alt

জাতীয়

বিশ্ব পানি দিবস আজ

পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিতকরণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

আবাসিক পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। সমপরিমাণ পানির জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা নেয় ১৮ টাকা। আর খুলনা ওয়াসার একই পরিমাণ পানির দাম ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। খুলনা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের চালনার বাসিন্দাদের কেবল এক লিটার পানির জন্যই গুনতে হয় ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা।

পানির দামের এ ধরনের বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যতা আনতে ২০০৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ অবস্থায় বুধবার (২২ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পানি ও স্যানিটেশনের সংকট কাটাতে পরিবর্তনে গতি আনা’।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে সরকারি নীতি মনোযোগের বৈষম্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ দরকার, সে বিষয়ে উদাসীনতা থেকেই যাচ্ছে।

গ্রাম ও শহরের বৈষম্য : লোনাপানির দাপটে উপকূলীয় এলাকা খুলনার দাকোপে খাওয়ার পানির সংকট তীব্র। আর এ অভাব মেটাতে স্থানীয়ভাবে অনেকেই ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তা পরিশোধন করে সরবরাহ করেন। উপকূলজুড়ে বেসরকারি খাতের এ উদ্যোগ রমরমা। তাঁদের কাছ থেকে মানুষকে চড়া মূল্যে পানি কিনতে হয়।

দাকোপের চালনা পৌর এলাকার বাসিন্দা লিপিকা বৈরাগী গত সোমবার ৬০ টাকায় ৬০ লিটার পানি কিনেছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এখানে কারও বাড়িতে গেলে একবেলা ভাত খাতি পারবেন সহজে। কিন্তু এক ঘড়া পানি কেউ আপনারে দেবে না।’

চালনা পৌরসভার মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘পৌরসভার অন্তত ৩০ ভাগ মানুষ এখনো পুকুরের পানি পান করেন। প্রতি লিটার পানির দাম ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। যে যেভাবে পারে নেয়।’

চালনার মানুষের গড় আয় খুলনা নগরের চেয়ে বেশি না হওয়ারই কথা। কিন্তু তাঁদের খুলনার চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি দামে পানি কিনতে হয়। লিপিকা বৈরাগীর মতে, ‘এ বৈষম্য পাহাড়সমান এবং অমানবিক।’

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখিয়েছে, দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঢাকার চেয়ে সাড়ে তিন শ থেকে চার শ গুণ বেশি দামে পানি কেনেন।

শহরে শহরে পানির বৈষম্য : উত্তরবঙ্গের নওগাঁ পৌরসভা প্রতিদিন ১২ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করে। পৌর এলাকার বাসাবাড়িতে ১ বা ২ ইঞ্চি পাইপে সরবরাহ করা পানির জন্য মাসে বিল দিতে হয় ২৫০ টাকা। আর ৩ বা ৪ ইঞ্চি পাইপের জন্য গ্রাহকপ্রতি মাসিক বিল ৩৫০ টাকা। আগামী বছর থেকে এক হাজার লিটারে পানির মূল্য নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী নিজামুল হক জানান, প্রতি হাজার লিটার পানির দাম হতে পারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

নওগাঁর পাশের জেলা রাজশাহী। নগরের ওয়াসা এক হাজার লিটার পানির দাম নেয় ৬ টাকা ৮১ পয়সা। নওগাঁর সঙ্গে পানির দামের এক বৈপরীত্য প্রসঙ্গে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত ছোট শহরের মানুষকে বড় শহরের চেয়ে বেশি দামে পানি নিতে হয়। একটা ন্যায্যতা এ ক্ষেত্রে দরকার।’

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ২০১৯ সালে ‘ওয়াটার গভর্নেন্স ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ঢাকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার ৩৬০ লিটার। এর মধ্যে বাড্ডা, কুড়িল ও জোয়ার সাহারা এলাকার মানুষের পানির গড় ব্যবহার ২১৫ লিটার। আর গুলশান ও বনানী এলাকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার ৫০৯ লিটার। ঢাকায় নিম্ন আয় এবং উচ্চ আয়ের মানুষের পানির মূল্য একই, প্রতি হাজার লিটারে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা।

আয়ের নিরিখে সমতাভিত্তিক মূল্য নির্ধারণের কথা ঢাকা ওয়াসা অনেক দিন ধরেই বলে যাচ্ছে। কিন্তু এটি এখনো কথাবার্তার পর্যায়েই রয়ে গেছে।

দেড় দশকের প্রচেষ্টার ফল নেই : পানির মূল্যে ন্যায্যতা আনতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) ২০০৭ সালে এডিবির সঙ্গে কাজ শুরু করে। ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন রেগুলেটরি কমিশন (ডব্লিউএসএসআরসি) গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়। তৈরি করা হয় প্রয়োজনীয় নীতিমালা। এ জন্য সরকারি কর্মকর্তারা ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া সফর করেন। একটি আইনের খসড়াও তৈরি হয়। এ প্রক্রিয়া চলে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। তবে আইনটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ও আইনের খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওয়াসাগুলো চায় না যে এমন কোনো কর্তৃপক্ষ হোক। তাতে তাদের বোর্ডের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করে তারা। বিশেষ করে ঢাকা ওয়াসা এ বিষয়ে তখন সোচ্চার ছিল।’

তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘পানির দামের ন্যায্যতা দরকার। আর একটি রেগুলেটরি কমিশনের কথা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা উল্লেখ করেছি।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে তাঁদের কোনো সাম্প্রতিক তৎপরতায় ঢাকা ওয়াসা বাধা দেয়নি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে তাঁদের কোনো সাম্প্রতিক তৎপরতায় ঢাকা ওয়াসা বাধা দেয়নি।

পানির দামের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বলে মনে করেন পানি আইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘পানির দামের ক্ষেত্রে বড় আকারের বৈষম্য রয়েছে। এর নিরসন দরকার।’

ছবি

বৃষ্টিপাত কমার আভাস, সরানো হলো সতর্ক সংকেত

ছবি

১৮ বিচারককে অবসরে পাঠাল সরকার

প্রধান উপদেষ্টার উপহারের আম গেলো ত্রিপুরা

৯৮৪টি প্রতিষ্ঠানে শতভাগ উত্তীর্ণ, ১৩৪টি প্রতিষ্ঠানে কেউ পাস করেনি

ঢাকায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় স্থাপনে খসড়া অনুমোদন

৪৮তম বিশেষ বিসিএস পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য ভিত্তিহীন: পিএসসি

নির্মাণাধীন ভবনে সাবেক সচিব, বিচারক ও কর্মকর্তার ফ্ল্যাট, অনুসন্ধানে দুদক

দেশে আবার ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থা যাতে তৈরি না হয়, সে বিষয়ে সবাই একমত: আলী রীয়াজ

সরকারি নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল

এস আলম ও পরিবারের সিঙ্গাপুরে ব্যাংক হিসাব ও শেয়ার অবরুদ্ধের আদেশ

অর্থ আত্মসাৎ স্বাস্থ্যের সাবেক পরিচালকসহ ২ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

রাজধানীতে বাসের ধাক্কায় সড়কে প্রাণ গেল অন্তঃসত্ত্বার

ছবি

প্রতিবন্ধকতাকে উড়িয়ে এসএসসিতে অদম্য লিতুন জিরার চমক

ডেঙ্গু: চলতি বছরে আক্রান্ত প্রায় ১৪ হাজার, মোট মৃত্যু ৫৪ জনের

ছবি

বিএসএফ সীমান্তরক্ষী নয়, একটি খুনি বাহিনী: নাহিদ

ছবি

মোবাইল তুলতে গিয়ে ৪ চা শ্রমিকের মৃত্যু, বাগানে শোকের ছায়া

শাপলা-দোয়েল বাদ, যুক্ত হচ্ছে বেগুন, লাউ, লিচু

আইসিসিতে বিচার দাবি অ্যামনেস্টির

ছবি

নোয়াখালীতে টানা ভারী বর্ষণে পানিবন্দী ৬৩,৮৬০ পরিবার, আশ্রয়কেন্দ্রে ২৬৮ পরিবার, জনদুর্ভোগ চরমে

গণমাধ্যম সংস্কারে তথ্য মন্ত্রণালয়ের ১২ নতুন সিদ্ধান্ত

আরপিও, নির্বাচন কর্মকর্তা, আইন সংশোধনসহ এক গুচ্ছ সুপারিশ নিয়ে ইসির বৈঠক

পাসের হারে শীর্ষে রাজশাহী, পিছিয়ে বরিশাল বোর্ড

মার্কিন শুল্ক নিয়ে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনা আজ শেষ হচ্ছে, প্রথম দিনের আলোচনায় ‘বেশিরভাগ ইস্যুতে ঐকমত্য’

ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশনায় সন্তুষ্ট বিএনপি

ছবি

১৫ বছর পর এসএসসি ও সমমানের ফলে ছন্দপতন, ১৯ লাখ পরীক্ষার্থীর ছয় লাখই ফেল

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে হাসিনার বিচার শুরু, দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হলেন সাবেক আইজিপি মামুন

ছবি

চীন ও কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

১৮ জুলাই গ্রাহকদের ১ জিবি ফ্রি ডেটা দিতে নির্দেশনা জারি করেছে বিটিআরসি

ছবি

শহীদ ও আহতদের জন্য আলাদা দুটি ফ্ল্যাট প্রকল্প একনেকে যাচ্ছে

ছবি

জাতিসংঘের নির্যাতনবিরোধী ঐচ্ছিক প্রোটোকলসহ কয়েকটি প্রস্তাব অনুমোদন

ছবি

মাধ্যমিকে পাসের হার ৬৮.৪৫ শতাংশ

ছবি

রাষ্ট্র সংস্কারে অগ্রগতি, কিন্তু এখন মৌলিক বিষয়ে ঐকমত্য জরুরি: আলী রীয়াজ

ছবি

শাপলা-দোয়েল বাদ, নতুন তালিকায় ১১৫ প্রতীক

ছবি

বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তাদের এবার বাদ দেওয়ার চিন্তা

ছবি

জুলাই আহতদের জন্য ঢাকায় দেড় হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণ করবে সরকার

ছবি

শেখ হাসিনার কল রেকর্ড ‘ট্রেলারমাত্র’, উদ্ধার করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা: তাজুল ইসলাম

tab

জাতীয়

বিশ্ব পানি দিবস আজ

পানি ও স্যানিটেশন সংকট সমাধানে পরিবর্তন ত্বরান্বিতকরণ

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

বুধবার, ২২ মার্চ ২০২৩

আবাসিক পর্যায়ে ঢাকা ওয়াসার এক হাজার লিটার পানির দাম ১৫ টাকা ১৮ পয়সা। সমপরিমাণ পানির জন্য চট্টগ্রাম ওয়াসা নেয় ১৮ টাকা। আর খুলনা ওয়াসার একই পরিমাণ পানির দাম ৮ টাকা ৯৮ পয়সা। খুলনা শহর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের চালনার বাসিন্দাদের কেবল এক লিটার পানির জন্যই গুনতে হয় ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা।

পানির দামের এ ধরনের বৈষম্য কমিয়ে ন্যায্যতা আনতে ২০০৭ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) সহযোগিতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ একটি নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর আলোর মুখ দেখেনি।

এ অবস্থায় বুধবার (২২ মার্চ) পালিত হচ্ছে বিশ্ব পানি দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘পানি ও স্যানিটেশনের সংকট কাটাতে পরিবর্তনে গতি আনা’।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে সরকারি নীতি মনোযোগের বৈষম্য রয়েছে। এ ক্ষেত্রে যে অবকাঠামোগত বিনিয়োগ দরকার, সে বিষয়ে উদাসীনতা থেকেই যাচ্ছে।

গ্রাম ও শহরের বৈষম্য : লোনাপানির দাপটে উপকূলীয় এলাকা খুলনার দাকোপে খাওয়ার পানির সংকট তীব্র। আর এ অভাব মেটাতে স্থানীয়ভাবে অনেকেই ভূগর্ভস্থ পানি তুলে তা পরিশোধন করে সরবরাহ করেন। উপকূলজুড়ে বেসরকারি খাতের এ উদ্যোগ রমরমা। তাঁদের কাছ থেকে মানুষকে চড়া মূল্যে পানি কিনতে হয়।

দাকোপের চালনা পৌর এলাকার বাসিন্দা লিপিকা বৈরাগী গত সোমবার ৬০ টাকায় ৬০ লিটার পানি কিনেছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘এখানে কারও বাড়িতে গেলে একবেলা ভাত খাতি পারবেন সহজে। কিন্তু এক ঘড়া পানি কেউ আপনারে দেবে না।’

চালনা পৌরসভার মেয়র সনৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, ‘পৌরসভার অন্তত ৩০ ভাগ মানুষ এখনো পুকুরের পানি পান করেন। প্রতি লিটার পানির দাম ৫০ পয়সা থেকে ১ টাকা। যে যেভাবে পারে নেয়।’

চালনার মানুষের গড় আয় খুলনা নগরের চেয়ে বেশি না হওয়ারই কথা। কিন্তু তাঁদের খুলনার চেয়ে কয়েক শ গুণ বেশি দামে পানি কিনতে হয়। লিপিকা বৈরাগীর মতে, ‘এ বৈষম্য পাহাড়সমান এবং অমানবিক।’

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটারএইড ২০১৪ সালের এক গবেষণায় দেখিয়েছে, দক্ষিণের উপকূলীয় এলাকার মানুষ ঢাকার চেয়ে সাড়ে তিন শ থেকে চার শ গুণ বেশি দামে পানি কেনেন।

শহরে শহরে পানির বৈষম্য : উত্তরবঙ্গের নওগাঁ পৌরসভা প্রতিদিন ১২ লাখ লিটার পানি সরবরাহ করে। পৌর এলাকার বাসাবাড়িতে ১ বা ২ ইঞ্চি পাইপে সরবরাহ করা পানির জন্য মাসে বিল দিতে হয় ২৫০ টাকা। আর ৩ বা ৪ ইঞ্চি পাইপের জন্য গ্রাহকপ্রতি মাসিক বিল ৩৫০ টাকা। আগামী বছর থেকে এক হাজার লিটারে পানির মূল্য নির্ধারণের পরিকল্পনা করছে পৌর কর্তৃপক্ষ। পৌরসভার পানি সরবরাহ শাখার সহকারী প্রকৌশলী নিজামুল হক জানান, প্রতি হাজার লিটার পানির দাম হতে পারে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা।

নওগাঁর পাশের জেলা রাজশাহী। নগরের ওয়াসা এক হাজার লিটার পানির দাম নেয় ৬ টাকা ৮১ পয়সা। নওগাঁর সঙ্গে পানির দামের এক বৈপরীত্য প্রসঙ্গে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জাকির হোসেন মঙ্গলবার (২১ মার্চ) বলেন, ‘অপেক্ষাকৃত ছোট শহরের মানুষকে বড় শহরের চেয়ে বেশি দামে পানি নিতে হয়। একটা ন্যায্যতা এ ক্ষেত্রে দরকার।’

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্নেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) ২০১৯ সালে ‘ওয়াটার গভর্নেন্স ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায়, ঢাকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার ৩৬০ লিটার। এর মধ্যে বাড্ডা, কুড়িল ও জোয়ার সাহারা এলাকার মানুষের পানির গড় ব্যবহার ২১৫ লিটার। আর গুলশান ও বনানী এলাকায় মাথাপিছু পানির ব্যবহার ৫০৯ লিটার। ঢাকায় নিম্ন আয় এবং উচ্চ আয়ের মানুষের পানির মূল্য একই, প্রতি হাজার লিটারে ১৫ টাকা ১৮ পয়সা।

আয়ের নিরিখে সমতাভিত্তিক মূল্য নির্ধারণের কথা ঢাকা ওয়াসা অনেক দিন ধরেই বলে যাচ্ছে। কিন্তু এটি এখনো কথাবার্তার পর্যায়েই রয়ে গেছে।

দেড় দশকের প্রচেষ্টার ফল নেই : পানির মূল্যে ন্যায্যতা আনতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি) ২০০৭ সালে এডিবির সঙ্গে কাজ শুরু করে। ওয়াটার সাপ্লাই অ্যান্ড স্যানিটেশন রেগুলেটরি কমিশন (ডব্লিউএসএসআরসি) গঠনেরও প্রক্রিয়া শুরু হয়। তৈরি করা হয় প্রয়োজনীয় নীতিমালা। এ জন্য সরকারি কর্মকর্তারা ফিলিপাইন ও মালয়েশিয়া সফর করেন। একটি আইনের খসড়াও তৈরি হয়। এ প্রক্রিয়া চলে ২০১৬ সাল পর্যন্ত। তবে আইনটি আর আলোর মুখ দেখেনি।

এই উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত ও আইনের খসড়া তৈরির সঙ্গে যুক্ত একজন বিশেষজ্ঞ নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘ওয়াসাগুলো চায় না যে এমন কোনো কর্তৃপক্ষ হোক। তাতে তাদের বোর্ডের ক্ষমতা ক্ষুণ্ণ হবে বলে মনে করে তারা। বিশেষ করে ঢাকা ওয়াসা এ বিষয়ে তখন সোচ্চার ছিল।’

তবে এই প্রক্রিয়া নিয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। গত সোমবার তিনি বলেন, ‘পানির দামের ন্যায্যতা দরকার। আর একটি রেগুলেটরি কমিশনের কথা ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আমরা উল্লেখ করেছি।’

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে তাঁদের কোনো সাম্প্রতিক তৎপরতায় ঢাকা ওয়াসা বাধা দেয়নি।

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী আরও বলেন, পানির দামে ন্যায্যতা আনতে তাঁদের কোনো সাম্প্রতিক তৎপরতায় ঢাকা ওয়াসা বাধা দেয়নি।

পানির দামের ক্ষেত্রে ন্যায্যতা দেশের মানুষের সাংবিধানিক অধিকার বলে মনে করেন পানি আইন তৈরির সঙ্গে যুক্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, ‘পানির দামের ক্ষেত্রে বড় আকারের বৈষম্য রয়েছে। এর নিরসন দরকার।’

back to top