alt

জাতীয়

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

শাফিউল আল ইমরান : মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

আজকাল সকালের নাশতা থেকে বিকালের হালকা খাবারেও গমের আটার রুটি বা পরোটার আধিক্য বেড়েই চলছে। এছাড়া, সারাদিনের খাদ্যাভাসে রুটি, পাউরুটি, বিস্কিট জাতীয় খাদ্য আমাদের খাবারে এনেছে বৈচিত্র্য। বর্তমানে দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি গমের তৈরি। চালের পরেই আমরা গমের তৈরি খাবার বেশি ভোগ করি।

ইদানীং অসংক্রামক রোগ ডায়াবেটিসের বিস্তার ঠেকাতে ভাতের ‘আদর্শ বিকল্প’ হিসেবে পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারা আটার রুটি খাদ্য তালিকায় রাখারও পরামর্শ দিচ্ছেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের গম আবাদ হলেও এখন তা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

তথ্য বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে গমের চাহিদা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে গম চাষ। দেশে গমের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬৭ লাখ টন গম ও গমজাত পণ্য আমদানি করতে হয়।

কৃষকরা জানান, তারা গম চাষে আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না। তাই গমের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। কয়েক বছর আগেও যত সংখ্যক কৃষক গম চাষ করতেন, বর্তমানে তারচেয়ে কম সংখ্যক কৃষক গম চাষ করছেন। তাও কম পরিমাণ জমিতে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষক রানা মিয়া(৪০) সংবাদকে বলেন, ‘এক বিঘা ভিওত (জমিতে) গম আবাদ (চাষ) করার জন্য খরচ হচে ৪-৫ হাজার ট্যাকা। একবার তো ইন্দুরে কাটে (ইদুর কেটে) সব গমই নষ্ট করে ফেলাচে (ফেলছে)। তখন থেকে গম না আবাদ করে ভুট্টার আবাদ করি।’

রানা মিয়া প্রায় দুই বিঘা জমিতে ২ বছর আগে ২-৩ বার গমের আবাদ করেছন। আশানূরুপ ফলন ও লাভ না পেয়ে এখন ওই জমিতে ভূট্টার আবাদ করছেন। গত বছরও ভূট্টার ভালো ফলন পেয়েছেন ও গমের চেয়ে কয়েকগুন বেশী লাভ করেছেন। তাই গম চাষ ছেড়ে দিয়ে ভূট্টার আবাদে মনোযোগী হয়েছেন।

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গড়ের বাজার এলাকার ফারুক মিয়া(৪৫) জানান, কয়েক বছর আগেও মেছনা নদীতে (করোতোয়ার স্থানীয় নাম) প্রচুর গমের আবাদ হতো এখন আর ওই এলাকায় গমের কোন গাছই দেখা যায়না, বিঘার পর বিঘা শুধু ভুট্টার ক্ষেত।

সেখানকার এক কৃষক বলেন, ‘গম চাষ করে আমরা লাভবান হতে পারছিলাম না, সেজন্য গম চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছি। গমের উন্নত জাত ও গমের আশানুরূপ দাম পেলে আমরা পুনরায় গম চাষে আগ্রহী হব।’

তথ্য কী বলছে:

বাংলাদেশের সব চেয়ে বেশী গম চাষ হয় দিনাজপুর অঞ্চলে। দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে গম ফসলের আবাদ ও কর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌসুমে গম আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। এর আগের মৌসুম গুলোতেও চাষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে গমের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ২ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। কিন্ত কৃষক আবাদ করেছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমি। ফলে এবারো গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে না।

২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট গম উৎপাদন হয় ১১ লাখ ৭০ হাজার টন। ২০২১-২২ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৮৫ হাজার টন করে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয় ১০ লাখ ২৯ হাজার টন।

সরকারি তথ্যে দেখা যায় প্রতি বছরই দেশে গম আমদানি কমলেও এবার চিত্র একটু ভিন্ন। চলমান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ১২ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ লাখ ২৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ও ২০১৯-২০-এ ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টন গম আমদানি হয়।

গম আবাদে চ্যালেঞ্জ :

গম চাষের জন্য উপযুক্ত কম সেচের সুযোগ সম্পন্ন দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি। কিন্ত সেই মাটিতে ভূ-উপরস্থ সেচ ও ভূগর্ভস্থ সেচ সুবিধা সুলভ হয়ে ওঠার কারণে উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড বোরো ধানের দিকে ঝুকছে কৃষকরা। আবার ধান কাটা-মাড়াই যতটা সহজ, গম অতটা না হওয়ার কারণে সেইসব জমিতে আলু ও ভুট্টার আবাদও কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহী করে তুলছে।

দেশের বাজারে গমের তুলনায় ধান, আলু ও ভুট্টা প্রভৃতির চাহিদা ও বাজার অনেক বড়। সরকারি খাদ্য অধিদপ্তর যে হারে ধান কেনে এবং সারা বছর বেসরকারিভাবে ধানের বেচাকেনা হয়, সে হারে আটার চাহিদা থাকলেও গমের বেচাকেনা খুবই সীমাবদ্ধ। দ্রুত আর্দ্রতা শোষণক্ষমতা গমের বিপণন ও সংরক্ষণ ধানের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা যা বললেন:

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, দিনাজপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সিদ্দিকুন নবী মন্ডল সংবাদকে বলেন, ‘গমের আবাদ কমার বেশ কিছু কারণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম শীতে বেশিরভাগ হাই-ভ্যালু ক্রপ (পটেটো, ভুট্টা, সরিষা)। মরিচের জন্যও হচ্ছে।’

‘যেখানে এক একর জমিতে গম চাষে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে, সেখানে ভুট্টা করে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। মরিচ চাষে তা লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। যে কৃষকের এসব বিনিয়োগ করার সক্ষমতা আছে তারা গমের পরিচর্যা ও কম বিনিয়োগ করতে হলেও তা চাষ না করে হাইভ্যালু ক্রপের (অধিক লাভের ফসলের) দিকেই সুইচ (পরিবর্তন) করছে। কারণ, কৃষক পার ইউনিট এরিয়া থেকে লাভ বেশি পাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

ড. সিদ্দিকুন নবী মন্ডল গম চাষে কৃষক নিরুৎসী হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন, গমের ‘আনস্টেবল প্রাইজ,’ (অস্থিতিশীল দাম) যেখানে মরিচ বা ভুট্টা মাঠে থাকতেই বিক্রি হয়ে যায়।

সরকার যদিও গম কেনার জন্য একটা দাম নির্ধারণ করে দেয় কিন্ত সেটা কতখানি মাঠে বাস্তবায়িত হয় সেটা নিয়েও প্রশ্ন তার। তিনি বলেন, ‘যে মূল্য নির্ধারণ হয় সেটার লাভ কৃষক পায়না।’

কৃষক কিভাবে উৎসাহী হবে:

জলবায়ু পরিবর্তনের কোন প্রভাব গমের উপর পড়েনা। কারণ গম জলবায়ু সহিষ্ণু শষ্য। ড. সিদ্দিকুন নবীর পরামর্শ; ‘সরকারের পলিসি লেভেলে কাজ করতে হবে, যদিও তা কঠিন। আমাদের দেশে বরেন্দ্র অঞ্চল বা ঠাকুরগাঁয়ের কিছু উচু জমিতে সেচ দিয়ে বোরো ধান করতে হয়। ওই অঞ্চলগুলোতে বোরোতে একদিন পরপর সেচ দিতে হয়। সেখানে গমের ৪ মাসের জীবনে এক থেকে দুইবার সেচ লাগে। সরকার যদি মনে করে ওইসব এলাকার গ্রাউন্ড ওয়াটার উঠাইলে আর্সেনিকসহ নানান রোগ বেড়ে যেতে পারে, ভূগর্ভস্থ পানির ওয়াটার টেবল নিচে নেমে যাবে। ওইসমস্ত এলাকায় যেখানে ‘হেভী ইরিগেশন’ থেকে কৃষকদের ধান না করে গম চাষের উপর সাবসিডাইজ (ভর্তূকি) করে সেই সাথে যদি কৃষকের গম মার্কেটের সাথে লিংক করে দেওয়া হয় তবে কৃষক গম চাষে উৎসাহিত হতে পারে।

আমাদের দেশে ‘আনটাচ এরিয়া’ (অনাবাদী এলাকা) আছে বিশেষ করে স্যালাইন এরিয়া। যেমন; ভোলা জেলার কিছু জমি আছে সেচ দেওয়ার ব্যাবস্থা নেই। আবার সেই এলাকায় সরকারের নিয়ম আছে ডিপ টিউবয়েল বা স্যালো টিউবওয়েল বসাতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে সেখানে কিছূ ক্যানেল বা দূরের নদী থেকে লম্বা পাইপ দিয়ে জমিতে সেচ দেয় সেসব এলাকার কৃষকদের সুবিধা দিয়ে গম চাষে উৎসাহিত করা যেতে পারে।’

বিএনপির নামে ছদ্মবেশে আওয়ামী লীগ চাঁদাবাজি করছে: মির্জা আব্বাস

হাবীবুল্লাহ বাহার কলেজের উপাধ্যক্ষ হত্যার ‘রহস্য উদ্ঘাটন

ছবি

দেশে পাম জাতীয় ফলের আবাদ বাড়ানোর পরিকল্পনা

‘ওসিকে বলেন আসতে, আমি ইউনিয়ন ছাত্রদলের প্রেসিডেন্ট’

জাতিসংঘের মহাসচিব আসছেন বৃহস্পতিবার

ছবি

পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাই : ১৯০ জিম্মি উদ্ধার, ৩০ হামলাকারী নিহত

ছবি

ঢাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে লাগবে পুলিশের অনুমতি

ছবি

এবার সেনাবাহিনীর ১৬ স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠানের নাম বদল

ধর্ষণবিরোধী গণপদযাত্রা: পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে ১২ জনের নামে মামলা

ছবি

টিসিবির ট্রাকসেল: ‘যতলোক লাইনে দাঁড়াইছে আজ আর পণ্য পাবানা’

মাগুরার শিশুটির অবস্থার ‘অবনতি’, তিন আসামির ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ

ছবি

নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে

ধর্ষণ মামলার বিচার অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি, জানালেন আইন উপদেষ্টা

রিসিভার নয়, নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে বেক্সিমকো গ্রুপ : হাইকোর্ট

ছবি

সারাদেশে সরকারি হাসপাতালে কর্মবিরতি

ছবি

শাপলা চত্বরে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ধর্ষণ মামলার বিচার দ্রুত করতে আইন সংশোধনের উদ্যোগ

ছবি

ঈদের আগেই বিভক্ত হচ্ছে এনবিআর

ছবি

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে বাংলাদেশ সফরে জাতিসংঘ মহাসচিব

ছবি

কক্সবাজারে এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে ইফতার করবেন জাতিসংঘ মহাসচিব ও প্রধান উপদেষ্টা

ছবি

‘স্ট্যান্ড ফর এনআইডি’ কর্মসূচিতে ইসি কর্মকর্তারা

ছবি

সচিবালয়ের অভিমুখে চিকিৎসকদের লংমার্চ পথে পুলিশি বাধা

ছবি

এমবিবিএস-বিডিএস ছাড়া ‘ডাক্তার’ পদবি ব্যবহারে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা, আইন লঙ্ঘনে শাস্তির বিধান

ছবি

সেনাবাহিনীর ১৬টি সংস্থা, প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনার নাম পরিবর্তন

ছবি

সারাদেশের চিকিৎসক ও মেডিকেল শিক্ষার্থীদের কর্মবিরতি: সেবা কার্যক্রম ব্যাহত

ছবি

রাতেই দেশে আসছে সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর মরদেহ, বনানীতে দাফন কাল

ছবি

মাগুরার শিশুর অবস্থার আরও অবনতি, দুইবার ‘হৃৎস্পন্দন বন্ধ হয়ে যায়

ছবি

নিরাপত্তা নির্দেশিকা বাতিল: হাইকোর্টের রুলের আগেই পিছু হটল সরকার

ছবি

ধর্ষণবিরোধী আন্দোলনে পুলিশের লাঠিচার্জ : ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসি আবদুল্লাহ আল মামুনের অপসারণের দাবি, মশাল মিছিলের ঘোষণা

ছবি

ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের বাধা, ধাক্কাধাক্কি, লাঠিপেটা

ছবি

সুধাসদনসহ হাসিনা পরিবারের সম্পত্তি ও ১২৪ ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ

ছবি

ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ককে নেতিবাচক মনে করছেন ৫৮ শতাংশ, চিনের সঙ্গে সম্পর্ককে ইতিবাচক মনে করেন ৭৫ শতাংশ মানুষ

ছবি

নাগরিক সেবার বেহাল দশা: ঘুষ ও হয়রানির অভিযোগে গণশুনানিতে কান্নায় ভেঙে পড়লেন এক ব্যক্তি

ছবি

পাঠ্যবইয়ের কাগজ কেনায় রাখাল রাহার সংশ্লিষ্টতা নেই: এনসিটিবি চেয়ারম্যান

ছবি

অর্থনীতির ভঙ্গুর দশা উত্তরণের প্রতিশ্রুতি আনিসুজ্জামান চৌধুরীর

ছবি

এলডিসি থেকে উত্তরণ পিছিয়ে দেওয়ার বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করছে সরকার

tab

জাতীয়

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে গমের আবাদ কম

শাফিউল আল ইমরান

মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪

আজকাল সকালের নাশতা থেকে বিকালের হালকা খাবারেও গমের আটার রুটি বা পরোটার আধিক্য বেড়েই চলছে। এছাড়া, সারাদিনের খাদ্যাভাসে রুটি, পাউরুটি, বিস্কিট জাতীয় খাদ্য আমাদের খাবারে এনেছে বৈচিত্র্য। বর্তমানে দেশে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি গমের তৈরি। চালের পরেই আমরা গমের তৈরি খাবার বেশি ভোগ করি।

ইদানীং অসংক্রামক রোগ ডায়াবেটিসের বিস্তার ঠেকাতে ভাতের ‘আদর্শ বিকল্প’ হিসেবে পুষ্টিবিদ ও ডাক্তারা আটার রুটি খাদ্য তালিকায় রাখারও পরামর্শ দিচ্ছেন।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার এক প্রতিবেদন বলছে, গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের গমের আমদানি বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। ১৯৮৫ সালে দেশে প্রায় ৭ লাখ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের গম আবাদ হলেও এখন তা ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

তথ্য বলছে, গত এক দশকে বাংলাদেশে গমের চাহিদা বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ। তবে দিনদিন হ্রাস পাচ্ছে গম চাষ। দেশে গমের চাহিদা মেটাতে বিদেশ থেকে প্রচুর পরিমাণে গম আমদানি করতে হচ্ছে। খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে এখন বছরে গড়ে ৫০ থেকে ৬৭ লাখ টন গম ও গমজাত পণ্য আমদানি করতে হয়।

কৃষকরা জানান, তারা গম চাষে আশানুরূপ লাভ পাচ্ছেন না। তাই গমের পরিবর্তে অন্যান্য ফসল চাষ করছেন। কয়েক বছর আগেও যত সংখ্যক কৃষক গম চাষ করতেন, বর্তমানে তারচেয়ে কম সংখ্যক কৃষক গম চাষ করছেন। তাও কম পরিমাণ জমিতে।

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলার কৃষক রানা মিয়া(৪০) সংবাদকে বলেন, ‘এক বিঘা ভিওত (জমিতে) গম আবাদ (চাষ) করার জন্য খরচ হচে ৪-৫ হাজার ট্যাকা। একবার তো ইন্দুরে কাটে (ইদুর কেটে) সব গমই নষ্ট করে ফেলাচে (ফেলছে)। তখন থেকে গম না আবাদ করে ভুট্টার আবাদ করি।’

রানা মিয়া প্রায় দুই বিঘা জমিতে ২ বছর আগে ২-৩ বার গমের আবাদ করেছন। আশানূরুপ ফলন ও লাভ না পেয়ে এখন ওই জমিতে ভূট্টার আবাদ করছেন। গত বছরও ভূট্টার ভালো ফলন পেয়েছেন ও গমের চেয়ে কয়েকগুন বেশী লাভ করেছেন। তাই গম চাষ ছেড়ে দিয়ে ভূট্টার আবাদে মনোযোগী হয়েছেন।

রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার গড়ের বাজার এলাকার ফারুক মিয়া(৪৫) জানান, কয়েক বছর আগেও মেছনা নদীতে (করোতোয়ার স্থানীয় নাম) প্রচুর গমের আবাদ হতো এখন আর ওই এলাকায় গমের কোন গাছই দেখা যায়না, বিঘার পর বিঘা শুধু ভুট্টার ক্ষেত।

সেখানকার এক কৃষক বলেন, ‘গম চাষ করে আমরা লাভবান হতে পারছিলাম না, সেজন্য গম চাষ বাদ দিয়ে ভুট্টাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করছি। গমের উন্নত জাত ও গমের আশানুরূপ দাম পেলে আমরা পুনরায় গম চাষে আগ্রহী হব।’

তথ্য কী বলছে:

বাংলাদেশের সব চেয়ে বেশী গম চাষ হয় দিনাজপুর অঞ্চলে। দিনাজপুর কৃষি অঞ্চলে ২০২২-২৩ রবি মৌসুমে গম ফসলের আবাদ ও কর্তন সংক্রান্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মৌসুমে গম আবাদের লক্ষমাত্রা ছিল ৬৯ হাজার ৪০৭ হেক্টর জমি। আবাদ হয়েছে ৬০ হাজার ৫৭ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। এর আগের মৌসুম গুলোতেও চাষের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৩ হাজার ৩শ হেক্টর জমিতে গমের উৎপাদনের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ২ হাজার ৮৫ মেট্রিক টন। কিন্ত কৃষক আবাদ করেছে ৩ লাখ ১২ হাজার ৯৯০ হেক্টর জমি। ফলে এবারো গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পুরণ হবে না।

২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট গম উৎপাদন হয় ১১ লাখ ৭০ হাজার টন। ২০২১-২২ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে উৎপাদন হয় ১০ লাখ ৮৫ হাজার টন করে। আর ২০১৯-২০ অর্থবছরে হয় ১০ লাখ ২৯ হাজার টন।

সরকারি তথ্যে দেখা যায় প্রতি বছরই দেশে গম আমদানি কমলেও এবার চিত্র একটু ভিন্ন। চলমান ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে এ পর্যন্ত ৪০ লাখ ১২ হাজার টন গম আমদানি হয়েছে। এর আগে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৫০ লাখ ২৫ হাজার টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ৫৫ লাখ ৭৯ হাজার টন, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫৪ লাখ ৫৩ হাজার ও ২০১৯-২০-এ ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টন গম আমদানি হয়।

গম আবাদে চ্যালেঞ্জ :

গম চাষের জন্য উপযুক্ত কম সেচের সুযোগ সম্পন্ন দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি। কিন্ত সেই মাটিতে ভূ-উপরস্থ সেচ ও ভূগর্ভস্থ সেচ সুবিধা সুলভ হয়ে ওঠার কারণে উচ্চফলনশীল ও হাইব্রিড বোরো ধানের দিকে ঝুকছে কৃষকরা। আবার ধান কাটা-মাড়াই যতটা সহজ, গম অতটা না হওয়ার কারণে সেইসব জমিতে আলু ও ভুট্টার আবাদও কৃষকদের গম চাষে নিরুৎসাহী করে তুলছে।

দেশের বাজারে গমের তুলনায় ধান, আলু ও ভুট্টা প্রভৃতির চাহিদা ও বাজার অনেক বড়। সরকারি খাদ্য অধিদপ্তর যে হারে ধান কেনে এবং সারা বছর বেসরকারিভাবে ধানের বেচাকেনা হয়, সে হারে আটার চাহিদা থাকলেও গমের বেচাকেনা খুবই সীমাবদ্ধ। দ্রুত আর্দ্রতা শোষণক্ষমতা গমের বিপণন ও সংরক্ষণ ধানের চেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

বিশেষজ্ঞরা যা বললেন:

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট, দিনাজপুরের ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. সিদ্দিকুন নবী মন্ডল সংবাদকে বলেন, ‘গমের আবাদ কমার বেশ কিছু কারণ আছে, তার মধ্যে অন্যতম শীতে বেশিরভাগ হাই-ভ্যালু ক্রপ (পটেটো, ভুট্টা, সরিষা)। মরিচের জন্যও হচ্ছে।’

‘যেখানে এক একর জমিতে গম চাষে ২০ হাজার টাকা লাভ হবে, সেখানে ভুট্টা করে ৫০-৬০ হাজার টাকা লাভ হয়। মরিচ চাষে তা লাখ টাকা পর্যন্ত ছাড়িয়ে যায়। যে কৃষকের এসব বিনিয়োগ করার সক্ষমতা আছে তারা গমের পরিচর্যা ও কম বিনিয়োগ করতে হলেও তা চাষ না করে হাইভ্যালু ক্রপের (অধিক লাভের ফসলের) দিকেই সুইচ (পরিবর্তন) করছে। কারণ, কৃষক পার ইউনিট এরিয়া থেকে লাভ বেশি পাচ্ছে,’ বলেন তিনি।

ড. সিদ্দিকুন নবী মন্ডল গম চাষে কৃষক নিরুৎসী হওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে মনে করেন, গমের ‘আনস্টেবল প্রাইজ,’ (অস্থিতিশীল দাম) যেখানে মরিচ বা ভুট্টা মাঠে থাকতেই বিক্রি হয়ে যায়।

সরকার যদিও গম কেনার জন্য একটা দাম নির্ধারণ করে দেয় কিন্ত সেটা কতখানি মাঠে বাস্তবায়িত হয় সেটা নিয়েও প্রশ্ন তার। তিনি বলেন, ‘যে মূল্য নির্ধারণ হয় সেটার লাভ কৃষক পায়না।’

কৃষক কিভাবে উৎসাহী হবে:

জলবায়ু পরিবর্তনের কোন প্রভাব গমের উপর পড়েনা। কারণ গম জলবায়ু সহিষ্ণু শষ্য। ড. সিদ্দিকুন নবীর পরামর্শ; ‘সরকারের পলিসি লেভেলে কাজ করতে হবে, যদিও তা কঠিন। আমাদের দেশে বরেন্দ্র অঞ্চল বা ঠাকুরগাঁয়ের কিছু উচু জমিতে সেচ দিয়ে বোরো ধান করতে হয়। ওই অঞ্চলগুলোতে বোরোতে একদিন পরপর সেচ দিতে হয়। সেখানে গমের ৪ মাসের জীবনে এক থেকে দুইবার সেচ লাগে। সরকার যদি মনে করে ওইসব এলাকার গ্রাউন্ড ওয়াটার উঠাইলে আর্সেনিকসহ নানান রোগ বেড়ে যেতে পারে, ভূগর্ভস্থ পানির ওয়াটার টেবল নিচে নেমে যাবে। ওইসমস্ত এলাকায় যেখানে ‘হেভী ইরিগেশন’ থেকে কৃষকদের ধান না করে গম চাষের উপর সাবসিডাইজ (ভর্তূকি) করে সেই সাথে যদি কৃষকের গম মার্কেটের সাথে লিংক করে দেওয়া হয় তবে কৃষক গম চাষে উৎসাহিত হতে পারে।

আমাদের দেশে ‘আনটাচ এরিয়া’ (অনাবাদী এলাকা) আছে বিশেষ করে স্যালাইন এরিয়া। যেমন; ভোলা জেলার কিছু জমি আছে সেচ দেওয়ার ব্যাবস্থা নেই। আবার সেই এলাকায় সরকারের নিয়ম আছে ডিপ টিউবয়েল বা স্যালো টিউবওয়েল বসাতে পারবেনা। সেক্ষেত্রে সেখানে কিছূ ক্যানেল বা দূরের নদী থেকে লম্বা পাইপ দিয়ে জমিতে সেচ দেয় সেসব এলাকার কৃষকদের সুবিধা দিয়ে গম চাষে উৎসাহিত করা যেতে পারে।’

back to top