চাকরিতে কোটা বৈষম্য দূরীকরণে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যায় সংঘাত ও সহিংসতা। প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। পরে সেই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে ‘একদফায়’।
ছত্রিশ দিনের মাথায় অবশেষে সরকার পতনের মধ্যে দিয়েই সোমবার (৫ আগস্ট) শেষ হয় এই ছাত্র আন্দোলন। এদিন বিকেল পৌনে চারটায় এক ভাষণে যখন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সরকারের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তখনই ঢাকাসহ সারাদেশে নেমে ছাত্র-জনতার ঢল।
রাজধানীর শাহবাগ, পুরানা পল্টন, গুলিস্তানসহ ঢাকার পথে পথে শুরু হয় জনতার উল্লাস। ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ দেশের প্রত্যেকটি স্থানে সরকার পতনে উল্লাস করে ছাত্র-জনতা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ৪ আগস্ট শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনে ‘একদফা’ ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। শহীদ মিনার থেকে এক দফা বাস্তবায়নে রোববার থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের’ ঘোষণাও করা হয়েছিল। রোববার অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই সোমবারের নতুন কর্মসূচি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজির হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এক পর্যায়ে দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ও তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে প্রবেশ করে জনতা। তারা এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে উঠে উল্লাস করেন। কেউ তুলে ধরেন জাতীয় পতাকা। আবার কেউবা তোলেন স্লোগানের সুর।
একই সময় গণভবন দখল নিয়ে উল্লাসের পাশাপাশি সেখানকার নানা দ্রব্যাদি ভাগাভাগি করে নেন আন্দেলনকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, কেউ পুকুরের মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। কারও হাতে হাঁস-মুরগি আবার কারও হাতে শেখ হাসিনার বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিসপত্র।
আবার কোনো ছবিতে দেখা গেছে মানুষ গণভবনের নানা আসবাবপত্রও নিয়ে যাচ্ছেন। আর বাকি সকলেই উল্লাস করছেন। কেউ কেউ বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্নও প্রদর্শন করেন।
সরকারের পদত্যাগের ঘোষণা এলে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় জড়ো হওয়া হাজারো মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের কর্মীদের রাস্তায় এসে নাচতে দেখা গেছে। অসুস্থ নারীরা হুইলচেয়ারে বেরিয়ে আসেন।
বিশেষ করে ছাত্র-জনতার ঢল নামে শাহবাগ মোড়ে। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ পায়ে হেটে, অটোরিকশা, পিকআপে করে এসে জড়ো হোন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগের আশপাশ তখন মানুষের তিল ধরণের জায়গা ছিল না। ছাত্র-জনতার হাতে ও মাথায় পতাকা। অনেকেই স্লোগান ধরেন- ‘জিতিলো রে জিতিলো’, ‘ছাত্র সমাজ জিতিলো’...।
এছাড়া মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, বাড্ডা, মহাখালী, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রত্যেকটি এলাকার রাস্তায় ছাত্র-জনতার ঢল দেখা গেছে।
মতিঝিল মোড়ে কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। অনেকে শাপলা চত্বরের উপরে বসে স্লোগান দেন। জনতার মিছিল দেখা গেছে, মানিকনগর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্তও। তখন স্লোগানে সেøাগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো শহর। অনেকেই স্লোগান দেন, ‘শেখ হাসিনা পলাইছে’, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে’...।
চট্টগ্রামে লাখো মানুষের উল্লাস
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, সরকারের পদত্যাগে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিজয় উল্লাস করে। উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এসময় উল্লাসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগান লালদিঘীর পথে। নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে যায় এই ময়দানে।
রাজশাহীতে পাড়ায় মহল্লায়ও উল্লাস
রাজশাহীর প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের পরপরই রাজশাহী নগরজুড়ে হাজার হাজার তরুণের উল্লাস শুরু হয়। এতে পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ পতাকা নিয়ে বাঁশী বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। পাড়ায় মহল্লায়ও বের হয় বিজয় মিছিল। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের অফিস, নগর ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটেছে।
সিলেটে জনতার উল্লাস
সিলেট প্রতিনিধি জানান, যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে সরকার পদত্যাগ করেছে তখনই সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সব বয়সী মানুষ।
নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ মিছিল নিয়ে বের হন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা রাস্তায় উচ্ছ্বাস করতে থাকেন।
খুলনা শিববাড়ি মোড়ে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত
খুলনা প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে বিকেলে শহরের শিববাড়ি মোড়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। শত শত তরুণ-তরুণী শহরে বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা ও ইজিবাইকে সেখানে জড়ো হয়। তাদের হাতে ও মাথায় পতাকা। এছাড়া নগরীর সড়কে সড়কে আবির মেখে আনন্দ উদযাপন করে মানুষ।
রংপুরে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস
জেলা বার্তা পরিবেশক রংপুর জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে রংপুরের রাজপথে বিজয় উল্লাস শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক, বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষের ঢল নামে পথে পথে।
বিকেলে নগরীর শাপলা চত্বর, পায়রা চত্বর, লালবাগ চত্বর, পার্ক মোড়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সংলগ্ন শহীদ আবু সাঈদ চত্বর, মর্ডাণ মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, টাউন হল চত্বর, জিলা স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে সাধারণ মানুষজন। এ সময় তাদেরকে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ময়মনসিংহে বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবর জানার পরপরই ময়মনসিংহ নগরে আনন্দ উল্লাস শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে ছাত্র-জনতা নগরের টাউনহল মোড়ে খ-খ- মিছিল নিয়ে জড়ো হন। সেখান আনন্দ মিছিল নিয়ে নগরে জুড়ে উল্লাস করে। এতে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন। জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ও বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পাড়া মহল্লায় উল্লাস
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সাধারণ মানুষ বিজয় উল্লাস করে চাষাড়ায় ছুটে আসেন, একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি মুখ করান। এতে নারী পুরুষ শিশু কিশোর সবাই অংশ নেন। এক পর্যায়ে শহরের প্রধান সড়ক বিবি রোডে তিন কিলোমিটার জুড়ে মানুষের জমায়েত হয়। শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তোলা হয়েছে পতাকা। এছাড়া অটোরিকশা সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহন টানানো হয়েছে পতাকা।
নরসিংদীজুড়ে উল্লাস, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর
জেলা বার্তা পরিবেশক নরসিংদী জানান, সরকারের পদত্যাগের খবর শুনে নরসিংদীতে বিজয় মিছিল করে ছাত্র-জনতা। বিকেলে নরসিংদী শহরের অলিগলি থেকে খ- খ- মিছিল বের হয়। জেলখানার মোড়ে সমবেত হয় কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত জেলখানা মোড় এলাকায়। এছাড়া উচ্ছুক জনতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
মঙ্গলবার, ০৬ আগস্ট ২০২৪
চাকরিতে কোটা বৈষম্য দূরীকরণে শুরু হয়েছিল আন্দোলন। কিন্তু আন্দোলনকে ঘিরে ঘটে যায় সংঘাত ও সহিংসতা। প্রাণ যায় অসংখ্য মানুষের। পরে সেই আন্দোলন রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে ‘একদফায়’।
ছত্রিশ দিনের মাথায় অবশেষে সরকার পতনের মধ্যে দিয়েই সোমবার (৫ আগস্ট) শেষ হয় এই ছাত্র আন্দোলন। এদিন বিকেল পৌনে চারটায় এক ভাষণে যখন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান সরকারের পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত করেন তখনই ঢাকাসহ সারাদেশে নেমে ছাত্র-জনতার ঢল।
রাজধানীর শাহবাগ, পুরানা পল্টন, গুলিস্তানসহ ঢাকার পথে পথে শুরু হয় জনতার উল্লাস। ঢাকার বাইরেও চট্টগ্রাম, সিলেট, রাজশাহী, খুলনা, ময়মনসিংহ, রংপুরসহ দেশের প্রত্যেকটি স্থানে সরকার পতনে উল্লাস করে ছাত্র-জনতা।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের’ ব্যানারে ৪ আগস্ট শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সরকার পতনে ‘একদফা’ ঘোষণা করেন অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। শহীদ মিনার থেকে এক দফা বাস্তবায়নে রোববার থেকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের’ ঘোষণাও করা হয়েছিল। রোববার অসহযোগ আন্দোলনের মধ্যেই সোমবারের নতুন কর্মসূচি ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ ঘোষণা করা হয়।
এদিন সকাল থেকেই ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে অংশ নিতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় হাজির হন হাজার হাজার বিক্ষোভকারী। এক পর্যায়ে দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন ও তার তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে প্রবেশ করে জনতা। তারা এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ছাদে উঠে উল্লাস করেন। কেউ তুলে ধরেন জাতীয় পতাকা। আবার কেউবা তোলেন স্লোগানের সুর।
একই সময় গণভবন দখল নিয়ে উল্লাসের পাশাপাশি সেখানকার নানা দ্রব্যাদি ভাগাভাগি করে নেন আন্দেলনকারীরা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ছবিতে দেখা যায়, কেউ পুকুরের মাছ নিয়ে যাচ্ছেন। কারও হাতে হাঁস-মুরগি আবার কারও হাতে শেখ হাসিনার বিভিন্ন ব্যবহার্য জিনিসপত্র।
আবার কোনো ছবিতে দেখা গেছে মানুষ গণভবনের নানা আসবাবপত্রও নিয়ে যাচ্ছেন। আর বাকি সকলেই উল্লাস করছেন। কেউ কেউ বিজয়সূচক ‘ভি’ চিহ্নও প্রদর্শন করেন।
সরকারের পদত্যাগের ঘোষণা এলে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব এলাকায় জড়ো হওয়া হাজারো মানুষকে বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। হাসপাতালের কর্মীদের রাস্তায় এসে নাচতে দেখা গেছে। অসুস্থ নারীরা হুইলচেয়ারে বেরিয়ে আসেন।
বিশেষ করে ছাত্র-জনতার ঢল নামে শাহবাগ মোড়ে। সেখানে বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ পায়ে হেটে, অটোরিকশা, পিকআপে করে এসে জড়ো হোন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে শাহবাগের আশপাশ তখন মানুষের তিল ধরণের জায়গা ছিল না। ছাত্র-জনতার হাতে ও মাথায় পতাকা। অনেকেই স্লোগান ধরেন- ‘জিতিলো রে জিতিলো’, ‘ছাত্র সমাজ জিতিলো’...।
এছাড়া মৎস্য ভবন, হাইকোর্ট, পুরানা পল্টন, দৈনিক বাংলা, গুলিস্তান, বাড্ডা, মহাখালী, উত্তরা, মিরপুরসহ প্রত্যেকটি এলাকার রাস্তায় ছাত্র-জনতার ঢল দেখা গেছে।
মতিঝিল মোড়ে কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হয়ে উল্লাস করতে দেখা যায়। অনেকে শাপলা চত্বরের উপরে বসে স্লোগান দেন। জনতার মিছিল দেখা গেছে, মানিকনগর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্তও। তখন স্লোগানে সেøাগানে উত্তাল হয়ে উঠে পুরো শহর। অনেকেই স্লোগান দেন, ‘শেখ হাসিনা পলাইছে’, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে’...।
চট্টগ্রামে লাখো মানুষের উল্লাস
আমাদের চট্টগ্রাম ব্যুরো জানান, সরকারের পদত্যাগে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। তারা বিজয় উল্লাস করে। উদযাপন করতে দেখা গেছে নারী শিশুসহ সর্বস্তরের মানুষকে। এসময় উল্লাসিত মানুষকে নানা স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
সরকারের পদত্যাগের খবর ছড়িয়ে পড়লে সঙ্গে সঙ্গে নগরের চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা থেকে শুরু হয় বিজয় মিছিল। অংশ নেন নারী-শিশুসহ হাজার হাজার মানুষ। আধ ঘণ্টার মধ্যে বহদ্দারহাট মোড়ে সমবেত হন অন্তত ১০ হাজার মানুষ। এরপর ছাত্র বিক্ষোভের সময় নিহত শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন বহদ্দারহাট ও মুরাদপুর হয়ে বিজয় মিছিল আগান লালদিঘীর পথে। নগরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এভাবেই খণ্ড খণ্ড বিজয় মিছিল এগোয় লালদিঘীর দিকে। নগরের সব পথ মিশে যায় এই ময়দানে।
রাজশাহীতে পাড়ায় মহল্লায়ও উল্লাস
রাজশাহীর প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের পরপরই রাজশাহী নগরজুড়ে হাজার হাজার তরুণের উল্লাস শুরু হয়। এতে পরিণত হয় উৎসবের নগরীতে। রাস্তায় রাস্তায় বিভিন্ন বয়সের নারী পুরুষ পতাকা নিয়ে বাঁশী বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেন। পাড়ায় মহল্লায়ও বের হয় বিজয় মিছিল। তবে সেখানে ক্ষমতাসীন দলের অফিস, নগর ভবনসহ বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ ঘটেছে।
সিলেটে জনতার উল্লাস
সিলেট প্রতিনিধি জানান, যখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর আসে সরকার পদত্যাগ করেছে তখনই সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে সড়কে নেমে আসেন বিভিন্ন শ্রেণীপেশার সব বয়সী মানুষ।
নগরীর জিন্দাবাজার, বন্দরবাজার, চৌহাট্টা, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, মদিনা মার্কেট, লামাবাজার, সোবহানীঘাট, উপশহরসহ বিভিন্ন স্থানে মানুষ মিছিল নিয়ে বের হন। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মিছিলকারীরা রাস্তায় উচ্ছ্বাস করতে থাকেন।
খুলনা শিববাড়ি মোড়ে হাজার হাজার মানুষের জমায়েত
খুলনা প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে বিকেলে শহরের শিববাড়ি মোড়ে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা বিজয় উল্লাস করতে দেখা গেছে। শত শত তরুণ-তরুণী শহরে বিভিন্ন জায়গা থেকে রিকশা ও ইজিবাইকে সেখানে জড়ো হয়। তাদের হাতে ও মাথায় পতাকা। এছাড়া নগরীর সড়কে সড়কে আবির মেখে আনন্দ উদযাপন করে মানুষ।
রংপুরে ছাত্র-জনতার বিজয় উল্লাস
জেলা বার্তা পরিবেশক রংপুর জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে রংপুরের রাজপথে বিজয় উল্লাস শুরু করে ছাত্র-জনতা। এ সময় শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণী, যুবক, বৃদ্ধসহ সববয়সী মানুষের ঢল নামে পথে পথে।
বিকেলে নগরীর শাপলা চত্বর, পায়রা চত্বর, লালবাগ চত্বর, পার্ক মোড়, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) সংলগ্ন শহীদ আবু সাঈদ চত্বর, মর্ডাণ মোড়, প্রেসক্লাব চত্বর, জাহাজ কোম্পানি মোড়, পায়রা চত্বর, টাউন হল চত্বর, জিলা স্কুল মোড়সহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল বের করে সাধারণ মানুষজন। এ সময় তাদেরকে হাতে জাতীয় পতাকা নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
ময়মনসিংহে বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবর জানার পরপরই ময়মনসিংহ নগরে আনন্দ উল্লাস শুরু হয়। বিকেল চারটার দিকে ছাত্র-জনতা নগরের টাউনহল মোড়ে খ-খ- মিছিল নিয়ে জড়ো হন। সেখান আনন্দ মিছিল নিয়ে নগরে জুড়ে উল্লাস করে। এতে নানা শ্রেণীপেশার মানুষ অংশ নেন। জাতীয় পতাকা জড়িয়ে ও বাদ্য বাজিয়ে আনন্দ মিছিল করা হয়। বিভিন্ন স্থানে মিষ্টিও বিতরণ করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জের পাড়া মহল্লায় উল্লাস
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, সরকারের পদত্যাগের খবরে নগরীর পাড়া-মহল্লা থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সাধারণ মানুষ বিজয় উল্লাস করে চাষাড়ায় ছুটে আসেন, একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে মিষ্টি মুখ করান। এতে নারী পুরুষ শিশু কিশোর সবাই অংশ নেন। এক পর্যায়ে শহরের প্রধান সড়ক বিবি রোডে তিন কিলোমিটার জুড়ে মানুষের জমায়েত হয়। শহরের বিভিন্ন বাসা বাড়িতে তোলা হয়েছে পতাকা। এছাড়া অটোরিকশা সিএনজিসহ বিভিন্ন ছোট ছোট যানবাহন টানানো হয়েছে পতাকা।
নরসিংদীজুড়ে উল্লাস, আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে ভাঙচুর
জেলা বার্তা পরিবেশক নরসিংদী জানান, সরকারের পদত্যাগের খবর শুনে নরসিংদীতে বিজয় মিছিল করে ছাত্র-জনতা। বিকেলে নরসিংদী শহরের অলিগলি থেকে খ- খ- মিছিল বের হয়। জেলখানার মোড়ে সমবেত হয় কয়েক হাজার ছাত্র-জনতা। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত জেলখানা মোড় এলাকায়। এছাড়া উচ্ছুক জনতা শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।