alt

জাতীয়

নেপথ্যে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও নাব্যতা হ্রাস

চট্রগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবনাক্ততা

সমুদ্রের লবনাক্ত পানি নদীতে ঢুকে পড়ায় লবনাক্ততা কমাতে ওয়াসার নানা উদ্যোগ-চিফ ইঞ্জিনিয়ার

বাকী বিল্লাহ : শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪

চট্রগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবনাক্ততা দেখা দিয়েছে। সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে পড়ার কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই ছাড়াও কর্ণফুলী ও হালনা নদীর নানাবিধ বিপর্যয়ের কারনে পানির লবনাক্তা বৃদ্ধি,পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও নাব্যতা হ্রাসের কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অবশ্য চট্রগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, পানির লবনাক্ততা কমাতে তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। অপর দিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,অতিরিক্ত লবনাক্ত পানি ব্যবহারে কিডনী,হার্টের সমস্যা,ব্ল্যাড প্রেসার,ডায়রিয়া ও বোমি হতে পারে।

চট্রগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম সংবাদকে জানান,চলমান শুস্ক মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে পর্যাপ্ত পানি নির্গত হচ্ছে না। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে হালদা নদীর পানি পরীক্ষায় অতিমাত্রায় লবনাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই লবনাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে জোয়ারের সময় হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন দৈনিক প্রায় ৫ ঘন্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে পানি উৎপাদন স্বাভাবিকের চাইতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) কম হচ্ছে। চুড়ান্ত ফলাফল ও অনিবার্য প্রকৃতিক কারনে চট্রগ্রাম ওয়াসার গ্রাহকদের নিকট নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।

এই বিরূপ পরিস্থিতিতে যে পরিমান পানি কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে তা পরিশোধন পূর্বক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী পানির গুনাগুন বজায় রেখে শহরের বিভিন্ন স্থানে রেশনিং করে গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছে ওয়াসা। এই ছাড়াও নলকূপ কিংবা অন্য প্ল্যাণ্টের পানি মিশিয়ে লবনের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারপরও সরবরাহ করা পানিতে লবন থাকছে। গেল বছর পানিতে লবনের মাত্রা কম থাকলেও এই বছর লবনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন,বর্তমানে চট্রগ্রাম ওয়াসার ৪টি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার চালু আছে। তার মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ (যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ দশমিক ৩ কোটি এমএলডি) সর্বমোট ২৮৬ এমএলডি পরিশোধন করে শহরে সরবরাহ করা হয়। যার উৎস কর্ণফুলী নদী।

অপর দিকে চট্রগ্রাম মোহরা পানি পানি শোধনাগার (যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯০এমএলডি) শেখ রাসেল পানি শোধনাগার (যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯০এমএলডি) এর পানি উত্তোলনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় হালদা নদীকে।

ভূ-উপরিস্থিত এই ৪টি শোধনাগার থেকে চট্রগ্রাম ওয়াসা সর্বমোট ৪৬৬এমএলডি পানি পরিশোধন করে চট্রগ্রাম মহানগরীতে সরবরাহ করে। সুতরাং সুপেয় পানির উৎসাহ হিসাবে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। চট্রগ্রাম শহরে বসবাসরত জনগণ ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে এই দুই নদীর পানির উপর বেশী নির্ভরশীল।

বর্তমানে কর্ণফুলী ও হালদা নদী নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ত্রা মধ্যে ১.লবনাক্তা বেশী,২.পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া,৩.নাব্যতা হ্রাস,৪,শৈবাল বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য কারন।

কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবনাক্ততার পরিমাণ কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি ছাড়্রা উপর নির্ভরশীল করে। কর্ণফুলী নদীর পানি প্রবাহ কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি নির্গমন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শুস্ক মৌসুমে কাপ্তাই ড্যাম হতে কর্ণফুলী নদীতে গড় পানি নির্গমন কম হলে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে জোয়ারের সময় লবনাক্ততা বৃদ্ধি পায়।

সূত্র মতে,জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বৃষ্টিও ওই অঞ্চলে কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদেও পানির পরিমান কমে গেছে। আগে কাপ্তাহ হ্রদের পানি গিয়ে পড়ত কর্ণফুলী নদীতে। এখন তাও কমে গেছে। ফলে পানির পরিমান কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবনাক্ত পানি নদীতে ঢুকে পড়ে। আর হালদা নদীর যে পয়েণ্ট (মোহরায়) ওয়াসার পরিশোধনের জন্য সেখানে দ্রুত লবন পানি চলে যায়। তাই নগরীর পানিতে লবন পাওয়া যাচ্ছে।

কাপ্তাই লেকের পানির স্তর কমে যাওয়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে পানি থাকার কথা ১০৯ ফুট কিন্তু লেভের কমে যাওয়ায় তা ৭০ থেকে ৭৫ ফুট এর মধ্যে চলে আসে। পানির স্তর ৭০ ফুট নেমে আসলে ৫টি টারবাইনের মধ্যে ১টি টারবাইনও চালু রাখা সম্ভব হয় না।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস পানির স্তর। কিন্তু তা অনেক কমে গেছে। অপর দিকে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে পড়েছে। এইসব কারনে মোহরা পানির শোধনাগার প্রকল্পে লবনাক্তার সমস্যা দেখা দিয়েছে।

লবনাক্ততার কারনে পানির উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যান্য পানি শোধনাগার প্রকল্পে। আর লবনাক্ততার কারনে জোয়ারের সময় দুই প্রকল্পের পানি সরবরাহ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এই কারনে গ্রাহক পর্যায়ে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

চট্রগ্রামের ওয়াসার কয়েকজন গ্রাহক সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, প্রতি বছর ওয়াসার পানির বিল বাড়ে। কিন্তু নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। পানিতে মাঝেমধ্যে দুগন্ধ হয়। গত কিছুদিন ধরে নতুন সমস্যা লবনাক্ততা। তারপরও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া কষ্টকর। ওয়াসার পানি নিয়ে প্রায় সময় সমস্যা লেগেই থাকে। এটা সমাধান করা দরকার ।

লবনাক্ত পানি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনটেনসিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ দেবব্রত বণিক সংবাদকে জানান,লবনাক্ত পানি বেশী খাইলে মানুষের ডায়রিয়া,ব্ল্যাড প্রেসার ও কিডনীতে সমস্যা হতে পারে।

ঢাকা জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন,ওয়াসার পানিতে অতিমাত্রায় লবন থাকলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হার্টে সমস্যা হতে পারে। লবনাক্ততা কোন পর্যায়ে তাছে পরীক্ষা করে নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। হঠাৎ করে লবনাক্ত পানি পান ও ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্ভবনা বেশী।

এ দিকে গতকাল সন্ধ্যায় চট্রগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম সংবাদকে মুঠোফোনে জানান,বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লবনাক্ততা থাকবে। তবে লবনাক্ততা কমিয়ে আনতে তারা কাজ করে করে যাচ্ছেন।

ছবি

বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পূর্ণ সমর্থন’ রয়েছে: রাষ্ট্রদূত

ছবি

সাবেক এমপি ও ক্রিকেট অধিনায়ক দুর্জয় গ্রেপ্তার

সাবেক সিইসি নূরুল হুদার জামিন নামঞ্জুর

‘দুর্নীতি করতে বিদেশে জনশক্তি পাঠানোর প্রক্রিয়া জটিল করা হয়’

ডেঙ্গুতে মৃত্যু ১, আক্রান্ত ৪১৬ জন

ভুয়া তথ্য ঠেকাতে জাতিসংঘের উদ্যোগ চান প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

দালাই লামা জানালেন, পুরনো নিয়ম মেনে উত্তরসূরি ঠিক করবে ট্রাস্ট

ছবি

কন্যা-বাবা সহপাঠী, একই সঙ্গে দিচ্ছেন এইচএসসি

ছবি

পটিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের মহাসড়ক অবরোধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা

এলপি গ্যাস: ১২ কেজি সিলিন্ডারে দাম কমলো ৩৯ টাকা

‘ভবিষ্যতে এনআইডি সেবা নিয়ে কোনো হয়রানির অভিযোগ থাকবে না’

৫ আগস্ট ‘জুলাই অভ্যুত্থান দিবসে’ সাধারণ ছুটি

ছবি

গত পাঁচ সপ্তাহে খাবারের জন্য অপেক্ষারত ৬০০-র বেশি প্যালেস্টাইনিকে হত্যা

এবার এনবিআরের তিন সদস্য ও এক কমিশনারকে অবসরে পাঠালো সরকার

৫ লাখ রিয়াল ছিনতাই: অর্ধেক উদ্ধার করে পুলিশ বলছে ঘটনা ‘পরিকল্পিত’

এনবিআর কর্মকর্তাদের আন্দোলনে বড় ধরনের ঝামেলায় পড়েছিল সরকার: অর্থ উপদেষ্টা

সংসদ নির্বাচনে ইসিকে ৪.৮ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেবে জাপান

সীমানা নির্ধারণ ও তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে ‘ঐকমত্য হয়েছে’: আলী রীয়াজ

ছবি

চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব পাচ্ছে নৌবাহিনী, এরপর বিবেচনায় ডিপি ওয়ার্ল্ড

ছবি

আদালত অবমাননা: শেখ হাসিনাকে ৬ মাসের কারাদণ্ড

ছবি

জুলাইয়ের তিনটি দিনকে বিশেষ দিবস ঘোষণা করল অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

আদালত অবমাননায় পলাতক শেখ হাসিনার ৬ মাস কারাদণ্ড

ছবি

জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে সমঝোতায় পৌঁছার আশা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের: আলী রীয়াজ

ছবি

আমরা জোর করে আসিনি, উড়ে এসেও বসিনি: সিইসি

ছবি

সংসদে প্রতিনিধিত্ব চায় জুলাই শহীদ পরিবার

ছবি

জুলাই শহীদদের তালিকায় যুক্ত হলো আরও ১০ জন

আগামী ছয় মাস নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে নিউমুরিং টার্মিনাল: অর্থ উপদেষ্টা

জ্যেষ্ঠতা যোগদানের তারিখ থেকে, রুল হাইকোর্টের

মগবাজারে হোটেলে স্ত্রী-সন্তানসহ প্রবাসীর মৃত্যু

ডেঙ্গু: আরও ৩৮৬ জন আক্রান্ত, মৃত্যু ১

আদালতে সাবেক সিইসি নূরুল হুদার ‘স্বীকারোক্তিমূলক’ জবানবন্দি

ছবি

বারোমাসিয়া নদীর ভাঙা সাঁকোয় বারোমাসই দুঃখ

ছবি

কক্সবাজারের সাবেক ডিসি, জজসহ ৫ জনের বিচার শুরু আগামী ৩ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণ

ছবি

মুরাদনগরে সামাজিক প্রতিরোধ কমিটির ১৫ সদস্যের দল

ছবি

ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গত অর্থবছরে তেল শোধন ১৫ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন

ছবি

এনবিআরের আরও ৫ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান শুরু

tab

জাতীয়

নেপথ্যে কর্ণফুলী ও হালদা নদীর পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও নাব্যতা হ্রাস

চট্রগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবনাক্ততা

সমুদ্রের লবনাক্ত পানি নদীতে ঢুকে পড়ায় লবনাক্ততা কমাতে ওয়াসার নানা উদ্যোগ-চিফ ইঞ্জিনিয়ার

বাকী বিল্লাহ

শনিবার, ০২ মার্চ ২০২৪

চট্রগ্রামে ওয়াসার পানিতে লবনাক্ততা দেখা দিয়েছে। সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে পড়ার কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এই ছাড়াও কর্ণফুলী ও হালনা নদীর নানাবিধ বিপর্যয়ের কারনে পানির লবনাক্তা বৃদ্ধি,পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া ও নাব্যতা হ্রাসের কারনে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

অবশ্য চট্রগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন, পানির লবনাক্ততা কমাতে তারা নানা উদ্যোগ নিয়েছেন। অপর দিকে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন,অতিরিক্ত লবনাক্ত পানি ব্যবহারে কিডনী,হার্টের সমস্যা,ব্ল্যাড প্রেসার,ডায়রিয়া ও বোমি হতে পারে।

চট্রগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম সংবাদকে জানান,চলমান শুস্ক মৌসুমে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প হতে পর্যাপ্ত পানি নির্গত হচ্ছে না। গত ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে হালদা নদীর পানি পরীক্ষায় অতিমাত্রায় লবনাক্ততার উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এই লবনাক্ততা পরিহারের লক্ষ্যে জোয়ারের সময় হালদা নদী থেকে পানি উত্তোলন দৈনিক প্রায় ৫ ঘন্টা বন্ধ রাখা হচ্ছে।

মোহরা পানি শোধনাগার ও শেখ রাসেল পানি শোধনাগারে পানি উৎপাদন স্বাভাবিকের চাইতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ মিলিয়ন লিটার (এমএলডি) কম হচ্ছে। চুড়ান্ত ফলাফল ও অনিবার্য প্রকৃতিক কারনে চট্রগ্রাম ওয়াসার গ্রাহকদের নিকট নিরবচ্ছিন্ন পানি সরবরাহে বিঘ্ন ঘটেছে।

এই বিরূপ পরিস্থিতিতে যে পরিমান পানি কর্ণফুলী ও হালদা নদী থেকে উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে তা পরিশোধন পূর্বক বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ী পানির গুনাগুন বজায় রেখে শহরের বিভিন্ন স্থানে রেশনিং করে গ্রাহকের নিকট সরবরাহ করার ব্যবস্থা নিয়েছে ওয়াসা। এই ছাড়াও নলকূপ কিংবা অন্য প্ল্যাণ্টের পানি মিশিয়ে লবনের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছে। তারপরও সরবরাহ করা পানিতে লবন থাকছে। গেল বছর পানিতে লবনের মাত্রা কম থাকলেও এই বছর লবনের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে গেছে।

ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলেছেন,বর্তমানে চট্রগ্রাম ওয়াসার ৪টি ভূ-উপরিস্থ পানি শোধনাগার চালু আছে। তার মধ্যে শেখ হাসিনা পানি শোধনাগার-১ (যার উৎপাদন ক্ষমতা ১৪ দশমিক ৩ কোটি এমএলডি) সর্বমোট ২৮৬ এমএলডি পরিশোধন করে শহরে সরবরাহ করা হয়। যার উৎস কর্ণফুলী নদী।

অপর দিকে চট্রগ্রাম মোহরা পানি পানি শোধনাগার (যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯০এমএলডি) শেখ রাসেল পানি শোধনাগার (যার উৎপাদন ক্ষমতা ৯০এমএলডি) এর পানি উত্তোলনের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা হয় হালদা নদীকে।

ভূ-উপরিস্থিত এই ৪টি শোধনাগার থেকে চট্রগ্রাম ওয়াসা সর্বমোট ৪৬৬এমএলডি পানি পরিশোধন করে চট্রগ্রাম মহানগরীতে সরবরাহ করে। সুতরাং সুপেয় পানির উৎসাহ হিসাবে কর্ণফুলী নদী ও হালদা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। চট্রগ্রাম শহরে বসবাসরত জনগণ ভূ-গর্ভস্থ পানির পরিবর্তে এই দুই নদীর পানির উপর বেশী নির্ভরশীল।

বর্তমানে কর্ণফুলী ও হালদা নদী নানাবিধ পরিবেশ বিপর্যয়ের সম্মুখীন। ত্রা মধ্যে ১.লবনাক্তা বেশী,২.পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়া,৩.নাব্যতা হ্রাস,৪,শৈবাল বৃদ্ধি উল্লেখযোগ্য কারন।

কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে লবনাক্ততার পরিমাণ কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি ছাড়্রা উপর নির্ভরশীল করে। কর্ণফুলী নদীর পানি প্রবাহ কাপ্তাই ড্যাম হতে পানি নির্গমন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। শুস্ক মৌসুমে কাপ্তাই ড্যাম হতে কর্ণফুলী নদীতে গড় পানি নির্গমন কম হলে কর্ণফুলী ও হালদা নদীতে জোয়ারের সময় লবনাক্ততা বৃদ্ধি পায়।

সূত্র মতে,জলবায়ু পরিবর্তনের কারনে বৃষ্টিও ওই অঞ্চলে কমে গেছে। কাপ্তাই হ্রদেও পানির পরিমান কমে গেছে। আগে কাপ্তাহ হ্রদের পানি গিয়ে পড়ত কর্ণফুলী নদীতে। এখন তাও কমে গেছে। ফলে পানির পরিমান কম হওয়ায় জোয়ারের সময় সাগরের লবনাক্ত পানি নদীতে ঢুকে পড়ে। আর হালদা নদীর যে পয়েণ্ট (মোহরায়) ওয়াসার পরিশোধনের জন্য সেখানে দ্রুত লবন পানি চলে যায়। তাই নগরীর পানিতে লবন পাওয়া যাচ্ছে।

কাপ্তাই লেকের পানির স্তর কমে যাওয়ায় কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের রুলকার্ভ অনুযায়ী লেকে পানি থাকার কথা ১০৯ ফুট কিন্তু লেভের কমে যাওয়ায় তা ৭০ থেকে ৭৫ ফুট এর মধ্যে চলে আসে। পানির স্তর ৭০ ফুট নেমে আসলে ৫টি টারবাইনের মধ্যে ১টি টারবাইনও চালু রাখা সম্ভব হয় না।

প্রাপ্ত তথ্য মতে, কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রধান উৎস পানির স্তর। কিন্তু তা অনেক কমে গেছে। অপর দিকে সমুদ্রের লবনাক্ত পানি কর্ণফুলী নদীতে ঢুকে পড়েছে। এইসব কারনে মোহরা পানির শোধনাগার প্রকল্পে লবনাক্তার সমস্যা দেখা দিয়েছে।

লবনাক্ততার কারনে পানির উৎপাদন কমিয়ে দিতে হচ্ছে। একই সমস্যা দেখা দিয়েছে অন্যান্য পানি শোধনাগার প্রকল্পে। আর লবনাক্ততার কারনে জোয়ারের সময় দুই প্রকল্পের পানি সরবরাহ কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এই কারনে গ্রাহক পর্যায়ে পর্যাপ্ত পানি পাওয়া নিয়ে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে।

চট্রগ্রামের ওয়াসার কয়েকজন গ্রাহক সাংবাদিকদেরকে বলেছেন, প্রতি বছর ওয়াসার পানির বিল বাড়ে। কিন্তু নিরাপদ পানি সরবরাহ করতে পারছে না। পানিতে মাঝেমধ্যে দুগন্ধ হয়। গত কিছুদিন ধরে নতুন সমস্যা লবনাক্ততা। তারপরও পর্যাপ্ত পানি পাওয়া কষ্টকর। ওয়াসার পানি নিয়ে প্রায় সময় সমস্যা লেগেই থাকে। এটা সমাধান করা দরকার ।

লবনাক্ত পানি সম্পর্কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনটেনসিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ দেবব্রত বণিক সংবাদকে জানান,লবনাক্ত পানি বেশী খাইলে মানুষের ডায়রিয়া,ব্ল্যাড প্রেসার ও কিডনীতে সমস্যা হতে পারে।

ঢাকা জনস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের একজন কর্মকর্তা বলেন,ওয়াসার পানিতে অতিমাত্রায় লবন থাকলে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। হার্টে সমস্যা হতে পারে। লবনাক্ততা কোন পর্যায়ে তাছে পরীক্ষা করে নির্ধারণ করে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। হঠাৎ করে লবনাক্ত পানি পান ও ব্যবহারে স্বাস্থ্যের ক্ষতির সম্ভবনা বেশী।

এ দিকে গতকাল সন্ধ্যায় চট্রগ্রাম ওয়াসার চিফ ইঞ্জিনিয়ার মাকসুদ আলম সংবাদকে মুঠোফোনে জানান,বৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত লবনাক্ততা থাকবে। তবে লবনাক্ততা কমিয়ে আনতে তারা কাজ করে করে যাচ্ছেন।

back to top