‘একশ বীরঙ্গনাকে জানি। যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তারা কেউ ভালো নেই। তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করে না। তারা কেমন আছে কেউ জানতেও চায় না’ বলে অভিযোগ করেন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক।
আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ’একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: স্মৃতিতে ও ইতিহাসে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এতো এতো কথা হয় কিন্তু বীরঙ্গনাদের নিয়ে হয়না। তারা সমাজে পরিবারে রাষ্ট্রে সব জায়গা থেকেই বঞ্চিত। এইসব বীরঙ্গনাদের নিয়ে অনেক বেশী কথা বলা দরকার। তারা আজো সমাজে ধিকৃত হয় বলে নিজেদের করুন পরিণতি আজো লুকিয়ে রাখে।
বীরঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করা বা তাদেরকে সামনে আনা আজো অনেক ঝুঁকির উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, চচিত্র নির্মাতা তানভির মোকাম্মেল বলেন, ডকুমেন্টারি (প্রামাণ্য চিত্র) বানাতে গিয়ে তাদের সাথে অনেক বুঝে কয়ে দুএকজন রাজী হলেও বাকিরা ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বলে কথা বলতে চান না। সামনে আসতে চান না।’
এক বীরঙ্গনার কথা জানতে পেরে তার মেয়েকে শ্বশুড় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই গবেষক বলেন, ধর্ষিতারাও মুক্তিযোদ্ধা এ বিষয়টা আমাদের বোঝাতে হবে সাধারণ মানুষকে। তারা কেউ ইচ্ছে করে এই অবস্থা তৈরি করেনি। তাদের নিয়ে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম এম আকাশ বলেন, আজো মনের যুদ্ধে আমরা অস্পষ্ট আছি। মুক্তিযুদ্ধকে গ্লোরিফাই করা এক জিনিস আর তাকে ধারন করে কাজ করা অন্য জিনিস। পার্থক্য বুঝে আমাদের কাজ করা এগিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে সসম্মানে তুলে ধরতে পারবো না।
স্বাধীনতা পদক পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্ণেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে এক সন্ধ্যার কথা বলেন। কিভাবে আপামর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের যুক্ত করেছিল।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিতো সাধারণ মানুষ, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। সাধারণত লোক চক্ষুকে আড়াল করেই এ ধরনের কাজ করা হতো।
এক সনধ্যায় সিলেটের আঁকাবাকা সরু পথ ধরে আমরা কয়েকজন হাঁটছি। সিগারেট খাবো আর একটু আলাদা করে ভাবনা আসায় ল থেকে কিছুটা ূরত্ব রেখে হাটছিলাম। এমন সময় দেখি একজন মাঝবয়সী নারী একটা কিশোর ছেলের হাত ধরে এগিয়ে আসছেন। আমি থামলাম। ওই নারী কিশোর ছেলেটাকে নিয়ে একদম কাছে চলে আসে। বলে, আমি জানি তোমরা মুক্তিযোদ্ধা। তোমাদের কিছু দিতে চাই।
এ কথা শুনে আমি ভাবলাম হয়তো খাবার দিতে চায়। তাই বল্লাম, ঠিক আছে মা। কখন দেবেন। সে বলে ‘এখুনি দেবো’। আমি বলি কই? নারী তার হাতে ধরা কিশারের হাতটা দিয়ে বলে, এর দিতে আসছি। আমি গরীব মানুষ কিছু করতে পারি না। শ্যাখের ব্যটা কইছে যার যা আছে তাই নিয়া যুদ্ধ করবার। আমি আমার ছেলেরে দিতে আসছি। তুমি এর তোমাদের সাথে নেও বাবা।
আমি বিস্ময়ের সাথে তখন ভালো করে তাকিয়ে দেখি দুজনেই খালি পা। নারীর পরনের শাড়ীটা মলিন ছেলেটারও তাই। পুষ্টিহীন শরীর। বল্লাম এ বা”চা ছেলে কি করবে, ওকে নিয়ে যান এ কথা শুনে ওই নারী বেশ জোর দিয়ে বলেন আমার ছেলে সাঁতার জানে, গাছে উঠতে পারে, পাখি মারতে পারে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন’।
ভারতের পদ্মশ্রী পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আজ যারা ধনী যারা লেখাপড়া জানে তাদের নিয়ে যেভাবে কথা হয় স্মৃতি আওড়ানো হয় সাধারণ মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের নিয়ে এমনটা হয় না। অথচ মুক্তিযুদ্ধে গেছে সাধারণ অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষই বেশী। তাদের অনেকেই মার গেছেন এটা যেমন ঠিক। তেমনি অনেকেই তো বেচেও আছেন তাদের কাছে যেতে হবে। তারা কিছু চায় না। তারা আজো একটু ভালোবাসাই চায়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি, সঞ্চালক বিআইডিএস এর মহাপরিচালক বিনায়েক সেন বলেন, সংখ্যালঘুরা যতোটা নির্যাতিত হয়েছেন ততোটা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি। হিন্দু জনগোষ্ঠি ভারতে প্রশিক্ষণে কম ছিল। তারা ভয়ে ছিল। তবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নির্যাতিত হয়েছে এটা সত্য।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে যেভাবে ঝড় ঝাপটা গেছে সেভাবে সবটুকু লিপিবদ্ধ হয় নাই। নির্যাতিত পরিবারগুরোর বর্তমান অব¯’া কেমন তা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ১ খন্ডে নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। এতো বিভৎস আর নৃশংস ছিল যে লেখক নির্যাতনের লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই নির্যাতন এই কষ্টের কথা শেষ হয় নাই।
বীরঙ্গনা নারীরা কে কেমন আছেন, তাদের বর্তমান আর্থিক অব¯’া বর্তমানে কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কিছু কাজ করবে বলেও জানান বিআইডিএস মহা পরিচালক বিনায়েক সেন।
মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৩
‘একশ বীরঙ্গনাকে জানি। যাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হয়। তারা কেউ ভালো নেই। তাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করে না। তারা কেমন আছে কেউ জানতেও চায় না’ বলে অভিযোগ করেন নারী অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারী পক্ষের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য শিরিন হক।
আজ বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) আয়োজিত ’একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ: স্মৃতিতে ও ইতিহাসে’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে তিনি এই অভিযোগ করেন।
তিনি বলেন, আজ মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এতো এতো কথা হয় কিন্তু বীরঙ্গনাদের নিয়ে হয়না। তারা সমাজে পরিবারে রাষ্ট্রে সব জায়গা থেকেই বঞ্চিত। এইসব বীরঙ্গনাদের নিয়ে অনেক বেশী কথা বলা দরকার। তারা আজো সমাজে ধিকৃত হয় বলে নিজেদের করুন পরিণতি আজো লুকিয়ে রাখে।
বীরঙ্গনাদের নিয়ে কাজ করা বা তাদেরকে সামনে আনা আজো অনেক ঝুঁকির উল্লেখ করে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক, চচিত্র নির্মাতা তানভির মোকাম্মেল বলেন, ডকুমেন্টারি (প্রামাণ্য চিত্র) বানাতে গিয়ে তাদের সাথে অনেক বুঝে কয়ে দুএকজন রাজী হলেও বাকিরা ছেলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বলে কথা বলতে চান না। সামনে আসতে চান না।’
এক বীরঙ্গনার কথা জানতে পেরে তার মেয়েকে শ্বশুড় বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার অভিজ্ঞতার কথা বলতে গিয়ে এই গবেষক বলেন, ধর্ষিতারাও মুক্তিযোদ্ধা এ বিষয়টা আমাদের বোঝাতে হবে সাধারণ মানুষকে। তারা কেউ ইচ্ছে করে এই অবস্থা তৈরি করেনি। তাদের নিয়ে আমাদের আরো অনেক কাজ করতে হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক এম এম আকাশ বলেন, আজো মনের যুদ্ধে আমরা অস্পষ্ট আছি। মুক্তিযুদ্ধকে গ্লোরিফাই করা এক জিনিস আর তাকে ধারন করে কাজ করা অন্য জিনিস। পার্থক্য বুঝে আমাদের কাজ করা এগিয়ে যাওয়া মুক্তিযুদ্ধকে সঠিক তুলে ধরতে হবে। এ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধকে সসম্মানে তুলে ধরতে পারবো না।
স্বাধীনতা পদক পাওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্ণেল (অব) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীর প্রতিক মুক্তিযুদ্ধের সময়ের স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে এক সন্ধ্যার কথা বলেন। কিভাবে আপামর মানুষ মুক্তিযুদ্ধে নিজেদের যুক্ত করেছিল।
তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের খাবার দিতো সাধারণ মানুষ, প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষ। সাধারণত লোক চক্ষুকে আড়াল করেই এ ধরনের কাজ করা হতো।
এক সনধ্যায় সিলেটের আঁকাবাকা সরু পথ ধরে আমরা কয়েকজন হাঁটছি। সিগারেট খাবো আর একটু আলাদা করে ভাবনা আসায় ল থেকে কিছুটা ূরত্ব রেখে হাটছিলাম। এমন সময় দেখি একজন মাঝবয়সী নারী একটা কিশোর ছেলের হাত ধরে এগিয়ে আসছেন। আমি থামলাম। ওই নারী কিশোর ছেলেটাকে নিয়ে একদম কাছে চলে আসে। বলে, আমি জানি তোমরা মুক্তিযোদ্ধা। তোমাদের কিছু দিতে চাই।
এ কথা শুনে আমি ভাবলাম হয়তো খাবার দিতে চায়। তাই বল্লাম, ঠিক আছে মা। কখন দেবেন। সে বলে ‘এখুনি দেবো’। আমি বলি কই? নারী তার হাতে ধরা কিশারের হাতটা দিয়ে বলে, এর দিতে আসছি। আমি গরীব মানুষ কিছু করতে পারি না। শ্যাখের ব্যটা কইছে যার যা আছে তাই নিয়া যুদ্ধ করবার। আমি আমার ছেলেরে দিতে আসছি। তুমি এর তোমাদের সাথে নেও বাবা।
আমি বিস্ময়ের সাথে তখন ভালো করে তাকিয়ে দেখি দুজনেই খালি পা। নারীর পরনের শাড়ীটা মলিন ছেলেটারও তাই। পুষ্টিহীন শরীর। বল্লাম এ বা”চা ছেলে কি করবে, ওকে নিয়ে যান এ কথা শুনে ওই নারী বেশ জোর দিয়ে বলেন আমার ছেলে সাঁতার জানে, গাছে উঠতে পারে, পাখি মারতে পারে বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন’।
ভারতের পদ্মশ্রী পাওয়া এই মুক্তিযোদ্ধা বলেন, আজ যারা ধনী যারা লেখাপড়া জানে তাদের নিয়ে যেভাবে কথা হয় স্মৃতি আওড়ানো হয় সাধারণ মানুষ যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের নিয়ে এমনটা হয় না। অথচ মুক্তিযুদ্ধে গেছে সাধারণ অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত মানুষই বেশী। তাদের অনেকেই মার গেছেন এটা যেমন ঠিক। তেমনি অনেকেই তো বেচেও আছেন তাদের কাছে যেতে হবে। তারা কিছু চায় না। তারা আজো একটু ভালোবাসাই চায়।
অনুষ্ঠানের সভাপতি, সঞ্চালক বিআইডিএস এর মহাপরিচালক বিনায়েক সেন বলেন, সংখ্যালঘুরা যতোটা নির্যাতিত হয়েছেন ততোটা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নি। হিন্দু জনগোষ্ঠি ভারতে প্রশিক্ষণে কম ছিল। তারা ভয়ে ছিল। তবে ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নির্যাতিত হয়েছে এটা সত্য।
তিনি বলেন, সাধারণ মানুষের ওপর দিয়ে যেভাবে ঝড় ঝাপটা গেছে সেভাবে সবটুকু লিপিবদ্ধ হয় নাই। নির্যাতিত পরিবারগুরোর বর্তমান অব¯’া কেমন তা নিয়ে গবেষণা করা উচিত। মুক্তিযুদ্ধের ১৬ খন্ডের মধ্যে শুধুমাত্র ১ খন্ডে নির্যাতনের কথা বলা হয়েছে। এতো বিভৎস আর নৃশংস ছিল যে লেখক নির্যাতনের লেখা বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এই নির্যাতন এই কষ্টের কথা শেষ হয় নাই।
বীরঙ্গনা নারীরা কে কেমন আছেন, তাদের বর্তমান আর্থিক অব¯’া বর্তমানে কেমন ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কিছু কাজ করবে বলেও জানান বিআইডিএস মহা পরিচালক বিনায়েক সেন।