alt

জাতীয়

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ‘সামুদ্রিক সম্পদ’ আহরণ করুন: প্রধানমন্ত্রী

বাসস : বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকা থেকে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ আইন প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে সামুদ্রিক এলাকাগুলো অর্জন করেছি, সেখান থেকে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ব্লু ইকোনমির ঘোষণা বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকব এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়” অনুসরণ করে সমুদ্রপথে ব্যবসা ও বাণিজ্য চালিয়ে যাব।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করেছি। “টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪” আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই ক্রমধারা বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি।’

সমুদ্রে যে সম্ভাবনাময় সুবিশাল অর্থনৈতিক এলাকা সরকার পেয়েছে, তা দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখবে বলে জানান সরকারপ্রধান। কাজেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ জাতীয় উন্নয়নের সূচকে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই দিনে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এই সেমিনার সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে “টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪”-এর মূলনীতি দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক সকল সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের একটা অংশ। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চল দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান। তিনি আরও বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল দেশ—বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশী দেশ—একটা কথা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এই অঞ্চল কিন্তু খুব নিরাপদ। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই এবং সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অঞ্চলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এই সামুদ্রিক পথ আমাদের সকল দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে। কোনো রকম দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলে তৈরি হয়নি।’

শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা সব সময় এটাই চাইব যে আমাদের এই অঞ্চলকে ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, সেটা যেন কখনো সংঘাতপূর্ণ না হয় বা এখানে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এটা যেভাবে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে চলমান রয়েছে, সেভাবেই যেন সামনের দিনগুলোতেও চলমান থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল যেটুকু আমরা অর্জন করেছি, সেখানে সমুদ্রসম্পদ আহরণ করা এবং আমাদের অর্থনীতিতে, অর্থাৎ যে ব্লু ইকোনমি আমরা ঘোষণা দিয়েছি, সেখানে তা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতিমধ্যে আমরা একটি ইনস্টিটিউশনও তৈরি করেছি গবেষণার জন্য। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কাজেই “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”—এই নীতিই আমরা মেনে চলব। এই পররাষ্ট্রনীতি ধারণ করেই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সব সময় চলমান থাকে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ থাকব।’

প্রধানমন্ত্রী পরে বিআইসিসিতে মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু আমাদের একটি রাষ্ট্রই দিয়ে যাননি, তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তখনো জাতিসংঘ কিন্তু এ ধরনের কোনো আইন বা নীতিমালা গ্রহণ করেনি। এর আট বছর পর, অর্থাৎ ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ আনক্লজ থ্রি প্রণয়ন করে। কিন্তু আনক্লজ থ্রি প্রণয়নের পর বাংলাদেশে ’৭৫ সাল-পরবর্তী সরকারগুলো, যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আর কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জাতির পিতা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেই পড়েছিল। বাংলাদেশের যে বিশাল সমুদ্রসীমা ছিল, সেখানে আমাদের কোনো অধিকারই ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু সমুদ্রে সীমানা নয়, আমাদের যে স্থলসীমানা রয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট করার চুক্তিটাও জাতির পিতা করে দিয়ে যান। তিনি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং সেই সঙ্গে আমাদের সংবিধান সংশোধন করেও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করে দিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর কার্যকর করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো নিয়ে আবার কাজ শুরু করে, কিন্তু সময় কম থাকায় সম্পূর্ণ করে দিয়ে যেতে পারেনি।

শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছিলেন খুব গোপনীয়তার সঙ্গে এবং জাতিসংঘের আনক্লজে সই করে আসেন বলে উল্লেখ করেন তিনি, যাতে এ দেশের সমুদ্রসীমার যে অধিকার আছে, সেটা যেন নিশ্চিত হয়।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি—‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—নীতি মেনেই চলেছে। পাশাপাশি এ দেশের মানুষের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আয়োজন ও তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করার মধ্য দিয়েই সময় চলে যায়। আর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কাজেই আওয়ামী লীগের সব উদ্যোগ সেখানেই থেমে যায়। কারণ, পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল, তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে উদ্যোগ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা করতে সক্ষম হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০৪১ সাল নাগাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকারের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশিদের এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

ছবি

পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক হলে কারফিউ তুলে নেওয়া হবে

খোঁজ-খবর নিচ্ছি, সত্য বেরিয়ে আসবে : কাদের

ছবি

গাজীপুরের টঙ্গীতে নাশকতায় ক্ষতি প্রায় ৩৪ কোটি টাকা

মেট্রোরেল বন্ধে ভোগান্তিতে ৬ লাখ মানুষ

ছবি

অপরাধীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করুন : প্রধানমন্ত্রী

কোটা আন্দোলন: সিলেটে ৩৮ শিক্ষার্থীকে বিস্ফোরক মামলায় শোন অ্যারেস্ট

বিএনপি জামায়াত শিবিরের ক্যাডাররা দেশকে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করতে চেয়েছিল -মুক্তিযুদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রী

বেরোবির উপাচার্যের বাসভবনে আক্রমন-আগুন, যেভাবে উদ্ধার হলেন অবরুদ্ধ ২০ জন

ছবি

আজ সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল

ট্রেন চালুর সিদ্ধান্ত থেকে সরে এল রেল কর্তৃপক্ষ

ছবি

হামলা, ধ্বংসযজ্ঞের বিচারের ভার জনগণকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী

ছবি

‘আমার সব শেষ’, ‘বাড়িতেও নিরাপদ না মানুষ?’

গুগলের ক্যাশ সার্ভার চালুর নির্দেশনা বিটিআরসি’র

ভিন্নমত ও দাবি আদায়ের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন অপরাধ নয়, সাংবিধানিক অধিকার: টিআইবি

৩-৪ দিনের মধ্যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

চাঁদপুর থেকে সীমিত পরিসরে লঞ্চ চলাচল শুরু

ছবি

অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধই থাকছে প্রাথমিক বিদ্যালয়

ছবি

মহাখালী থেকে ছাড়ছে দূরপাল্লার বাস

ছবি

কয়েকদিনের মধ্যে সবকিছু নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

পাঁচ দিন পর খুললো অফিস

কোটা সংস্কার ও তাদের দাবি নিয়ে যা বললো সমন্বয়করা

ছবি

সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন

সীমিত পরিসরে সারাদেশে চালু হয়েছে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট

সাভারে পুলিশ-ছাত্রলীগ ও শিক্ষার্থীদের ত্রিমুখী সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধ হয়ে শিক্ষার্থীর মৃত্যু

ছবি

আলোচনার পথ খোলা আছে, আন্দোলনকারীদের ঘোষণা

লিবিয়া থেকে ফিরেছেন ১৪৪ বাংলাদেশী

ছবি

শিক্ষার্থীরা যখন চায় তখনই আলোচনাঃ আইনমন্ত্রী

ছবি

বেরোবি শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় পুলিশের তদন্ত কমিটি

ছবি

এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় : চীনা রাষ্ট্রদূত

ছবি

বাড়তি ভাড়া রিকশা-সিএনজিতে, ভরসা মেট্রোরেল-বিআরটিসি

ছবি

ঢাকাসহ সারা দেশে ২২৯ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন

ছবি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে পুলিশে হামলায় রণক্ষেত্র, হতাহত দুই শতাধিক

ছবি

কোটা আন্দোলনকারীদের নতুন কর্মসূচী ‘কমপ্লিট শাটডাউন’, ঢাবি হল ছেড়েছেন শিক্ষার্থীরা, থমথমে পরিবেশ

ছবি

বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর, আদালতের রায়ের জন্য ধৈর্য্যের আহ্বান

ছবি

জবি : ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে ২ ঘন্টার আল্টিমেটাম

ছবি

সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন শেখ হাসিনা

tab

জাতীয়

বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে ‘সামুদ্রিক সম্পদ’ আহরণ করুন: প্রধানমন্ত্রী

বাসস

বৃহস্পতিবার, ২২ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতির জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশের বিশাল সামুদ্রিক এলাকা থেকে সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।

আজ বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ আইন প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যে সামুদ্রিক এলাকাগুলো অর্জন করেছি, সেখান থেকে আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণ করতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, ব্লু ইকোনমির ঘোষণা বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে আমাদের বিশাল সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবহার করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের সামুদ্রিক সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে আমরা সতর্ক থাকব এবং আমাদের পররাষ্ট্রনীতি “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়” অনুসরণ করে সমুদ্রপথে ব্যবসা ও বাণিজ্য চালিয়ে যাব।’ সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা ২০১২ ও ২০১৪ সালে মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমা নিষ্পত্তি করেছি। “টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪” আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পথনির্দেশক হিসেবে কাজ করে আসছে এবং ভবিষ্যতেও এই ক্রমধারা বজায় থাকবে বলে আমি মনে করি।’

সমুদ্রে যে সম্ভাবনাময় সুবিশাল অর্থনৈতিক এলাকা সরকার পেয়েছে, তা দেশের অর্থনীতিতে অনেক অবদান রাখবে বলে জানান সরকারপ্রধান। কাজেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দূরদর্শিতা এবং বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টার ফলস্বরূপ জাতীয় উন্নয়নের সূচকে আজ বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আজকের এই দিনে যে সেমিনার অনুষ্ঠিত হচ্ছে, এই সেমিনার সামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার এবং সমুদ্রকে নিরাপদ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে “টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪”-এর মূলনীতি দেশের সমুদ্রকেন্দ্রিক সকল সংস্থার মধ্যে সহযোগিতা ও সচেতনতা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গোপসাগর হচ্ছে ভারত মহাসাগরের একটা অংশ। প্রাচীনকাল থেকে এ অঞ্চল দিয়ে আন্তর্জাতিক ব্যবসা-বাণিজ্য চলমান। তিনি আরও বলেন, ‘ভারত মহাসাগরের সঙ্গে সম্পৃক্ত সকল দেশ—বাংলাদেশ ও আমাদের প্রতিবেশী দেশ—একটা কথা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, এই অঞ্চল কিন্তু খুব নিরাপদ। এখানে কারও সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্ব নেই এবং সেই প্রাচীনকাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য অঞ্চলটা খুব গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক পথ। এই সামুদ্রিক পথ আমাদের সকল দেশ সমানভাবে ব্যবহার করছে এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য চলছে। কোনো রকম দ্বন্দ্ব এই অঞ্চলে তৈরি হয়নি।’

শেখ হাসিনা আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা সব সময় এটাই চাইব যে আমাদের এই অঞ্চলকে ঘিরে যে ব্যবসা-বাণিজ্য চলে, সেটা যেন কখনো সংঘাতপূর্ণ না হয় বা এখানে কোনো দ্বন্দ্বের সৃষ্টি না হয়। এটা যেভাবে শান্তিপূর্ণ বাণিজ্যিক পথ হিসেবে চলমান রয়েছে, সেভাবেই যেন সামনের দিনগুলোতেও চলমান থাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অঞ্চল যেটুকু আমরা অর্জন করেছি, সেখানে সমুদ্রসম্পদ আহরণ করা এবং আমাদের অর্থনীতিতে, অর্থাৎ যে ব্লু ইকোনমি আমরা ঘোষণা দিয়েছি, সেখানে তা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। ইতিমধ্যে আমরা একটি ইনস্টিটিউশনও তৈরি করেছি গবেষণার জন্য। এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কাজেই “সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়”—এই নীতিই আমরা মেনে চলব। এই পররাষ্ট্রনীতি ধারণ করেই সকলের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই আমাদের সমুদ্রসম্পদ আহরণ ও আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য যেন সব সময় চলমান থাকে, সে ব্যাপারে আমরা যথেষ্ট সজাগ থাকব।’

প্রধানমন্ত্রী পরে বিআইসিসিতে মেরিটাইম স্টেকহোল্ডারদের বিভিন্ন স্টল পরিদর্শন করেন। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিট) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল এম নাজমুল হাসান স্বাগত বক্তব্য দেন।

অনুষ্ঠানে ‘দ্য টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪’ প্রণয়নের সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন উপলক্ষে একটি অডিও-ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শুধু আমাদের একটি রাষ্ট্রই দিয়ে যাননি, তিনি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেন। আর সেই সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন বাণিজ্যিক যোগাযোগ ও সমুদ্র অর্থনীতির গুরুত্ব নিশ্চিত করার জন্য ১৯৭৪ সালে টেরিটোরিয়াল ওয়াটারস অ্যান্ড মেরিটাইম জোনস অ্যাক্ট, ১৯৭৪ প্রণয়ন করে দিয়ে যান। তখনো জাতিসংঘ কিন্তু এ ধরনের কোনো আইন বা নীতিমালা গ্রহণ করেনি। এর আট বছর পর, অর্থাৎ ১৯৮২ সালে জাতিসংঘ আনক্লজ থ্রি প্রণয়ন করে। কিন্তু আনক্লজ থ্রি প্রণয়নের পর বাংলাদেশে ’৭৫ সাল-পরবর্তী সরকারগুলো, যারা সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আর কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জাতির পিতা যেখানে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানেই পড়েছিল। বাংলাদেশের যে বিশাল সমুদ্রসীমা ছিল, সেখানে আমাদের কোনো অধিকারই ছিল না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘শুধু সমুদ্রে সীমানা নয়, আমাদের যে স্থলসীমানা রয়েছে, সেটা নির্দিষ্ট করার চুক্তিটাও জাতির পিতা করে দিয়ে যান। তিনি ভারতের সঙ্গে চুক্তি করেন এবং সেই সঙ্গে আমাদের সংবিধান সংশোধন করেও সেই চুক্তি বাস্তবায়ন করে দিয়ে যান। কিন্তু পরবর্তীতে সেটা আর কার্যকর করা হয়নি।’ তিনি আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে ২১ বছর পর ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ সরকার এগুলো নিয়ে আবার কাজ শুরু করে, কিন্তু সময় কম থাকায় সম্পূর্ণ করে দিয়ে যেতে পারেনি।

শেখ হাসিনা এই কাজগুলো করেছিলেন খুব গোপনীয়তার সঙ্গে এবং জাতিসংঘের আনক্লজে সই করে আসেন বলে উল্লেখ করেন তিনি, যাতে এ দেশের সমুদ্রসীমার যে অধিকার আছে, সেটা যেন নিশ্চিত হয়।

শেখ হাসিনা আরও বলেন, তাঁর সরকার জাতির পিতার রেখে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতি—‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’—নীতি মেনেই চলেছে। পাশাপাশি এ দেশের মানুষের অধিকার যেন প্রতিষ্ঠিত হয়, সে জন্য তাঁর সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু আয়োজন ও তথ্য-উপাত্ত জোগাড় করার মধ্য দিয়েই সময় চলে যায়। আর ২০০১ সালের ১ অক্টোবরের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসতে পারেনি। কাজেই আওয়ামী লীগের সব উদ্যোগ সেখানেই থেমে যায়। কারণ, পরবর্তীতে যারা সরকারে এসেছিল, তারা এ ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার দ্বিতীয়বার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসে উদ্যোগ নিয়ে সুষ্ঠুভাবে তা করতে সক্ষম হয়।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় ২০৪১ সাল নাগাদ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিনির্ভর ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেন। তাঁর সরকারের দেওয়া সুযোগ কাজে লাগিয়ে বিদেশিদের এখানে বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি।

back to top