জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ সংকটের মুখোমুখি হওয়া থেকে তাদের রক্ষায় মানব গতিশীলতার পাঁচটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ জলবায়ু স্থানচ্যুতি জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং কিছু ভয়ানক পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে ঘটে। এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয় সে জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সদর দফতরে তিন দিনব্যাপী ১১৪তম অধিবেশনে ‘মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব: সমাধানের জন্য বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চলাফেরায় যে প্রভাব পড়ছে তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে—প্রথমত, আমাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, জলবায়ু অভিবাসীদের অভিঘাত ও ক্ষতির প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার জন্য জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
তৃতীয়ত, অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসাবে দেখার জন্য আমাদের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুত হতে হবে, যেখানে এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হবে।
চতুর্থত, জলবায়ু অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মান পর্যালোচনা করতে হবে।
পঞ্চমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে এটির জন্য একটি গঠনমূলক অবস্থান তৈরিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে আমাদের উন্নত গবেষণা ডেটা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত বা আটকে পড়েছেন তাদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জীবিকার বিকল্পগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা দরকার। তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা দরকার।
তিনি বলেন, এটি অনুমান করা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১৬ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। এর মধ্যে ৪০ মিলিয়ন এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এই ধরনের স্থানচ্যুতি আমরা যা ভাবী তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ঘটছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এই লোকগুলোর মধ্যে কিছু লোক পাচার নেটওয়ার্কের শিকার হয়, যার সঙ্গে সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এই ধরনের মিশ্র অভিবাসন প্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতার সমস্যাটিকে আরও বেশি সমস্যাযুক্ত করে তোলে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে উচ্চ স্থান দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ বিষয়টির কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম এবং অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত বোধ করছি যে অনেক ছোট দ্বীপের উন্নয়নশীল দেশগুলোও এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট যে কপ-২৮, জিএফএমডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। আমার অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে নিরাপদ আবাসন প্রদানের জন্য আমরা কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করছি। বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পটি স্থানীয় মাছ ধরা, পর্যটন ও বায়ুশক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।
মঙ্গলবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৩
জলবায়ু বাস্তুচ্যুতির কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ভবিষ্যৎ সংকটের মুখোমুখি হওয়া থেকে তাদের রক্ষায় মানব গতিশীলতার পাঁচটি বিষয়ের ওপর নজর দেওয়া দরকার।
তিনি বলেন, বেশিরভাগ জলবায়ু স্থানচ্যুতি জাতীয় সীমানার মধ্যে এবং কিছু ভয়ানক পরিস্থিতিতে সীমান্তের ওপারে ঘটে। এই ধরনের পরিস্থিতি যাতে মানবিক সংকটে পরিণত না হয় সে জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য আন্তর্জাতিক সহায়তা ও সংহতি প্রয়োজন।
আজ মঙ্গলবার (২৮ নভেম্বর) সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন ফর মাইগ্রেশন (আইওএম)-এর সদর দফতরে তিন দিনব্যাপী ১১৪তম অধিবেশনে ‘মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব: সমাধানের জন্য বৈশ্বিক আহ্বান’ শীর্ষক উচ্চ-পর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রচারিত একটি ভিডিও বিবৃতিতে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে মানুষের চলাফেরায় যে প্রভাব পড়ছে তা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী পাঁচটি পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হচ্ছে—প্রথমত, আমাদের নিরাপদ, সুশৃঙ্খল ও নিয়মিত অভিবাসনের জন্য গ্লোবাল কমপ্যাক্টের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে অধিকারভিত্তিক পদ্ধতিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ুর প্রভাব মোকাবিলা করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, জলবায়ু অভিবাসীদের অভিঘাত ও ক্ষতির প্রসঙ্গে নির্দিষ্ট সমাধান খুঁজে বের করার জন্য জলবায়ু ন্যায্যতার আলোকে আমাদের পরিস্থিতি বিবেচনা করতে হবে।
তৃতীয়ত, অভিবাসনকে জলবায়ু অভিযোজন কৌশল হিসাবে দেখার জন্য আমাদের স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে প্রস্তুত হতে হবে, যেখানে এটি সর্বোত্তম সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে প্রমাণিত হবে।
চতুর্থত, জলবায়ু অভিবাসী, বিশেষ করে নারী, শিশু ও অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ গোষ্ঠীর পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের বিদ্যমান আন্তর্জাতিক সুরক্ষা মান পর্যালোচনা করতে হবে।
পঞ্চমত, সংকীর্ণ রাজনৈতিক বিবেচনার ঊর্ধ্বে এটির জন্য একটি গঠনমূলক অবস্থান তৈরিতে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বিষয়ে আমাদের উন্নত গবেষণা ডেটা এবং প্রমাণের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করা উচিত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যারা বাস্তুচ্যুত বা আটকে পড়েছেন তাদের মৌলিক পরিষেবা, সামাজিক সুরক্ষা ও জীবিকার বিকল্পগুলোতে প্রবেশাধিকার থাকা দরকার। তাদের আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের ওপর বিরূপ প্রভাবগুলোও একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতিতে মোকাবিলা করা দরকার।
তিনি বলেন, এটি অনুমান করা হয়েছে যে জলবায়ু পরিবর্তন ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের ২১৬ মিলিয়ন লোককে বাস্তুচ্যুত করতে পারে। এর মধ্যে ৪০ মিলিয়ন এককভাবে দক্ষিণ এশিয়ার। বাংলাদেশে আমাদের জনসংখ্যার ২০ শতাংশ উপকূলীয় অঞ্চলে বাস করে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততার অনুপ্রবেশ, ঘন ঘন বন্যা এবং প্রবল ঘূর্ণিঝড় তাদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলে। এই ধরনের স্থানচ্যুতি আমরা যা ভাবী তার চেয়ে দ্রুতগতিতে ঘটছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় জেলা কক্সবাজার এখন মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে আগত ১২ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। এই লোকগুলোর মধ্যে কিছু লোক পাচার নেটওয়ার্কের শিকার হয়, যার সঙ্গে সমগ্র অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। এই ধরনের মিশ্র অভিবাসন প্রবাহ জলবায়ু গতিশীলতার সমস্যাটিকে আরও বেশি সমস্যাযুক্ত করে তোলে।
প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ বিশ্বাস করে মানব গতিশীলতার ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব আন্তর্জাতিক আলোচ্যসূচিতে উচ্চ স্থান দেওয়া উচিত। বাংলাদেশ বিষয়টির কার্যকর সমাধানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে আইওএম এবং অন্যান্য অংশীদারের সঙ্গে একত্রে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত বোধ করছি যে অনেক ছোট দ্বীপের উন্নয়নশীল দেশগুলোও এতে নেতৃত্ব দিচ্ছে। আমরা সন্তুষ্ট যে কপ-২৮, জিএফএমডি এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক ফোরাম এটিকে যথাযথ গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে সরকার সম্পদের সীমাবদ্ধতার মধ্যে জলবায়ু অভিবাসীদের জন্য বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ শুরু করেছে। আমার অগ্রাধিকারভিত্তিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধীনে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে বাস্তুচ্যুত ৪ হাজার ৪০০ পরিবারকে নিরাপদ আবাসন প্রদানের জন্য আমরা কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবন নির্মাণ করছি। বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্পটি স্থানীয় মাছ ধরা, পর্যটন ও বায়ুশক্তি কেন্দ্র হয়ে উঠবে বলে আশা করা হচ্ছে।