দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
মঙ্গলবার থেকে আপিল, নিষ্পত্তি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাতিল করেছে ৭৩১টি; এর অধিকাংশই স্বতন্ত্র। বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাদপড়া, নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী টিকে যাওয়ার ঘটনা যেমন আছে, দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির আসনে দলীয় (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী বাদপড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টির বড় দুই নেতা একই আসনে বৈধতা পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই দুটি করে আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
গত তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে করা সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে নির্বাচন করবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। দলটি তিনশ’ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দেয়ার বিষয়ে গতকাল রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি কোনো তালিকা পাঠায়নি। জাতীয় পার্টি চাইলে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নিজেদের প্রমাণ করার মোক্ষম সময় এটা।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র এখানে বাতিল হয়ে গেছে। আবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাপার সেলিম ওসমান। এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা বা আসন বণ্টনের বিষয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা এখন নিজের স্ট্রেংথে (শক্তিতেই) নির্বাচন করতে চাই। কোনো, কারও সঙ্গে সমঝোতা বা এই সমস্ত যোগাযোগ আমাদের হয় নাই। আমাদের ইচ্ছাও নাই।’
তিনশ’ আসনে মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ২ হাজার ৭১৬টি। সে হিসাবে সারাদেশে এক-চতুর্থাশেংর বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনে এক-তৃতীয়াংশ মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে গেছে।
ঋণ খেলাপি, দ্বৈত নাগরিকত্ব, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল, প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ইসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ১৩ জন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন একাধিক আসনে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা-৫, কুমিল্লা-৪, ময়মনসিংহ-৩ ও বগুড়া-৭ আসন। আর সবচেয়ে কম ২ জন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন শেরপুর-২ আসনে। বাছাইয়ে সবচেয়ে বেশি ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বগুড়া-৭ আসনে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা ও যাচাইকালে আলোচিত হয়েছে কারামুক্ত হয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের নৌকার মনোনয়ন পাওয়া এবং বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের বাদ পড়া।
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দেয়ার ঘটনাও এবার আলোচিত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সংসদীয় তিনশ’ আসনে বৈধ ও বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের তথ্য সাংবাদিকদের জানান। তবে, কোনো দলের কতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বা কী কারণে হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
ঢাকার ২০টি আসনে জমা পড়া ২৩৪টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ১৫৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৭৮টি মনোনয়নপত্র। অর্থাৎ, এক-তৃতীয়াংশ মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে গেছে।
বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৩২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৯ জন স্বতন্ত্র এবং ১৩ জন বিভিন্ন দলের প্রার্থী রয়েছেন। বাকি ১১৬ জনের জনের মনোনয়ন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) : এই আসনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলামের মধ্যে। ৩ লাখ ২ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী সালমান। আর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে সালমা ইসলাম মোটরগাড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৭৬৩ ভোট পান।
তার আগে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান খানকে হারিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন জাপার সালমা ইসলাম।
সালামা ইসলাম এবার ঢাকা-১৭ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে সালাম ইসলামের মনোনয়নপত্রও বৈধতা পেয়েছে। এদিকে, জিএম কাদের রংপুর-৩ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকা-১ আসনে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে মুক্তিজোটের আবদুর রহিম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুল হাকিমের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয় যথাযথ নথিপত্র জমা না দেয়ার কারণে। বৈধ প্রার্থী বাকি পাঁচজন হলেন : বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সামসুজ্জামান চৌধুরী, গণফ্রন্টের শেখ মো. আলী, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির মো. করম আলী, তৃণমূল বিএনপির মুফিদ খান ও জাকের পার্টির মো. লুৎফর রহমান খান।
ঢাকা-২ : কেরানীগঞ্জ ও সাভারের কিছু অংশ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির কয়েকটি ওয়ার্ড মিলিয়ে গঠিত ঢাকা-২ সংসদীয় আসন। এ আসনের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাকিল আহমেদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কামরুল ইসলাম গত তিন মেয়াদ ধরে এ আসনের এমপি।
১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আশরাফ আলী জিহাদীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা এবং আয়কর রিটার্নের প্রত্যায়িত অনুলিপি না দেয়ায়। জাকের পার্টির প্রার্থী আবুল কালামের আয়কর রিটার্নের প্রত্যায়িত কপি না থাকায় তার মনোনয়নপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়।
ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রার্থিতা এই আসনে বৈধতা পেয়েছে। এই আসন থেকে গত তিনটি নির্বাচনে তিনি নৌকা নিয়ে জয়লাভ করেন।
মোট ৯ প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বৈধ অন্য প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির কুদ্দুস মোহাম্মদ মনির সরকার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জাফর, জাকের পার্টির আবদুর রাজ্জাক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুস সালাম এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. রমজান।
১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জাল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী রেজার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র না থাকায় বাতিল হয়েছে তরীকত ফেডারেশনের আবদুল কুদ্দুস মিয়ার মনোনয়নপত্র। আর ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া এবং ঋণ খেলাপি হওয়ায় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) : আসনে মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় এ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : এ আসনে মোট ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। সবার মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) : এই আসনে ১০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে জাকের পার্টির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আমিন রসূল নামে দুই প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল হয়। ভোটারের তথ্যে গরমিলের অভিযোগে তাদের মনোনয়ন বাতিল হয় বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর থেকে নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন
মঙ্গলবার থেকে আপিল, নিষ্পত্তি ১৫ ডিসেম্বরের মধ্যে
সোমবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনশ’ আসনে ১ হাজার ৯৮৫টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। বাতিল করেছে ৭৩১টি; এর অধিকাংশই স্বতন্ত্র। বাছাইয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাদপড়া, নৌকার মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থী টিকে যাওয়ার ঘটনা যেমন আছে, দীর্ঘদিনের মিত্র জাতীয় পার্টির আসনে দলীয় (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী বাদপড়ার ঘটনাও ঘটেছে। আবার দেখা যাচ্ছে, জাতীয় পার্টির বড় দুই নেতা একই আসনে বৈধতা পেয়েছেন, তারা প্রত্যেকেই দুটি করে আসনে প্রার্থী হয়েছেন।
গত তিনটি নির্বাচন আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে করা সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি এবার এককভাবে নির্বাচন করবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল। দলটি তিনশ’ আসনেই প্রার্থী দিয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও ২৯৮টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।
জাতীয় পার্টিকে আসন ছাড় দেয়ার বিষয়ে গতকাল রোববার ঢাকায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগের কাছে জাতীয় পার্টি কোনো তালিকা পাঠায়নি। জাতীয় পার্টি চাইলে আলোচনা হতে পারে জানিয়ে তিনি বলেন, সত্যিকারের বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় পার্টির নিজেদের প্রমাণ করার মোক্ষম সময় এটা।’
স্থানীয় সূত্র জানায়, কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসন থেকে নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। তিন এই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. নাসিরুল ইসলাম খানের মনোনয়নপত্র এখানে বাতিল হয়ে গেছে। আবার নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাপার সেলিম ওসমান। এই আসনে আওয়ামী লীগ কোনো প্রার্থী দেয়নি।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে সমঝোতা বা আসন বণ্টনের বিষয়ে সোমবার (৪ ডিসেম্বর) ঢাকায় জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আমরা এখন নিজের স্ট্রেংথে (শক্তিতেই) নির্বাচন করতে চাই। কোনো, কারও সঙ্গে সমঝোতা বা এই সমস্ত যোগাযোগ আমাদের হয় নাই। আমাদের ইচ্ছাও নাই।’
তিনশ’ আসনে মোট মনোনয়নপত্র জমা পড়েছিল ২ হাজার ৭১৬টি। সে হিসাবে সারাদেশে এক-চতুর্থাশেংর বেশি মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। রাজধানী ঢাকার ২০টি আসনে এক-তৃতীয়াংশ মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে গেছে।
ঋণ খেলাপি, দ্বৈত নাগরিকত্ব, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ভোটারের স্বাক্ষরের তালিকায় গরমিল, প্রয়োজনীয় নথিপত্র না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে এসব মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
ইসির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি ১৩ জন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন একাধিক আসনে। সেগুলো হচ্ছে ঢাকা-৫, কুমিল্লা-৪, ময়মনসিংহ-৩ ও বগুড়া-৭ আসন। আর সবচেয়ে কম ২ জন বৈধ প্রার্থী রয়েছেন শেরপুর-২ আসনে। বাছাইয়ে সবচেয়ে বেশি ১২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বগুড়া-৭ আসনে।
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ, জমা ও যাচাইকালে আলোচিত হয়েছে কারামুক্ত হয়ে ঝালকাঠি-১ (রাজাপুর-কাঁঠালিয়া) আসনে বিএনপির সাবেক নেতা মেজর (অব.) শাহজাহান ওমরের নৌকার মনোনয়ন পাওয়া এবং বর্তমান সংসদ সদস্য বজলুল হক হারুনের বাদ পড়া।
দ্বৈত নাগরিকত্বের কারণে বরিশাল-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাম্মী আহম্মেদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র দাখিল করা বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথের প্রার্থিতা টিকে যাওয়ার বিষয়টিও আলোচনায় আছে। ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন দেয়ার ঘটনাও এবার আলোচিত হয়েছে।
সোমবার সন্ধ্যায় ঢাকার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ সংসদীয় তিনশ’ আসনে বৈধ ও বাতিল হওয়া মনোনয়নপত্রের তথ্য সাংবাদিকদের জানান। তবে, কোনো দলের কতজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে বা কী কারণে হয়েছে, এ বিষয়ে কোনো তথ্য দেয়া হয়নি।
ঢাকার ২০টি আসনে জমা পড়া ২৩৪টি মনোনয়নপত্রের মধ্যে ১৫৬ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হয়েছে। বাতিল হয়েছে ৭৮টি মনোনয়নপত্র। অর্থাৎ, এক-তৃতীয়াংশ মনোনয়নপত্রই বাতিল হয়ে গেছে।
বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রামের ১৬টি আসনের ৩২ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এর মধ্যে ১৯ জন স্বতন্ত্র এবং ১৩ জন বিভিন্ন দলের প্রার্থী রয়েছেন। বাকি ১১৬ জনের জনের মনোনয়ন ঢাকা-১ (দোহার-নবাবগঞ্জ) : এই আসনে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান এবং জাতীয় পার্টির (জাপা) কো-চেয়ারম্যান সাবেক মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সালমা ইসলামের মনোনয়নপত্র বৈধতা পেয়েছে।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় সালমান এফ রহমান ও সালমা ইসলামের মধ্যে। ৩ লাখ ২ হাজার ৯৯৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন নৌকার প্রার্থী সালমান। আর স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করে সালমা ইসলাম মোটরগাড়ি প্রতীকে পান ৩৭ হাজার ৭৬৩ ভোট পান।
তার আগে দশম সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আবদুল মান্নান খানকে হারিয়ে এ আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) হয়েছিলেন জাপার সালমা ইসলাম।
সালামা ইসলাম এবার ঢাকা-১৭ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এই আসনে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদের এবং আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ আলী আরাফাতের সঙ্গে সালাম ইসলামের মনোনয়নপত্রও বৈধতা পেয়েছে। এদিকে, জিএম কাদের রংপুর-৩ আসনেও মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
ঢাকা-১ আসনে নয়জন প্রার্থীর মধ্যে মুক্তিজোটের আবদুর রহিম ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুল হাকিমের মনোনয়ন স্থগিত রাখা হয় যথাযথ নথিপত্র জমা না দেয়ার কারণে। বৈধ প্রার্থী বাকি পাঁচজন হলেন : বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির সামসুজ্জামান চৌধুরী, গণফ্রন্টের শেখ মো. আলী, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টির মো. করম আলী, তৃণমূল বিএনপির মুফিদ খান ও জাকের পার্টির মো. লুৎফর রহমান খান।
ঢাকা-২ : কেরানীগঞ্জ ও সাভারের কিছু অংশ এবং ঢাকা দক্ষিণ সিটির কয়েকটি ওয়ার্ড মিলিয়ে গঠিত ঢাকা-২ সংসদীয় আসন। এ আসনের পাঁচ প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরুল ইসলাম ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাকিল আহমেদের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। কামরুল ইসলাম গত তিন মেয়াদ ধরে এ আসনের এমপি।
১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর না থাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমানের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। আর ইসলামী ঐক্যজোটের মাওলানা আশরাফ আলী জিহাদীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকা এবং আয়কর রিটার্নের প্রত্যায়িত অনুলিপি না দেয়ায়। জাকের পার্টির প্রার্থী আবুল কালামের আয়কর রিটার্নের প্রত্যায়িত কপি না থাকায় তার মনোনয়নপত্রের বিষয়ে সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখা হয়।
ঢাকা-৩ (কেরানীগঞ্জ) : আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুর প্রার্থিতা এই আসনে বৈধতা পেয়েছে। এই আসন থেকে গত তিনটি নির্বাচনে তিনি নৌকা নিয়ে জয়লাভ করেন।
মোট ৯ প্রার্থীর মধ্যে ছয়জনের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। বৈধ অন্য প্রার্থীরা হলেন- জাতীয় পার্টির কুদ্দুস মোহাম্মদ মনির সরকার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জাফর, জাকের পার্টির আবদুর রাজ্জাক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবদুস সালাম এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোটের মো. রমজান।
১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর জাল হওয়ায় স্বতন্ত্র প্রার্থী আলী রেজার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। দলের পক্ষ থেকে প্রত্যয়নপত্র না থাকায় বাতিল হয়েছে তরীকত ফেডারেশনের আবদুল কুদ্দুস মিয়ার মনোনয়নপত্র। আর ৩ লাখ ৬৫ হাজার টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া এবং ঋণ খেলাপি হওয়ায় আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফারুকের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম-১ (মীরসরাই) : আসনে মোট ৮ জন প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়। এক শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল থাকায় এ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
চট্টগ্রাম-২ (ফটিকছড়ি) : এ আসনে মোট ১২ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়ন দাখিল করেন। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম নওশের আলী, মোহাম্মদ শাহজাহান, রিয়াজ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল করে রিটার্নিং কর্মকর্তা। সবার মনোনয়নের সঙ্গে জমা দেয়া ১ শতাংশ ভোটারের তথ্যে গরমিল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম-৩ (সন্দ্বীপ) : এই আসনে ১০ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। এর মধ্যে জাকের পার্টির প্রার্থী নিজাম উদ্দিন নাছির ও বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আমিন রসূল নামে দুই প্রার্থীর মনোনয়নও বাতিল হয়। ভোটারের তথ্যে গরমিলের অভিযোগে তাদের মনোনয়ন বাতিল হয় বলে জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তফসিল অনুযায়ী এই নির্বাচনের প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। এরপর থেকে নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ৭ জানুয়ারি।