্স উদ্যোক্তারা সেবা দানে যেমন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তেমনি সংকট উত্তরণে সবাই একতাবদ্ধ। তাই সঠিক সেবার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে পারবে। এজন্য সরকারের সহযোগিতা খুব গুরুত্বপূর্ণ এছাড়া ক্রেতাদের উচিৎ যেসব প্রতিষ্ঠান সঠিক সেবা দেয় তাদের কাছ থেকে সেবা গ্রহণের মাধ্যমে পাশে থাকা। তাহলে আমরা সকলে মিলে আবার প্রবৃদ্ধির ধারায় ফিরে আসবো। বিক্রোতারা যেমন নিজেদের স্বার্থে সঠিক সেবা দিবে তেমনি ক্রেতারাও নিজেদের প্রয়োজনে ই-কমার্সের সেবা গ্রহণ করবে।

ই-ক্যাবের পরিচালক আসিফ আহনাফ বলেন, ক্রেতা হলো যেকোনো ব্যবসার প্রাণ। ক্রেতাদের আস্থাই পারে ডিজিটাল কমার্সের ভবিষ্যৎ ঠিক করতে। আর এ কারণেই একটি বাণিজ্য সংগঠন হওয়া সত্বেও বিগত সময়ে ক্রেতাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সাথে বিরামহীনভাবে কাজ করছে ই-ক্যাব। সরকার যে নির্দেশিকা ঘোষনা করেছে তা ক্রেতা ও উদ্যোক্তা উভয়ের স্বার্থরক্ষা করার জন্য। এই নির্দেশিকার মাধ্যমে যেমন বিতর্কিত পদ্ধতিতে পণ্য বিক্রয় বন্ধ হয়েছে। তেমনি এটি বাস্তবায়নের মাধ্যকে এই খাতে ছন্দ ফিরে আসবে।

ই-ক্যাবের পরিচালক সাঈদ রহমান বলেন, ২/১ জনের জন্য পুরো ইকোসিস্টেম ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে না। গ্রাহক ও মার্চেন্টদের শত শত কোটি টাকা আটকে আছে আইনি প্রক্রিয়ার কারণে। এই অবস্থা হয়তো বেশীদিন থাকবেনা। কিন্তু এর কারণে ক্ষতিগ্রস্থ অনেক উদ্যোক্তার ব্যবসা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই শুধু নীতি পলিসি নয় আর্থিক বিনিয়োগ ও ঋণ সুবিধার মাধ্যমে তাদের পাশে থাকা উচিৎ সরকারের। তিনি আটকে থাকা অর্থ দ্রুত ছাড় করার আবেদন জানান।

ই-ক্যাবের পক্ষ থেকে নতুন আইন ও নিয়ন্ত্রণকারী কতৃপক্ষ সৃষ্টি না করে প্রচলিত আইন সংশোধন ও মনিটরিং এর কথা বলা হয়। এছাড়া ডিজিটাল কমার্স সেল এর সক্ষমতা বাড়িয়ে, ইউবিআইডি, সেন্ট্রাল কমপ্লেইন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, সেন্ট্রাল লজিস্টিক ট্র্যাকিং প্লাটফর্ম তৈরী করার মাধ্যমে এই খাতে দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের বিষয় তুলে ধরা হয়। বর্তমানে গেটওয়ে আটকে থাকা অর্থ ছাড়, ডিজিটাল মার্কেটিং ৩০% ভ্যাট রহিতকরণ অন্যান্য সমস্যার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য সরকারকে অনুরোধ ও সহযোগিতার কথা জানানো হয়।

ই-ক্যাবের জেনারেল ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম শোভনের সঞ্ছালনায় অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন সহ-সভাপতি সাহাব উদ্দিন শিপন ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল।

back to top