alt

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালির জীবনে এক কালজয়ী দিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক : মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির জীবনে এক কালজয়ী দিন। আজ বাঙালির হৃদয় যেমন স্বজন হারানোর বেদনায় হাহাকার করে, তেমনি অধিকার আদায়ের আনন্দেও উদ্বেলিত হয়। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই কোটি কণ্ঠ গেয়ে উঠবে সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ ধর্ম-বর্ণ, পেশা-বয়স নির্বিশেষে সব মানুষ ভাষাবীরদের প্রতি ফুলের ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় প্রভাত ফেরি করবে, শহীদ মিনারে জমায়েত হবে। অঙ্গীকার করবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার।

আজ একুশ শুধু বাঙালির নয়, গোটা বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে দুটি দেশ। ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই একসাথে পথ চলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দূরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালী। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয় এ আঘাত বাঙালী সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীরা ফুঁসে উঠতে থাকে। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে গোঁয়ার পাকিস্তানীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার ভাষা আন্দোলনকে বানচাল করতে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাইকযোগে প্রচার করে ‘আগামী এক মাস ১৪৪ ধারা চলাকালে কোন মিটিং-মিছিল করা চলবে না। এমনকি পাঁচ জন একত্রে হাঁটাচলাও করতে পারবে না।’ ওইদিন রাতেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রসভা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করা সেøাগানে অগ্রসরমান একটি মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হোস্টেলের সামনে পৌঁছলে পুলিশের অতর্কিত গুলিবর্ষেণ। রফিক, জববার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকের বুকের রক্তে ভেসে যায় পিচঢালা রাজপথ। শহীদদের রক্তের লালিমা যেন আরও প্রগাঢ় করে পলাশ-শিমুল ও কৃষ্ণচূঁড়াকে। এই খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে বাঙালির মতো বিক্ষোভ-প্রতিবাদে তেতে ওঠে সেদিনকার শীতার্ত প্রকৃতিও। সেই থেকেই আমরা পেয়েছি ‘অ আ ক খ’ সহ আমাদের বর্ণমালা। এ ঐতিহাসিক আন্দোলনের বীজমন্ত্র থেকেই বাংলাদেশিরা স্বাধিকার আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজ পতাকা আর স্বাধীনতা।

অমর একুশে উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। এ দিনটি পালনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জনপদেও চলছে নানা আয়োজন। শহীদ মিনারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে। আজ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস উপলক্ষে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আজ জাতি রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

গতকাল রাতে অমর একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর কূটনৈতিকবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ভাষা সৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সকল সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

ইতোমধ্যেই অমর একুশে পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাত ফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ। মঙ্গলবার রাত আটটা থেকেই এটি কার্যকর হয়। সন্ধ্যার পর থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধুমাত্র সুর্নিদিষ্ট স্ট্রিকার সম্বলিত যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। অন্যদিকে শহীদ মিনার এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধে ছদ্মবেশে ও সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা নজরদারী করবে। তাছাড়া র‌্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও র‌্যাব ডগ স্কোয়াড শহীদ মিনার এলাকায় প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রস্তুত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্সও।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

ছবি

সরকার নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

টিআইবির প্রশ্ন: ভবিষ্যৎ মন্ত্রীদের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কেনায় অতি আগ্রহ কেন?

ছবি

নাহিদ ইসলামের জবানবন্দি: ছাত্রদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ আখ্যায়িত করে অপমানিত করা হয়েছে

ছবি

জাতিসংঘের ৮০তম সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস

ছবি

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ

ছবি

আমি যে কাজ করেছি তা বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনদিন হয় নি: সিলেটে আসিফ নজরুল

ছবি

অগ্রণী ব্যাংকে শেখ হাসিনার দুটি লকার জব্দ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, নতুন ভর্তি ৬২২

ছবি

মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে জাতিসংঘে যাচ্ছেন ফখরুল-তাহের-আখতার

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে চারটি পদ্ধতির পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

ছবি

ডেমু ট্রেন কেনায় রাষ্ট্রের ক্ষতি, দুদকের মামলা

ছবি

বাংলাদেশ ও ব্রাজিলের প্রধান বিচারপতির বৈঠক

ছবি

ট্রাইব্যুনাল: নাহিদের সাক্ষ্য বুধবার, মাহমুদুর রহমানের জেরা শুরু

ছবি

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, দলগুলোর সঙ্গে বুধবার আবার আলোচনায় বসছে ঐকমত্য কমিশন

ছবি

ভারতীয় হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা: বাংলাদেশ-ভারতের ভৌগোলিক নৈকট্য ও আন্তঃনির্ভতা নতুন সুযোগে রূপান্তরের সম্ভাবনা

ছবি

ধর্মীয় উৎসবে অতিরিক্ত নিরাপত্তা নয়, সমান নাগরিক অধিকারের বাংলাদেশ চান প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস

ছবি

ভুয়া প্রমাণিত হলে জুলাই যোদ্ধাদের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ

ছবি

মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলায় নাহিদ ইসলামের সাক্ষ্য বুধবার

ছবি

জুলাই আন্দোলন: ইনু-নূরসহ ৯ আসামির ভার্চুয়াল হাজিরা

ছবি

বাংলাদেশে উষ্ণায়নের প্রভাব: কর্মদিবস নষ্ট, অর্থনীতি ও স্বাস্থ্যে বড় ক্ষতি

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দিতে কাজ করছে সরকার: বাণিজ্য সচিব

ছবি

ডেঙ্গু মোকাবিলায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ১২ দফা জরুরি নির্দেশনা

ছবি

দুর্গাপূজা প্রস্তুতি নিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠক

ছবি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালকদের দপ্তর বদল, একজনকে ওএসডি

ছবি

ফিলিস্তিনের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানাল বাংলাদেশ

ছবি

আরও ১ মাস বাড়লো ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, আক্রান্ত ছাড়াল ৩৮ হাজার

বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক আরও গভীর করতে অঙ্গীকার ইউনূসের

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে সংস্কার সম্পন্ন করা জরুরি : মাইকেল মিলার

ছবি

প্রধান উপদেষ্টার হাতে ১২ তরুণ পেলেন ‘ইয়ুথ ভলান্টিয়ার অ্যাওয়ার্ড’

ছবি

ইসিতে নিবন্ধন: নতুন দলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ চলছে

ছবি

সেপ্টেম্বরের শেষে অংশীজনদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি

ছবি

দ্বিমতের কোনো জায়গা নাই, এই সুযোগ আর আসবে না: ইউনূস

ছবি

নতুন বেতন কাঠামো নির্ধারিত সময়ের আগেই

ছবি

মালয়েশিয়া কর্মী পাঠানোতে ১১৫৯ কোটি টাকা আত্মসাত: ১৩ রিক্রুটিং এজেন্সির বিরুদ্ধে দুদকের মামলা সিদ্ধান্ত

ছবি

টাইফয়েড টিকা কর্মসূচি: দেড় মাসে নিবন্ধন প্রায় ৮৯ লাখ শিশু

tab

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস বাঙালির জীবনে এক কালজয়ী দিন

নিজস্ব বার্তা পরিবেশক

মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

আজ মহান একুশে ফেব্রুয়ারি। আজ শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির জীবনে এক কালজয়ী দিন। আজ বাঙালির হৃদয় যেমন স্বজন হারানোর বেদনায় হাহাকার করে, তেমনি অধিকার আদায়ের আনন্দেও উদ্বেলিত হয়। একুশের প্রথম প্রহর থেকেই কোটি কণ্ঠ গেয়ে উঠবে সেই অমর গান ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি।’ ধর্ম-বর্ণ, পেশা-বয়স নির্বিশেষে সব মানুষ ভাষাবীরদের প্রতি ফুলের ভালোবাসা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় প্রভাত ফেরি করবে, শহীদ মিনারে জমায়েত হবে। অঙ্গীকার করবে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার।

আজ একুশ শুধু বাঙালির নয়, গোটা বিশ্বের সব ভাষাভাষী মানুষের। ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক মহান একুশের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষণার পর থেকে প্রতিবছর আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দিবসটি পালিত হচ্ছে।

১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে গড়ে ওঠে দুটি দেশ। ভারত ও পাকিস্তান। বর্তমান বাংলাদেশ তখন পাকিস্তানের অংশ। কিন্তু তা কাগজে কলমে। আদতে পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাস শিল্প সংস্কৃতির সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের কোন মিল ছিল না। বরং দুই অঞ্চলের মানুষের মধ্যে জায়গা করে নিয়েছিল সংশয় সন্দেহ। আর তাই একসাথে পথ চলার শুরুতেই বিরাট বাধা। পাকিস্তানের শাসকরা রাষ্ট্রের ভাষা হিসেবে উর্দুকে প্রতিষ্ঠার দূরভিসন্ধি নিয়ে এগোতে থাকে। কিন্তু মায়ের ভাষা বাংলা ভুলে নতুন ভাষা শেখার কথা চিন্তাও করতে পারে না বাঙালী। তাদের উপলব্ধি হয়, শুধু ভাষার প্রতি নয় এ আঘাত বাঙালী সংস্কৃতির ওপর। প্রতিবাদে তাই ফেটে পড়ে তারা। রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলা ভাষাভাষীরা ফুঁসে উঠতে থাকে। বিশেষ করে ছাত্ররা বাংলার মর্যাদা রক্ষায় সর্বোচ্চ ত্যাগের জন্য প্রস্তুত হয়। এর পরও দারুণ স্পর্ধা দেখিয়ে চলে গোঁয়ার পাকিস্তানীরা। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান হয়ে ওঠে জ্বলন্ত আগ্নেয়গিরি। পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকার ভাষা আন্দোলনকে বানচাল করতে ২০ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা ৬টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় মাইকযোগে প্রচার করে ‘আগামী এক মাস ১৪৪ ধারা চলাকালে কোন মিটিং-মিছিল করা চলবে না। এমনকি পাঁচ জন একত্রে হাঁটাচলাও করতে পারবে না।’ ওইদিন রাতেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ নেতৃবৃন্দ ২১ ফেব্রুয়ারি সকাল ১০টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমতলায় ছাত্রসভা ও ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে অনুযায়ী আকাশ-বাতাস প্রকম্পিত করা সেøাগানে অগ্রসরমান একটি মিছিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল হোস্টেলের সামনে পৌঁছলে পুলিশের অতর্কিত গুলিবর্ষেণ। রফিক, জববার, সালাম, বরকত, শফিউরসহ নাম না জানা অনেকের বুকের রক্তে ভেসে যায় পিচঢালা রাজপথ। শহীদদের রক্তের লালিমা যেন আরও প্রগাঢ় করে পলাশ-শিমুল ও কৃষ্ণচূঁড়াকে। এই খবর মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়লে বাঙালির মতো বিক্ষোভ-প্রতিবাদে তেতে ওঠে সেদিনকার শীতার্ত প্রকৃতিও। সেই থেকেই আমরা পেয়েছি ‘অ আ ক খ’ সহ আমাদের বর্ণমালা। এ ঐতিহাসিক আন্দোলনের বীজমন্ত্র থেকেই বাংলাদেশিরা স্বাধিকার আন্দোলনের সিঁড়ি বেয়ে ১৯৭১ সালে ছিনিয়ে আনে লাল সবুজ পতাকা আর স্বাধীনতা।

অমর একুশে উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটি। এ দিনটি পালনে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রত্যন্ত জনপদেও চলছে নানা আয়োজন। শহীদ মিনারগুলো প্রস্তুত করা হয়েছে গতকাল সন্ধ্যার মধ্যে। আজ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি ভবনসমূহে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে।

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা’ দিবস উপলক্ষে দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষকে আন্তরিক শুভেচ্ছা এবং মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অম্লান স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে পৃথক বাণী দিয়েছেন।

আজ জাতি রাজধানী ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের বেদীতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে একুশের মহান শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবে।

গতকাল রাতে অমর একুশের প্রথম প্রহরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করেন। এরপর কূটনৈতিকবৃন্দ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবৃন্দ, ভাষা সৈনিক, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার ও বিরোধীদলীয় নেত্রীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিকদল শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তাদের শ্রদ্ধা নিবেদনের পর শহীদ মিনার সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরে সকল সরকারি-বেসরকারি টেলিভিশন, রেডিও এবং কমিউনিটি রেডিও ব্যাপক অনুষ্ঠানমালা প্রচারের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। জাতীয় দৈনিকসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক দ্বীপসমূহ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে বর্ণমালা সম্বলিত ফেস্টুন দিয়ে সাজানো হয়েছে।

ইতোমধ্যেই অমর একুশে পালনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, আজিমপুর কবরস্থানসহ একুশের প্রভাত ফেরি প্রদক্ষিণের এলাকায় বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রণয়ন করা হয়েছে শহীদ মিনারে প্রবেশের রোডম্যাপ। মঙ্গলবার রাত আটটা থেকেই এটি কার্যকর হয়। সন্ধ্যার পর থেকে আজ বুধবার দুপুর পর্যন্ত শহীদ মিনার ও এর আশপাশের এলাকায় সর্বসাধারণের চলাচলের সুবিধার্থে যানবাহন চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ করা হবে। শুধুমাত্র সুর্নিদিষ্ট স্ট্রিকার সম্বলিত যানবাহন ওই এলাকায় প্রবেশ করতে পারবে। অন্যদিকে শহীদ মিনার এলাকায় নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরা বসানো হয়েছে। একই সঙ্গে নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড রোধে ছদ্মবেশে ও সাদা পোশাকে র‌্যাবের গোয়েন্দা সদস্যরা নজরদারী করবে। তাছাড়া র‌্যাবের বোম ডিসপোজাল ইউনিট ও র‌্যাব ডগ স্কোয়াড শহীদ মিনার এলাকায় প্রয়োজনীয় স্যুইপিং কার্যক্রম পরিচালনা করবে। প্রস্তুত থাকবে স্ট্রাইকিং ফোর্সও।

দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

back to top