তাসিন বিনতে মল্লিক হৃদিকা লেখাপড়া করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্টাডিজে। আর সামরিজা ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজে। রাজনীতি নিয়ে তাদের আগ্রহ অনেক। তারা রাজনীতি করতেও চান। তারা জানেন তাদের মতো তাদের অনেক মেয়ে বন্ধুও রাজনীতি করতে চান। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের অনেক বান্ধবী আছেন যারা রাজনীতি করতে চান। কিন্তু তাদের দাবি, ‘আসলে আমাদের স্পেস দেয়া হচ্ছে না’।
অথচ দেশে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। সামরিজা বলেন, ‘বড় বড় কয়েকটা পদে নারী আছেন মানে কিন্তু এই নয় নারীরা এগিয়ে আছে’।
রাজনীতেতে নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনীতি বিশ্লেষক চিররঞ্জন সরকার বলেন, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ২৮ বছরই সরকার প্রধান হিসেবে নারী দায়িত্ব পালন করেছেন, যেটি বিশ্বে বিরল ঘটনা। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদে ও সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বিশ্বে এখনও বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। মন্ত্রিসভায় নারীর অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯টি দেশের মধ্যে ১২৬তম। আর সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে আমাদের অবস্থান ৮০তম।
রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দেখান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ২৪ শতাংশ। বিএনপির সবশেষ কাউন্সিলে গঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ নারী। এ দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াসহ মাত্র দুইজন রয়েছেন নারী। চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে নারী ৮.২১ শতাংশ। জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে নারী মাত্র ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সিপিবি ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং জাসদ (ইনু) ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ পড়ে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছে। ছোট-বড় কোনো দলই এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব গঠনের কাছাকাছিও যেতে পারেনি।
২০২১ সালের জুলাইয়ে ইসিকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণফ্রন্টের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ, জাতীয় পার্টি-জেপিতে ১৬ শতাংশ, সিপিবিতে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও জাসদে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, এনপিপির ২০ শতাংশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৬ শতাংশ, গণতন্ত্রী পার্টিতে ১৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ১ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলিডিপির) কমিটিতে ২২ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। ওই সময় বিকল্পধারা ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ অন্যান্য সব কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের এই শর্ত বাতিল করার প্রস্তাব দেয়।
নারীর প্রগতি সংঘের তথ্যমতে, দেশের সংবিধান ও বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক দলে নারীর সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৩ শতাংশ সদস্যপদে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো পর্যায়ের কমিটিই উল্লিখিত শর্ত পূরণের ধারেকাছেও পৌঁছুতে পারেনি। গতবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্যে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে গড়ে নারীনেতৃত্ব রয়েছে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ।
২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধন নেয়ার জন্য দলে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার বাইরে অন্য শর্তগুলোর মধ্যে ছিল বার্ষিক আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়া, ছাত্র-শ্রমিক বা পেশাজীবী সংগঠনকে দলের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা না দেয়া ইত্যাদি। এই শর্তগুলো পূরণে সদিচ্ছা দেখালেও হলেও নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর শর্তপূরণে প্রায় সব দলই পিছিয়ে।
হিসেবে দেখা যায়, বড় দলগুলোতে গড়ে ১০ শতাংশের মতো নারী নেতৃত্ব ছিল সেসময়। অর্থাৎ সেখান থেকে তাদের আরও ২৩ শতাংশ বাড়াতে হতো। কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নেই কোনও দলেরই। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নেতৃত্বে নারীর অনুপাত আরো অনেক কম, প্রতিটি দলেই। এই পুরো সময়ে নেতৃত্বে নারীর অনুপাত বাড়েনি ২০ শতাংশও।
ইসির নিবন্ধন নেয়ার সময় আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই গঠিত কমিটিতে ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১২ জন নারী। অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর ২০১২ সালের কমিটির কলেবর বাড়িয়ে ৭৩ থেকে ৮১ করা হয়। সেই কমিটিতে নারীর সংখ্যা আরো একজন কমে। পরে কমিটির জোহরা তাজউদ্দীন মারা যান। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে সরাসরি ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত এমপি মিলিয়ে আওয়ামী লীগের মোট সংসদ সদস্যদের মধ্যে নারী ২১ শতাংশ।
২০০৮ সালে নিবন্ধনকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ছিল ১০ শতাংশেরও কম। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে গঠিত ৩৮৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ছিলেন ৪৬ জন। অর্থাৎ ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৬ সালে গঠিত কমিটিতে ৫২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ছিলেন ৬৮ জন বা ১৩ শতাংশ। আরপিওর শর্তপূরণ বিষয়ে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তাদের দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ ভাগ মহিলা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সেই চিঠিতে ২০২০ সালের মধ্যে সংগঠনের সব স্তরে নারী সদস্য ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল দলটি।
নারীর অন্তর্ভুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে আরো ১০ বছর সময় দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার এবং রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘যদি নারীরা রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে এই ৩৩ শতাংশ পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। শুধু সংরক্ষিত নারী আসন দিয়ে কিন্তু নারী ৩৩ শতাংশ পূরণ করা যাবে না।’
‘নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। সেই কারণে হয়তোও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সরাসরি রাজনীতিতে আসতে চান না নারীরা। এজন্য সমাজ কাঠামো এবং সামাজিক মূল্যবোধের আরো পরিবর্তন দরকার বলেও বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার বিভাগের শিক্ষক ড. তানিয়া হক বলেন, নারীদের জন্য রাজনীতির দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যারা পলিটিক্স করেন তারাও ভাবেন রাজনীতি নারীদের জন্য না। উল্টো তারা ভাবেন, সামনে পুরুষ থাকবে, নারীর অবস্থান হবে পেছনে। পলিটিক্স করার মানসিক প্রস্তুতি খুব কমসংখ্যক নারীরই আছে। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও এগিয়ে আসতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এটা একটা সমস্যা, প্লাটফর্ম একটা ফ্যাক্টর, ফ্যামিলি একটা ফ্যাক্টর। সব মিলিয়ে পুরো জায়গাটার মধ্যে একটা নেতিবাচকতা কাজ করছে। যেখানে একটা পরিবর্তন আনা দরকার।
তিনি বলেন প্রত্যেক দলেরই উচিত এই বিষয়টা নতুন করে ভাবা এবং জায়গা করে দেয়া নারীদের জন্য।
রোববার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
তাসিন বিনতে মল্লিক হৃদিকা লেখাপড়া করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাপানিজ স্টাডিজে। আর সামরিজা ইসলাম একই বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিজে। রাজনীতি নিয়ে তাদের আগ্রহ অনেক। তারা রাজনীতি করতেও চান। তারা জানেন তাদের মতো তাদের অনেক মেয়ে বন্ধুও রাজনীতি করতে চান। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে না, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও তাদের অনেক বান্ধবী আছেন যারা রাজনীতি করতে চান। কিন্তু তাদের দাবি, ‘আসলে আমাদের স্পেস দেয়া হচ্ছে না’।
অথচ দেশে জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। সামরিজা বলেন, ‘বড় বড় কয়েকটা পদে নারী আছেন মানে কিন্তু এই নয় নারীরা এগিয়ে আছে’।
রাজনীতেতে নারীদের অংশগ্রহণ বিষয়ে জানতে চাইলে রাজনীতি বিশ্লেষক চিররঞ্জন সরকার বলেন, ‘গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রায় ২৮ বছরই সরকার প্রধান হিসেবে নারী দায়িত্ব পালন করেছেন, যেটি বিশ্বে বিরল ঘটনা। কিন্তু মন্ত্রিপরিষদে ও সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে বিশ্বে এখনও বাংলাদেশের অবস্থান ভালো নয়। মন্ত্রিসভায় নারীর অনুপাতের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৯টি দেশের মধ্যে ১২৬তম। আর সংসদে নারী প্রতিনিধিত্বের দিক থেকে আমাদের অবস্থান ৮০তম।
রাজনৈতিক দলগুলোর তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি দেখান, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী প্রতিনিধিত্ব ২৪ শতাংশ। বিএনপির সবশেষ কাউন্সিলে গঠিত জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ নারী। এ দলের ১৯ সদস্যের স্থায়ী কমিটিতে দলের চেয়ারপাসন খালেদা জিয়াসহ মাত্র দুইজন রয়েছেন নারী। চেয়ারপারসনের ৭৩ সদস্যের উপদেষ্টা কাউন্সিলে নারী ৮.২১ শতাংশ। জাতীয় নির্বাহী কমিটির কর্মকর্তাদের মধ্যে নারী মাত্র ৯ দশমিক ৫৬ শতাংশ। অন্য দলগুলোর মধ্যে জাতীয় পার্টি ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশ, সিপিবি ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং জাসদ (ইনু) ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ পড়ে নারী অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছে। ছোট-বড় কোনো দলই এক-তৃতীয়াংশ নারী নেতৃত্ব গঠনের কাছাকাছিও যেতে পারেনি।
২০২১ সালের জুলাইয়ে ইসিকে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে গণফ্রন্টের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ, জাতীয় পার্টি-জেপিতে ১৬ শতাংশ, সিপিবিতে ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ও জাসদে ১১ দশমিক ৯২ শতাংশ, এনপিপির ২০ শতাংশ, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ ৬ শতাংশ, গণতন্ত্রী পার্টিতে ১৫ শতাংশ ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টে ১ শতাংশ, লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলিডিপির) কমিটিতে ২২ শতাংশ নারী নেতৃত্ব রয়েছে। ওই সময় বিকল্পধারা ২০২০ সালের মধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটিসহ অন্যান্য সব কমিটিতে ৩৩ ভাগ নারী নেতৃত্ব নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি উল্লেখ করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের এই শর্ত বাতিল করার প্রস্তাব দেয়।
নারীর প্রগতি সংঘের তথ্যমতে, দেশের সংবিধান ও বিদ্যমান নীতি অনুযায়ী রাজনৈতিক দলে নারীর সমঅংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন ২০০৯ সালে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের শর্ত হিসেবে দলগুলোর কেন্দ্রীয় কমিটিসহ সব স্তরের কমিটিতে ২০২০ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে ৩৩ শতাংশ সদস্যপদে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করবার লক্ষ্য নির্ধারণ করে। কিন্তু এখন পর্যন্ত নিবন্ধিত কোনো রাজনৈতিক দলের কোনো পর্যায়ের কমিটিই উল্লিখিত শর্ত পূরণের ধারেকাছেও পৌঁছুতে পারেনি। গতবারের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তথ্যে দেখা যায়, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কমিটিতে গড়ে নারীনেতৃত্ব রয়েছে মাত্র ২ থেকে ৪ শতাংশ।
২০০৮ সালে ইসির নিবন্ধন নেয়ার জন্য দলে নারী নেতৃত্ব ৩৩ শতাংশ করার বাইরে অন্য শর্তগুলোর মধ্যে ছিল বার্ষিক আর্থিক নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়া, ছাত্র-শ্রমিক বা পেশাজীবী সংগঠনকে দলের সহযোগী সংগঠনের মর্যাদা না দেয়া ইত্যাদি। এই শর্তগুলো পূরণে সদিচ্ছা দেখালেও হলেও নারী নেতৃত্ব বাড়ানোর শর্তপূরণে প্রায় সব দলই পিছিয়ে।
হিসেবে দেখা যায়, বড় দলগুলোতে গড়ে ১০ শতাংশের মতো নারী নেতৃত্ব ছিল সেসময়। অর্থাৎ সেখান থেকে তাদের আরও ২৩ শতাংশ বাড়াতে হতো। কিন্তু গত এক দশকেরও বেশি সময়ে এ ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নেই কোনও দলেরই। কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে নেতৃত্বে নারীর অনুপাত আরো অনেক কম, প্রতিটি দলেই। এই পুরো সময়ে নেতৃত্বে নারীর অনুপাত বাড়েনি ২০ শতাংশও।
ইসির নিবন্ধন নেয়ার সময় আওয়ামী লীগে নারী নেতৃত্ব ছিল প্রায় ১১ শতাংশ। এরপর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই গঠিত কমিটিতে ৭৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান পান সভাপতি শেখ হাসিনাসহ ১২ জন নারী। অর্থাৎ ১৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এরপর ২০১২ সালের কমিটির কলেবর বাড়িয়ে ৭৩ থেকে ৮১ করা হয়। সেই কমিটিতে নারীর সংখ্যা আরো একজন কমে। পরে কমিটির জোহরা তাজউদ্দীন মারা যান। ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদের স্পিকার নির্বাচিত হওয়ার পর দল থেকে পদত্যাগ করেন।
বর্তমানে সরাসরি ও সংরক্ষিত আসনে নির্বাচিত এমপি মিলিয়ে আওয়ামী লীগের মোট সংসদ সদস্যদের মধ্যে নারী ২১ শতাংশ।
২০০৮ সালে নিবন্ধনকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেতৃত্ব ছিল ১০ শতাংশেরও কম। ২০০৯ সালের ডিসেম্বরে গঠিত ৩৮৬ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ছিলেন ৪৬ জন। অর্থাৎ ১১ দশমিক ৯১ শতাংশ। ২০১৬ সালে গঠিত কমিটিতে ৫২১ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী ছিলেন ৬৮ জন বা ১৩ শতাংশ। আরপিওর শর্তপূরণ বিষয়ে ২০১৭ সালে নির্বাচন কমিশনে পাঠানো চিঠিতে দলটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল তাদের দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে ১৫ ভাগ মহিলা সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
সেই চিঠিতে ২০২০ সালের মধ্যে সংগঠনের সব স্তরে নারী সদস্য ৩৩ শতাংশে উন্নীত করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল দলটি।
নারীর অন্তর্ভুক্তির শর্ত বাস্তবায়নে আরো ১০ বছর সময় দেয়ার প্রস্তাবনা রয়েছে নির্বাচন কমিশনের। এ সংক্রান্ত প্রস্তাব আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলেও গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন কমিশনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা।
জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার এবং রাজনীতি বিভাগের শিক্ষক ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, ‘যদি নারীরা রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণ না করেন, তাহলে এই ৩৩ শতাংশ পূরণ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। শুধু সংরক্ষিত নারী আসন দিয়ে কিন্তু নারী ৩৩ শতাংশ পূরণ করা যাবে না।’
‘নারীদের সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি’ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘রাজনীতিতে অনেক ধরনের অসুস্থ প্রতিযোগিতা হয়। সেই কারণে হয়তোও যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় সরাসরি রাজনীতিতে আসতে চান না নারীরা। এজন্য সমাজ কাঠামো এবং সামাজিক মূল্যবোধের আরো পরিবর্তন দরকার বলেও বলেন তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এন্ড জেন্ডার বিভাগের শিক্ষক ড. তানিয়া হক বলেন, নারীদের জন্য রাজনীতির দরজাগুলো উন্মুক্ত করে দিতে হবে। যারা পলিটিক্স করেন তারাও ভাবেন রাজনীতি নারীদের জন্য না। উল্টো তারা ভাবেন, সামনে পুরুষ থাকবে, নারীর অবস্থান হবে পেছনে। পলিটিক্স করার মানসিক প্রস্তুতি খুব কমসংখ্যক নারীরই আছে। অনেকের ইচ্ছা থাকলেও এগিয়ে আসতে পারছেন না।
তিনি বলেন, এটা একটা সমস্যা, প্লাটফর্ম একটা ফ্যাক্টর, ফ্যামিলি একটা ফ্যাক্টর। সব মিলিয়ে পুরো জায়গাটার মধ্যে একটা নেতিবাচকতা কাজ করছে। যেখানে একটা পরিবর্তন আনা দরকার।
তিনি বলেন প্রত্যেক দলেরই উচিত এই বিষয়টা নতুন করে ভাবা এবং জায়গা করে দেয়া নারীদের জন্য।