জাতির উদ্দেশে সেনাপ্রধান
দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে মন্তব্য করে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।’ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে ‘ঢাকা মার্চ’ কর্মসূচির মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল চারটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।’
হত্যা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।’
জনগণকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।’
সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘অর্থ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।’
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কত সদস্য হবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখনো খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আজকেই রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। রাতের মধ্যেই সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব। দু-এক দিন আমাদের সময় দেয়া লাগতে পারে।’
আলোচনায় কারা উপস্থিত ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষ নেতা, জাতীয় পার্টির নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। সময় কম ছিল। যাদের পেয়েছি, তাদের বলেছি। হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, জোনায়েদ সাকি ছিলেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন। এখন ছাত্রদের কাজ শান্ত হওয়া ও আমাদের সাহায্য করা।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান জানান সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। পুলিশও গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত মাসের শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন গত মাস অর্থাৎ জুলাইয়ের মাঝামাঝি সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়।
এক পর্যায়ে গত ২৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দেয়। এ নিয়ে তড়িগড়ি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়। তবে ‘নির্বিচারে’ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো ও শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সরকারও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ৪ আগস্ট রোববার একদিনে সারাদেশে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।
জাতির উদ্দেশে সেনাপ্রধান
মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট ২০২৪
দেশে একটা ক্রান্তিকাল চলছে মন্তব্য করে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছেন, ‘সব রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ করেছিলাম। আমরা সুন্দর আলোচনা করেছি। সেখানে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।’ এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীন দেশের সব কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণভবন অভিমুখে ‘ঢাকা মার্চ’ কর্মসূচির মধ্যে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে সোমবার (৫ আগস্ট) বিকেল চারটায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আন্দোলনরত ছাত্র-জনতা সবাইকে ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে ওনার সঙ্গে কথা বলব। তার সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনা করা হবে।’
হত্যা, সংঘর্ষ, ভাঙচুর ও মারামারি থেকে জনগণকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘আপনারা যদি কথামতো চলেন, একসঙ্গে কাজ করি। নিঃসন্দেহে সুন্দর পরিণতির দিকে অগ্রসর হতে পারব। মারামারি ও সংঘাত করে আর কিছু পাব না। তাই দয়া করে ধ্বংসযজ্ঞ, অরাজকতা ও সংঘর্ষ থেকে বিরত হন। সবাই মিলে সুন্দর ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হব।’
জনগণকে সশস্ত্র বাহিনীর প্রতি আস্থা রাখার আহবান জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমরা সমস্ত দায়দায়িত্ব নিচ্ছি। আপনাদের কথা দিচ্ছি, সব হত্যা ও অন্যায়ের বিচার আমরা করবো। আশাহত হবেন না। যত দাবি আছে, সেগুলো আমরা পূরণ করব। দেশে শান্তিশৃঙ্খলা ফিরিয়ে নিয়ে আসব। আমাদের সহযোগিতা করেন। প্রতিটি হত্যার বিচার হবে।’
সংঘাতে দেশের ক্ষতি হচ্ছে জানিয়ে সেনাপ্রধান বলেন, ‘অর্থ সম্পদের ক্ষতি হচ্ছে। লোকজন মারা যাচ্ছে। সংঘাতের পথে যাবেন না। শান্তিশৃঙ্খলার পথে ফিরে আসেন।’
রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা ফলপ্রসূ হবে জানিয়ে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘তাদের সঙ্গে সুন্দর আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী পদত্যাগ করেছেন। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করে কাজ পরিচালনা করব। ধৈর্য ধরেন, সময় দেন। আমরা সবাই মিলে সব সমস্যা সমাধান করতে সক্ষম হব।’
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কত সদস্য হবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান বলেন, ‘এখনো খুব আর্লি স্টেজ। আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। আলাপ-আলোচনা করে ঠিক করা হবে। আজকেই রাষ্ট্রপতির কাছে যাব। রাতের মধ্যেই সমাধানে যাওয়ার চেষ্টা করব। দু-এক দিন আমাদের সময় দেয়া লাগতে পারে।’
আলোচনায় কারা উপস্থিত ছিলেন- এমন প্রশ্নের জবাবে ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, ‘জামায়াতের আমির, বিএনপির শীর্ষ নেতা, জাতীয় পার্টির নেতা, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ছিলেন। আওয়ামী লীগের কেউ ছিল না। সময় কম ছিল। যাদের পেয়েছি, তাদের বলেছি। হেফাজতে ইসলামের মামুনুল হক, জোনায়েদ সাকি ছিলেন। অধ্যাপক আসিফ নজরুল ছিলেন। তিনি কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বার্তাও দিয়েছেন। এখন ছাত্রদের কাজ শান্ত হওয়া ও আমাদের সাহায্য করা।’
আরেক প্রশ্নের জবাবে সেনাপ্রধান জানান সেনাবাহিনী শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার কাজ চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘সবার দায়িত্ব সেনাবাহিনীকে সাহায্য করা। পরিস্থিতি শান্ত হলে কারফিউ বা জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই। আমি আদেশ দিয়েছি, কোনো গোলাগুলি হবে না। সেনাবাহিনী গুলি চালাবে না। পুলিশও গুলি চালাবে না। আশা করছি, এই বক্তব্যের পর পরিস্থিতির উন্নতি হবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে গত মাসের শুরু থেকেই আন্দোলন করে আসছিলেন চাকরিপ্রত্যাশী ও শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলন গত মাস অর্থাৎ জুলাইয়ের মাঝামাঝি সারাদেশে ব্যাপক সহিংসতায় রূপ নেয়। এতে দুই শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। কয়েক হাজার মানুষ আহত হয়।
এক পর্যায়ে গত ২৩ জুলাই সুপ্রিম কোর্ট সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের রায় দেয়। এ নিয়ে তড়িগড়ি প্রজ্ঞাপনও জারি হয়। তবে ‘নির্বিচারে’ শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালানো ও শিক্ষার্থী হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত থাকে। সরকারও কঠোর হওয়ার ঘোষণা দেয়। এ পরিস্থিতিতে ৪ আগস্ট রোববার একদিনে সারাদেশে সহিংসতায় শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে। এর মধ্যে সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।