পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন মজুরিকাঠামো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পোশাকশ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হলেও বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করলে মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি বলছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নতুন মজুরিকাঠামোর খসড়ার ওপর নিম্নতম মজুরি বোর্ডে টিআইবির দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই বলা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে মজুরি বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংস্থাটি বলেছে, ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামো অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা আছে। সেই হিসাবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি ন্যূনতম ৫ হাজার ২৩৩ টাকা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার ২৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড ৪, ৩, ২ ও ১-এ মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৫২, ২৪ দশমিক ১৬, ২৩ দশমিক ৯৭ ও ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। একইভাবে হিসাব করলে এবার পঞ্চম গ্রেডের মোট মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার হয় ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
টিআইবি বলেছে, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কমবে। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করলে ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫ হাজার ৫৭২ টাকা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ মূল মজুরি বেড়েছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড ৪, ৩, ২ ও ১-এ মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮১, ১৬ দশমিক ৫৯, ১৬ দশমিক ৪১ ও ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। একইভাবে হিসাব করলে পঞ্চম গ্রেডের মোট মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ২৬ শতাংশ।
টিআইবি বলেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূল মজুরি মোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরিকাঠামো অনুযায়ী তা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে প্রতি বছরে ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। এটিকে এই মজুরিকাঠামোর বড় দুর্বলতা বলে মনে করছে সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আইএলওর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মজুরিকাঠামো, জীবনযাপনের ব্যয় ও এ-সংক্রান্ত পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক বিবেচ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং উচ্চ কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়সমূহ মাথায় রাখার কথা। নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনগুলো কী আকারে বিবেচনা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়; বরং শ্রমিকের ন্যূনতম জীবনমান ও প্রয়োজন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাপন ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো মোটেই গুরুত্ব পায়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।’
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে চার শ্রমিকের জীবনহানির ঘটনাকে চরম দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ, সেখানে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক মজুরি না দেওয়াটা সত্যিই লজ্জাজনক। একইভাবে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে, তৈরি পোশাক রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম মজুরি দিয়ে আসছে। নতুন ঘোষিত কাঠামো অনুযায়ীও বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলক সর্বনিম্ন অবস্থানে অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া মজুরি বোর্ডে পাঠানো চিঠিতে শ্রমিকদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিতে মানসম্মত মজুরি প্রদানের জন্য মজুরিকাঠামো সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি উল্লেখিত মানদণ্ডের আলোকে শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও দাবি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছে টিআইবি।
মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর ২০২৩
পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত নতুন মজুরিকাঠামো পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। পোশাকশ্রমিকদের মজুরি সর্বনিম্ন ৫২-৫৬ শতাংশ বাড়ানোর কথা বলা হলেও বছরে ৫ শতাংশ ইনক্রিমেন্ট, মূল্যস্ফীতি, ডলারের বিনিময়মূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করলে মজুরি প্রকৃত অর্থে ৩০ শতাংশও বাড়েনি বলছে সংস্থাটি।
মঙ্গলবার (২১ নভেম্বর) তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য নতুন মজুরিকাঠামোর খসড়ার ওপর নিম্নতম মজুরি বোর্ডে টিআইবির দেওয়া এক চিঠিতে এমনটাই বলা হয়েছে বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
জীবনমান, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নির্ধারিত মানদণ্ড বিবেচনায় নিয়ে মজুরি পুনর্বিবেচনা করতে মজুরি বোর্ডের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
সংস্থাটি বলেছে, ২০১৮ সালের মজুরিকাঠামো অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা আছে। সেই হিসাবে পূর্ববর্তী গ্রেড সাত বা নতুন প্রস্তাবিত গ্রেড পাঁচে ২০২৩ সালে মূল মজুরি ন্যূনতম ৫ হাজার ২৩৩ টাকা হওয়ার কথা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত নতুন মূল মজুরি ধরা হয়েছে ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ এই গ্রেডে মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার ২৮ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড ৪, ৩, ২ ও ১-এ মূল মজুরি প্রকৃতপক্ষে বেড়েছে যথাক্রমে ২৬ দশমিক ৫২, ২৪ দশমিক ১৬, ২৩ দশমিক ৯৭ ও ২৪ দশমিক ৭১ শতাংশ। একইভাবে হিসাব করলে এবার পঞ্চম গ্রেডের মোট মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার হয় ২৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ।
টিআইবি বলেছে, মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিলে মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার আরও কমবে। মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করলে ৫ নম্বর গ্রেডের মূল মজুরি হওয়ার কথা ৫ হাজার ৫৭২ টাকা। এই গ্রেডে প্রস্তাবিত মূল মজুরি ৬ হাজার ৭০০ টাকা। অর্থাৎ মূল মজুরি বেড়েছে ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ। একইভাবে গ্রেড ৪, ৩, ২ ও ১-এ মূল মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ৮১, ১৬ দশমিক ৫৯, ১৬ দশমিক ৪১ ও ১৭ দশমিক ১১ শতাংশ। একইভাবে হিসাব করলে পঞ্চম গ্রেডের মোট মজুরি বৃদ্ধির প্রকৃত হার দাঁড়ায় ২৬ শতাংশ।
টিআইবি বলেছে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী মূল মজুরি মোট মজুরির ৬০ শতাংশ ধরা হলেও বাংলাদেশের প্রস্তাবিত মজুরিকাঠামো অনুযায়ী তা ৫৩ থেকে ৫৬ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে প্রতি বছরে ৫ শতাংশ হারে মূল মজুরি বৃদ্ধির সুযোগ রাখা হলেও সামনের দিনে তুলনামূলক কম মজুরি বাড়বে শ্রমিকদের। এটিকে এই মজুরিকাঠামোর বড় দুর্বলতা বলে মনে করছে সংস্থাটি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘নির্ভরযোগ্য বিভিন্ন গবেষণা ও বিশ্লেষণে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামগ্রিক বিবেচনায় পোশাকশ্রমিকদের জন্য প্রস্তাবিত ন্যূনতম মজুরি জীবনধারণের প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আইএলওর নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী নিম্নতম মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে শ্রমিক ও তার পরিবারের প্রয়োজন, দেশের সাধারণ মজুরিকাঠামো, জীবনযাপনের ব্যয় ও এ-সংক্রান্ত পরিবর্তন, সামাজিক নিরাপত্তা সুবিধা, অন্যান্য সংশ্লিষ্ট শ্রমজীবীদের জীবনযাত্রার মান ও অর্থনৈতিক বিবেচ্য, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, উৎপাদনশীলতা এবং উচ্চ কর্মসংস্থান তৈরির বিষয়সমূহ মাথায় রাখার কথা। নতুন মজুরি নির্ধারণের ক্ষেত্রে কোনগুলো কী আকারে বিবেচনা করা হয়েছে, তা স্পষ্ট নয়; বরং শ্রমিকের ন্যূনতম জীবনমান ও প্রয়োজন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির এই সময়ে জীবনযাপন ব্যয় ও সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো মোটেই গুরুত্ব পায়নি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।’
মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে চার শ্রমিকের জীবনহানির ঘটনাকে চরম দুঃখজনক বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পৃথিবীর দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রপ্তানিকারক দেশ বাংলাদেশ, সেখানে পোশাকশ্রমিকদের ন্যূনতম মৌলিক চাহিদা মেটানোর জন্য প্রয়োজনীয় যৌক্তিক মজুরি না দেওয়াটা সত্যিই লজ্জাজনক। একইভাবে বিব্রতকর বিষয় হচ্ছে, তৈরি পোশাক রপ্তানির বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় সবচেয়ে কম মজুরি দিয়ে আসছে। নতুন ঘোষিত কাঠামো অনুযায়ীও বাংলাদেশের পোশাকশ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলক সর্বনিম্ন অবস্থানে অব্যাহত থাকবে।’
এ ছাড়া মজুরি বোর্ডে পাঠানো চিঠিতে শ্রমিকদের ন্যূনতম জীবনমান নিশ্চিতে মানসম্মত মজুরি প্রদানের জন্য মজুরিকাঠামো সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি উল্লেখিত মানদণ্ডের আলোকে শ্রমিকদের প্রত্যাশা ও দাবি এবং আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতার আলোকে পুনর্বিবেচনার সুপারিশ করেছে টিআইবি।