alt

জাতীয়

১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে সংকটে বাংলাদেশ

জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী, কক্সবাজার : বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিনদিন অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রিত শিবিরে তদারকি কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা নানা কৌশল অবলম্বন করে ক্যাম্প থেকে পালানোর হিড়িক পড়েছে। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত পূর্বের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গাদের আকৃতি, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ স্থানীয়দের সঙ্গে অনেকটা মিল। যার কারণেই রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা সহজেই স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে পারছে। ক্যাম্প ছেড়ে তাদের পালানোর বিষয়টি এখন উদ্বেগজনক। অনেক রোহিঙ্গা গত ৬ বছরের মধ্যে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আলোচিত সমালোচিত হত্যাকান্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

এভাবে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি।

সবশেষ গত মঙ্গলবার ২৮৯ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে গত সোমবার ৫৫ জন, গত রোববার ২৯ জন এবং শনিবার ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে পুলিশ কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। অনেকে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা ঠেকাতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

ওসি বলেন, আটক রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে। কেউ আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে, কেউ কাজের সন্ধানে, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বের হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের নিজ নিজ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গাদের এভাবে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাই এখন আতঙ্কে থাকি। রোহিঙ্গারা আসার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত। এলাকার অনেক মানুষকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আপাতত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, বার্মাপাড়া, হালিমাপাড়া, ইসলামপুর, বাদশাঘোনা, খাজামঞ্জিল, বৈদ্যঘোনা, সমিতিপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড় অধ্যুষিত বহু এলাকায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। তাদের চলাচলে কোন বাধা নেই।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় অনেক ছেলে ক্যাম্পে এসে বিয়ে করছে। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের অনেকে কাজের সন্ধানে ক্যাম্প থেকে বের হন। সন্ধ্যা বা রাতে কেউ ফেরেন, কেউ ফেরেন না। এভাবে পালিয়ে খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক রোহিঙ্গা। কম মজুরিতে পাওয়ায় রোহিঙ্গাদের অনেকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি এবং কৃষি, ইটভাটায় স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আবার অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাইরে যেতে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোন ধরনের বৈধতা নেই রোহিঙ্গাদের। কারণ, তারা প্রতি সপ্তাহে রেশনসামগ্রী পাচ্ছেন। ক্যাম্পের বাইরে এসে কাজ করলে স্থানীয়দের শ্রমবাজারের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রোহিঙ্গারা সেটা মানছেন না।

ক্যাম্পে কাজ করা একটি এনজিও’র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে সীমানায় ঘেরা দিয়ে তার কেটে একাধিক পথ করে তারা বনজঙ্গলসহ বিভিন্ন চোরাপথ দিয়ে সহজে বের হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। হাতেগোনা কিছু দালালের প্ররোচনায় সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা বিভিন্ন গ্রামে বসবাস গড়ে তুলছে। সেখানে রোহিঙ্গা মেয়েরা প্রথমে কিছুদিন স্থানীয়দের ভাষা রপ্ত করে বসবাস শুরু করে। পরে আচার-আচরণ সবকিছু স্থানীয়দের মতো শিখে ফেলে। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে সখ্য গড়ে কাজের সন্ধানে নেমে পড়ে। অনেকে আবার পাসপোর্ট তৈরি করে উড়াল দেয় বিদেশে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী কয়েক মাস গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।

সর্বাত্মক চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বারংবার আশ্বাস দিলেও মায়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। এই অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের জনজীবনে কিছুটা চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর বিষয়টি উদ্বেগজনক। ক্যাম্পে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার পরও অনেক রোহিঙ্গা আরও সচ্ছল জীবনের আশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সবাই সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট নামে বাংলাদেশ ও মায়ানমার একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ওই চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মায়ানমার। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

ছবি

সিইসির সঙ্গে বৈঠকে এসবি প্রধান

ছবি

আরো ঘনীভূত হতে পারে নিম্নচাপ, সমুদ্র বন্দরে সতর্ক সংকেত

ছবি

ভূমিকম্পে কাঁপল বাংলাদেশ

ছবি

ছয় মাসের বেশি দায়িত্বে থাকা ওসিদের বদল চায় ইসি

ছবি

৩০০ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী ৭৪৭

ছবি

হাজার যাত্রী নিয়ে ছুটল ‘কক্সবাজার এক্সপ্রেস’

ছবি

বাংলাদেশের জন্মশত্রুদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান ইনুর

ছবি

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরু আজ

ছবি

সাগরে নিম্নচাপ, আগামী সপ্তাহে বৃষ্টির আভাস

ছবি

মনোনয়ন জমার সময় বাড়ানো হবে না : ইসি

ছবি

ভোটের দিন আমরা কোনো হুমকি দেখছি না : আইজিপি

ছবি

পররাষ্ট্রস‌চি‌বের সঙ্গে পিটার হা‌সের বৈঠক

ছবি

বাংলাদেশকে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি : বাণিজ্য সচিব

মার্কিন শ্রম অধিকার নীতিতে ‘শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে’ : বাংলাদেশ দূতাবাস

ছবি

অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইইউ

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২০

ছবি

পদত্যাগ করা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শূন্য পদে দায়িত্ব বণ্টন

ছবি

দলীয় এমপিরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলে পদত্যাগ করতে হবে না : ইসি

ছবি

সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমান মারা গেছেন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার থেকে ৪ বাংলাদেশি নিখোঁজ

ছবি

ইইউ’র নির্বাচনী কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায়

ছবি

অবরোধ: সারা দেশে র‌্যাবের ৪২৮ টহল টিম

ছবি

জলবায়ুর অভিঘাতে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৫৯

ছবি

লটারির ফল প্রকাশ, নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে এসএমএস করবে মাউশি

ছবি

ভুটানে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

প্রার্থীদের হলফনামায় দিতে হবে ৮ তথ্য

ছবি

মিধিলির পথেই উপকূলে আঘাত করতে পারে ‘ডিসেম্বরের ঘূর্ণিঝড়’

ছবি

এবছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ১৬০০

ছবি

আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করতে পারি না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

ভূমির ‘যৌক্তিক’ ব্যবহারে উপজেলাভিত্তিক মহাপরিকল্পনা হচ্ছে

ছবি

আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৫৩ বিচারিক হাকিম চাইল ইসি

ছবি

বাংলাদেশে বন্ধ হলো উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস

ছবি

দেশের অর্থনীতি রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে : সিইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে মৃত্যু ৩, হাসপাতালে ভর্তি ৯৭১

ছবি

নির্বাচনে এবারও সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে: ইসি আনিছুর

tab

জাতীয়

১১ লাখ রোহিঙ্গা নিয়ে সংকটে বাংলাদেশ

জসিম উদ্দিন সিদ্দিকী, কক্সবাজার

বুধবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিনদিন অরক্ষিত হয়ে যাচ্ছে। কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি আশ্রিত শিবিরে তদারকি কমে যাওয়ায় রোহিঙ্গারা নানা কৌশল অবলম্বন করে ক্যাম্প থেকে পালানোর হিড়িক পড়েছে। কেউ দালালের মাধ্যমে, আবার কেউ ক্যাম্পের বাইরে অবস্থানরত পূর্বের আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়ছে।

রোহিঙ্গাদের আকৃতি, ভাষা, পোশাক-পরিচ্ছদ, আচার-আচরণ স্থানীয়দের সঙ্গে অনেকটা মিল। যার কারণেই রোহিঙ্গা পুরুষ, নারী ও শিশুরা সহজেই স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মিশে যেতে পারছে। ক্যাম্প ছেড়ে তাদের পালানোর বিষয়টি এখন উদ্বেগজনক। অনেক রোহিঙ্গা গত ৬ বছরের মধ্যে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন আলোচিত সমালোচিত হত্যাকান্ড, অপহরণ, ধর্ষণ, মাদকসহ নানা অপরাধ কর্মকান্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছেন।

এভাবে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়া ১১ লাখের বেশি মায়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিক নিয়ে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ। শত চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে তাদের নিজ দেশে ফেরানো যায়নি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে যত দেরি হচ্ছে ততই বাড়ছে ঝুঁকি।

সবশেষ গত মঙ্গলবার ২৮৯ জন রোহিঙ্গাকে উখিয়া-টেকনাফ মহাসড়ক থেকে আটক করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। উখিয়া ডিগ্রি কলেজ গেট সংলগ্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। এর আগে গত সোমবার ৫৫ জন, গত রোববার ২৯ জন এবং শনিবার ২৯ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে পুলিশ। পরে তাদের নিজ নিজ ক্যাম্প প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসা ঠেকাতে পুলিশ কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। অনেকে ক্যাম্প কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ক্যাম্পের নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে বেরিয়ে আসে। এটা ঠেকাতে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে পুলিশ বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

ওসি বলেন, আটক রোহিঙ্গারা ক্যাম্প ছেড়ে বাইরে আসার বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের তথ্য দিয়েছে। কেউ আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে, কেউ কাজের সন্ধানে, কেউ চিকিৎসার জন্য, কেউ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে বের হয়েছে বলে পুলিশকে জানিয়েছে।

জিজ্ঞাসাবাদের পাশাপাশি তাদের মধ্যে কারও বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানান ওসি। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের নিজ নিজ রোহিঙ্গা ক্যাম্প ইনচার্জের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান তিনি।

এদিকে রোহিঙ্গাদের এভাবে ক্যাম্প ছেড়ে বেরিয়ে পড়ায় উদ্বেগ বাড়ছে স্থানীয়দের মধ্যে। কক্সবাজারের উখিয়ার রাজাপালং ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবীর চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, আমরাই এখন আতঙ্কে থাকি। রোহিঙ্গারা আসার পর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ভয়াবহ অবনতি হয়েছে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা ধরনের অপরাধে যুক্ত। এলাকার অনেক মানুষকে তারা অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করেছে। আমরা সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলে বিষয়টি জানিয়েছি। আপাতত রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘিরে নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য আমরা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি।

জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের পাহাড়তলী, বার্মাপাড়া, হালিমাপাড়া, ইসলামপুর, বাদশাঘোনা, খাজামঞ্জিল, বৈদ্যঘোনা, সমিতিপাড়াসহ জেলার বিভিন্ন পাহাড় অধ্যুষিত বহু এলাকায় বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এসে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করছে। তাদের চলাচলে কোন বাধা নেই।

শুধু তাই নয়, স্থানীয় অনেক ছেলে ক্যাম্পে এসে বিয়ে করছে। সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে প্রতিদিন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষদের অনেকে কাজের সন্ধানে ক্যাম্প থেকে বের হন। সন্ধ্যা বা রাতে কেউ ফেরেন, কেউ ফেরেন না। এভাবে পালিয়ে খুন, অপহরণ, মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ছেন অনেক রোহিঙ্গা। কম মজুরিতে পাওয়ায় রোহিঙ্গাদের অনেকে নিজেদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, গৃহস্থালি এবং কৃষি, ইটভাটায় স্থায়ী শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। আবার অভিযোগ রয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক শ্রেণির সদস্য টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গাদের বাইরে যেতে দিচ্ছে।

রোহিঙ্গা প্রতিরোধ কমিটির নেতা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ক্যাম্পের বাইরে গিয়ে কাজ করার কোন ধরনের বৈধতা নেই রোহিঙ্গাদের। কারণ, তারা প্রতি সপ্তাহে রেশনসামগ্রী পাচ্ছেন। ক্যাম্পের বাইরে এসে কাজ করলে স্থানীয়দের শ্রমবাজারের জন্য হুমকি তৈরি হচ্ছে। ক্যাম্পের বাইরে যাওয়ার ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও রোহিঙ্গারা সেটা মানছেন না।

ক্যাম্পে কাজ করা একটি এনজিও’র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে সীমানায় ঘেরা দিয়ে তার কেটে একাধিক পথ করে তারা বনজঙ্গলসহ বিভিন্ন চোরাপথ দিয়ে সহজে বের হয়ে যাচ্ছে। প্রতিদিন ক্যাম্প থেকে রোহিঙ্গারা পালাচ্ছে। হাতেগোনা কিছু দালালের প্ররোচনায় সাগর পথে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেও অধিকাংশ রোহিঙ্গা বিভিন্ন গ্রামে বসবাস গড়ে তুলছে। সেখানে রোহিঙ্গা মেয়েরা প্রথমে কিছুদিন স্থানীয়দের ভাষা রপ্ত করে বসবাস শুরু করে। পরে আচার-আচরণ সবকিছু স্থানীয়দের মতো শিখে ফেলে। এরপর স্থানীয়দের সঙ্গে সখ্য গড়ে কাজের সন্ধানে নেমে পড়ে। অনেকে আবার পাসপোর্ট তৈরি করে উড়াল দেয় বিদেশে।

২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে পরবর্তী কয়েক মাস গণহত্যা ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিতে থাকে। এর আগেও বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে আসে হাজার হাজার রোহিঙ্গা। সবমিলিয়ে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গা কক্সবাজারের ক্যাম্পগুলোতে অবস্থান করছে।

সর্বাত্মক চেষ্টা করেও গত ছয় বছরে সরকার একজন রোহিঙ্গাকেও নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরাতে পারেনি। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে বারংবার আশ্বাস দিলেও মায়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে নানা টালবাহানা করছে। এই অবস্থায় লাখ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারের জনজীবনে কিছুটা চাপ কমাতে এক লাখ রোহিঙ্গা নাগরিককে নোয়াখালীর বিচ্ছিন্ন দ্বীপ হাতিয়ায় পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে কয়েক দফায় রোহিঙ্গাদের সেখানে স্থানান্তর করা হয়েছে।

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের ক্যাম্প ছেড়ে পালানোর বিষয়টি উদ্বেগজনক। ক্যাম্পে সরকার ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা দেয়ার পরও অনেক রোহিঙ্গা আরও সচ্ছল জীবনের আশায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্যাম্পের বাইরে যাচ্ছে। এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে। সবাই সমন্বিত উদ্যোগ নিয়ে এই সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করছি।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট নামে বাংলাদেশ ও মায়ানমার একটি প্রত্যাবাসন চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ওই চুক্তির আওতায় এখন পর্যন্ত একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেয়নি মায়ানমার। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে বলে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছেন।

back to top