‘এবারের মতো গরম আগে দেখি নাই। এক্কেবারে আগুন। গা জ্বলে। মনে হয় গায়ের চামড়া পুইড়া যাইতাছে’ সংবাদের সঙ্গে এভাবেই কথা বলেন রিকশাচালক শরিফুল আলম।
পল্টন মোড়ে নিজের রিকশার পাদানিতে বসা শরিফুল। পুড়ো শরীর ঘামে জবজবে ভেজা, শার্টটা লেপটে আছে গায়ে। হাতের গামছা ভিজিয়ে মাথায় দিয়ে রেখেছেন হাতে ঠাণ্ডা পানির বোতল। একজন যাত্রিকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজে নিজেই বলছেন, ‘এহন গাড়ি চালাইলে রাস্তাতেই পইড়া মরোন লাগবো’।
এই গরমে এতো ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না এই প্রতিবেদক বল্লে, শরিফুল বলেন, ‘হ অনেকেই এইডা কয়। কিন্তু গাড়ি টাইনা একটু ঠাণ্ডা পানি খাইতে মন চায়। টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা চালাইসি এতো খারাপ লাগে নাই। এহন ১০ মিনিট চালাইলে বুক, গলা হুকায় (শুকায়) যায়’।
গরমের কারণে তার দৈনন্দিন আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গরমে কেউ বাসার বাইরে আহে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ। রিকশায় চড়া মানুষ কম’।
‘আর আমিও গাড়ি টানতে পারি না। একবার খ্যাপ মারলে আধাঘণ্টা জিরান লাগে। পানি খায়াও গলা ভেজে না। কোন গজবে পড়ছি’।
একই অবস্থা বাইরে বেরোনো প্রায় মানুষেরই। উত্তরা থেকে মেট্রোতে করে সচিবালয় স্টেশনে নামেন মো. মহসীন। একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মেট্রো থেকে স্টেশনে নামার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো যেন আগুনের হলকা এসে শরীরে লাগলো। সেদ্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। একটা বিশ্রি রকমের গরম’।
মহসীন বলেন, এই গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ঠান্ডা (এসি) থেকে চট করে প্রচণ্ড গরম আরও ক্ষতিকর। আমার ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী সবাই অসুস্থই বলা চলে। বাচ্চারা কিছু খেতে চাইছে না। স্ত্রী মাথা ব্যথায় অস্থির। রোদের দিকে তাকানো যায় না। এখন একটু বৃষ্টি চাই। আর কিছু না। বৃষ্টিই পারে এই দূর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে।’
তাপপ্রবাহে কাহিল যখন মানুষ তখন ঢাকাসহ বাংলাদেশের ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানালো আবহাওয়া অফিস। একইসঙ্গে, দিনের গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়ে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে হিট অ্যালার্ট বা সতর্ক বার্তার মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে আগামী বুধবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নতুন করে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সোমবার সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত তাপপ্রবাহের এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, তাপমাত্রা খানিকটা কমে ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে আবার তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তাই সতর্কবার্তার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বে জারি করা অ্যালার্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল সোমবার। তবে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে অধিদপ্তর আবার হিট অ্যালার্ট জারি করলো।
পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র এবং রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন বজলুর রশিদ।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সিলেট অঞ্চলের দু-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তবে অন্য কোথাও বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি হলে এই গরমে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত শনিবার কয়েক জেলায় সেটা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নেয়। গত শনিবার এই মৌসুমে তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল সবচেয়ে বেশি; সেদিন যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২১ এপ্রিল রোববার তাপমাত্রা আগেরদিন থেকে সামান্য কমেছিল, কিন্তু তাপপ্রবাহের এলাকার বিস্তার বেড়েছে; এখন তা ৫১ জেলায়। সোমবার আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমার সম্ভাবনা থাকলেও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
সোমবার, ২২ এপ্রিল ২০২৪
‘এবারের মতো গরম আগে দেখি নাই। এক্কেবারে আগুন। গা জ্বলে। মনে হয় গায়ের চামড়া পুইড়া যাইতাছে’ সংবাদের সঙ্গে এভাবেই কথা বলেন রিকশাচালক শরিফুল আলম।
পল্টন মোড়ে নিজের রিকশার পাদানিতে বসা শরিফুল। পুড়ো শরীর ঘামে জবজবে ভেজা, শার্টটা লেপটে আছে গায়ে। হাতের গামছা ভিজিয়ে মাথায় দিয়ে রেখেছেন হাতে ঠাণ্ডা পানির বোতল। একজন যাত্রিকে ফিরিয়ে দিয়ে নিজে নিজেই বলছেন, ‘এহন গাড়ি চালাইলে রাস্তাতেই পইড়া মরোন লাগবো’।
এই গরমে এতো ঠাণ্ডা পানি খাওয়া ঠিক না এই প্রতিবেদক বল্লে, শরিফুল বলেন, ‘হ অনেকেই এইডা কয়। কিন্তু গাড়ি টাইনা একটু ঠাণ্ডা পানি খাইতে মন চায়। টানা ঘণ্টার পর ঘণ্টা রিকশা চালাইসি এতো খারাপ লাগে নাই। এহন ১০ মিনিট চালাইলে বুক, গলা হুকায় (শুকায়) যায়’।
গরমের কারণে তার দৈনন্দিন আয় প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এই গরমে কেউ বাসার বাইরে আহে না। স্কুল-কলেজ বন্ধ। রিকশায় চড়া মানুষ কম’।
‘আর আমিও গাড়ি টানতে পারি না। একবার খ্যাপ মারলে আধাঘণ্টা জিরান লাগে। পানি খায়াও গলা ভেজে না। কোন গজবে পড়ছি’।
একই অবস্থা বাইরে বেরোনো প্রায় মানুষেরই। উত্তরা থেকে মেট্রোতে করে সচিবালয় স্টেশনে নামেন মো. মহসীন। একজন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। তিনি বলেন, ‘মেট্রো থেকে স্টেশনে নামার সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো যেন আগুনের হলকা এসে শরীরে লাগলো। সেদ্ধ হওয়ার মতো অবস্থা। একটা বিশ্রি রকমের গরম’।
মহসীন বলেন, এই গরমে মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ঠান্ডা (এসি) থেকে চট করে প্রচণ্ড গরম আরও ক্ষতিকর। আমার ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী সবাই অসুস্থই বলা চলে। বাচ্চারা কিছু খেতে চাইছে না। স্ত্রী মাথা ব্যথায় অস্থির। রোদের দিকে তাকানো যায় না। এখন একটু বৃষ্টি চাই। আর কিছু না। বৃষ্টিই পারে এই দূর্ভোগ থেকে রেহাই দিতে।’
তাপপ্রবাহে কাহিল যখন মানুষ তখন ঢাকাসহ বাংলাদেশের ৪৫টির বেশি জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে বলে জানালো আবহাওয়া অফিস। একইসঙ্গে, দিনের গড় তাপমাত্রা কয়েক ডিগ্রি বেড়ে গিয়ে তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় সারাদেশেই জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সারাদেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে হিট অ্যালার্ট বা সতর্ক বার্তার মেয়াদ আরও তিন দিন বাড়িয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সোমবার (২২ এপ্রিল) থেকে আগামী বুধবার (২৪ এপ্রিল) পর্যন্ত নতুন করে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সোমবার সংস্থাটির আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ স্বাক্ষরিত তাপপ্রবাহের এক সতর্কবার্তায় এ তথ্য জানানো হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, তাপমাত্রা খানিকটা কমে ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার থেকে আবার তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তাই সতর্কবার্তার সময় বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
এর আগে, গত শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে সারাদেশে তিন দিনের হিট অ্যালার্ট জারি করে আবহাওয়া অধিদপ্তর। পূর্বে জারি করা অ্যালার্ট শেষ হওয়ার কথা ছিল সোমবার। তবে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে অধিদপ্তর আবার হিট অ্যালার্ট জারি করলো।
পাবনা ও চুয়াডাঙ্গা জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র এবং রাজশাহী, টাঙ্গাইল, যশোর ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শ্রীমঙ্গল ও চাঁদপুর জেলাসহ ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন বজলুর রশিদ।
তিনি আরও জানান, মঙ্গলবার সিলেট অঞ্চলের দু-এক জায়গায় ঝড়-বৃষ্টি হতে পারে। দিনের তাপমাত্রা বাড়তে পারে। তবে অন্য কোথাও বৃষ্টির তেমন সম্ভাবনা নেই জানিয়ে তিনি বলেন, বাতাসে জলীয়বাষ্প বেশি হলে এই গরমে অস্বস্তি বাড়তে পারে।
এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহ থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাপপ্রবাহ শুরু হয়। গত শনিবার কয়েক জেলায় সেটা অতি তীব্র তাপপ্রবাহের রূপ নেয়। গত শনিবার এই মৌসুমে তাপমাত্রার পারদ চড়েছিল সবচেয়ে বেশি; সেদিন যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ ছিল ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
২১ এপ্রিল রোববার তাপমাত্রা আগেরদিন থেকে সামান্য কমেছিল, কিন্তু তাপপ্রবাহের এলাকার বিস্তার বেড়েছে; এখন তা ৫১ জেলায়। সোমবার আবহাওয়ার বুলেটিনে বলা হয়েছে, দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমার সম্ভাবনা থাকলেও রাতের তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে।