প্রযুক্তি আর সংযুক্তির মহাসড়কে বাংলাদেশ। সে মহাসড়ক ধরেই ধাপে ধাপে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলা ২০২৩ প্রত্যয়দীপ্ত ঘোষণা দিয়েছে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট সমাজ, স্মার্ট অর্থনীতির মুল চালিকাশক্তি হবে প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার। যেখানে লেনদেন হবে টাকা ছাড়া, যোগাযোগ হবে সিম ছাড়া আর সব ধরণের কার্যক্রম চলবে কাগজ ছাড়া।

গত বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) এক ভিডিও বার্তার মাধ্য়মে তিন দিনের এই মেলা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দিপু মনি, ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের কন্ঠে ছিলো নতুন গর্বিত এক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। যেখানে গতির প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে বাংলাদেশ।

মেলায় অংশগ্রহনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতিনিধিরা জানায়, ২০৪১ সালে আধুনিক বিশ্বের কাছে ঈর্ষান্বিত সাফল্যের দ্বারগোড়ায় পৌঁছাবে বাংলাদেশ। প্রান্তিক পর্যায় থেকে শহর সবস্থানে শিক্ষা চিকিৎসা বিনোদনে নিরবিচ্ছিন্ন সংযোগ ও সেবার নিশ্চয়তা থাকবে। কলকারখানাগুলোতে অটোমেশনের পাশাপাশি ওয়ান স্টপ সল্যুউশন হবে। এক্ষেত্রে প্রযুক্তি নিয়ামক ভূমিকা রাখবে।

মেলার দ্বিতীয় দিনে প্রথমবারের মতো দেশে অনুষ্ঠিত হয় মোবাইল কংগ্রেস। এদিন মোবাইল নেটওয়ার্কের ব্যবহার নিয়ে অনুষ্ঠিত হয় ৪টি সেমিনার। এর মধ্যে দুর্যোগ ব্যাবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডাঃ মোঃ এনামুর রহমান দুর্যোগের আগাম সতর্কতা জনগন ও প্রশাসন এর কাছে পৌঁছে দেওয়ার উপর গুরুত্বারোপ করেন। একই সাথে দুর্যোগ মোকাবেলায় সহায়ক হয় ভিএইচএফ, এইচএফ রেডিও, ড্রোন, স্যাটেলাইট ফোন, উপকূলীয় অঞ্চলে ই- জিএসএম এবং আশ্রয়কেন্দ্র ম্যপিং নিয়ে আলোচনা হয়।

৫ম শিল্প বিপ্লব ও ৫জি অবকাঠামো নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে দক্ষতা অর্জন এবং ডিজিটাল ডিভাইস ও অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার শেখার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে। ডাটা সায়েন্স, রোবটিক্স এবং কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা নিয়ে সেমিনারে বিজ্ঞান ও তথ্য প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান নিয়ে জনসচেতনতা তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

মেইড ইন বাংলাদেশ সেমিনারে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশিসহ সবার কন্ঠে উঠে আসে উদ্ভাবনের মাধ্যমে দেশে নতুন বাজার সৃষ্টির। শেষদিনে সপ্তম সেমিনার হয় নিরাপদ ডিজিটাল সমাজ বিনির্মানে রাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে। এ সময় ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য ডিজিটাল আইনের যুক্তিসঙ্গত প্রয়োগের আহবান জানান আলোচকরা। বাংলাদেশের মতো বড় জনসংখ্যাকে সম্পূর্ণ ভাবে নাগরিক সুবিধা পৌঁছে দেয়ার ক্ষেত্রে ডিজিটাল উদ্ভাবনের ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানানো হয় সেমিনারে।

বিজিডি ই-গভ সিআইআরটির প্রকল্প পরিচালক তারেক এম বরকতউল্লাহ, বিটিআরসির কমিশনার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার এসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ এর সভাপতি ইমদাদুল হক, এমটব এর সেক্রেটারি জেনারেল ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম ফরহাদ হোসেন (অব:) সহ টেলিযোগাযোগ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন এ আয়োজনে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলার মেলার মূল আয়োজক ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ। বাস্তবায়ন সহযোগী ইন্টারনেট সেবাদাতাদের সংগঠন আইএসপিএবি। মেলার টাইটেনিয়াম স্পন্সর হুয়াওয়ে। ডায়মন্ড স্পন্সর জেডটিই করপোরেশন। প্লাটিনাম স্পন্সর বাংলালিংক, গ্রামীণফোন, রবি, টেলিটক। গোল্ড স্পন্সর বাহন লিমিটেড, সামিট কমিউনিকেশন লিমিটেড, ফাইভার এট হোম, নগদ।

নতুনকে জানার আগ্রহ আর অপার বিস্ময় নিয়ে ডিজিটাল মেলার অত্যাধুনিক সব প্রযুক্তির সাথে পরিচিত হয় শিক্ষার্থীরা। এক্সপিরিয়েন্স জোনে শিশুরা পরিচিত হয়েছে ভিআর, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার রোবট, ডিজিটাল ক্লাসরুমের সাথে। ভার্চুয়াল রিয়েলিটিতে সাফারি পাক, সাহারা মরু অথবা ডাইনোসর যুগে প্রবেশ করছে মেলা থেকেই। হাইস্পিড ইন্টারনেট, আধুনিক ডিভাইজ নিয়ে নতুন নতুন উদ্ভাবনের রাজ্যে বুদ হয়ে ছিলো আগতরা।

শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা ও এর প্রয়োগের ফলে প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ডিজিটালাইজেশনের সুফল পাওয়া যাচ্ছে। হাওর থেকে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যায়ে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের আওতায় এসেছে। এখন আমাদের লক্ষ্য উচ্চগতির ইন্টারনেট নিয়ে যাওয়া।

তিনি আরো বলেন, মধুপুরের মতো গ্রাম থেকেও আজ ৪ হাজার ডলার আয় করতে পারে তরুণরা; যা অচিন্তনীয়। সরকার সবসময় উদ্ভাবকদের পাশে আছে। তাদের সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার কারণে তারা আজ বিশ্বের কাছে এতো পরিচিতি পেয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব আবু হেনা মোরশেদ জামানের সভাপতিত্বে আয়োজনের সমাপনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান শ্যাম সুন্দর সিকদার, জেডটিই করপোরেশন বাংলাদেশের এমডি লিউ লিয়াং এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য রিজওয়ান আহমেদ তৌফিক।

সমাপনী অনুষ্ঠানে সেরা স্টল, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় সেরা খুদে শিক্ষার্থী এবং রচনা প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের পুরস্কৃত করা হয়। এছাড়াও প্রথমবারের মতো ১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দেয়া হয় ডাক ও টেলিযোগাযোগ পদক।

ইন্টারনেট সেবায় অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে জাতীয় পর্যায়ে ব্র্যাক নেট লিমিটেড, বিভাগীয় পর্যায়ে মিলেনিয়াম কম্পিউটার্স ও নেটওয়ার্কিং, জেলা পর্যায়ে কিশোরগঞ্জ অনলাইন নেটওয়ার্ক, উপজেলা পর্যায়ে এমএসএসজে এন্টারপ্রাইজ; শিক্ষায় ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরির জন্য বিজয় ডিজিটাল; ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর চিকিৎসা সেবায় আইসিটি বিভাগের সুরক্ষা টিম, টেলিযোগাযোগ ও ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনে ওয়ালটন ডিজিটেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগ নেয়ায় নগদ লিমিটেড; ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিওপি-তে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ফিফোটেক, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট শিল্পে অবদানের জন্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ নাসিম পারভেজ, টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট সেবায় অবদানের জন্য আইএসপিএবি, ডিজিটাল প্রযুক্তি ভিক্তিক উদ্যোক্তা তৈরিতে ইকবাল বাহার জাহিদ ও বিটিআরসি; ডিজিটাল নিরাপত্তা বৃদ্ধিতে টেলিযোগাযোগ অধিদপ্তর, টেলিযোগাযোগ সংযুক্তির ক্ষেত্রে বিটিসিএল, টেলিকম শিল্পের বিকাশে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকতায় অবদানের জন্য টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) ও কমপিউটার জগৎ এবং এমার্জিং টেকনোলজি বিভাগে আইওটি ও ওটিটি-তে বিশেষ অবদান রাখায় ডাটা সফট ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যান্ড অ্যাসেমব্লি ইনক লিমিটেড-কে এই পুরস্কার দেয়া হয়।