দেশে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আর দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন কমছে। দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চাহিদা যে হারে বাড়ছে তাতে এলএনজি আমদানিই একমাত্র ভরসা। অন্যথায় বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতসহ অন্যান্য উৎপাদনে স্থবিরতা আসবে।
বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য খাতে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের (এমএমসিএফ) বেশী। দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্রীয় ও বিদেশী কোম্পানিগুলোর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এলএনজি মদানীর ক্ষমতা ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ি, চলতি এপ্রিলে গড়ে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানী হচ্ছে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তাতে দৈনিক সরবরাহ ২৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ঘাটতি প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে, সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কল-কারখানায় হচ্ছে সমস্যা।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০৪০ থেকে ২০৪১ সালে দেশে দৈনিক ৭৭৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের চাহিদা তৈরী হবে। ওই সময় দেশীয় উৎপাদন কমে দাড়াবে ১৬৯৪ মিলিয়ন ঘনফুটে। গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি দাঁড়াবে ৬০৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
সরকারের পরিকল্পনা
জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের উৎপাদন হ্রাসের কথা মাথায় রেখে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ কারণেই, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং এলএনজি বিক্রি করে এমন সব দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরী হয়েছে। অন্তত আরও তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরীতে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার ।
পেট্রোবাংলার তথ্য, ২০২১-২০২২ অর্থ বছর থেকে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমান বেড়েছে। সামনে সেটা আরও বাড়বে।
পেট্রোবাংলার হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে গ্যাসের উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ২৩০৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর এলএনজি গড়ে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে দেশীয় উৎপাদন হয়েছে ২১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট, দইনিক এলএনজি আমদানি ছিলো ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৩-২৪ সালে দেশীয় সম্ভাব্য উৎপাদন গড়ে ২১৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর দৈনিক এলএনজি সরবরাহ হবে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়বে এলএনজি আমদানি।
উৎপাদন ও আমদানির ব্যবধান
২০২৪-২০২৫ সালে দৈনিক এলএনজি আমদানির পরিমান হবে ৯৪০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৬ সালে ১৪০৫ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৭ সালে ১৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৮ সালে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৯ সালে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০৩০ সালে হবে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ২০৩১ সালে হবে ২৫৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
এসময় গড়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বা সরবরাহ হবে ১৮’শ থেকে ২১’শ মিলিয়ন ঘনফুট।
কী বলছেন প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাসের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে... বিদ্যুতেও গ্যাস প্রয়োজন। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের যোগান বাড়াতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘ভোলায় বাপেক্স অনুসন্ধান করছে। সেখানে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা ভালো খবর। সাগরেও অনুসন্ধান শুরু হয়ে যাবে।’
তবে চাহিদা অনুপাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ। ‘ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের অল্টারনেটিভও রাখতে হবে।’ তাই এলএনজি আমদানি বাড়াতে সরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকারের পরিকল্পনায় দেখা যায়, বিদ্যমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের বাইরে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট না থাকলে চাহিদা অনুযায়ি এলএনজির যোগান নিশ্চিত করা যাবে।
এলএনজির বর্তমান সক্ষমতা
দেশে দৈনিক এক হাজার এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে। পেট্রোবাংলার তথ্য, ২০১৮ সালের ১৯ আগষ্ট থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এক্সিলারেট এনার্জি দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ সক্ষমতার একটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করে। পরের বছর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল দেশীয় কোম্পানি সামিট আরও ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার একটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপন করে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে।
জ্বাালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১০০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট, দৈনিক) সরবরাহ ক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থাকলেও গড়ে ৭০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এখন চাইলেও বেশি এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ফলে ভবিষৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ করছে সরকার।
এলএনজির নতুন প্রকল্প
সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানিকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পটুয়াখালির পায়রা এলাকায় এক্সিলারেট এনার্জির দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার আরেকটি টার্মিনাল।
এ দুটির নির্মাণ শেষ হলে দেশে মোট দুই হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল তৈরী হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক্সিালারেট এনার্জি তাদের বিদ্যমান টার্মিনাল থেকে আরও বেশি পরিমাণ এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী। জ্বালানি বিভাগে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে তারা। আর, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এলাকায় বিওওটি (বিল্ড, ওউন, অপারেট এন্ড ট্রান্সফার) ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল’ নির্মাণ করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাল ২০২৪ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে।
ভারত থেকে পাইপলাইন
ভারত থেকে ক্রসবর্ডার পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে আরএলএনজি (রিগ্যাসিফাইড লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আইওসিএল (ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন) এবং এইচ-এনার্জির সাথে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছে পেট্রোবাংলা। এখন গ্যাস সরবরাহ চুক্তি চূড়ান্তকরণে কাজ চলছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতায় দেশে কী প্রভাব পড়বে, এই প্রশ্নে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম সম্প্রতি বলেন, ‘এলএনজি আমদানির জন্য আমাদের ইতোমধ্যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি তৈরী করছে সেটা ভাল। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এই মূর্হতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এলএনজি আমদানি নির্ভর করে অর্থনৈতিক সক্ষমতার উপর, বিদেশে এলএনজির দাম কত বেশি বা কম তার উপর। অর্থ সংকটের কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখনই পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করতে পারছে না সরকার। ফলে কেবলমাত্র আমদানি পরিকল্পনা না করে নিজেদের উৎস থেকে গ্যাসের অনুসন্ধানে জোড় দেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, অর্থনীতি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে না পারলে, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে জোড় না দিয়ে কেবল আমদানি পরিকল্পনা ভবিষতে জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আমদানি চুক্তি
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলএনজি আমদানির জন্য সরকার বেশ কিছু চুক্তি করেছে। এরমধ্যে কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ওমানের ওকিউ ট্রেডিং (ওকিউটি) এর কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
কাতার এনার্জি ট্রেডিং থেকে ১৫ বছর মেয়াদে প্রতি বছর ২৪ কার্গো অর্থাৎ ১.৫ থেকে ১.৮ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত বছরের জুনে চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। এছাড়া, ওকিউটি থেকে ১০ বছর মেয়াদে ০.২৫ এমটিপিএ থেকে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে আরেকটি চুক্তি হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে এই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
দেশে গ্যাসের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। আর দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস উৎপাদন কমছে। দেশে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে সরকারের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, চাহিদা যে হারে বাড়ছে তাতে এলএনজি আমদানিই একমাত্র ভরসা। অন্যথায় বিদ্যুৎ ও শিল্প খাতসহ অন্যান্য উৎপাদনে স্থবিরতা আসবে।
বিদ্যুৎ, শিল্প কারখানা ও অন্যান্য খাতে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুটের (এমএমসিএফ) বেশী। দেশের গ্যাসক্ষেত্র থেকে রাষ্ট্রীয় ও বিদেশী কোম্পানিগুলোর দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১৬১৫ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এলএনজি মদানীর ক্ষমতা ১০০০ মিলিয়ন ঘনফুট।
রাষ্ট্রীয় সংস্থা পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ি, চলতি এপ্রিলে গড়ে গ্যাস উৎপাদন হচ্ছে ২০৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এলএনজি আমদানী হচ্ছে গড়ে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। তাতে দৈনিক সরবরাহ ২৬৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ঘাটতি প্রায় ১৪০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। ফলে, সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। কল-কারখানায় হচ্ছে সমস্যা।
পেট্রোবাংলার পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০৪০ থেকে ২০৪১ সালে দেশে দৈনিক ৭৭৫৮ মিলিয়ন ঘনফুট (এমএমসিএফ) গ্যাসের চাহিদা তৈরী হবে। ওই সময় দেশীয় উৎপাদন কমে দাড়াবে ১৬৯৪ মিলিয়ন ঘনফুটে। গ্যাসের দৈনিক ঘাটতি দাঁড়াবে ৬০৬৪ মিলিয়ন ঘনফুট।
সরকারের পরিকল্পনা
জ্বালানি ও খনিজ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, গ্যাসের উৎপাদন হ্রাসের কথা মাথায় রেখে সরকার তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েছে। এ কারণেই, এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ এবং এলএনজি বিক্রি করে এমন সব দেশের সঙ্গে চুক্তি করা হচ্ছে।
ইতোমধ্যে এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরী হয়েছে। অন্তত আরও তিন হাজার মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি আমদানির অবকাঠামো তৈরীতে বিভিন্ন বেসরকারি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করার পরিকল্পনা নিয়ে এগুচ্ছে সরকার ।
পেট্রোবাংলার তথ্য, ২০২১-২০২২ অর্থ বছর থেকে ক্রমান্বয়ে এলএনজি আমদানির পরিমান বেড়েছে। সামনে সেটা আরও বাড়বে।
পেট্রোবাংলার হিসাবে, ২০২১-২২ অর্থ বছরে দেশে গ্যাসের উৎপাদন হয়েছে দৈনিক ২৩০৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর এলএনজি গড়ে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে দেশীয় উৎপাদন হয়েছে ২১৮৪ মিলিয়ন ঘনফুট, দইনিক এলএনজি আমদানি ছিলো ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। ২০২৩-২৪ সালে দেশীয় সম্ভাব্য উৎপাদন গড়ে ২১৭৯ মিলিয়ন ঘনফুট, আর দৈনিক এলএনজি সরবরাহ হবে ৮৫০ মিলিয়ন ঘনফুট। এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বাড়বে এলএনজি আমদানি।
উৎপাদন ও আমদানির ব্যবধান
২০২৪-২০২৫ সালে দৈনিক এলএনজি আমদানির পরিমান হবে ৯৪০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৬ সালে ১৪০৫ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৭ সালে ১৮৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৮ সালে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০২৯ সালে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট, ২০৩০ সালে হবে ২১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট এবং ২০৩১ সালে হবে ২৫৫৫ মিলিয়ন ঘনফুট।
এসময় গড়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বা সরবরাহ হবে ১৮’শ থেকে ২১’শ মিলিয়ন ঘনফুট।
কী বলছেন প্রতিমন্ত্রী
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সম্প্রতি সংবাদকে বলেন, ‘গ্যাসের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নতুন নতুন শিল্পকারখানা হচ্ছে... বিদ্যুতেও গ্যাস প্রয়োজন। দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের যোগান বাড়াতে সব ধরনের চেষ্টা করা হচ্ছে।
‘ভোলায় বাপেক্স অনুসন্ধান করছে। সেখানে গ্যাস পাওয়া যাচ্ছে, এটা ভালো খবর। সাগরেও অনুসন্ধান শুরু হয়ে যাবে।’
তবে চাহিদা অনুপাতে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে গ্যাসের যোগান নিশ্চিত করায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে জানান নসরুল হামিদ। ‘ভবিষ্যৎ জ্বালানি নিরাপত্তার স্বার্থে আমাদের অল্টারনেটিভও রাখতে হবে।’ তাই এলএনজি আমদানি বাড়াতে সরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে বলে জানান তিনি।
সরকারের পরিকল্পনায় দেখা যায়, বিদ্যমান দুটি এলএনজি টার্মিনালের বাইরে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল বাস্তবায়নে কাজ চলছে। সরকারের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্থনৈতিক সংকট না থাকলে চাহিদা অনুযায়ি এলএনজির যোগান নিশ্চিত করা যাবে।
এলএনজির বর্তমান সক্ষমতা
দেশে দৈনিক এক হাজার এমএমসিএফ গ্যাস সরবরাহ করার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল আছে। পেট্রোবাংলার তথ্য, ২০১৮ সালের ১৯ আগষ্ট থেকে দেশে এলএনজি আমদানি শুরু হয়। এক্সিলারেট এনার্জি দৈনিক ৫০০ এমএমসিএফ সক্ষমতার একটি ভাসমান টার্মিনাল স্থাপন করে এলএনজি আমদানি করে সরবরাহ করে। পরের বছর ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল দেশীয় কোম্পানি সামিট আরও ৫০০ এমএমসিএফডি ক্ষমতার একটি ভাসমান টার্মিনাল (এফএসআরইউ) স্থাপন করে এলএনজি সরবরাহ শুরু করে।
জ্বাালানি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১০০০ এমএমসিএফডি (মিলিয়ন ঘনফুট, দৈনিক) সরবরাহ ক্ষমতার দুটি ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল থাকলেও গড়ে ৭০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। প্রয়োজনে এখন চাইলেও বেশি এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব নয়। ফলে ভবিষৎ চাহিদার কথা বিবেচনা করে আরও দুটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের কাজ করছে সরকার।
এলএনজির নতুন প্রকল্প
সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানিকে কক্সবাজারের মহেশখালীতে আরও ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার একটি এলএনজি টার্মিনাল স্থাপনের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে পটুয়াখালির পায়রা এলাকায় এক্সিলারেট এনার্জির দৈনিক ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট সক্ষমতার আরেকটি টার্মিনাল।
এ দুটির নির্মাণ শেষ হলে দেশে মোট দুই হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমতার এলএনজি টার্মিনাল তৈরী হবে।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এক্সিালারেট এনার্জি তাদের বিদ্যমান টার্মিনাল থেকে আরও বেশি পরিমাণ এলএনজি সরবরাহের লক্ষ্যে সক্ষমতা বাড়াতে আগ্রহী। জ্বালানি বিভাগে একটি প্রস্তাব জমা দিয়েছে তারা। আর, কক্সবাজারের মাতারবাড়ি এলাকায় বিওওটি (বিল্ড, ওউন, অপারেট এন্ড ট্রান্সফার) ভিত্তিতে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ল্যান্ড বেইজড এলএনজি টার্মিনাল’ নির্মাণ করতে প্রকল্প গ্রহণ করেছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাল ২০২৪ থেকে ২০২৮ সালের মধ্যে।
ভারত থেকে পাইপলাইন
ভারত থেকে ক্রসবর্ডার পাইপলাইন স্থাপনের মাধ্যমে আরএলএনজি (রিগ্যাসিফাইড লিকুইফাইড ন্যাচারাল গ্যাস) আমদানির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে আইওসিএল (ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন) এবং এইচ-এনার্জির সাথে সমঝোতা স্বারক (এমওইউ) সই করেছে পেট্রোবাংলা। এখন গ্যাস সরবরাহ চুক্তি চূড়ান্তকরণে কাজ চলছে।
বিশেষজ্ঞ মতামত
অতিরিক্ত আমদানি নির্ভরতায় দেশে কী প্রভাব পড়বে, এই প্রশ্নে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ম. তামিম সম্প্রতি বলেন, ‘এলএনজি আমদানির জন্য আমাদের ইতোমধ্যে দুটি টার্মিনাল রয়েছে। আরও বেশ কয়েকটি তৈরী করছে সেটা ভাল। তবে বাংলাদেশের অর্থনীতি এই মূর্হতে অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এলএনজি আমদানি নির্ভর করে অর্থনৈতিক সক্ষমতার উপর, বিদেশে এলএনজির দাম কত বেশি বা কম তার উপর। অর্থ সংকটের কারণে সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও এখনই পর্যাপ্ত এলএনজি আমদানি করতে পারছে না সরকার। ফলে কেবলমাত্র আমদানি পরিকল্পনা না করে নিজেদের উৎস থেকে গ্যাসের অনুসন্ধানে জোড় দেওয়া দরকার।’
তিনি বলেন, অর্থনীতি শক্ত ভিতের উপর দাঁড়াতে না পারলে, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধানে জোড় না দিয়ে কেবল আমদানি পরিকল্পনা ভবিষতে জ্বালানি নিরাপত্তায় বিপদ ডেকে আনতে পারে।
আমদানি চুক্তি
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এলএনজি আমদানির জন্য সরকার বেশ কিছু চুক্তি করেছে। এরমধ্যে কাতারের রাস লাফফান লিকুইফায়েড ন্যাচারাল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড ও ওমানের ওকিউ ট্রেডিং (ওকিউটি) এর কাছ থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে।
কাতার এনার্জি ট্রেডিং থেকে ১৫ বছর মেয়াদে প্রতি বছর ২৪ কার্গো অর্থাৎ ১.৫ থেকে ১.৮ মিলিয়ন টন (এমটিপিএ) এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে গত বছরের জুনে চুক্তি সই হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী, ২০২৬ সাল থেকে এলএনজি আমদানি শুরু হবে। এছাড়া, ওকিউটি থেকে ১০ বছর মেয়াদে ০.২৫ এমটিপিএ থেকে ১.৫ এমটিপিএ এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে আরেকটি চুক্তি হয়েছে। ২০২৬ সাল থেকে এই এলএনজি সরবরাহ শুরু হবে।