সাঁইত্রিশ বছর পর আবারও ভূগর্ভে তেলের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রে একটি কূপ খননের সময় সেখানে তেলের সন্ধান মিলেছে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সিলেটে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপের প্রথম স্তরেই তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এই তেল পাওয়াটাকে সুখবর উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে গ্যাসের সঙ্গে একটু করে একসঙ্গে তেল আসতো। কিন্তু এবার আলাদা আলাদা স্লটে আমরা তেল-গ্যাস পাচ্ছি।’
বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিল। সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। ওই তেলের এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট) গ্র্যাভিটি ছিল ২৭ ডিগ্রি। এরপর, ছোট-বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও ঘোষণা দেয়ার মতো তেলের সন্ধান বা মজুদ পাওয়া যায়নি।
এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হয়, তেলের গুণগত মান তত ভালো বিবেচনা করা হয়।
গত দুই মাস আগে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ড্রিল শুরু হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখানে ২ হাজার ৫৭৬ মিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরে যে জোন সেখানে ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি মেলে, প্রাথমিকভাবে যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
এখান থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রতি ঘণ্টায় যে প্রেশার তাতে ৩৫ ব্যারেল তেল উঠছে, প্রথম দিন দুই ঘণ্টা ৭০ ব্যারেল তেল ওঠেছে। এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।’ তবে ঠিক কত বড় এই খনি এবং কী পরিমাণ তেল এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তেল ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, বুয়েট এবং সিলেট গ্যাসফিল্ডে পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তেলের মজুদ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের আশা, যদি ২,৫৪০ ও ২,৪৬০ মিটার গভীরে একযোগে উৎপাদন করা হয় তাহলে এটি আট থেকে ১০ বছর স্থায়ী হবে। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে তেল উৎপাদন করা হলে তা ১৫ বছরের বেশি টিকে থাকবে। আর এর গড় মূল্য ৮,৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গ্যাসের উপস্থিতি প্রসঙ্গে নসরুল হামিদ বলেন, ‘চারটি স্তরে আমরা গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি। একদম নিচে গ্যাসের প্রবাহ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত, আর প্রেশার ৩,২৫০ পিএসআই (পাউন্ডস পার স্কয়ার ইঞ্চি)। এখানে গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট।’
সিলেটে তেল পাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, এর আগেও সিলেটের ওই অঞ্চলে তেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের স্তরগুলো ছোট ছোট। বিস্তৃতি খুব বেশি হয় না। তিনি বলেন, প্রমাণিত মজুদ কত? তা নিশ্চিত হওয়ার পর এর গুরুত্ব বোঝা যাবে।
এই অঞ্চলে গ্যাস বেশি পাওয়া গেলেও অল্প অল্প পরিমাণে তেল মজুদ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও তেল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত উত্তোলনের দিকে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
হরিপুরে যে তেল আবিষ্কার হয়েছিল, তা নিয়ম মেনে উত্তোলন করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র যতদিন প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসছে, ততদিন তোলা হয়েছে।’ এরপর আর ওই তেলক্ষেত্র ‘ডেভেলপ’ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন ও প্রডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) এ ধরনের তেলক্ষেত্র ডেভেলপ করা এবং সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল উত্তোলন করতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনি।
রোববার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩
সাঁইত্রিশ বছর পর আবারও ভূগর্ভে তেলের সন্ধান পেয়েছে বাংলাদেশ। সিলেট গ্যাসক্ষেত্রে একটি কূপ খননের সময় সেখানে তেলের সন্ধান মিলেছে বলে জানান বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু। রোববার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সিলেটে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ১০ নম্বর কূপের প্রথম স্তরেই তেলের সন্ধান পাওয়া গেছে। এছাড়া চারটি স্তরে গ্যাস পাওয়া গিয়েছে বলেও নিশ্চিত করেন তিনি।
এই তেল পাওয়াটাকে সুখবর উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আগে গ্যাসের সঙ্গে একটু করে একসঙ্গে তেল আসতো। কিন্তু এবার আলাদা আলাদা স্লটে আমরা তেল-গ্যাস পাচ্ছি।’
বাংলাদেশে সর্বশেষ ১৯৮৬ সালে হরিপুরে তেলের সন্ধান মিলেছিল। সেখান থেকে পাঁচ বছর তেল উত্তোলন করা হয়। ওই তেলের এপিআই (আমেরিকান পেট্রোলিয়াম ইনস্টিটিউট) গ্র্যাভিটি ছিল ২৭ ডিগ্রি। এরপর, ছোট-বড় গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান মিললেও ঘোষণা দেয়ার মতো তেলের সন্ধান বা মজুদ পাওয়া যায়নি।
এপিআই গ্র্যাভিটি যত বেশি হয়, তেলের গুণগত মান তত ভালো বিবেচনা করা হয়।
গত দুই মাস আগে জৈন্তাপুর-গোয়াইনহাট এলাকায় ড্রিল শুরু হয় জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, এখানে ২ হাজার ৫৭৬ মিটার খনন সম্পন্ন হয়েছে। তিনি জানান, ১ হাজার ৩৯৭ থেকে ১ হাজার ৪৪৫ মিটার গভীরে যে জোন সেখানে ৮ ডিসেম্বর তেলের উপস্থিতি মেলে, প্রাথমিকভাবে যার এপিআই গ্রাভিটি ২৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি।
এখান থেকে দৈনিক ৫০০ থেকে ৬০০ ব্যারেল তেল পাওয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখন প্রতি ঘণ্টায় যে প্রেশার তাতে ৩৫ ব্যারেল তেল উঠছে, প্রথম দিন দুই ঘণ্টা ৭০ ব্যারেল তেল ওঠেছে। এখন বন্ধ রাখা হয়েছে।’ তবে ঠিক কত বড় এই খনি এবং কী পরিমাণ তেল এখান থেকে পাওয়া যেতে পারে তা নিশ্চিত হতে ৪ থেকে ৫ মাস সময় লাগবে বলে তিনি জানান।
বিস্তারিত পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য তেল ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড, বুয়েট এবং সিলেট গ্যাসফিল্ডে পাঠানো হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
তেলের মজুদ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের আশা, যদি ২,৫৪০ ও ২,৪৬০ মিটার গভীরে একযোগে উৎপাদন করা হয় তাহলে এটি আট থেকে ১০ বছর স্থায়ী হবে। আর ২০ মিলিয়ন ঘনফুটে তেল উৎপাদন করা হলে তা ১৫ বছরের বেশি টিকে থাকবে। আর এর গড় মূল্য ৮,৫০০ কোটি টাকা দাঁড়াবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
গ্যাসের উপস্থিতি প্রসঙ্গে নসরুল হামিদ বলেন, ‘চারটি স্তরে আমরা গ্যাসের উপস্থিতি পেয়েছি। একদম নিচে গ্যাসের প্রবাহ ২৫ মিলিয়ন ঘনফুট পর্যন্ত, আর প্রেশার ৩,২৫০ পিএসআই (পাউন্ডস পার স্কয়ার ইঞ্চি)। এখানে গ্যাসের মজুদের পরিমাণ ৪৩ দশমিক ১০০ বিলিয়ন ঘনফুট।’
সিলেটে তেল পাওয়া প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, এর আগেও সিলেটের ওই অঞ্চলে তেলের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। তবে দেখা গেছে, এই অঞ্চলের স্তরগুলো ছোট ছোট। বিস্তৃতি খুব বেশি হয় না। তিনি বলেন, প্রমাণিত মজুদ কত? তা নিশ্চিত হওয়ার পর এর গুরুত্ব বোঝা যাবে।
এই অঞ্চলে গ্যাস বেশি পাওয়া গেলেও অল্প অল্প পরিমাণে তেল মজুদ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে আরও তেল পাওয়া যাবে। এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত উত্তোলনের দিকে সরকারের মনোযোগ দিতে হবে বলে উল্লেখ করেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
হরিপুরে যে তেল আবিষ্কার হয়েছিল, তা নিয়ম মেনে উত্তোলন করা হয়নি মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘শুধুমাত্র যতদিন প্রাকৃতিকভাবে উঠে আসছে, ততদিন তোলা হয়েছে।’ এরপর আর ওই তেলক্ষেত্র ‘ডেভেলপ’ করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন ও প্রডাকশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) এ ধরনের তেলক্ষেত্র ডেভেলপ করা এবং সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে তেল উত্তোলন করতে সক্ষম বলে মনে করেন তিনি।