যুক্তরাষ্ট্র গত তিন বছরে বিশ্বের অন্তত আটটি দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। মানবাধিকার পরিস্থিতিরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। নিষেধাজ্ঞার শুধু সোমালিয়ায় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে।
বাকি দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও মাবাধিকার ফেরেনি। দেশগুলো হলো-কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, হাইতি, আফগানিস্তান, বেলারুশ, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশগুলোতে নির্বাচন হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তবে দেশটি বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে জাতীয় নির্বাচনের অন্তত তিনমাস আগে। এ কারণে বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব পড়তে পারে সেটি এখনই বলতে পারছেন না কেউ।
এ বছরের মে মাসে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশগুলোতে নির্বাচনের পর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এসব দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কতটা কার্যকর হয়েছে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এছাড়াও উত্তর কোরিয়া, ইরান, চীন ও রাশিয়ার অসংখ্য নাগরিকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। দেশগুলোতে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। এ দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই নাইজেরিয়ায় :
নাইজেরিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভয় দেখানো, নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ গত ১৫ মে নাইজেরিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা।
২০১৯ সালের নির্বাচনের এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল নাইজেরিয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে। ওই বছর সাধারণ ও স্থানীয় দুই নির্বাচনের (২০১৯ ও ২০২০ সালে) পর দুই দফায় কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা।
কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলেও নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি বলে আন্তজার্তিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। কারণ যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ফলে তাদের পরিচয় কেউ জানে না।
২০১৯ সালে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরও ২০২৩ সালে নাইজেরিয়ার নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, নাগরিকদের ভয় দেখানো ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব :
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, খরা, দরিদ্রতা ও জঙ্গিবাদসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তারা কখনোই সময়মত নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে না। জাতিগত সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাসহ নানা কারণে নির্বাচন বারবার পিছিয়ে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তা হয়নি। এ কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ার জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্রুত এবং সঠিকভাবে নির্বাচন না হওয়ায় দেশটির কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তাদের নাম প্রকাশ করেনি আমেরিকা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, সোমালিয়ায় আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব আছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা রাজনীতিবিদদের জন্য একটা ধাক্কা ছিল। কারণ সোমালিয়াকে পশ্চিমা সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাজনীতিবিদদের অনেকের আমেরিকান পাসপোর্ট আছে, তাদের পরিবার সেখানে থাকে। দেশটিতে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
সোমালিয়ার নাগরিকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বা নির্বাচন কমিশন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তিশালী নয়। দেশটির সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ করার এবং জবাবদিহি করার একটা সুযোগ চেয়েছিল।
আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা সোমালিয়ার নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। এতে দেশটির সব সমস্যার সমাধান হয়েছে বলা যায় না। গত মে মাসে দেশটির স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে সোমালি জনগণ।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই উগান্ডায় :
উগান্ডার নির্বাচন ঘিরে কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা। এতে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ দেশটিতে ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে উগান্ডায় সাধারণ নির্বাচনের পর কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ধারাবাহিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে এবং কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
উগান্ডার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে ব্লিঙ্কেন বলেন, কয়েক ডজন বিরোধী দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়ী।
নিষেধাজ্ঞার সামান্য প্রভাব কম্বোডিয়ায় :
গত ২৪ জুলাই কম্বোডিয়ায় প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফা এ নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে পরদিনই দেশটির কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন।
পাশাপাশি দেশটিকে দেয়া বিভিন্ন অনুদান বা আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয় আমেরিকা। ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)।
এর পরদিনই দেশটির বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। সিপিপি নেতা দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন টানা ৩৮ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর দিনই তিনি ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
ভোট কারচুপির অভিযোগে নিকারাগুয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা :
২০২১ সালে অনুষ্ঠিত নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি এবং এতে সহায়তার অভিযোগ আনে আমেরিকা। এ জন্য দেশটির বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পরও সরকার গঠন করে দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসকরা।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই বেলারুশে :
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ২০২০ সালে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই বছর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভে দমন-নিপীড়নের দায়ে দেশটির আটজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা। তবে নিষেধাজ্ঞার দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারে রয়েছেন দেশটির একনায়ক লুকাশেকো।
আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা :
যুক্তরাষ্ট্র গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের অধিকার হরণের অভিযোগে অভিযুক্ত বর্তমান এবং সাবেক তালেবান সদস্য, অ-রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য এবং অন্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তালেবানের সাম্প্রতিক আদেশগুলো নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে বাধা দেয়। এর আগে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং নারীদের কাজ করার ক্ষমতা সীমিত করে। সিদ্ধান্তগুলো মাধ্যমে তালেবানরা আবার আফগান জনগণের কল্যাণের প্রতি তাদের অবজ্ঞা দেখিয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, তালেবানের কর্মকান্ডে ১০ লাখের বেশি স্কুল-বয়সী আফগান মেয়ে এবং তরুণীকে শিক্ষা থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না, এমনকি নারীদের কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমন নারী ও মেয়ের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে। যা দেশটির অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাবে।
হাইতিতে নিষেধাজ্ঞা :
যুক্তরাষ্ট্র গত ৫ এপ্রিল হাইতির জনগণকে সমর্থন জানাতে এবং দেশটিতে চলমান অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে সাবেক হাইতিয়ান চেম্বার অফ ডেপুটিজ প্রেসিডেন্ট গ্যারি বোডোর ওপর ভিসা বিধিনিষেধ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বোডোকে ধারা ৭০৯১ (সি) এর অধীনে তালিকাভুক্ত করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হয় বোডো।
একই সঙ্গে ট্রেজারি বিভাগ বোডোকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে তালিকাভুক্ত করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তার আর্থিক সম্পদগুলো জব্দ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার বিবৃতিতে উঠে এসেছে, ভিসানীতির আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও এর আওতায় পড়েন। এ নিষেধাজ্ঞায় থাকা লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা পান না। ভিসা দেয়া থাকলেও তা বাতিল করে দেয়া হয়।
রোববার, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩
যুক্তরাষ্ট্র গত তিন বছরে বিশ্বের অন্তত আটটি দেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কঠোর নিষেধাজ্ঞার পরও দেশগুলোর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের তেমন পরিবর্তন ঘটেনি। মানবাধিকার পরিস্থিতিরও উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়নি। নিষেধাজ্ঞার শুধু সোমালিয়ায় নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পেরেছে।
বাকি দেশগুলোতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা ও মাবাধিকার ফেরেনি। দেশগুলো হলো-কম্বোডিয়া, নাইজেরিয়া, হাইতি, আফগানিস্তান, বেলারুশ, নিকারাগুয়া ও উগান্ডা।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশগুলোতে নির্বাচন হওয়ার পর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তবে দেশটি বাংলাদেশের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে জাতীয় নির্বাচনের অন্তত তিনমাস আগে। এ কারণে বাংলাদেশে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কী প্রভাব পড়তে পারে সেটি এখনই বলতে পারছেন না কেউ।
এ বছরের মে মাসে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া, উগান্ডা এবং সোমালিয়ার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। দেশগুলোতে নির্বাচনের পর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। এসব দেশে ভিসা নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি কতটা কার্যকর হয়েছে সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এর মধ্যে সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব পড়েছে। নির্বাচনী ব্যবস্থায় কিছুটা উন্নতি হয়েছে।
এছাড়াও উত্তর কোরিয়া, ইরান, চীন ও রাশিয়ার অসংখ্য নাগরিকের ওপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ রয়েছে। দেশগুলোতে কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থা কায়েম রয়েছে। এ দেশগুলোও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার ওপর পাল্টা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই নাইজেরিয়ায় :
নাইজেরিয়ায় ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়ার সময় দেশটির প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোটারদের ভয় দেখানো, নির্বাচনের ফলাফল কারচুপি ও গণতন্ত্রবিরোধী কর্মকান্ডের জন্য কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সর্বশেষ গত ১৫ মে নাইজেরিয়ার ওপর আরেক দফা নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা।
২০১৯ সালের নির্বাচনের এক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষণা করেছিল নাইজেরিয়ায় নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে। ওই বছর সাধারণ ও স্থানীয় দুই নির্বাচনের (২০১৯ ও ২০২০ সালে) পর দুই দফায় কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা।
কয়েকজন ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিলেও নাইজেরিয়ার রাজনৈতিক পরিস্থিতির তেমন পরিবর্তন হয়নি বলে আন্তজার্তিক সংবাদ মাধ্যম জানিয়েছে। কারণ যাদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছিল তাদের নাম প্রকাশ করা হয়নি। ফলে তাদের পরিচয় কেউ জানে না।
২০১৯ সালে ভিসা নিষেধাজ্ঞার পরও ২০২৩ সালে নাইজেরিয়ার নির্বাচনে ব্যাপক সহিংসতা হয়েছে, নাগরিকদের ভয় দেখানো ও সহিংসতা উস্কে দেয়ার অভিযোগ উঠে প্রশাসনের বিরুদ্ধে।
সোমালিয়ায় নিষেধাজ্ঞার প্রভাব :
রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা, খরা, দরিদ্রতা ও জঙ্গিবাদসহ নানা সমস্যায় আক্রান্ত আফ্রিকার দেশ সোমালিয়া। দেশটির অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো তারা কখনোই সময়মত নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারে না। জাতিগত সহিংসতা, অস্থিতিশীলতা, নিরাপত্তাসহ নানা কারণে নির্বাচন বারবার পিছিয়ে যায়।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। এক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও তা হয়নি। এ কারণে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে সোমালিয়ার জন্য ভিসানীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। দ্রুত এবং সঠিকভাবে নির্বাচন না হওয়ায় দেশটির কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। তাদের নাম প্রকাশ করেনি আমেরিকা। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম থেকে জানা গেছে, সোমালিয়ায় আমেরিকার যথেষ্ট প্রভাব আছে। ভিসা নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা রাজনীতিবিদদের জন্য একটা ধাক্কা ছিল। কারণ সোমালিয়াকে পশ্চিমা সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। রাজনীতিবিদদের অনেকের আমেরিকান পাসপোর্ট আছে, তাদের পরিবার সেখানে থাকে। দেশটিতে আমেরিকার সামরিক ঘাঁটিও রয়েছে।
সোমালিয়ার নাগরিকরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে। কারণ দেশটির সুপ্রিম কোর্ট বা নির্বাচন কমিশন রাজনীতিবিদদের নিয়ন্ত্রণ করার মতো শক্তিশালী নয়। দেশটির সাধারণ মানুষ রাজনীতিবিদদের চ্যালেঞ্জ করার এবং জবাবদিহি করার একটা সুযোগ চেয়েছিল।
আমেরিকার ভিসা নিষেধাজ্ঞা সোমালিয়ার নির্বাচন ও গণতন্ত্রকে অনেকটাই এগিয়ে নিয়েছে। এতে দেশটির সব সমস্যার সমাধান হয়েছে বলা যায় না। গত মে মাসে দেশটির স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দিতে পারে সোমালি জনগণ।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই উগান্ডায় :
উগান্ডার নির্বাচন ঘিরে কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল আমেরিকা। এতে তেমন প্রভাব পড়েনি। কারণ দেশটিতে ১৯৮৬ সাল থেকে ক্ষমতায় আছেন প্রেসিডেন্ট ইওয়েরি মুসেভেনি।
২০২১ সালের জানুয়ারিতে উগান্ডায় সাধারণ নির্বাচনের পর কিছু ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
নিষেধাজ্ঞা ঘোষণার সময় যুক্তরাষ্ট্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, বিরোধী দলের প্রার্থীদের ধারাবাহিকভাবে হয়রানি করা হয়েছে এবং কোন অভিযোগ ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
উগান্ডার নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়নি উল্লেখ করে ব্লিঙ্কেন বলেন, কয়েক ডজন বিরোধী দলের কর্মী ও সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার জন্য দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীগুলো দায়ী।
নিষেধাজ্ঞার সামান্য প্রভাব কম্বোডিয়ায় :
গত ২৪ জুলাই কম্বোডিয়ায় প্রধান বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ছাড়াই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একতরফা এ নির্বাচন আয়োজনের অভিযোগে পরদিনই দেশটির কিছু কর্মকর্তা ও ব্যক্তির ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন প্রশাসন।
পাশাপাশি দেশটিকে দেয়া বিভিন্ন অনুদান বা আর্থিক সহায়তা বন্ধের ঘোষণা দেয় আমেরিকা। ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ নির্বাচনে বিজয় লাভ করে ক্ষমতাসীন কম্বোডিয়ান পিপলস পার্টি (সিপিপি)।
এর পরদিনই দেশটির বিভিন্ন ব্যক্তি ও কর্মকর্তার ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে আমেরিকা। সিপিপি নেতা দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসক প্রধানমন্ত্রী হুন সেন টানা ৩৮ বছর ধরে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তবে মার্কিন ভিসা নিষেধাজ্ঞার পর দিনই তিনি ছেলের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
ভোট কারচুপির অভিযোগে নিকারাগুয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা :
২০২১ সালে অনুষ্ঠিত নিকারাগুয়ার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে কারচুপি এবং এতে সহায়তার অভিযোগ আনে আমেরিকা। এ জন্য দেশটির বিচারক, সরকারি কৌঁসুলি, সংসদ সদস্য এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনের পরও সরকার গঠন করে দেশটির কর্তৃত্ববাদী শাসকরা।
নিষেধাজ্ঞার প্রভাব নেই বেলারুশে :
যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন ২০২০ সালে পূর্ব ইউরোপের দেশ বেলারুশের ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ওই বছর দেশটিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয়। এ নির্বাচনে কারচুপি ও নির্বাচন পরবর্তী বিক্ষোভে দমন-নিপীড়নের দায়ে দেশটির আটজন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় আমেরিকা। তবে নিষেধাজ্ঞার দেশটির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কোন পরিবর্তন ঘটেনি। রাশিয়া ও চীনের সহায়তায় বিতর্কিত নির্বাচনের মাধ্যমেই সরকারে রয়েছেন দেশটির একনায়ক লুকাশেকো।
আফগানিস্তানের ওপর নিষেধাজ্ঞা :
যুক্তরাষ্ট্র গত ফেব্রুয়ারিতে আফগানিস্তানে নারী ও মেয়েদের অধিকার হরণের অভিযোগে অভিযুক্ত বর্তমান এবং সাবেক তালেবান সদস্য, অ-রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সংস্থার সদস্য এবং অন্যদের ওপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে।
অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন বলেন, তালেবানের সাম্প্রতিক আদেশগুলো নারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এবং বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে কাজ করতে বাধা দেয়। এর আগে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল বন্ধ করে দেয় এবং নারীদের কাজ করার ক্ষমতা সীমিত করে। সিদ্ধান্তগুলো মাধ্যমে তালেবানরা আবার আফগান জনগণের কল্যাণের প্রতি তাদের অবজ্ঞা দেখিয়েছে।
ব্লিঙ্কেন বলেন, তালেবানের কর্মকান্ডে ১০ লাখের বেশি স্কুল-বয়সী আফগান মেয়ে এবং তরুণীকে শিক্ষা থেকে দূরে থাকতে হচ্ছে। অনেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারছে না, এমনকি নারীদের কাজ করায় নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এমন নারী ও মেয়ের সংখ্যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়বে। যা দেশটির অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটকে আরও খারাপ দিকে নিয়ে যাবে।
হাইতিতে নিষেধাজ্ঞা :
যুক্তরাষ্ট্র গত ৫ এপ্রিল হাইতির জনগণকে সমর্থন জানাতে এবং দেশটিতে চলমান অস্থিরতার প্রতিক্রিয়ায় দুর্নীতিতে জড়িত থাকার দায়ে সাবেক হাইতিয়ান চেম্বার অফ ডেপুটিজ প্রেসিডেন্ট গ্যারি বোডোর ওপর ভিসা বিধিনিষেধ এবং আর্থিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট আনুষ্ঠানিকভাবে বোডোকে ধারা ৭০৯১ (সি) এর অধীনে তালিকাভুক্ত করে। এতে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য হয় বোডো।
একই সঙ্গে ট্রেজারি বিভাগ বোডোকে গ্লোবাল ম্যাগনিটস্কি অ্যাক্টের অধীনে তালিকাভুক্ত করে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে তার আর্থিক সম্পদগুলো জব্দ হয়ে যায়।
বাংলাদেশ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণার প্রায় চার মাসের মাথায় গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে এই ভিসানীতি প্রয়োগের ঘোষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার। তার বিবৃতিতে উঠে এসেছে, ভিসানীতির আওতায় বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের সদস্যরা অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় তাদের পরিবারের নিকটতম সদস্যরাও এর আওতায় পড়েন। এ নিষেধাজ্ঞায় থাকা লোকজন যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য ভিসা পান না। ভিসা দেয়া থাকলেও তা বাতিল করে দেয়া হয়।