alt

জাতীয়

কিছু লোকের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা অমানবিক: প্রধানমন্ত্রী

বাসস : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা জনগণকে হত্যা করে লাশের ওপরে পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করে তাদের মতো অমানবিকতা আমি আর কোথাও দেখি না। এটা আমাদের কাছে ভাবতেও অবাক লাগে। কাজেই আমরা শান্তি চাই।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, একটু আশার আলো দেখছিল এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ মানুষের জীবনটাকে আবার ব্যাহত করছে। একটা শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে কষ্টের বিষয়।

যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজ করছে তাদের বোধোদয় হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুক।

তার সরকার একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমরা যেভাবে মোকাবিলা করলাম, এরপরে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়। সাধারণ মানুষকে কেন পুড়িয়ে মারা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন? এই সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা এটা কী কারণে? আমার কাছে এটা এখনও বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশকে শান্তির অন্বেষক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আঞ্চলিক এবং সারা বিশ্বব্যাপী আমরা শান্তি চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর উল্লেখ করে বলেন, অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি এ পর্যন্ত আমরা আমাদের এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই চলেছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে, আঞ্চলিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের সমুদ্রসীমা, আমাদের স্থল সীমা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে আমাদের রিফিউজিদের ফিরিয়ে আনার মতো ব্যবস্থা আমরা করেছি। সুচারুভাবে আমরা এগুলো করতে পেরেছি। এমনকি ছিটমহলগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করতে পেরেছি। কাজেই বাংলাদেশ শান্তির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেই আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের দেশের নারী সদস্যরা অনেক সুনাম করেছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং আমরা শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আরও নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাশা করছি। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর যে কর্মক্ষমতা, সেটা আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সমাজের কোনও স্তরের মানুষই পেছনে পড়ে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠ রোগীর থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে এবং আয় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। কেবল ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন করা হচ্ছে। যাতে গ্রামে বসে প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ শহরের সব রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য গর্বে তার বুকটা ভরে ওঠে।

শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এ সময় তিনি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশটা আমাদের। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো রকমের দুর্যোগ দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সীমিত সম্পদের দেশ হলেও যেখানে দুর্যোগ হোক সে জায়গায় বাংলাদেশ ছুটে যায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে ভূমিকা রাখে।

১৯৭৫ সালের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের ভাগ্যহত মানুষের মুখে হাসিফোটাবার জন্যই তার পথচলা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাবা,মা, ভাই সব হারিয়েছি, আমার আর হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা যেহেতু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তাই বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যেটা ২০০৮ এর নির্বাচন ইশতেহার আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং সেই মোতাবেক কাজ করে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। ২০২৬ সালের এই যাত্রা যেন আমরা ভালোভাবে করতে পারি সেজন্য ইতোমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যেন কেউ বন্ধ করতে না পারে। সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, শান্তিতে-সমরে সব জায়গায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদা সচেষ্ট এবং শক্তিশালী। সেই শক্তিশালী হিসেবেই একে আমরা গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। কিন্তু আমার দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যেন যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের থাকে সেটাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে।

পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যথাযথ অবদান রেখে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছিল। যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠবে। অর্থাৎ স্মার্ট পপুলেশন, স্মার্ট গভমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা এভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো এবং এগিয়ে নিয়ে যাব।

মার্কিন শ্রম অধিকার নীতিতে ‘শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে’ : বাংলাদেশ দূতাবাস

ছবি

অংশগ্রহণমূলক ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় ইইউ

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৯২০

ছবি

পদত্যাগ করা মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শূন্য পদে দায়িত্ব বণ্টন

ছবি

দলীয় এমপিরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হলে পদত্যাগ করতে হবে না : ইসি

ছবি

সাবেক সচিব ওয়ালিউর রহমান মারা গেছেন

ছবি

যুক্তরাষ্ট্রে মেঘনা অ্যাডভেঞ্চার থেকে ৪ বাংলাদেশি নিখোঁজ

ছবি

ইইউ’র নির্বাচনী কারিগরি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায়

ছবি

অবরোধ: সারা দেশে র‌্যাবের ৪২৮ টহল টিম

ছবি

জলবায়ুর অভিঘাতে অধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও মৃত্যু ৪, হাসপাতালে ভর্তি ৯৫৯

ছবি

লটারির ফল প্রকাশ, নির্বাচিত শিক্ষার্থীকে এসএমএস করবে মাউশি

ছবি

ভুটানে বাংলাদেশ দূতাবাস ভবনের নির্মাণ চুক্তি স্বাক্ষর

ছবি

প্রার্থীদের হলফনামায় দিতে হবে ৮ তথ্য

ছবি

মিধিলির পথেই উপকূলে আঘাত করতে পারে ‘ডিসেম্বরের ঘূর্ণিঝড়’

ছবি

এবছর ডেঙ্গুতে মৃত্যু ছাড়াল ১৬০০

ছবি

আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করতে পারি না: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

ছবি

ভূমির ‘যৌক্তিক’ ব্যবহারে উপজেলাভিত্তিক মহাপরিকল্পনা হচ্ছে

ছবি

আইন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৬৫৩ বিচারিক হাকিম চাইল ইসি

ছবি

বাংলাদেশে বন্ধ হলো উত্তর কোরিয়ার দূতাবাস

ছবি

দেশের অর্থনীতি রক্ষায় সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হবে : সিইসি

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে মৃত্যু ৩, হাসপাতালে ভর্তি ৯৭১

ছবি

নির্বাচনে এবারও সেনা মোতায়েনের প্রক্রিয়া চলছে: ইসি আনিছুর

ছবি

এসব বক্তব্য অনভিপ্রেত

মেট্রোলের নিরাপত্তা আরো বাড়ানো হচ্ছে

ছবি

কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কথা বলবে না ভারত: পররাষ্ট্র সচিব

ছবি

এইচএসসি ও সমমানে পাসের হার ৭৮.৬৪ শতাংশ

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর কাছে এইচএসসির ফল হস্তান্তর

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে দক্ষিণ এশীয় সম্মেলনে পরিবেশগত সমস্যা নিয়ে আলোচনা

ছবি

ডেঙ্গুতে ২৪ ঘণ্টায় ১২ জনের মৃত্যু

ছবি

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পাল্টাপাল্টি বক্তব্য

ছবি

পিটার হাস‌কে নি‌য়ে রা‌শিয়ার অভিযোগ, যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি

ঢাকার বায়ু আজ ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৬ জনের মৃত্যু

ছবি

আহমদুল কবির ছিলেন বাংলাদেশের রাজনীতি ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব

ছবি

নির্বাচনে মাঠ প্রশাসন নিয়ে শঙ্কা নেই: ইসি রাশেদা

tab

জাতীয়

কিছু লোকের লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা অমানবিক: প্রধানমন্ত্রী

বাসস

মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩

কিছু লোক লাশের ওপর দিয়ে ক্ষমতা দখলের কথা ভাবছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যারা জনগণকে হত্যা করে লাশের ওপরে পাড়া দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা করে তাদের মতো অমানবিকতা আমি আর কোথাও দেখি না। এটা আমাদের কাছে ভাবতেও অবাক লাগে। কাজেই আমরা শান্তি চাই।

মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) বিকালে ঢাকা সেনানিবাসের সেনাকুঞ্জে ‘সশস্ত্র বাহিনী দিবস- ২০২৩’ উপলক্ষে আয়োজিত সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দেওয়া ভাষণে একথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষ যখন একটু শান্তিতে ছিল, স্বস্তিতে ছিল, একটু আশার আলো দেখছিল এবং সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়ে এই অগ্নিসন্ত্রাস, হরতাল, অবরোধ মানুষের জীবনটাকে আবার ব্যাহত করছে। একটা শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এটাই হচ্ছে সব থেকে কষ্টের বিষয়।

যারা এই ধ্বংসাত্মক কাজ করছে তাদের বোধোদয় হবে সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এ ধরনের ধ্বংসাত্মক কাজ না করে গণতান্ত্রিক ধারায় যোগ দিক, জনগণের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখুক।

তার সরকার একটার পর একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ আমরা যেভাবে মোকাবিলা করলাম, এরপরে অগ্নিসন্ত্রাস থেকে শুরু করে নানা ধরনের ঝামেলা মাঝে মাঝে শুরু হয়। সাধারণ মানুষকে কেন পুড়িয়ে মারা হয় সেটাই আমার প্রশ্ন? এই সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা, বাসে আগুন দেওয়া, রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা এটা কী কারণে? আমার কাছে এটা এখনও বোধগম্য নয়।

বাংলাদেশকে শান্তির অন্বেষক উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শান্তি শুধু দেশের অভ্যন্তরে নয়, আঞ্চলিক এবং সারা বিশ্বব্যাপী আমরা শান্তি চাই।

এ সময় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এর উল্লেখ করে বলেন, অন্তত আমি এটুকু দাবি করতে পারি এ পর্যন্ত আমরা আমাদের এই পররাষ্ট্র নীতি নিয়েই চলেছি। সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে, আঞ্চলিকভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে আমাদের সমুদ্রসীমা, আমাদের স্থল সীমা, পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে আমাদের রিফিউজিদের ফিরিয়ে আনার মতো ব্যবস্থা আমরা করেছি। সুচারুভাবে আমরা এগুলো করতে পেরেছি। এমনকি ছিটমহলগুলো আমরা শান্তিপূর্ণভাবে বিনিময় করতে পেরেছি। কাজেই বাংলাদেশ শান্তির দেশ।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেই আওয়ামী লীগ সরকার সশস্ত্র বাহিনীতে নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্ত করে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনেও আমাদের দেশের নারী সদস্যরা অনেক সুনাম করেছে।

তিনি বলেন, জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে আমাদের কথা হয়েছে এবং আমরা শান্তি রক্ষা মিশনে বাংলাদেশের আরও নারী সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি প্রত্যাশা করছি। এটাই আমাদের জন্য সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর যে কর্মক্ষমতা, সেটা আমরা বৃদ্ধি করতে পেরেছি। সমাজের কোনও স্তরের মানুষই পেছনে পড়ে থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, হিজড়া, বেদে, কুষ্ঠ রোগীর থেকে শুরু করে সব শ্রেণীর মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়া হচ্ছে, জীবন জীবিকার ব্যবস্থা করে দেওয়া হচ্ছে এবং আয় উপার্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে সরকার। উন্নয়ন কেবল রাজধানী কেন্দ্রিক নয়। কেবল ফ্লাইওভার, মেট্রোরেল বা কর্ণফুলী টানেল নির্মাণের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছি। সমগ্র বাংলাদেশের উন্নয়ন করা হচ্ছে। যাতে গ্রামে বসে প্রত্যেকটি গ্রামের মানুষ শহরের সব রকমের সুযোগ সুবিধা পেতে পারে।

শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, ব্যাপকভাবে কর্মসংস্থান করা হচ্ছে। ফলে সারা বিশ্বে আজ বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত বাংলাদেশের শান্তিরক্ষীরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রশংসিত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এজন্য গর্বে তার বুকটা ভরে ওঠে।

শান্তিরক্ষা মিশনে কাজ করতে গিয়ে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এ সময় তিনি তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি বলেন, এ দেশটা আমাদের। কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা যেকোনো রকমের দুর্যোগ দেখা দিলে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী মানুষের পাশে দাঁড়ায়। সীমিত সম্পদের দেশ হলেও যেখানে দুর্যোগ হোক সে জায়গায় বাংলাদেশ ছুটে যায় এবং মানুষের পাশে দাঁড়ায় এবং আমাদের সশস্ত্র বাহিনী সেখানে ভূমিকা রাখে।

১৯৭৫ সালের বিয়োগান্তক অধ্যায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে দেশের ভাগ্যহত মানুষের মুখে হাসিফোটাবার জন্যই তার পথচলা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, বাবা,মা, ভাই সব হারিয়েছি, আমার আর হারাবার কিছু নেই। পাওয়ারও কিছু নেই। এই বাংলাদেশের মানুষের জন্য আমার বাবা যেহেতু সারা জীবন সংগ্রাম করেছেন তাই বাংলাদেশটাকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ২০২০ সালে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করেছি, সেই সময় বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। যেটা ২০০৮ এর নির্বাচন ইশতেহার আমরা ঘোষণা করেছিলাম এবং সেই মোতাবেক কাজ করে আমরা এই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছি।

তিনি বলেন, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের যাত্রা শুরু হবে ২০২৬ সালে। ২০২৬ সালের এই যাত্রা যেন আমরা ভালোভাবে করতে পারি সেজন্য ইতোমধ্যে আমরা পরিকল্পনা নিয়ে কাজ শুরু করে দিয়েছি। বাংলাদেশের এই অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রা যেন কেউ বন্ধ করতে না পারে। সেটাই আমার একমাত্র লক্ষ্য।

তিনি বলেন, শান্তিতে-সমরে সব জায়গায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদা সচেষ্ট এবং শক্তিশালী। সেই শক্তিশালী হিসেবেই একে আমরা গড়ে তুলছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা কারো সাথে যুদ্ধ চাই না আমরা শান্তিতে বাস করতে চাই। কিন্তু আমার দেশকে বহিঃশত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য, আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য যেন যথাযথ প্রস্তুতি আমাদের থাকে সেটাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। আমাদের দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সদা প্রস্তুত হিসেবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করবে।

পাশাপাশি আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনেও বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী যথাযথ অবদান রেখে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটা মনে রাখতে হবে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন আমাদের এই সশস্ত্র বাহিনী গড়ে উঠেছিল। যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছি। কাজেই সেই বিজয়ী জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমরা মাথা উঁচু করে চলতে চাই।

শেখ হাসিনা বলেন, ২০৪১ সাল নাগাদ স্মার্ট বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো। আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া শিখে দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে উঠবে। অর্থাৎ স্মার্ট পপুলেশন, স্মার্ট গভমেন্ট, স্মার্ট ইকোনমি এবং স্মার্ট সোসাইটি। ২০৪১ সালের মধ্যে আমরা এভাবেই বাংলাদেশকে গড়ে তুলবো এবং এগিয়ে নিয়ে যাব।

back to top