alt

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নৃগোষ্ঠীর ৬ ভাষায়, কিন্তু আক্ষেপ

* ‘কন্দ’ ভাষায় কথা বলতে পারে এখন মাত্র দু’জন * এখনো চৌদ্দ, পনেরোটা ভাষা বিপদের মুখে

জাহিদা পারভেজ ছন্দা : শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

যখন ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠিক তখন ফালগুনি ত্রিপুরা দু:খের খবর দিলেন ‘কন্দ’ ভাষা বলতে পারা দু’জন মানুষ মারা গেলে এই ভাষাও মারা যাবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চাকমা, মারমা, ককবরক, গারো, কুড়মালি ও সাদরি ৬ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই খবরে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফালগুনি ত্রিপুরা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের হলেও পুরোপুরি আনন্দিত হতে পারছি না। কারণ এখনো চৌদ্দ পনরটার মতো ভাষা বিপদের মুখে। কন্দ ভাষায় এখন মাত্র দুজন নারী বেঁচে আছেন তারা মারা গেলে এই ভাষাও মারা যাবে। হারিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারী আসলে সবাই আমাদের ভাষাগুলো মানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এই ভাষা বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে সারা বছর ভাষা রক্ষায় কাজ করতে হবে। তাহলেই ছড়িয়ে থাকা ভাষাগুলো বেঁচে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বাংলাদেশে বসবাসরত ছয়টি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় অনূদিত হওয়ার খবরে খুশি আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী। তিনি বলেন, ভাষার মাসে অমর একুশে পালন তখনই সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন দেশের সকল নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের কাজ আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে পারব।

সুমী বলেন, এই অনুবাদের কাজটি অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আশা করা যায় আরো ভাষায় অনুবাদ হবে। এ কাজটা সহজ ছিলো না। কারণ এদের ভাষা ও ব্যাকরণগত অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। এই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তারা যে কাজ করলেন এবং প্রধানমন্ত্রী এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে যে উৎসাহ দিলেন, এতে করে সামনে আরো অনেক ভাষায় বিভিন্ন বই অনুবাদে অনেকেই এগিয়ে আসবে।

ফালগুনি বলেন, চাকমা, মারমা, ককবরক, গারো, কুড়মালি ও সাদরি- ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন সেই নৃগোষ্ঠীর সদস্যরাই। যাদের মধ্যে অনেকে মাতৃভাষা শেখার পর এই প্রথম এধরণের অনুবাদের কাজ করলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এসব বই প্রকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে জানান তিনি।

ত্রিপুরাদের ককবরক ভাষায় অনুবাদ করেছেন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, মারমা ভাষায় নুথোয়াই মারমা, গারোদের আচিক ভাষায় বাঁধন আরেং, সাদরি ভাষায় যোগেন্দ্র নাথ, চাকমা ভাষায় আর্যমিত্র চাকমা এবং মাহাতোদের কুড়মালি ভাষায় উজ্জ্বল মাহাতো।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের ছয় ভাষায় বইয়ের অনুবাদ করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ বলেন, এ উদ্যোগের ফলে সংশ্লিষ্ট ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার একটা মিথষ্ক্রিয়া তৈরি হবে। আবার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মানসিক বন্ধনও দৃঢ় হবে। শুধু তাই নয় এই ৬ ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা যেমন বেড়ে গেল তেমনি ভাষার শব্দের সংখ্যাও কিন্তু বেড়ে গেল।

ত্রিপুরাদের ককবরক ভাষায় অনুবাদ করেছেন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার লেখালেখির আদ্যোপান্ত জানা যায় ফালগুনি ত্রিপুরার কাছ থেকে। জানা যায়, মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনুবাদ করেছেন রোমান হরফে। কারণ ককবরক ভাষা এখন রোমান হরফেই লেখা হয়।

মথুরার জন্ম খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকায়। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পান মথুরা। এই পুরস্কার পান নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার চিত্র, মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিস্থিতি, মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা নিয়ে গবেষণায় জন্য।

মথুরাদের ছেলেবেলা ছিল ককবরক ভাষা সমৃদ্ধ। সেখানে অন্য আর কোনো ভাষা ছিল না। তিনি বেশ কয়েক বছর ককবরক ভাষার পত্রিকা ‘সান্তুয়া’তে লেখালেখি করার কারণে এ ভাষাটি সহজেই রপ্ত করেছিলেন। যা বই লেখার জন্য সহজ হয়েছিল।

নানা বিষয়ে লেখালেখি করে মথুরা যখন বেশ পরিচিত তখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট থেকে প্রস্তাব পান এই বই লেখার। সময়টা ছিল ২০২২ সাল। প্রস্তাব পেয়ে কোনো কিছু আর ভাবেন নি। শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনুবাদের কাজ। তবে অনুবাদ করতে গিয়ে ভাষাগত নানা সীমাবদ্ধতায় পড়তে হয়েছিল মথুরাকে জানিয়ে ফালগুনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী যে সময়ের ওই সময়ের যে প্রেক্ষাপট সেটার বাংলা শব্দের অনেক শব্দ ককবরক ভাষায় নাই।

সেক্ষেত্রে পুরনো অনেক অভিধান দেখতে হয়েছে। অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। এমন যদি কোনো শব্দ হয় যে, যেটা রাখতেই হবে সেগুলোকে আর পরিবর্তন করেন নি। বাংলাতেই রেখে দিয়েছেন।

বইটি অনুবাদ শেষে ত্রিপুরা জাতির নতুন প্রজন্মের অনেককে দিয়ে পড়িয়েছেন। তারপর তারা যেভাবে মাতৃভাষায় বোঝেন সেভাবে লিখতে দেন। নতুন প্রজন্মের কিছু লিখিত রূপ তিনি নিজের মত করে সম্পাদনা করেছেন।

ফালগুনি ত্রিপুরা বলেন, ককবরক ভাষায় কথা বলেন নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর মাতৃভাষার চর্চা করছেন না। অল্প সংখ্যক মানুষের কেউ কেউ অবশ্য এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন। যা ছোট ছোট পত্রিকাতেও তাদের ভাষায় লেখালিখি করছেন।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়ত আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে। এজন্য সরকারের উদ্যোগকে চালু রাখার অনুরোধ করেন ফালগুনি ত্রিপুরা।

ছবি

ময়মনসিংহে ভাঙা পুরনো ভবনটি সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের নয়: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

ছবি

চাকায় ত্রুটি, দুবাইয়ে আটকা বিমানের ২৭৫ যাত্রী

গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনা তদন্তে কমিটি

শ্যামলীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন

ছবি

গোপালগঞ্জে জনসমাবেশে হামলা ও ভাঙচুর, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় স্বাভাবিক পরিস্থিতি

গোপালগঞ্জে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভালো ভূমিকা পালন করেছে: আসিফ মাহমুদ

বিএনপি-জামায়াতের সুপারিশ করা দলগুলো সংলাপে ডাকছে ঐকমত্য কমিশন: অভিযোগ জনতা পার্টির

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে ‘ফ্যাসিবাদের’ উত্থান হবে: জামায়াত

সংরক্ষিত নারী আসন বিলুপ্তির সুপারিশ নারীবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করবে: সামাজিক প্রতিরোধ কমিটি

ফরিদপুরে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম

ছবি

সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত ছাড়াই গোপালগঞ্জে সংঘর্ষ ও গুলিতে নিহত চারজনের দাফন সম্পন্ন

নিজের সব ব্যাংক লেনদেনের তথ্য চান দীপু মনি

ব্যাংক থেকে বড় অঙ্কের টাকা তোলা গ্রাহকদের টার্গেট করতো তারা

‘কমপ্লিট শাট ডাউন’ কর্মসূচিকে ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ, সারাদেশে নিহত ৩১

তফসিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ, অধ্যাদেশ অনুমোদন

ছবি

‘পেশার স্বীকৃতিসহ যৌনকর্মীর নাগরিক অধিকার নিশ্চিত করা জরুরি’

ছবি

শহীদ মিনারে অধ্যাপক বদিউরকে শেষ বিদায়

ছবি

জুনে ১৮ বছরের কম বয়সীরাই বেশি সহিংসতার শিকার: ডেটাফুল

দুর্নীতির মামলায় সম্রাটের বিচার শুরুর আদেশ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

কারফিউর শহরে সারাদিন

গোপালগঞ্জে এত বড় ঘটনা ঘটবে, আগাম তথ্য ছিল না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ছবি

জ্বালানির লাইন বন্ধ করে দিয়েছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট, বলছেন মার্কিন তদন্তকারীরা

গোপালগঞ্জের পরিস্থিতি স্বাভাবিক: আইএসপিআর

ছবি

মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যা: তিন আসামির ‘দায় স্বীকার’ করে জবানবন্দী

ব্যর্থতা অন্তর্বর্তী সরকারের, ফের গোপালগঞ্জে যাওয়ার ঘোষণা নাহিদের

নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র দেখছে বিএনপি, আইনশৃঙ্খলার অবনতিতে গভীর উদ্বেগ

ডেমোক্রেসির বদলে মবোক্রেসি হয়ে যাচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ

বিদ্যুতে ৪৪ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা লোকসানের পূর্বাভাস পিডিবির

ছবি

গোপালগঞ্জে কারফিউ চলছে, ময়নাতদন্ত ছাড়াই নিহতদের দাফন, সৎকার

ছবি

যুবাদের সঠিকভাবে কাজে না লাগালে ভালো কিছু আশা করা যাবে না: অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা

ছবি

জন্মশতবর্ষে তাজউদ্দীনের স্মরণ, প্রধান উপদেষ্টাকে আমন্ত্রণপত্র দিল পরিবার

ছবি

দুদকের মামলায় তারিক সিদ্দিকের পরিবারের স্থাবর–অস্থাবর সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাবও অবরুদ্ধ

ছবি

‘হামলাকারীদের গ্রেপ্তার করবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়’— আসিফ মাহমুদ

ছবি

অঙ্গ প্রতিস্থাপন সহজ করতে ও বিনিয়োগ উন্নয়নে দুই অধ্যাদেশের অনুমোদন

ছবি

গোপালগঞ্জে সংঘর্ষে নিহত ৪, আহত পুলিশ ১০; ২৫ জন গ্রেপ্তার

ছবি

আইসিইউতে ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান

tab

জাতীয়

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ নৃগোষ্ঠীর ৬ ভাষায়, কিন্তু আক্ষেপ

* ‘কন্দ’ ভাষায় কথা বলতে পারে এখন মাত্র দু’জন * এখনো চৌদ্দ, পনেরোটা ভাষা বিপদের মুখে

জাহিদা পারভেজ ছন্দা

শনিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

যখন ছয়টি জাতিগোষ্ঠীর ভাষায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ গ্রন্থটির মোড়ক উন্মোচন করছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঠিক তখন ফালগুনি ত্রিপুরা দু:খের খবর দিলেন ‘কন্দ’ ভাষা বলতে পারা দু’জন মানুষ মারা গেলে এই ভাষাও মারা যাবে।

একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে চাকমা, মারমা, ককবরক, গারো, কুড়মালি ও সাদরি ৬ ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

এই খবরে বাংলাদেশ আদিবাসী নারী নেটওয়ার্কের সমন্বয়কারী ফালগুনি ত্রিপুরা বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত আনন্দের হলেও পুরোপুরি আনন্দিত হতে পারছি না। কারণ এখনো চৌদ্দ পনরটার মতো ভাষা বিপদের মুখে। কন্দ ভাষায় এখন মাত্র দুজন নারী বেঁচে আছেন তারা মারা গেলে এই ভাষাও মারা যাবে। হারিয়ে যাবে।

তিনি বলেন, ‘একুশে ফেব্রুয়ারী আসলে সবাই আমাদের ভাষাগুলো মানে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠির ভাষা নিয়ে কথা বলি। কিন্তু এই ভাষা বাঁচিয়ে রাখতে চাইলে সারা বছর ভাষা রক্ষায় কাজ করতে হবে। তাহলেই ছড়িয়ে থাকা ভাষাগুলো বেঁচে থাকবে।

বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ বাংলাদেশে বসবাসরত ছয়টি নৃগোষ্ঠীর ভাষায় অনূদিত হওয়ার খবরে খুশি আদিবাসীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন নারী প্রগতি সংঘের পরিচালক শাহনাজ সুমী। তিনি বলেন, ভাষার মাসে অমর একুশে পালন তখনই সত্যিকারের তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে, যখন দেশের সকল নৃগোষ্ঠীর ভাষা সংরক্ষণের কাজ আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে নিতে পারব।

সুমী বলেন, এই অনুবাদের কাজটি অনেককে অনুপ্রাণিত করবে। আশা করা যায় আরো ভাষায় অনুবাদ হবে। এ কাজটা সহজ ছিলো না। কারণ এদের ভাষা ও ব্যাকরণগত অনেক সীমাবদ্ধতা ছিলো। এই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করে তারা যে কাজ করলেন এবং প্রধানমন্ত্রী এই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করে যে উৎসাহ দিলেন, এতে করে সামনে আরো অনেক ভাষায় বিভিন্ন বই অনুবাদে অনেকেই এগিয়ে আসবে।

ফালগুনি বলেন, চাকমা, মারমা, ককবরক, গারো, কুড়মালি ও সাদরি- ভাষায় বইটি অনুবাদ করেছেন সেই নৃগোষ্ঠীর সদস্যরাই। যাদের মধ্যে অনেকে মাতৃভাষা শেখার পর এই প্রথম এধরণের অনুবাদের কাজ করলেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট এসব বই প্রকাশে পৃষ্ঠপোষকতা করেছে বলে জানান তিনি।

ত্রিপুরাদের ককবরক ভাষায় অনুবাদ করেছেন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা, মারমা ভাষায় নুথোয়াই মারমা, গারোদের আচিক ভাষায় বাঁধন আরেং, সাদরি ভাষায় যোগেন্দ্র নাথ, চাকমা ভাষায় আর্যমিত্র চাকমা এবং মাহাতোদের কুড়মালি ভাষায় উজ্জ্বল মাহাতো।

ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠিদের ছয় ভাষায় বইয়ের অনুবাদ করা নিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক হাকিম আরিফ বলেন, এ উদ্যোগের ফলে সংশ্লিষ্ট ভাষার সঙ্গে বাংলা ভাষার একটা মিথষ্ক্রিয়া তৈরি হবে। আবার বাঙালি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মানসিক বন্ধনও দৃঢ় হবে। শুধু তাই নয় এই ৬ ভাষার প্রকাশ ক্ষমতা যেমন বেড়ে গেল তেমনি ভাষার শব্দের সংখ্যাও কিন্তু বেড়ে গেল।

ত্রিপুরাদের ককবরক ভাষায় অনুবাদ করেছেন মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা। মথুরা বিকাশ ত্রিপুরার লেখালেখির আদ্যোপান্ত জানা যায় ফালগুনি ত্রিপুরার কাছ থেকে। জানা যায়, মথুরা বিকাশ ত্রিপুরা বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনুবাদ করেছেন রোমান হরফে। কারণ ককবরক ভাষা এখন রোমান হরফেই লেখা হয়।

মথুরার জন্ম খাগড়াছড়ি জেলার মাটিরাঙ্গার গোমতি এলাকায়। ২০২১ সালে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা পদক পান মথুরা। এই পুরস্কার পান নৃগোষ্ঠীর শিক্ষার চিত্র, মাতৃভাষায় শিক্ষা পরিস্থিতি, মাতৃভাষাভিত্তিক শিক্ষা নিয়ে গবেষণায় জন্য।

মথুরাদের ছেলেবেলা ছিল ককবরক ভাষা সমৃদ্ধ। সেখানে অন্য আর কোনো ভাষা ছিল না। তিনি বেশ কয়েক বছর ককবরক ভাষার পত্রিকা ‘সান্তুয়া’তে লেখালেখি করার কারণে এ ভাষাটি সহজেই রপ্ত করেছিলেন। যা বই লেখার জন্য সহজ হয়েছিল।

নানা বিষয়ে লেখালেখি করে মথুরা যখন বেশ পরিচিত তখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইন্সটিটিউট থেকে প্রস্তাব পান এই বই লেখার। সময়টা ছিল ২০২২ সাল। প্রস্তাব পেয়ে কোনো কিছু আর ভাবেন নি। শুরু করেন বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অনুবাদের কাজ। তবে অনুবাদ করতে গিয়ে ভাষাগত নানা সীমাবদ্ধতায় পড়তে হয়েছিল মথুরাকে জানিয়ে ফালগুনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী যে সময়ের ওই সময়ের যে প্রেক্ষাপট সেটার বাংলা শব্দের অনেক শব্দ ককবরক ভাষায় নাই।

সেক্ষেত্রে পুরনো অনেক অভিধান দেখতে হয়েছে। অনেক মানুষের সঙ্গে কথা বলতে হয়েছে। এমন যদি কোনো শব্দ হয় যে, যেটা রাখতেই হবে সেগুলোকে আর পরিবর্তন করেন নি। বাংলাতেই রেখে দিয়েছেন।

বইটি অনুবাদ শেষে ত্রিপুরা জাতির নতুন প্রজন্মের অনেককে দিয়ে পড়িয়েছেন। তারপর তারা যেভাবে মাতৃভাষায় বোঝেন সেভাবে লিখতে দেন। নতুন প্রজন্মের কিছু লিখিত রূপ তিনি নিজের মত করে সম্পাদনা করেছেন।

ফালগুনি ত্রিপুরা বলেন, ককবরক ভাষায় কথা বলেন নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর মাতৃভাষার চর্চা করছেন না। অল্প সংখ্যক মানুষের কেউ কেউ অবশ্য এখন গুরুত্ব দিচ্ছেন। যা ছোট ছোট পত্রিকাতেও তাদের ভাষায় লেখালিখি করছেন।

রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পেলে হয়ত আরও অনেকেই এগিয়ে আসবে। এজন্য সরকারের উদ্যোগকে চালু রাখার অনুরোধ করেন ফালগুনি ত্রিপুরা।

back to top