সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ‘সন্তুষ্ট হতে পারেনি’ উচ্চ আদালত। এ কারণে হাইকোর্ট এই ঘটনায় পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে নতুন তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে’ সুন্নতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
এই ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে করা কমিটির অন্য ৩ সদস্যের মধ্যে ১ জন মুগদা হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ, আরেকজন মুগদা হাসপাতালেরই একজন সহকারী পরিচালক ছিলেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকও রয়েছেন এই কমিটিতে।
গত ২৯ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে ‘আইওয়াশ‘ও ‘হাস্যকর‘ বলেছিল হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য বিভাগ ‘দায় এড়ানোর জন্য’ এই ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে বলেও সেদিন মন্তব্য করেছিল আদালত। গতকাল প্রতিবেদনের ওপর শুনানির এক পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি। আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি।’
৫ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাকসুদুল আলম। অন্যরা হলেন- শশাঙ্ক কুমার মণ্ডল, আজিজুর রহমান কাজল, সাথী মর্তুজা ও আমিনুর রশীদ। এই চারজনের মধ্যে তিনজন চিকিৎসক ও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে সেটি আদালতের মনঃপূত হয়নি। এজন্য পুনরায় তদন্ত করতে নতুন কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।’
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া আরজু। রিটের পক্ষে আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে পক্ষভুক্ত হওয়ার শুনানিতে ছিলেন মো. শিশির মনির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট যায়েদ বিন আমজাদ। অন্যাদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে ও ব্যারিস্টার শেখ ওমার শরীফ।
শিশুটির মৃত্যুর পর তার স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আয়ানের সুন্নতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন। আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক আমাদের ডেকে বলেন যে দুনিয়াতে আয়ান আর নেই। তারা খুব তড়িঘড়ি করে আমাদের বের করে দেন।’
আয়ানের পরিবারের অভিযোগ, ‘অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা।’
এই ঘটনায় আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ বাড্ডা থানায় মামলা করেন। মামলার আসামীরা হলেন- ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন ও অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজন।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ। রিটে আয়ানের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
একই সঙ্গে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন রোগী ভর্তি না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদনও করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ রিট মামলায় পরে শিশু আয়ানের বাবা পক্ষভুক্ত হন এবং পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। এতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।
মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৪
সুন্নতে খতনা করাতে গিয়ে হাসপাতালে শিশু আয়ান আহমেদের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তদন্ত প্রতিবেদনে ‘সন্তুষ্ট হতে পারেনি’ উচ্চ আদালত। এ কারণে হাইকোর্ট এই ঘটনায় পুনরায় তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে নতুন তদন্ত কমিটিও গঠন করে দিয়েছে আদালত।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি আতাবুল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ এই আদেশ দেয়।
গত ৩১ ডিসেম্বর আনন্দ নিয়েই রাজধানীর সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় শিশুটিকে। অনুমতি ছাড়াই ‘ফুল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে’ সুন্নতে খতনা করান চিকিৎসক। এরপর আর জ্ঞান ফেরেনি তার। পরে তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। গত ৭ জানুয়ারি সেখানেই মৃত্যু হয় শিশুটির।
এই ঘটনায় চিকিৎসকদের গাফিলতির অভিযোগ তদন্তে ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। মুগদা জেনারেল হাসপাতালের শিশু সার্জারি বিভাগের প্রধানের নেতৃত্বে করা কমিটির অন্য ৩ সদস্যের মধ্যে ১ জন মুগদা হাসপাতালের এনেসথেসিয়া বিভাগের বিশেষজ্ঞ, আরেকজন মুগদা হাসপাতালেরই একজন সহকারী পরিচালক ছিলেন। এছাড়া স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন সহকারী পরিচালকও রয়েছেন এই কমিটিতে।
গত ২৯ জানুয়ারি এই মামলার শুনানিকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনকে ‘আইওয়াশ‘ও ‘হাস্যকর‘ বলেছিল হাইকোর্ট। স্বাস্থ্য বিভাগ ‘দায় এড়ানোর জন্য’ এই ধরনের রিপোর্ট দাখিল করেছে বলেও সেদিন মন্তব্য করেছিল আদালত। গতকাল প্রতিবেদনের ওপর শুনানির এক পর্যায়ে জ্যেষ্ঠ বিচারক বলেন, ‘স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কমিটির রিপোর্ট আমাদের মনঃপূত হয়নি। আমরা পাঁচ সদস্যের নতুন কমিটি করে দিচ্ছি।’
৫ সদস্যের নতুন তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিয়া বিভাগের প্রধান অধ্যাপক মাকসুদুল আলম। অন্যরা হলেন- শশাঙ্ক কুমার মণ্ডল, আজিজুর রহমান কাজল, সাথী মর্তুজা ও আমিনুর রশীদ। এই চারজনের মধ্যে তিনজন চিকিৎসক ও একজন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রয়েছেন।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম সাংবাদিকদের বলেন, ‘তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন দাখিল করেছে সেটি আদালতের মনঃপূত হয়নি। এজন্য পুনরায় তদন্ত করতে নতুন কমিটি করে দিয়েছেন আদালত। কমিটিকে আগামী ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতেও বলা হয়েছে।’
এদিন রাষ্ট্রপক্ষে প্রতিবেদন তুলে ধরেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়। তার সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল সেলিম আযাদ ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিচ উল মাওয়া আরজু। রিটের পক্ষে আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ নিজেই শুনানি করেন। শুনানির সময় শিশুটির বাবা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আদালতে পক্ষভুক্ত হওয়ার শুনানিতে ছিলেন মো. শিশির মনির। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট যায়েদ বিন আমজাদ। অন্যাদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট এম. সাঈদ আহমেদ রাজা, অ্যাডভোকেট কুমার দেবুল দে ও ব্যারিস্টার শেখ ওমার শরীফ।
শিশুটির মৃত্যুর পর তার স্বজনরা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, আয়ানের সুন্নতে খতনার দিন অপারেশন থিয়েটারে মূলত ওই মেডিকেল কলেজের ৪০ থেকে ৫০ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক ভেতরে ছিলেন। আয়ানের বাবা শামীম আহমেদ বলেন, ‘রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক আমাদের ডেকে বলেন যে দুনিয়াতে আয়ান আর নেই। তারা খুব তড়িঘড়ি করে আমাদের বের করে দেন।’
আয়ানের পরিবারের অভিযোগ, ‘অস্ত্রোপচারের সময় এমন ঘটনার পর অবস্থা বেগতিক দেখে সাতারকুল ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ থেকে পাঠানো হয় গুলশান-২ ইউনাইটেড হাসপাতালে। এমনকি প্রথমে ১০ হাজার টাকার প্যাকেজে অপারেশনের কথা থাকলেও বিল ধরানো হয় প্রায় ছয় লাখ টাকা।’
এই ঘটনায় আয়ানের বাবা শামীম আহামেদ বাড্ডা থানায় মামলা করেন। মামলার আসামীরা হলেন- ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট সাইদ সাব্বির আহমেদ, সার্জারি বিভাগের চিকিৎসক তাসনুভা মাহজাবিন ও অজ্ঞাতনামা পরিচালকসহ কয়েকজন।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে আসা প্রতিবেদন যুক্ত করে গত ৯ জানুয়ারি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী শাহজাহান আকন্দ। রিটে আয়ানের মৃত্যুর জন্য হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলাকে দায়ী করে ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়।
একই সঙ্গে হাসপাতালের লাইসেন্স বাতিল এবং নতুন রোগী ভর্তি না করার নির্দেশনা চেয়ে একটি সম্পূরক আবেদনও করে রিট আবেদনকারী পক্ষ। এ রিট মামলায় পরে শিশু আয়ানের বাবা পক্ষভুক্ত হন এবং পাঁচ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণের দাবি করেন। এতে স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।