দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পচনশীল ফসলের বহুমুখীকরণ না হওয়ায় উৎপাদিত ফসলের একটি অংশই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের ধারা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে অর্থকরী ফসল হিসেবে বসতবাড়িতে সেসব ফসলের যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলারে ওপর নজর দিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে দেশীয় উপাদানে নির্মিত ফসলের সংরক্ষণাগার বা মডেল ঘরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন আলু চাষিরা। কারণ, দেশীয় সংরক্ষণ পদ্ধতিতে আলু আর হিমাগারে রেখে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না কৃষকদের। সেই সঙ্গে তারা অন্যান্য উৎপাদিত কৃষি পণ্য যেমনÑ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ওই মডেল ঘরে।
সম্প্রতি পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এলাকায় বিভিন্ন সংরক্ষণাগারের সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাসুদ করিম। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত অক্সিজেন চলাচল করায় মডেল ঘরে আলু, কুমড়া, পেঁয়াজসহ অনেক কৃষি পণ্য অনায়াসে ছয় মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যায়। এরই মধ্যে হিমাগারের পরিবর্তে মডেল ঘর ব্যবহার করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন।’
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার টোকাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ঘর মডেল ঘর আলু রেখে এক সিজনে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি লাভ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর জমি থেকে আলু তোলার পর তা নিজস্ব উপাদানে তৈরি মডেল ঘরের সংরক্ষণাগারে রাখি। সংরক্ষিত আলু বিক্রির পর ওই মডেল ঘরে মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজসহ অন্য ফসলও সংরক্ষণ করা যায়। এই ঘর তৈরির ফলে আমরা লাভবান হচ্ছি ও আশপাশের কৃষকরাও লাববান হচ্ছেন।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ বঠি না গ্রামের এনামুল হক জানান, হিমাগারে রাখলে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হতো। তার ওপর রয়েছে বস্তার দাম ও পরিবহন খরচ, যা মডেল ঘরে লাগেনি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে এই মডেল ঘর তৈরি করে দেয়ায় কারণে আমার সাশ্রয় হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বল্পমূল্যে দেশীয় উপাদানে নির্মিত ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের একটি সংরক্ষণাগার তৈরিতে খরচ পড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা, যা নির্মাণে ব্যবহার করা হয় বাঁশ, কাঠ, টিন ও ইট। একবার কোনো কৃষক এ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে পারলে তিন বছর পরপর সামান্য খরচ করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর এটি ব্যবহার করা সম্ভব। তবে সংরক্ষণাগার নির্মাণে বসতবাড়ির কাছাকাছি উঁচু ও আংশিক ছায়াযুক্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে; যাতে স্যাঁতসেঁতে ভাব না থাকে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) ‘আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে দেশের সাত অঞ্চলের ১৭ জেলার ৭৬ উপজেলায় ৪৫০টি আলু সংরক্ষণ মডেল ঘরের ৪২২টি ঘর তৈরি সম্পন্ন হয়েছে ও হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক (ডিজি) মাসুদ করীম বলেন, ‘দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঁশ, কাঠ, টিন, ইটের গাঁথুনি ও আরসিসি পিলার দিয়ে ৪৫০টি আলু সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি মডেল ঘরকেন্দ্রিক ৩০ জন (কৃষক বিপণন দল) কৃষক সুবিধাভোগী হবেন। এভাবে ৪৫০টি কৃষক বিপণন দল গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে আলুচাষিদের বিপণন সক্ষমতা বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘১৮ হাজার ৯০০ কৃষক, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারীকে আলুর বহুমুখী ব্যবহারবিষয়ক প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। রপ্তানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সঙ্গে ৪৫০ কৃষক বিপণন দলের সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থাও থাকবে।’
সেই সঙ্গে ২১৬ জন আলু প্রক্রিয়াজাতকারী উদ্যোক্তা কে প্রসেসিং যন্ত্রপাতি দেয়ার কথাও জানান মাসুদ করীম।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে এখন কৃষকপর্যায়ে কম-বেশি ৪০ জাতের আলুর চাষ হয়। কিন্তু সারাদেশে মোট উৎপাদনের বিপরীতে হিমাগারে সংরক্ষণ সুবিধা এক তৃতীয়াংশের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত অর্থবছরে কৃষকরা রেকর্ড ১ কোটি ৪ লাখ টন আলু উৎপাদন করে।
বুধবার, ১৫ মে ২০২৪
দেশে খাদ্য উৎপাদন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পচনশীল ফসলের বহুমুখীকরণ না হওয়ায় উৎপাদিত ফসলের একটি অংশই নষ্ট হয়ে যায়। ফলে কৃষকও ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ক্রমবর্ধমান উৎপাদনের ধারা ও টেকসই কৃষি উন্নয়ন অব্যাহত রাখার স্বার্থে অর্থকরী ফসল হিসেবে বসতবাড়িতে সেসব ফসলের যথাযথ সংরক্ষণ ব্যবস্থা গড়ে তোলারে ওপর নজর দিয়েছে সরকার।
ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে দেশীয় উপাদানে নির্মিত ফসলের সংরক্ষণাগার বা মডেল ঘরের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। সবচেয়ে লাভবান হচ্ছেন আলু চাষিরা। কারণ, দেশীয় সংরক্ষণ পদ্ধতিতে আলু আর হিমাগারে রেখে বাড়তি খরচ দিতে হচ্ছে না কৃষকদের। সেই সঙ্গে তারা অন্যান্য উৎপাদিত কৃষি পণ্য যেমনÑ মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফসল সংরক্ষণ করা যাচ্ছে ওই মডেল ঘরে।
সম্প্রতি পঞ্চগড় ও ঠাকুরগাঁও এলাকায় বিভিন্ন সংরক্ষণাগারের সংরক্ষণ কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) মাসুদ করিম। তিনি বলেন, ‘পর্যাপ্ত অক্সিজেন চলাচল করায় মডেল ঘরে আলু, কুমড়া, পেঁয়াজসহ অনেক কৃষি পণ্য অনায়াসে ছয় মাসের বেশি সংরক্ষণ করা যায়। এরই মধ্যে হিমাগারের পরিবর্তে মডেল ঘর ব্যবহার করে অনেক কৃষক লাভবান হয়েছেন।’
পঞ্চগড় জেলার সদর উপজেলার টোকাপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের ঘর মডেল ঘর আলু রেখে এক সিজনে সাড়ে তিন লাখ টাকার বেশি লাভ করেছেন। তিনি বলেন, ‘এ বছর জমি থেকে আলু তোলার পর তা নিজস্ব উপাদানে তৈরি মডেল ঘরের সংরক্ষণাগারে রাখি। সংরক্ষিত আলু বিক্রির পর ওই মডেল ঘরে মিষ্টি কুমড়া, পেঁয়াজসহ অন্য ফসলও সংরক্ষণ করা যায়। এই ঘর তৈরির ফলে আমরা লাভবান হচ্ছি ও আশপাশের কৃষকরাও লাববান হচ্ছেন।’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দক্ষিণ বঠি না গ্রামের এনামুল হক জানান, হিমাগারে রাখলে বস্তাপ্রতি ৩০০ টাকা করে ভাড়া দিতে হতো। তার ওপর রয়েছে বস্তার দাম ও পরিবহন খরচ, যা মডেল ঘরে লাগেনি। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে এই মডেল ঘর তৈরি করে দেয়ায় কারণে আমার সাশ্রয় হয়েছে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বল্পমূল্যে দেশীয় উপাদানে নির্মিত ২৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৫ ফুট প্রস্থের একটি সংরক্ষণাগার তৈরিতে খরচ পড়ে প্রায় ১ লাখ টাকা, যা নির্মাণে ব্যবহার করা হয় বাঁশ, কাঠ, টিন ও ইট। একবার কোনো কৃষক এ সংরক্ষণাগার নির্মাণ করতে পারলে তিন বছর পরপর সামান্য খরচ করে প্রায় ১৫ থেকে ২০ বছর এটি ব্যবহার করা সম্ভব। তবে সংরক্ষণাগার নির্মাণে বসতবাড়ির কাছাকাছি উঁচু ও আংশিক ছায়াযুক্ত খোলা জায়গা নির্বাচন করতে হবে; যাতে স্যাঁতসেঁতে ভাব না থাকে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর (ডিএএম) ‘আলুর বহুমুখী ব্যবহার, সংরক্ষণ ও বিপণন উন্নয়ন’ শীর্ষক প্রকল্পে দেশের সাত অঞ্চলের ১৭ জেলার ৭৬ উপজেলায় ৪৫০টি আলু সংরক্ষণ মডেল ঘরের ৪২২টি ঘর তৈরি সম্পন্ন হয়েছে ও হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রকল্পটি ২০২৬ সালের জুন মাসে শেষ হবে
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহা পরিচালক (ডিজি) মাসুদ করীম বলেন, ‘দেশীয় প্রযুক্তিতে বাঁশ, কাঠ, টিন, ইটের গাঁথুনি ও আরসিসি পিলার দিয়ে ৪৫০টি আলু সংরক্ষণের মডেল ঘর নির্মাণ করা হবে। প্রতিটি মডেল ঘরকেন্দ্রিক ৩০ জন (কৃষক বিপণন দল) কৃষক সুবিধাভোগী হবেন। এভাবে ৪৫০টি কৃষক বিপণন দল গঠন করা হবে। এর মাধ্যমে আলুচাষিদের বিপণন সক্ষমতা বাড়বে।’
তিনি বলেন, ‘১৮ হাজার ৯০০ কৃষক, কৃষি ব্যবসায়ী, কৃষি উদ্যোক্তা ও কৃষি প্রক্রিয়াজাতকারীকে আলুর বহুমুখী ব্যবহারবিষয়ক প্রশিক্ষণও দেয়া হবে। রপ্তানিকারক ও প্রক্রিয়াজাতকারীদের সঙ্গে ৪৫০ কৃষক বিপণন দলের সংযোগ স্থাপনের ব্যবস্থাও থাকবে।’
সেই সঙ্গে ২১৬ জন আলু প্রক্রিয়াজাতকারী উদ্যোক্তা কে প্রসেসিং যন্ত্রপাতি দেয়ার কথাও জানান মাসুদ করীম।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে এখন কৃষকপর্যায়ে কম-বেশি ৪০ জাতের আলুর চাষ হয়। কিন্তু সারাদেশে মোট উৎপাদনের বিপরীতে হিমাগারে সংরক্ষণ সুবিধা এক তৃতীয়াংশের। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, গত অর্থবছরে কৃষকরা রেকর্ড ১ কোটি ৪ লাখ টন আলু উৎপাদন করে।