alt

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোসাটম ডিজির সাক্ষাৎ

রূপপুরে আরও ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আলোচনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট : মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রোসাটমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।

রোসাটমের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধানে এই এলাকায় ২৪০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী বছর কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সমান সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে এর পরের বছর। বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিক লাভজনক বলে মন্তব্য করেছেন রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে রোসাটম মহাপরিচালক রূপপুর এনপিপি এলাকায় দুটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রূপপুর এনপিপির প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

মহাপরিকল্পনায় পরমাণু থেকে ৬%
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নতুন মহাপরিকল্পনায় (মাস্টারপ্ল্যান-২০২৩ আইইপিএমপি) ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ৩৬৪ মেগাওয়াট। এ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা রাখতে বলা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।

মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে। এর মধ্যে সৌর থেকে ১৫ শতাংশ, বায়ু থেকে ১০ শতাংশ, পরমাণু শক্তি থেকে ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে।

সে হিসেবে, পরমাণু থেকে ৪৪৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। রূপপুর এনপিপির ১ ও ২ ইউনিট থেকে আসবে ২৪০০ মেগাওয়াট। সমান সক্ষমতার আরও দুটি ইউনিট নির্মাণ করা গেলে মোট সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪৮০০ মেগাওয়াট। রূপপুর এনপিপি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নতুন দুটি ইউনিট নির্মাণের ক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতা, চুল্লির ধরন এবং কারিগরি অন্যান্য বিষয়ে পূর্বের সব ধরনের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হবে।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জায়গায় নতুন আরেকটি প্ল্যান্ট নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে দুটি নতুন ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত জরিপ করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ সময় রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীকে রূপপুর এনপিপির অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বলেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যে আরএনপিপি উৎপাদনে আসবে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত যোগ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, আরএনপিপির ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

রোসাটম মহাপরিচালক রূপপুর এনপিপি এলাকায় দুটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আলেক্সি লিখাচেভ আরও বলেন, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিক লাভজনক এবং যুক্তিসঙ্গত যা আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি ও রাশিয়ানসহ প্রায় ২৫০০ কর্মী এই প্রকল্পে কাজ করছেন যারা তাদের দক্ষতা অর্জন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোসাটম মহাপরিচালককে বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগাতে বলেন।

আলেক্সি লিখাচেভ বলেন যে, মহামারী এবং স্যাংশনের জন্য প্রতিবন্ধকতা ছিল, কিন্তু এতদসত্ত্বেও স্বাভাবিক গতিতেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৌশলগতভাবে এই বাধা এড়ানো গেছে।

দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভব হয়নি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এজন্য চীন আগ্রহও দেখিয়েছিল। কেন্দ্রটি নির্মাণে সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৫টি স্থানের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে পাঁচটি স্থান নির্বাচন করা হয়। যার মধ্যে ছিল বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পূর্ব), বরগুনা সদর উপজেলার কুমিরমারা ও পদ্মা মৌজা, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পশ্চিম), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোনতাজ ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি। পরবর্তীকালে আরও কিছু পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও সমীক্ষা করা হয় ওইসব স্থানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই স্থানগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ মার্চ তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে। কিন্তু সেখাানের মাটি এত নরম, প্রত্যেকটি দ্বীপে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি। আসলে সেখানে করা বোধ হয় সম্ভব নয়। তবে এখন যেখানে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি সেটার কাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা এই পাবনাতে, এই রূপপুরেই করতে পারবো।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার কাজ যখন শেষ হবে সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন দ্বিতীয়টার কাজ শুরু করতে পারি এখন থেকে আমাদের সে প্রস্তুতি নিতে হবে’।

স্পেন্ট ফুয়েল নিয়েও আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী ও রোসাটম ডিজির সাক্ষাতে ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল (ব্যবহারের পর অবশিষ্ট পারমাণবিক জ্বালানি। সাধারণ ভাষায় একে পারমাণবিক বর্জ্য বলা হলেও প্রক্রিয়করণের মাধ্যমে এটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য) ফেরত পাঠানো নিয়েও আলোচনা হয় বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

রূপপুর এনপিপিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ফেরত দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে

আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি আগেই সই হয়েছে।

শেখ হাসিনা রূপপুর এনপিপির প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ ফিরিয়ে নেয়ার সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

উত্তরে, রোসাটম মহাপরিচালক রুশ সরকারের পক্ষ থেকে রূপপুর এনপিপির প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নেয়ার আশ্বাস দেন।

ভ্লাদিমির পুতিনকে শুভেচ্ছা
শেখ হাসিনা জ্বালানি নিরাপত্তা বিশেষ করে বাংলাদেশে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান বলেও ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এজন্য তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে রাশিয়ার সহায়তার কথা এবং এবং মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশটির সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা জানান।

রোসাটম ঢাকা এজেন্সির বিজ্ঞপ্তি
১ এপ্রিল সোমবার ঢাকায় আসেন রোসাটমের মহাপরিচালক। এরপর তিনি নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রসাটমের ঢাকার জনসংযোগ এজেন্সি ট্রিউন গ্রুপের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোসাটম ডিজির সৌজন্য সাক্ষাতে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে তাদের আলোচনায়।

সাক্ষাতে রোসাটম ডিজি আলেক্সি লিখাচেভ তার বক্তব্যে বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন অর্জিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বর্তমানে আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় আরও দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

আলেক্সি লিখাচেভ আরও বলেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস গবেষণা রিঅ্যাক্টর নির্মাণের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গবেষণা রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞান ও নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাধান দিতে সক্ষম।

সফর শেষে আলেক্সি লিখাচেভ মঙ্গলবারই রাশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পরমাণু ক্লাবে বাংলাদেশ
গত বছর ৫ অক্টোবর রূপপুর এনপিপিতে ইউরেনিয়াম (পারমাণবিক জ্বালানি) হস্তান্তর করে রাশিয়া। ক্রেমলিন থেকে ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তি অর্জন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দিচ্ছে রাশিয়া। যেটা ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবে সরকার।

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। থ্রি-প্লাস জেনারেশনের ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রকল্পে; যা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দাবি করা হচ্ছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রোসাটম।

ছবি

সাবেক বিচারপতিসহ ৭ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডেঙ্গুতে একদিনে সর্বোচ্চ ১০ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১,০৬৯ জন

জামিনে মুক্তি পাওয়া আ’লীগ নেতারা অপরাধে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা: উপদেষ্টা

ছবি

তদন্ত প্রতিবেদন: পাইলটের ত্রুটির কারণে মাইলস্টোন স্কুলে বিমান বিধ্বস্ত হয়

ছবি

বাংলাদেশে পুলিশ সংস্কারে সহায়তার আগ্রহ আয়ারল্যান্ডের

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে, আশা সেনাবাহিনীর

ছবি

অগ্নিঝুঁকিতে বেনাপোল স্থলবন্দরের পণ্যাগার, ব্যবসায়ীদের উদ্বেগ, নিরাপত্তা জোরদার

ছবি

নির্বাচন হলে দেশে স্থিতিশীলতা আসবে, সেনাবাহিনী ফিরবে ব্যারাকে: জিওসি মাইনুর রহমান

ছবি

নিষিদ্ধ দলের মিছিলের চেষ্টা করলে আইনের কঠোর প্রয়োগ: প্রেস সচিব

দায়িত্ব পালনে অযোগ্যতা: হাই কোর্টের বিচারপতি খুরশীদ আলম সরকারের অপসারণ

ছবি

দেশে ডেঙ্গুতে একদিনে প্রাণ গেল ১০ জনের

ছবি

আইসিটি মামলায় আটক ১৫ সেনা কর্মকর্তার চাকরি নিয়ে সেনাসদরের ব্যাখ্যা: “এটি একটি আইনগত প্রক্রিয়া”

ছবি

১৪ মাসে ৪০ বিচারবহির্ভূত হত্যা, আইনের মাধ্যমে ফয়সালা করা হবে: স্বরাষ্ট্র্র উপদেষ্টা

ছবি

আরপিও সংশোধন অধ্যাদেশ জারি: বিএনপির আপত্তি আমলে নেয়নি অন্তর্বর্তী সরকার

কোটা আন্দোলনে হামলায় ঢাবির আরও ২৭৫ শিক্ষার্থী অভিযুক্ত

ছবি

নির্বাচন: দেড় লাখের মধ্যে ৪৮ হাজার পুলিশের প্রশিক্ষণ শেষ

আবু সাঈদ হত্যা মামলায় তিনবারেও সাক্ষী হাজিরে ব্যর্থ প্রসিকিউশন

ছবি

নভেম্বর মাসেও কমছে না ডেঙ্গু, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক

ছবি

সনদ, গণভোট: দলগুলোকে দ্রুত ‘সিদ্ধান্ত’ নেয়ার আহ্বান, নইলে পদক্ষেপ নেবে অন্তর্বর্তী সরকার

ছবি

ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় মাধবদীতে উদ্বেগজনক পরিস্থিতি

ছবি

বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের সঙ্গে সহযোগিতা বাড়াতে চায় বাংলাদেশ

বিটিআরসির প্রস্তাবিত নীতিমালা বাস্তবায়ন হলে ইন্টারনেটের দাম বাড়বে: আইএসপিএবি

ছবি

ডেঙ্গুতে আরও ৫ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ১১৪৭ জন

ছবি

পঞ্চদশ সংশোধনী পুরো বাতিল চেয়ে আপিল

ছবি

দেশ কোন পথে যাবে, তা নির্ভর করছে আগামী নির্বাচনের ওপর: সিইসি

ছবি

গুলিবিদ্ধ নাদিমের পেট থেকে রক্ত ঝরছিল: তাবাসুম

ছবি

‘নির্বাচিত সরকার ছাড়া ব্যবসার পরিবেশের উন্নতি হবে না’

ছবি

গণভোট নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সুপারিশ জানাতে এক সপ্তাহ সময় দিল সরকার

ছবি

বাপা-বেনের মতবিনিময়: তিস্তা প্রকল্পে স্বচ্ছতা, আঞ্চলিক সহযোগিতা ও পরিবেশ রক্ষার দাবি

ছবি

কাতারের নিরাপত্তা হুমকির বিরুদ্ধে সংহতি পুনর্ব্যক্ত বাংলাদেশের

ছবি

সুপ্রিম কোর্টে শুনানিতে নেপালের প্রধান বিচারপতি

ছবি

সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে অপরাধের দায়মুক্তির অবসান চায় এমএফসি

ছবি

ঝিলের জায়গায় থানা ভবন নির্মাণ বন্ধের নির্দেশ হাইকোর্টের

ছবি

বিদেশি এয়ারলাইন্স: জিএসএ নিয়োগ বহাল রাখার দাবি

ছবি

জেল হত্যা দিবস আজ

ছবি

তৃতীয় ধাপের হালনাগাদে ১৩ লাখের বেশি নতুন ভোটার: ইসি সচিব

tab

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রোসাটম ডিজির সাক্ষাৎ

রূপপুরে আরও ২৪০০ মেগাওয়াট পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে আলোচনা

সংবাদ অনলাইন রিপোর্ট

মঙ্গলবার, ০২ এপ্রিল ২০২৪

পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রোসাটমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রুশ রাষ্ট্রীয় পরমাণু শক্তি করপোরেশন রোসাটমের মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে এলে প্রধানমন্ত্রী এ অনুরোধ জানান।

রোসাটমের আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা এবং তত্ত্বাবধানে এই এলাকায় ২৪০০ মেগাওয়াটের একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (এনপিপি) স্থাপনের কাজ চলছে। আগামী বছর কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট থেকে ১২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার কথা রয়েছে। সমান সক্ষমতার দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে এর পরের বছর। বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিক লাভজনক বলে মন্তব্য করেছেন রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে রোসাটম মহাপরিচালক রূপপুর এনপিপি এলাকায় দুটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব মো. আলী হোসেন, পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান এবং রূপপুর এনপিপির প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবরসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এসময় উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ব্রিফ করেন প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম।

মহাপরিকল্পনায় পরমাণু থেকে ৬%
বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতের নতুন মহাপরিকল্পনায় (মাস্টারপ্ল্যান-২০২৩ আইইপিএমপি) ২০৪১ সালে বিদ্যুতের চাহিদা ধরা হয়েছে ৫০ হাজার ৩৬৪ মেগাওয়াট। এ চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন সক্ষমতা রাখতে বলা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট।

মহাপরিকল্পনা অনুসারে ২০৪১ সালের মধ্যে ক্লিন এনার্জি থেকে ৪০ শতাংশ বিদ্যুৎ আসবে। এর মধ্যে সৌর থেকে ১৫ শতাংশ, বায়ু থেকে ১০ শতাংশ, পরমাণু শক্তি থেকে ৬ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের কথা বলা হয়েছে।

সে হিসেবে, পরমাণু থেকে ৪৪৫৮ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। রূপপুর এনপিপির ১ ও ২ ইউনিট থেকে আসবে ২৪০০ মেগাওয়াট। সমান সক্ষমতার আরও দুটি ইউনিট নির্মাণ করা গেলে মোট সক্ষমতা দাঁড়াবে ৪৮০০ মেগাওয়াট। রূপপুর এনপিপি সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, নতুন দুটি ইউনিট নির্মাণের ক্ষেত্রে উৎপাদন সক্ষমতা, চুল্লির ধরন এবং কারিগরি অন্যান্য বিষয়ে পূর্বের সব ধরনের নিয়ম-নীতি অনুসরণ করা হবে।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং
প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার মো. নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চলমান প্রকল্পের কাজ শেষ করার পর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের (আরএনপিপি) জায়গায় নতুন আরেকটি প্ল্যান্ট নির্মাণের আহ্বান জানিয়েছেন। এখানে দুটি নতুন ইউনিট স্থাপনের জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে প্রযুক্তিগত জরিপ করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেছেন। এ সময় রোসাটম মহাপরিচালক আলেক্সি লিখাচেভ প্রধানমন্ত্রীকে রূপপুর এনপিপির অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন এবং বলেন যে, ২০২৫ সালের মধ্যে আরএনপিপি উৎপাদনে আসবে এবং জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুত যোগ করতে সক্ষম হবে। তিনি আরও বলেন, আরএনপিপির ৮৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

রোসাটম মহাপরিচালক রূপপুর এনপিপি এলাকায় দুটি নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট (ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪) নির্মাণের প্রস্তাব দেন। তিনি আরও বলেন, প্রথম দুটি ইউনিটের নির্মাণকাজ শেষ হলেই নতুন ইউনিট-৩ ও ইউনিট-৪-এর নির্মাণকাজ শুরু করতে হবে।

এ প্রসঙ্গে আলেক্সি লিখাচেভ আরও বলেন, বিদ্যমান পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সম্প্রসারণ আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে এবং প্রযুক্তিগত ও পারমাণবিক নিরাপত্তার আলোকে অধিক লাভজনক এবং যুক্তিসঙ্গত যা আন্তর্জাতিকভাবে বিবেচনা করা হয়।

তিনি বলেন, বাংলাদেশি ও রাশিয়ানসহ প্রায় ২৫০০ কর্মী এই প্রকল্পে কাজ করছেন যারা তাদের দক্ষতা অর্জন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোসাটম মহাপরিচালককে বিভিন্ন দেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে বাংলাদেশের দক্ষতা কাজে লাগাতে বলেন।

আলেক্সি লিখাচেভ বলেন যে, মহামারী এবং স্যাংশনের জন্য প্রতিবন্ধকতা ছিল, কিন্তু এতদসত্ত্বেও স্বাভাবিক গতিতেই কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কৌশলগতভাবে এই বাধা এড়ানো গেছে।

দক্ষিণাঞ্চলে সম্ভব হয়নি
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক অবস্থায় দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। এজন্য চীন আগ্রহও দেখিয়েছিল। কেন্দ্রটি নির্মাণে সম্ভাব্য স্থান নির্বাচনে একটি প্রকল্প নেয়া হয়। প্রকল্পের আওতায় প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত ১৫টি স্থানের ওপর সমীক্ষা চালিয়ে পাঁচটি স্থান নির্বাচন করা হয়। যার মধ্যে ছিল বরগুনার তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পূর্ব), বরগুনা সদর উপজেলার কুমিরমারা ও পদ্মা মৌজা, তালতলী উপজেলার নিশানবাড়ী (পশ্চিম), পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার চরমোনতাজ ও রাঙ্গাবালী উপজেলার মৌডুবি। পরবর্তীকালে আরও কিছু পরীক্ষা, নিরীক্ষা ও সমীক্ষা করা হয় ওইসব স্থানে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ওই স্থানগুলো পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের বিভিন্ন মানদ-ে উত্তীর্ণ হতে পারেনি।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ১১ মার্চ তার কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেন, ‘আমরা রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। আরেকটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের চেষ্টা করেছিলাম দক্ষিণে। কিন্তু সেখাানের মাটি এত নরম, প্রত্যেকটি দ্বীপে অনুসন্ধান চালিয়ে আমরা দেখেছি। আসলে সেখানে করা বোধ হয় সম্ভব নয়। তবে এখন যেখানে আমরা বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি সেটার কাজ সম্পূর্ণ সমাপ্ত হওয়ার পর দ্বিতীয়টাও আমরা এই পাবনাতে, এই রূপপুরেই করতে পারবো।’

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। তাকে উদ্দেশ্যে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটার কাজ যখন শেষ হবে সঙ্গে সঙ্গে আমরা যেন দ্বিতীয়টার কাজ শুরু করতে পারি এখন থেকে আমাদের সে প্রস্তুতি নিতে হবে’।

স্পেন্ট ফুয়েল নিয়েও আলোচনা
প্রধানমন্ত্রী ও রোসাটম ডিজির সাক্ষাতে ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল (ব্যবহারের পর অবশিষ্ট পারমাণবিক জ্বালানি। সাধারণ ভাষায় একে পারমাণবিক বর্জ্য বলা হলেও প্রক্রিয়করণের মাধ্যমে এটি পুনরায় ব্যবহারযোগ্য) ফেরত পাঠানো নিয়েও আলোচনা হয় বলে ব্রিফিংয়ে জানানো হয়।

রূপপুর এনপিপিতে ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি ফেরত দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে

আন্তঃরাষ্ট্রীয় চুক্তি আগেই সই হয়েছে।

শেখ হাসিনা রূপপুর এনপিপির প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ‘স্পেন্ট নিউক্লিয়ার ফুয়েল’ ফিরিয়ে নেয়ার সমস্ত আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

উত্তরে, রোসাটম মহাপরিচালক রুশ সরকারের পক্ষ থেকে রূপপুর এনপিপির প্রথম এবং দ্বিতীয় ইউনিটের ব্যবহৃত পারমাণবিক জ্বালানি রাশিয়ায় ফেরত নেয়ার আশ্বাস দেন।

ভ্লাদিমির পুতিনকে শুভেচ্ছা
শেখ হাসিনা জ্বালানি নিরাপত্তা বিশেষ করে বাংলাদেশে এই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান বলেও ব্রিফিংয়ে উল্লেখ করা হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে এবং এজন্য তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান।

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ১৯৭১ সালে রাশিয়ার সহায়তার কথা এবং এবং মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে দেশটির সহযোগিতার কথা স্মরণ করেন। প্রধানমন্ত্রী রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে পুনরায় নির্বাচিত হওয়ায় তাকে শুভেচ্ছা জানান।

রোসাটম ঢাকা এজেন্সির বিজ্ঞপ্তি
১ এপ্রিল সোমবার ঢাকায় আসেন রোসাটমের মহাপরিচালক। এরপর তিনি নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প ও গ্রিন সিটি আবাসিক এলাকা পরিদর্শন করেন। মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) রসাটমের ঢাকার জনসংযোগ এজেন্সি ট্রিউন গ্রুপের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এতথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে রোসাটম ডিজির সৌজন্য সাক্ষাতে পরমাণু শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিয়ে বাংলাদেশ-রাশিয়া কৌশলগত সহযোগিতার বিষয়গুলো স্থান পেয়েছে তাদের আলোচনায়।

সাক্ষাতে রোসাটম ডিজি আলেক্সি লিখাচেভ তার বক্তব্যে বলেন, ‘রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণের ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন অর্জিত হতে যাচ্ছে। চলতি বছর শেষ হওয়ার আগেই প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে। বর্তমানে আমরা নতুন প্রকল্প নিয়ে আলোচনা করছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এলাকায় আরও দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ ইউনিট নির্মাণের ব্যাপারে বাংলাদেশ গভীর আগ্রহ প্রকাশ করেছে।’

আলেক্সি লিখাচেভ আরও বলেন, উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মাল্টিপারপাস গবেষণা রিঅ্যাক্টর নির্মাণের বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গবেষণা রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞান ও নিউক্লিয়ার মেডিসিনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাধান দিতে সক্ষম।

সফর শেষে আলেক্সি লিখাচেভ মঙ্গলবারই রাশিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

পরমাণু ক্লাবে বাংলাদেশ
গত বছর ৫ অক্টোবর রূপপুর এনপিপিতে ইউরেনিয়াম (পারমাণবিক জ্বালানি) হস্তান্তর করে রাশিয়া। ক্রেমলিন থেকে ওই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পারমাণবিক শক্তি অর্জন উপলক্ষে বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।

আর্থিক বিবেচনায় বাংলাদেশের একক প্রকল্প হিসেবে সবচেয়ে বড় প্রকল্প রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। প্রায় এক লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন এই প্রকল্পের ৯০ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে বাংলাদেশকে দিচ্ছে রাশিয়া। যেটা ২৮ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। তবে ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ড পাবে সরকার।

রাশিয়ার কারিগরি ও আর্থিক সহায়তায় পাবনার ঈশ্বরদীর রূপপুরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের আওতায় বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্বে রয়েছে। থ্রি-প্লাস জেনারেশনের ভিভিআর-১২০০ প্রযুক্তির পারমাণবিক চুল্লি ব্যবহার করা হচ্ছে এই প্রকল্পে; যা বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ দাবি করা হচ্ছে। প্রকল্পের জেনারেল ডিজাইনার ও কন্ট্রাক্টর রোসাটম।

back to top