বর্ষায় জলমগ্নতা, শীতে ফেটে চৌচির। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইদানীং আগাম দেখা দিচ্ছে বন্যা, খরা। ২০২২ সালের আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হয় ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকার ফসল।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত হাওরাঞ্চলের এসব সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সি এসিসটেন্স প্রজেক্টের (ফ্রিপ) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সম্প্রতি প্রকল্পটির অর্থছাড় হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হবে। ইতোমধ্যেই সেই সুফল পেতে চলছে হাওরের কৃষকরা।
প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত চলবে। এর আওতায় পতিত জমি চাষের আওতায় আনা, পানি ও শক্তি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতির সম্প্রসারণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদারকরণ, বাণিজ্যিক কৃষির সম্প্রসারণ, উচ্চমূল্য ফসল চাষ, শস্য বৈচিত্র্যকরণ, বন্যা সহনশীল, স্বল্প জীবনকালীন অধিক ফলনশীল ফসলের জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ‘জলবায়ু স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির’ মাধ্যমে বন্যাসহিষ্ণু ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের শস্য নিবিড়তা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডিএই-এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে প্রায় ২ লাখ কৃষক সরাসরি সম্পৃক্ত হবেন। এর মধ্যে দেড় লাখ কৃষক নিয়ে ৪৯৫০টি কৃষক গ্রুপ গঠন করা হবে। এছাড়া, কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ ও কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় অনাবাদি ও পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে এলএলপি (থ্রেড পাইপসহ), ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন, বারিড পাইপ স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ সিস্টেম স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় এগ্রিকালচার মাল্টিপারপাস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কৃষি পণ্য বিপণনে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান এবং বন্যার আপদকালীন সময়ে কৃষি পণ্য সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় কৃষিতে শ্রমিক সংকট দূর কারা, উৎপাদন খরচ কমানো, সময়মত ফসল লাগানো ও কাটার জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প এলাকায় গঠিত কৃষক গ্রুপের মাঝে গার্ডেন টিলার, ড্রায়ার, পাওয়ার থ্রেসার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি ভর্তুকিমূল্যে কৃষকদের দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি
প্রকল্প এলাকায় জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাসমান বেডে সবজি চাষ, বিনা চাষে রসুন চাষ, বস্তায় সবজি চাষ, এডব্লিউডি, বসতবাড়িতে ফল ও সবজি চাষ, কমিউনিটি গার্ডেনিং, সিড ভিলেজ, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট ইত্যাদি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে। সেই সঙ্গে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষার জন্য বন্যাসহিষ্ণু এবং স্বল্প জীবনকালীন অধিক ফলনশীল ধানের জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ ডাল, তেল, মসলা, ফল ও সবজি চাষের মাধ্যমে শস্য ‘বৈচিত্র্যকরণ’ করা প্রকল্পের অন্যতম দিক। প্রকল্পটি হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকার ৪ বিভাগের ৭ জেলার ৬৫টি উপজেলার পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওড় অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং টেকসই জীবিকায়ন নিশ্চিত হবে, প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
ফ্রিপ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. তৌফিকুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কৃষিজমির হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান জমির উর্বরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফ্রিপ প্রকল্পটি গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত সর্বশেষ টেকসই জাত ও ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।’
ফ্রিপ প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সংবাদকে বলেন, ‘উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের ফলে খাদ্যশস্য, সবজি ও ফল উৎপাদনে বৈচিত্র্য এসেছে এবং ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।’
‘প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল বিভিন্ন ফসল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাওড় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার মানের উন্নয়নের সূচনা হয়েছে’ বলে দাবি তার।
বুধবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৩
বর্ষায় জলমগ্নতা, শীতে ফেটে চৌচির। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ইদানীং আগাম দেখা দিচ্ছে বন্যা, খরা। ২০২২ সালের আকস্মিক বন্যায় নষ্ট হয় ১ হাজার ১১৩ কোটি টাকার ফসল।
দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলে বিস্তৃত হাওরাঞ্চলের এসব সমস্যা সমাধানে ২০২৩ সালের এপ্রিলে ফ্লাড রিকনস্ট্রাকশন ইমার্জেন্সি এসিসটেন্স প্রজেক্টের (ফ্রিপ) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। সম্প্রতি প্রকল্পটির অর্থছাড় হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা জানান, এ প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুত কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জিত হবে। ইতোমধ্যেই সেই সুফল পেতে চলছে হাওরের কৃষকরা।
প্রকল্পটি ২০২৬ সালের মার্চ পর্যন্ত চলবে। এর আওতায় পতিত জমি চাষের আওতায় আনা, পানি ও শক্তি সাশ্রয়ী সেচ পদ্ধতির সম্প্রসারণ, খামার যান্ত্রিকীকরণ জোরদারকরণ, বাণিজ্যিক কৃষির সম্প্রসারণ, উচ্চমূল্য ফসল চাষ, শস্য বৈচিত্র্যকরণ, বন্যা সহনশীল, স্বল্প জীবনকালীন অধিক ফলনশীল ফসলের জাত সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি করা হবে বলে জানান প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।
এছাড়া ‘জলবায়ু স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তির’ মাধ্যমে বন্যাসহিষ্ণু ফসল উৎপাদন ব্যবস্থার প্রবর্তন ও আধুনিক পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির মাধ্যমে ফসলের শস্য নিবিড়তা বাড়ানো হচ্ছে। কৃষক এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি এবং ডিএই-এর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধিও এ প্রকল্পের উদ্দেশ্য।
ফ্রিপ প্রকল্পের আওতায় পর্যায়ক্রমে প্রায় ২ লাখ কৃষক সরাসরি সম্পৃক্ত হবেন। এর মধ্যে দেড় লাখ কৃষক নিয়ে ৪৯৫০টি কৃষক গ্রুপ গঠন করা হবে। এছাড়া, কৃষকের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ ও কৃষি উদ্যোক্তা তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।
প্রকল্পের আওতায় অনাবাদি ও পতিত জমিকে চাষের আওতায় আনতে পানির সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতে এলএলপি (থ্রেড পাইপসহ), ড্রিপ ইরিগেশন সিস্টেম স্থাপন, বারিড পাইপ স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ চালিত সেচ সিস্টেম স্থাপন করা হবে। পাশাপাশি প্রকল্প এলাকায় এগ্রিকালচার মাল্টিপারপাস সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়ন ও কৃষি পণ্য বিপণনে প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ প্রদান এবং বন্যার আপদকালীন সময়ে কৃষি পণ্য সংরক্ষণের সুযোগ তৈরি করা হচ্ছে।
প্রকল্প এলাকায় কৃষিতে শ্রমিক সংকট দূর কারা, উৎপাদন খরচ কমানো, সময়মত ফসল লাগানো ও কাটার জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রকল্প এলাকায় গঠিত কৃষক গ্রুপের মাঝে গার্ডেন টিলার, ড্রায়ার, পাওয়ার থ্রেসার ইত্যাদি কৃষি যন্ত্রপাতি ভর্তুকিমূল্যে কৃষকদের দেয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি
প্রকল্প এলাকায় জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে ভাসমান বেডে সবজি চাষ, বিনা চাষে রসুন চাষ, বস্তায় সবজি চাষ, এডব্লিউডি, বসতবাড়িতে ফল ও সবজি চাষ, কমিউনিটি গার্ডেনিং, সিড ভিলেজ, মাটির স্বাস্থ্য রক্ষায় ভার্মি কম্পোস্ট ইত্যাদি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ করা হবে। সেই সঙ্গে আগাম বন্যা থেকে ফসল রক্ষার জন্য বন্যাসহিষ্ণু এবং স্বল্প জীবনকালীন অধিক ফলনশীল ধানের জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণসহ ডাল, তেল, মসলা, ফল ও সবজি চাষের মাধ্যমে শস্য ‘বৈচিত্র্যকরণ’ করা প্রকল্পের অন্যতম দিক। প্রকল্পটি হাওর ও আকস্মিক বন্যাপ্রবণ এলাকার ৪ বিভাগের ৭ জেলার ৬৫টি উপজেলার পতিত জমি চাষের আওতায় আসবে।
প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে হাওড় অঞ্চলের কৃষকের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে এবং টেকসই জীবিকায়ন নিশ্চিত হবে, প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।
ফ্রিপ প্রকল্প পরিচালক (পিডি) ড. তৌফিকুর রহমান সংবাদকে বলেন, ‘খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রকল্পটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। সেই সঙ্গে কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, কৃষিজমির হ্রাস, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমহ্রাসমান জমির উর্বরতা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ফ্রিপ প্রকল্পটি গবেষণা থেকে উদ্ভাবিত সর্বশেষ টেকসই জাত ও ক্লাইমেট স্মার্ট প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করবে।’
ফ্রিপ প্রকল্পের বিষয়ে জানতে চাইলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বাদল চন্দ্র বিশ্বাস সংবাদকে বলেন, ‘উচ্চফলনশীল ও প্রতিকূলতা সহিষ্ণু নতুন নতুন জাত উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণের ফলে খাদ্যশস্য, সবজি ও ফল উৎপাদনে বৈচিত্র্য এসেছে এবং ফসল উৎপাদনে বাংলাদেশ অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে।’
‘প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু অভিঘাত সহনশীল বিভিন্ন ফসল ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে হাওড় অঞ্চলের মানুষের জীবন ও জীবিকার মানের উন্নয়নের সূচনা হয়েছে’ বলে দাবি তার।