গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আধুনিক জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০১৫ সালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডবল পাইপলাইন প্রকল্প হাতে নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। গত ১৬ মার্চ বঙ্গোপসাগরের গভীরে স্থাপিত এসপিএম থেকে প্রথমে মহেশখালী পাম্পিং স্টেশন এবং সেখান থেকে চট্টগ্রামে স্টোরেজ ট্যাংকে ৪০ হাজার টনের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সফলভাবে পরিবহন করা হয়েছে। জ্বালানি তেল সরবরাহে প্রকল্পটিকে ‘যুগান্তকারী’ সংযোজন বলে মনে করছে সরকার।
এসপিএম প্রকল্পে দুটো আলাদা পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। একটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আর অন্যটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্থাপিত দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা এখন বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। আরও ৩০ লাখ মে.টন পরিশোধন করতে প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি ইউনিট (ইআরএল-২) স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও ১৩ বছরে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এ কারণে, এসপিএম প্রকল্পের পুরো সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। গুণগত মান বজায় রেখে ‘নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন ও পরিবেশবান্ধব’ জ্বালানি তেল উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতীয় উন্নয়নে ‘অবদান রাখাই’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে ইআরএলের মূল লক্ষ্য। আর উদ্দেশ্য-নিরবচ্ছিন্ন ক্রুড ওয়েল সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করা এবং মানসম্মত পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করা।
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৭০ লাখ মে.টন। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে ইআরএল ৩০ লাখ টন সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১০ সালে। ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ২য় ইউনিট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিনিয়োগের অভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি।
সাগর থেকে পাইপলাইন কেন
চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম (৮-১৪ মিটার) হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে আমদানি করা ক্রুড অয়েল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। এ কারণে, মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস করা হয়।
এভাবে ১১ দিনে একটি ১ লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়। ডিডব্লিউটি বা ডেডওয়েট টনেজ হলো একটি জাহাজ কতটা ওজন বহন করতে পারে তার একটি পরিমাপ। এভাবে লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল।
ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএল এর বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৪৫ লাখ মে.টন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হওয়ার কথা।
এসপিএম প্রকল্প পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে পাইপলাইন পুরোপুরি কাজে লাগলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৪৫ লাখ টন আমদানি করা যাবে না। কারণ পরিশোধন সক্ষমতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি তেল বেশি আমদানি করে পাইপলাইন প্রকল্পের বিনিয়োগ তুলে আনার চেষ্টা করা হবে।’
ইআরএল ইউনিট-২
শুরুতে ইআরএল-২ প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০০ একর জায়গার একপাশের ৭০ একর জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কথা।
পরে সংশোধিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন করে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। এসব কাজে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা নির্মাণকাজে আগ্রহ দেখায়নি।
সর্বশেষ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের দেয়ার কথা ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। বাকিটা বিপিসির দেয়ার কথা। তবে সেটিও আটকে আছে।
এস আলম গ্রুপের প্রস্তাব
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ইআরএলের জমিতে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধানাগর নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়।
প্রস্তাবনায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপের ৮০ ভাগ আর ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০ ভাগ ইক্যুইটি শেয়ার (অংশীদারিত্ব) থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে বিপিসি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
ইআরএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটির ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি বিষয় রয়েছে। সেটিও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করা হবে।
বিপিসি ও ইআরএলের একাধিক কর্মকর্তার মতে, সরকারি অর্থায়নে বিপিসি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গল। বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন এটি বেসরকারি খাতে দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এই প্রকল্প থাকলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ভীত মজবুত হবে।’
শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪
গভীর সমুদ্র থেকে পাইপলাইনে তেল খালাসের পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। আধুনিক জ্বালানি তেল সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ২০১৫ সালে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডবল পাইপলাইন প্রকল্প হাতে নেয় ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড (ইআরএল)। গত ১৬ মার্চ বঙ্গোপসাগরের গভীরে স্থাপিত এসপিএম থেকে প্রথমে মহেশখালী পাম্পিং স্টেশন এবং সেখান থেকে চট্টগ্রামে স্টোরেজ ট্যাংকে ৪০ হাজার টনের বেশি অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সফলভাবে পরিবহন করা হয়েছে। জ্বালানি তেল সরবরাহে প্রকল্পটিকে ‘যুগান্তকারী’ সংযোজন বলে মনে করছে সরকার।
এসপিএম প্রকল্পে দুটো আলাদা পাইপলাইন তৈরি করা হয়েছে। একটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আর অন্যটি দিয়ে বছরে ৪৫ লাখ টন অপরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করা যাবে।
১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় স্থাপিত দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) জ্বালানি তেল পরিশোধন ক্ষমতা এখন বছরে ১৫ লাখ মেট্রিক টন। আরও ৩০ লাখ মে.টন পরিশোধন করতে প্রতিষ্ঠানটি আরেকটি ইউনিট (ইআরএল-২) স্থাপনের উদ্যোগ নিলেও ১৩ বছরে তা আলোর মুখ দেখেনি।
এ কারণে, এসপিএম প্রকল্পের পুরো সুফল পাওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। গুণগত মান বজায় রেখে ‘নিরাপদ, নিরবচ্ছিন্ন ও পরিবেশবান্ধব’ জ্বালানি তেল উৎপাদন ও সরবরাহের মাধ্যমে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করে জাতীয় উন্নয়নে ‘অবদান রাখাই’ বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনে ইআরএলের মূল লক্ষ্য। আর উদ্দেশ্য-নিরবচ্ছিন্ন ক্রুড ওয়েল সংগ্রহ ও সর্বোচ্চ মাত্রায় প্রক্রিয়াকরণ নিশ্চিত করা এবং মানসম্মত পেট্রোলিয়াম পণ্য উৎপাদন করা।
বর্তমানে দেশে জ্বালানি তেলের চাহিদা বছরে প্রায় ৭০ লাখ মে.টন। অপরিশোধিত জ্বালানি তেল পরিশোধনের সক্ষমতা বাড়াতে ইআরএল ৩০ লাখ টন সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১০ সালে। ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও ২য় ইউনিট এখনো আলোর মুখ দেখেনি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, বিনিয়োগের অভাবে প্রকল্পের কাজ শুরু করা যায়নি।
সাগর থেকে পাইপলাইন কেন
চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা এবং কর্ণফুলী নদীর চ্যানেলের নাব্য কম (৮-১৪ মিটার) হওয়ায় মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারের মাধ্যমে আমদানি করা ক্রুড অয়েল সরাসরি খালাস করা সম্ভব হয় না। এ কারণে, মাদার অয়েল ট্যাঙ্কারগুলো গভীর সমুদ্রে নোঙর করে ছোট ছোট লাইটারেজ ভেসেলের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল খালাস করা হয়।
এভাবে ১১ দিনে একটি ১ লাখ ডিডব্লিউটি ট্যাঙ্কার খালাস করা হয়। ডিডব্লিউটি বা ডেডওয়েট টনেজ হলো একটি জাহাজ কতটা ওজন বহন করতে পারে তার একটি পরিমাপ। এভাবে লাইটারেজ পদ্ধতিতে তেল খালাস করা অত্যন্ত সময় সাপেক্ষ, ঝুঁকিপূর্ণ এবং ব্যয়বহুল।
ইআরএল ইউনিট-২ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ইআরএল এর বার্ষিক ক্রুড অয়েল প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়ে হবে ৪৫ লাখ মে.টন। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হওয়ার কথা।
এসপিএম প্রকল্প পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পরিশোধিত জ্বালানি তেল সরবরাহ করে পাইপলাইন পুরোপুরি কাজে লাগলেও অপরিশোধিত জ্বালানি তেল ৪৫ লাখ টন আমদানি করা যাবে না। কারণ পরিশোধন সক্ষমতা নেই।’
তিনি বলেন, ‘ইআরএল দ্বিতীয় ইউনিট বাস্তবায়নের আগ পর্যন্ত পরিশোধিত জ্বালানি তেল বেশি আমদানি করে পাইপলাইন প্রকল্পের বিনিয়োগ তুলে আনার চেষ্টা করা হবে।’
ইআরএল ইউনিট-২
শুরুতে ইআরএল-২ প্রকল্পটির ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩ হাজার কোটি টাকা। পতেঙ্গায় ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০০ একর জায়গার একপাশের ৭০ একর জায়গায় দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের কথা।
পরে সংশোধিত হয়ে প্রকল্পের ব্যয় ১৬ হাজার ৭৩৯ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্পের ফিড কন্ট্রাক্টর হিসেবে ফ্রান্সের টেকনিপকে নিয়োগ দেয়া হয়। টেকনিপ প্রকল্পটির (ইআরএল-২) ডিজাইন করে। প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্ট (পিএমসি) হিসেবে নিয়োগ পায় ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্ডিয়া লিমিটেড (ইআইএল)। ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল ভারতীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে চুক্তি করে বিপিসি। এসব কাজে প্রায় ১১০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
বিপিসি সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পটির জন্য বৈদেশিক ঋণ না পাওয়ার কারণে এটি বাস্তবায়ন হচ্ছে না। এর মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি কোম্পানি বাংলাদেশের তেল পরিশোধনাগার নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করে। তবে ইস্টার্ন রিফাইনারির দ্বিতীয় ইউনিটটি আকারে ছোট হওয়ায় তারা নির্মাণকাজে আগ্রহ দেখায়নি।
সর্বশেষ প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ধরা হয় ২৩ হাজার ৫৮ কোটি ৯৩ লাখ ৯২ হাজার টাকা। এর মধ্যে সরকারের দেয়ার কথা ১৬ হাজার ১৪২ কোটি টাকা। বাকিটা বিপিসির দেয়ার কথা। তবে সেটিও আটকে আছে।
এস আলম গ্রুপের প্রস্তাব
২০২৩ সালের ১২ অক্টোবর ইআরএলের জমিতে ৫০ লাখ টন জ্বালানি তেল শোধানাগর নির্মাণের প্রস্তাব দেয় এস আলম গ্রুপ। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৯ জানুয়ারি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম স্বাক্ষরিত এক পত্রের মাধ্যমে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সচিব বরাবর সমঝোতা স্মারকের প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়।
প্রস্তাবনায় ৩০ থেকে ৫০ লাখ টন সক্ষমতার নতুন রিফাইনারি নির্মাণের আগ্রহের কথা উল্লেখ করা হয়। নতুন প্রস্তাবনায় ওই প্রকল্পে এস আলম গ্রুপের ৮০ ভাগ আর ইস্টার্ন রিফাইনারির ২০ ভাগ ইক্যুইটি শেয়ার (অংশীদারিত্ব) থাকার কথা উল্লেখ করা হয়।
এরপর গত ৫ ফেব্রুয়ারি এক চিঠিতে বিপিসিকে জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ জানায়, এস আলম গ্রুপের সঙ্গে সরকারি-বেসরকারি যৌথ চুক্তির (পিপিপি) ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। জ্বালানি বিভাগের নির্দেশনা অনুসারে বিপিসি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে।
ইআরএল ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. লোকমান সাংবাদিকদের বলেন, প্রকল্পটির ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া এই প্রকল্পে বিনিয়োগের একটি বিষয় রয়েছে। সেটিও মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত করা হবে।
বিপিসি ও ইআরএলের একাধিক কর্মকর্তার মতে, সরকারি অর্থায়নে বিপিসি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারলে দেশের জন্য মঙ্গল। বিপিসির নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা সংবাদকে বলেন, ‘ইতোমধ্যে অনেক টাকা খরচ হয়েছে। এখন এটি বেসরকারি খাতে দেয়া যুক্তিযুক্ত হবে না। সরকারি প্রতিষ্ঠানের হাতে এই প্রকল্প থাকলে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তার ভীত মজবুত হবে।’