alt

জাতীয়

লাগামহীন পিয়াজের বাজার

এস এম জাকির হোসাইন : সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে পিয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ঢুকেছে ৮৯৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরে মায়ানমারের পিয়াজ ঢুকেছে ৫৩৬ টন ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৩৫৮ টন (৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি) পিয়াজ। কনটেইনারে আমদানি করা এসব পিয়াজ খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। মিসর ও চীন থেকে এসব পিয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে একসঙ্গে এত পিয়াজ ঢুকেনি। এছাড়াও মায়ানমারের পিয়াজ ঢুকছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কন্টেইনারে দুটি চালানে ঢুকেছে, যার পরিমাণ ১৭৪ টন। একইসঙ্গে বন্দর দিয়ে ঢুকেছে মিসর থেকে আসা ১৪৫ টন পিয়াজও। তারপরও পিয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। এতে জনজীবনে অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকারক এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। আগের দামে আমদানি করা পিয়াজ সংকটের অজুহাতে তা বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে। সম্প্রতি ভারতের বাজারে পিয়াজের দাম বাড়ায় পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার। রোববার এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পরেই দেশের বাজারে কেজি প্রতি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। রাতারাতি দাম বেড়ে কেজি প্রতি পিয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিন আগেও বাজারে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে বাজার ভেদে ৭০ থেকে ৮৫ টাকার দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় আর ভারতীয় পিয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কোরবানির ঈদের পর থেকে কয়েক ধাপে পিয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহ আগেও পিয়াজের দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টির ছাপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে সোমবার থেকে রাজধানীতে ৩৫টি ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পিয়াজ বিক্রি করছে। একজন ডিলার কেজি প্রতি ৪৫ টাকা দরে প্রতিদিন ১ হাজার কেজি (এক টন) পিয়াজ বিক্রি করবে।

এদিকে ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পিয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ১০-১১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশই আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত থেকে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় রপ্তানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পিয়াজ রপ্তানিতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশেও পিয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

এদিকে কারওয়ান বাজারে পিয়াজ কিনতে আসা বীমা কর্মকর্তা পারভীন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদকে বলেন, আমাদের দেশ একটা মগের মুল্লুক মনে হচ্ছে। কারণ গত সপ্তাহে আমি পিয়াজ কিনেছি ৫০ টাকায়, আর সেই পিয়াজ এখন ১১০ টাকা। এটা কোন স্বাভাবিক কথা? সোমবার শুনলাম ৭০ টাকা কেজি আর আজ এখন কিনছি ১১০ টাকা কেজি। কর্তৃপক্ষের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে এমন লাগামহীনভাবে বাড়ছে পিয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। সোমবার ঘোষণা দিল আর আজ ৪০ টাকা দাম বেড়ে গেল? একদিনে এত টাকা কেন বাড়ল? সরকার কেন এটির তদারকি করে না? কোন পণ্যের দাম বাড়লে খরচ বাড়ে আমাদের। কিন্তু আমাদের তো বাড়তি আয় নেই। তাই পণ্যের দাম বাড়লে বিপাকে পড়ি আমরা সাধারণ ভোক্তারা। আমাদের দেখারও কেউ নেই।

কারওয়ান বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী হৃদয় এজেন্সির মালিক মো. বাবুল সংবাদকে বলেন, আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়েছে বলে আমাদেরকেও বাড়তি দামে বিক্রি বরতে হচ্ছে। আমাদের কেনা পড়েছে বেশি, তাই আগের থেকে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। শ্যামবাজারে পিয়াজ এর পাইকারী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। কারন ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ১ দিন আগে, কিন্তু তাদের কাছে যে পিয়াজ আছে সেগুলো তো আগের দামে কেনা। তাহলে তারা পিয়াজের দাম বাড়িয়েছে কেন? তাদেরকে ধরেন, কেন তারা দাম বাড়াচ্ছে?,

লাকসাম বানিজ্যালয়ের মো. সেলিম সংবাদকে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ আগে দেশি পিয়াজের কেজি ৮০ টাকা ও ভারতের পিয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু রোববার ১২টার পর থেকেই শ্যামবাজার থেকে খবর আসল, সেখানেই পাইকারি বিক্রি করছে ৮০ টাকা। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পিয়াজের দাম বেড়েছে বলে আড়ৎদাররা আমাদেরকে জানিয়েছে। হিলি বন্দরের পিয়াজ আমদানিকারক এবং শ্যামবাজারের আড়ৎদাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এই সংকট খুব তারাতারি সমাধান হওয়ার কোন আভাস পাচ্ছেন না বলে মনে করেন এই ব্যরসায়ী। কারণ ভারত থেকে পিয়াজ আসা বন্ধ আর এখন যেসব দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে সেখান থেকে পিয়াজ আসতেও ২ মাস লাগবে।

এদিকে শ্যামবাজারের পিয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও আলহাজ ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, আমাদের কোন সিন্ডিকেট নেই। চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পিয়াজের রপ্তানি ম্ল্যূ তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৪০ টাকা কেজি পিয়াজ দাম বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। এতদিন এ দরেই পিয়াজ বিক্রি হয়েছে। রোববার সকালেও ওই দামে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্ত বিকেলে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসল ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। বর্তমানে আমদানি করা পিয়াজ (ভারত) পাইকারি বিক্রি করছি ৭৭-৮২ টাকা, বার্মা পিয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা। আর দেশি পিয়াজ বিক্রি করছি ৮০-৮৫ টাকা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন সংবাদকে বলেন, দেশে পিয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই পিয়াজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তারপরও ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় মায়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পিয়াজ আসছে। অন্যদিকে সরকার পিয়াজ বিক্রি করছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। ইতিমধ্যেই মিসর থেকে দুটি পিয়াজবাহী জাহাজ বন্দরে এসে পৌঁছেছে। তুরস্ক থেকেও আসছে পিয়াজ। অন্যদিকে মায়ানমার থেকে ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে যেমন পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, আসছে বর্ডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমেও। এছাড়া টিসিবির ডিলাররা চট্টগ্রামে ১০টি স্থানে এবং ৬টি বিভাগীয় শহরের পাঁচটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পিয়াজ বিক্রি করবেন। এছাড়াও ফরিদপুর এবং উত্তরবঙ্গে ১০ জন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে ১০টি দল ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে। অসৎ উদ্দেশে পিয়াজ মজুতদারি ঠেকাতে দলগুলো তদারকি করবে। কেউ অসৎ উদ্দেশে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে পিয়াজের দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজধানীতে যেসব জায়গায় পাওয়া যাবে টিসিবির পিয়াজবাহী ট্র্যাক : সচিবালয়ের গেইট, ২. প্রেসক্লাব, ৩. কাপ্তান বাজার, ৪. ভিক্টোরিয়া পার্ক, ৫. সায়েন্সল্যাব মোড়, ৬. নিউমার্কেট/নীলক্ষেত মোড়, ৭. শ্যামলী/কল্যাণপুর, ৮. ঝিগাতলা মোড়, ৯. খামারবাড়ি, ফার্মগেট; ১০. কলমীলতা মোড়, ১১. রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট, কচুক্ষেত; ১২. আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, ১৩. রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, উত্তরা; ১৪. মিরপুর-১নং মাজার রোড, ১৫. শান্তিনগর বাজার, ১৬. মালিবাগ বাজার, ১৭. বাসাবো বাজার, ১৮. আইডিয়াল স্কুল, বনশ্রী; ১৯. বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, ২০. মহাখালী কাঁচাবাজার, ২১. শেওড়াপাড়া বাজার, ২২. দৈনিক বাংলা মোড়, ২৩. শাহজাহানপুর বাজার, ২৪. ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, ২৫. মতিঝিল বক চত্বর, ২৬. খিলগাঁও তালতলা বাজার, ২৭. রামপুরা বাজার, ২৮. মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর, ২৯. আশকোনা হাজি ক্যাম্প, ৩০. মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, ৩১. দিলকুশা, ৩২. মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে ও পলাশী মোড়ে।

ছবি

থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা

ছবি

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৩ নতুন বিচারক

ছবি

কক্সবাজারে ভোটার হওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা চায় হাই কোর্ট

ছবি

ব্যাংকক পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

তাপপ্রবাহের এলাকা আরও বাড়বে

ছবি

ব্যাংককের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

বাংলাদেশ ও কাতারের মধ্যে ৫টি চুক্তি ও ৫টি সমঝোতা স্মারক সই

ছবি

ঢাকা ছাড়লেন কাতারের আমির

ছবি

সোমালি জলদস্যুদের দ্বারা জব্দ করা জাহাজ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছে; ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিকের সবাই নিরাপদ

ছবি

পদে থেকেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

পদত্যাগ না করেই ইউপি চেয়ারম্যানরা উপজেলা নির্বাচন করতে পারবেন

ছবি

বান্দরবানের তিন উপজেলায় ভোট স্থগিত : ইসি সচিব

ছবি

তীব্র দাবদাহের মধ্যেও বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড , আছে লোড শেডিংও

ছবি

বাংলাদেশ-কাতার ১০ চুক্তি সই

ছবি

ঢাকা থেকে প্রধান ১৫টি রুটে ট্রেনের ভাড়া যত বাড়ল

ছবি

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে কাতারের আমির

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা বাড়লো আরও ৩ দিন, দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ

ছবি

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক আর্মি কমান্ড এর যৌথ অংশগ্রহণে টিএল-২০২৪ উদ্বোধন

ছবি

শিশু অধিকার বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টিতে মিডিয়ার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ--স্পীকার

ছবি

দু’দিনের সফরে কাতারের আমির ঢাকায়

ছবি

পাঁচ দিনের সফরে বুধবার থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

৪ মে থেকে বাড়ছে ট্রেনের ভাড়া

ছবি

আনু মুহাম্মদের পায়ে ‌‘কম্বাইন্ড অপারেশন’ দরকার: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ছবি

আমরা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার হ্রাস করেছি : শেখ হাসিনা

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, বাড়লো আরও ৩ দিন

ছবি

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণেই কি এত তাপ?

ছবি

ভারতের উজানে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় তিস্তা মরা খালে পরিনত হয়েছে

ছবি

তাপদাহ : হাসপাতাল প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

পিছিয়ে নেই নারীরাও তামিলনাড়ু থেকে ট্রাক নিয়ে বেনাপোল এলেন অন্নপূর্ণা

ছবি

দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ঢাকা আসছেন কাতারের আমির, ১১ টি চুক্তি-সমঝোতা

ছবি

অন্যায় আবদারের কাছে মাথানত করবো না: ইসি আলমগীর

ছবি

তীব্র গরম : হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রাখতে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর নির্দেশ

ছবি

দাবদাহ : হাসপাতালগুলোকে প্রস্তুত রাখার নির্দেশ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর

ছবি

বোরো মৌসুমে ৩২ টাকা কেজি দরে ধান কিনবে সরকার

ছবি

ব্যারিস্টার খোকনকে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে অব্যাহতি

ছবি

‘মুজিব ব্যাটারি’ কমপ্লেক্স উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

tab

জাতীয়

লাগামহীন পিয়াজের বাজার

এস এম জাকির হোসাইন

সোমবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পক্ষ থেকে বলা হয়েছে দেশে পিয়াজের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর সোমবার টেকনাফ ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ঢুকেছে ৮৯৪ মেট্রিক টন। এর মধ্যে টেকনাফ স্থলবন্দরে মায়ানমারের পিয়াজ ঢুকেছে ৫৩৬ টন ও চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি হয়েছে ৩৫৮ টন (৩ লাখ ৬৪ হাজার কেজি) পিয়াজ। কনটেইনারে আমদানি করা এসব পিয়াজ খালাসের প্রক্রিয়া চলছে। মিসর ও চীন থেকে এসব পিয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে একসঙ্গে এত পিয়াজ ঢুকেনি। এছাড়াও মায়ানমারের পিয়াজ ঢুকছে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। ২৯ সেপ্টেম্বর রোববার চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে কন্টেইনারে দুটি চালানে ঢুকেছে, যার পরিমাণ ১৭৪ টন। একইসঙ্গে বন্দর দিয়ে ঢুকেছে মিসর থেকে আসা ১৪৫ টন পিয়াজও। তারপরও পিয়াজের দাম লাগামহীনভাবে বাড়ছেই। এতে জনজীবনে অস্থিরতার নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ক্ষুব্ধ ক্রেতা ও খুচরা ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকারক এবং পাইকারী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পিয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেছে। আগের দামে আমদানি করা পিয়াজ সংকটের অজুহাতে তা বিক্রি করছে দ্বিগুণ দামে। সম্প্রতি ভারতের বাজারে পিয়াজের দাম বাড়ায় পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ রেখেছে দেশটির সরকার। রোববার এ সিদ্ধান্ত জানার পর থেকেই বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা পিয়াজের দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পরেই দেশের বাজারে কেজি প্রতি পিয়াজের দাম বেড়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। রাতারাতি দাম বেড়ে কেজি প্রতি পিয়াজের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়েছে। সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, একদিন আগেও বাজারে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৭০ থেকে ৮৫ টাকা কেজি দরে। কিন্তু একদিনের ব্যবধানে বাজার ভেদে ৭০ থেকে ৮৫ টাকার দেশি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় আর ভারতীয় পিয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে কোরবানির ঈদের পর থেকে কয়েক ধাপে পিয়াজের দাম বেড়েই চলছে। এক সপ্তাহ আগেও পিয়াজের দর ছিল ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তুষ্টির ছাপ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পিয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজধানীর খোলাবাজারে পিয়াজ বিক্রি করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। প্রথমে পাঁচটি স্পটে এ কার্যক্রম শুরু হলেও পর্যায়ক্রমে তা বাড়িয়ে সোমবার থেকে রাজধানীতে ৩৫টি ট্রাকে ন্যায্যমূল্যে পিয়াজ বিক্রি করছে। একজন ডিলার কেজি প্রতি ৪৫ টাকা দরে প্রতিদিন ১ হাজার কেজি (এক টন) পিয়াজ বিক্রি করবে।

এদিকে ট্যারিফ কমিশনের হিসাবে দেশে পিয়াজের বার্ষিক চাহিদা ২৪ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার বিপরীতে দেশের উৎপাদন হয় ১২-১৩ লাখ মেট্রিক টন। বাকি ১০-১১ লাখ টন পিয়াজ আমদানি করতে হয়, যার অধিকাংশই আসে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পিয়াজ রপ্তানিকারক দেশ ভারত থেকে। সম্প্রতি ভারতের কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় রপ্তানি নীতির সংশোধন করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত সব ধরনের পিয়াজ রপ্তানিতে এ নিষেধাজ্ঞা থাকায় বাংলাদেশেও পিয়াজের দাম বাড়তে থাকে।

এদিকে কারওয়ান বাজারে পিয়াজ কিনতে আসা বীমা কর্মকর্তা পারভীন আক্তার ক্ষোভ প্রকাশ করে সংবাদকে বলেন, আমাদের দেশ একটা মগের মুল্লুক মনে হচ্ছে। কারণ গত সপ্তাহে আমি পিয়াজ কিনেছি ৫০ টাকায়, আর সেই পিয়াজ এখন ১১০ টাকা। এটা কোন স্বাভাবিক কথা? সোমবার শুনলাম ৭০ টাকা কেজি আর আজ এখন কিনছি ১১০ টাকা কেজি। কর্তৃপক্ষের সঠিক মনিটরিংয়ের অভাবে এমন লাগামহীনভাবে বাড়ছে পিয়াজের দাম। ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। সোমবার ঘোষণা দিল আর আজ ৪০ টাকা দাম বেড়ে গেল? একদিনে এত টাকা কেন বাড়ল? সরকার কেন এটির তদারকি করে না? কোন পণ্যের দাম বাড়লে খরচ বাড়ে আমাদের। কিন্তু আমাদের তো বাড়তি আয় নেই। তাই পণ্যের দাম বাড়লে বিপাকে পড়ি আমরা সাধারণ ভোক্তারা। আমাদের দেখারও কেউ নেই।

কারওয়ান বাজারের পিয়াজ ব্যবসায়ী হৃদয় এজেন্সির মালিক মো. বাবুল সংবাদকে বলেন, আমদানিকারকরা দাম বাড়িয়েছে বলে আমাদেরকেও বাড়তি দামে বিক্রি বরতে হচ্ছে। আমাদের কেনা পড়েছে বেশি, তাই আগের থেকে বেশি দামে পিয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে। শ্যামবাজারে পিয়াজ এর পাইকারী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। কারন ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে ১ দিন আগে, কিন্তু তাদের কাছে যে পিয়াজ আছে সেগুলো তো আগের দামে কেনা। তাহলে তারা পিয়াজের দাম বাড়িয়েছে কেন? তাদেরকে ধরেন, কেন তারা দাম বাড়াচ্ছে?,

লাকসাম বানিজ্যালয়ের মো. সেলিম সংবাদকে বলেন, গত কয়েক সপ্তাহ আগে দেশি পিয়াজের কেজি ৮০ টাকা ও ভারতের পিয়াজ ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু রোববার ১২টার পর থেকেই শ্যামবাজার থেকে খবর আসল, সেখানেই পাইকারি বিক্রি করছে ৮০ টাকা। ভারতের রপ্তানি বন্ধের খবরে পিয়াজের দাম বেড়েছে বলে আড়ৎদাররা আমাদেরকে জানিয়েছে। হিলি বন্দরের পিয়াজ আমদানিকারক এবং শ্যামবাজারের আড়ৎদাররা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। এই সংকট খুব তারাতারি সমাধান হওয়ার কোন আভাস পাচ্ছেন না বলে মনে করেন এই ব্যরসায়ী। কারণ ভারত থেকে পিয়াজ আসা বন্ধ আর এখন যেসব দেশ থেকে পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে সেখান থেকে পিয়াজ আসতেও ২ মাস লাগবে।

এদিকে শ্যামবাজারের পিয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির নেতা ও আলহাজ ভান্ডারের মালিক মো. শহিদুল ইসলাম সংবাদকে বলেন, আমাদের কোন সিন্ডিকেট নেই। চলতি মাসের ১৩ সেপ্টেম্বর ভারত পিয়াজের রপ্তানি ম্ল্যূ তিনগুণ বাড়িয়ে দেয়। পরে গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ৩৫-৪০ টাকা কেজি পিয়াজ দাম বেড়ে ৬০-৬৫ টাকায় ওঠে। এতদিন এ দরেই পিয়াজ বিক্রি হয়েছে। রোববার সকালেও ওই দামে পিয়াজ বিক্রি হয়েছে। কিন্ত বিকেলে যখন বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর আসল ভারত পিয়াজ রপ্তানি বন্ধ করেছে, তারপর থেকেই দাম বাড়তে থাকে। এখানে আমাদের কোন হাত নেই। বর্তমানে আমদানি করা পিয়াজ (ভারত) পাইকারি বিক্রি করছি ৭৭-৮২ টাকা, বার্মা পিয়াজ ৭৫-৭৭ টাকা। আর দেশি পিয়াজ বিক্রি করছি ৮০-৮৫ টাকা। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে দাম ২০-২৫ টাকা বেড়েছে বলে স্বীকার করেন তিনি।

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দিন সংবাদকে বলেন, দেশে পিয়াজের মজুদ পর্যাপ্ত রয়েছে। তাই পিয়াজ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। তারপরও ভারত থেকে পিয়াজ আমদানি বন্ধ থাকায় মায়ানমার, তুরস্ক ও মিসর থেকে পিয়াজ আসছে। অন্যদিকে সরকার পিয়াজ বিক্রি করছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। ইতিমধ্যেই মিসর থেকে দুটি পিয়াজবাহী জাহাজ বন্দরে এসে পৌঁছেছে। তুরস্ক থেকেও আসছে পিয়াজ। অন্যদিকে মায়ানমার থেকে ঋণপত্রের (এলসি) মাধ্যমে যেমন পিয়াজ আমদানি করা হচ্ছে, আসছে বর্ডার ট্রেডিংয়ের মাধ্যমেও। এছাড়া টিসিবির ডিলাররা চট্টগ্রামে ১০টি স্থানে এবং ৬টি বিভাগীয় শহরের পাঁচটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত পিয়াজ বিক্রি করবেন। এছাড়াও ফরিদপুর এবং উত্তরবঙ্গে ১০ জন যুগ্ম সচিবের নেতৃত্বে ১০টি দল ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে। অসৎ উদ্দেশে পিয়াজ মজুতদারি ঠেকাতে দলগুলো তদারকি করবে। কেউ অসৎ উদ্দেশে কৃত্রিমভাবে সংকট তৈরি করে পিয়াজের দাম বাড়ালে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

রাজধানীতে যেসব জায়গায় পাওয়া যাবে টিসিবির পিয়াজবাহী ট্র্যাক : সচিবালয়ের গেইট, ২. প্রেসক্লাব, ৩. কাপ্তান বাজার, ৪. ভিক্টোরিয়া পার্ক, ৫. সায়েন্সল্যাব মোড়, ৬. নিউমার্কেট/নীলক্ষেত মোড়, ৭. শ্যামলী/কল্যাণপুর, ৮. ঝিগাতলা মোড়, ৯. খামারবাড়ি, ফার্মগেট; ১০. কলমীলতা মোড়, ১১. রজনীগন্ধা সুপার মার্কেট, কচুক্ষেত; ১২. আগারগাঁও তালতলা ও নির্বাচন কমিশন অফিস, ১৩. রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্স, উত্তরা; ১৪. মিরপুর-১নং মাজার রোড, ১৫. শান্তিনগর বাজার, ১৬. মালিবাগ বাজার, ১৭. বাসাবো বাজার, ১৮. আইডিয়াল স্কুল, বনশ্রী; ১৯. বাংলাদেশ ব্যাংক চত্বর, ২০. মহাখালী কাঁচাবাজার, ২১. শেওড়াপাড়া বাজার, ২২. দৈনিক বাংলা মোড়, ২৩. শাহজাহানপুর বাজার, ২৪. ফকিরাপুল বাজার ও আইডিয়াল জোন, ২৫. মতিঝিল বক চত্বর, ২৬. খিলগাঁও তালতলা বাজার, ২৭. রামপুরা বাজার, ২৮. মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর, ২৯. আশকোনা হাজি ক্যাম্প, ৩০. মোহাম্মদপুর টাউনহল কাঁচাবাজার, ৩১. দিলকুশা, ৩২. মাদারটেক নন্দীপাড়া কৃষি ব্যাংকের সামনে ও পলাশী মোড়ে।

back to top