বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
‘গণতন্ত্রের অবনতি ও উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার’ কারণ দেখিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপ জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।’
এই বিষয়ে আজিজ আহমেদ বা বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পায়নি সংবাদ।
আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের ২৫শে জুন বাংলাদেশে চিফ অফ আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন। তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ২৪শে জুন তিনি অবসরে যান। এর আগে তিনি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী — বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি ‘অবৈধভাবে দেয়ার জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ’ করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান।
তাছাড়া, তার ভাইয়ের ‘অপরাধ সত্ত্বেও তাকে বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন’ বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমকে নানাভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের সামর্থ্য বাড়াতে সহযোগিতা।
সাবেক সেনাপ্রধানের চার ভাই। তার ভাইদের নাম আনিস আহমেদ, হারিছ আহমেদ, টিপু আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ।
আনিস, হারিস ও জোসেফ খুনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।
আনিস ও হারিস ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, জোসেফকে দেয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড।
আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার একমাস আগে ২০১৮ সালের ২৭ মে তোফায়েল আহমেদ জোসেফের সাজা মওকুফ করা হয়।
আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আনিস ও হারিসের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তখন জানিয়েছিলেন যে, নিয়ম মেনেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই আনিস আহমেদ ও হারিছ আহমেদের সাজা 'মওকুফ' করা হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল। তখন সেনা সদর এবং সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা’ ও ‘অপপ্রচার’ বলে জানিয়েছিলো।
আজিজ আহমেদও সে সময় বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে, যাতে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর ঢাকা সফরের সময়ও নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু লু ফিরে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানান, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করছে না।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে তারা ভিসানীতি কার্যকর করেছে। অর্থাৎ অনেকেই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।
কতজন ব্যক্তি বা কাদের ক্ষেত্রে ওই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা কখনও জানায়নি যুক্তরাষ্টের। তবে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ও অন্য কর্মকর্তারা বরাবরই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন এর আওতায়। আর সেসময় যুক্তরাষ্টট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো তারা কখনও কারও নাম প্রকাশ করেন না।
মঙ্গলবার, ২১ মে ২০২৪
বাংলাদেশের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
সোমবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নিষেধাজ্ঞার ফলে আজিজ আহমেদ এবং তার পরিবারের সদস্যরা সাধারণভাবে ‘যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অযোগ্য’ বিবেচিত হবেন।
‘গণতন্ত্রের অবনতি ও উল্লেখযোগ্য দুর্নীতিতে জড়িত থাকার’ কারণ দেখিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব স্টেট, ফরেন অপারেশন অ্যান্ড রিলেটেড প্রোগ্রামস অ্যাপ্রোপ্রিয়েশনস অ্যাক্টের ৭০৩১ (সি) ধারার আওতায় এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে বলে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘তার কর্মকাণ্ড বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়ার ওপ জনগণের বিশ্বাসকে ক্ষুণ্ন করতে ভূমিকা রেখেছে।’
এই বিষয়ে আজিজ আহমেদ বা বাংলাদেশ সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া এখনও পায়নি সংবাদ।
আজিজ আহমেদ ২০১৮ সালের ২৫শে জুন বাংলাদেশে চিফ অফ আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন। তিন বছর দায়িত্ব পালন শেষে ২০২১ সালের ২৪শে জুন তিনি অবসরে যান। এর আগে তিনি বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী — বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন।
আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, সামরিক বাহিনীর ঠিকাদারি ‘অবৈধভাবে দেয়ার জন্য তার ভাইয়ের সঙ্গে যোগসাজশ’ করেছেন সাবেক সেনাপ্রধান।
তাছাড়া, তার ভাইয়ের ‘অপরাধ সত্ত্বেও তাকে বাঁচাতে দুর্নীতির আশ্রয় নেন’ বলে দাবি করেছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর।
বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশের দুর্নীতি বিরোধী কার্যক্রমকে নানাভাবে সমর্থন ও সহায়তা দিয়ে থাকে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে রয়েছে, সরকারি সেবায় স্বচ্ছতা ও সহজলভ্যতা, ব্যবসায়িক পরিবেশের উন্নতি সাধন এবং মুদ্রা পাচারসহ অন্যান্য অর্থনৈতিক অপরাধের তদন্ত ও বিচার নিশ্চিতের সামর্থ্য বাড়াতে সহযোগিতা।
সাবেক সেনাপ্রধানের চার ভাই। তার ভাইদের নাম আনিস আহমেদ, হারিছ আহমেদ, টিপু আহমেদ, তোফায়েল আহমেদ জোসেফ।
আনিস, হারিস ও জোসেফ খুনের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন।
আনিস ও হারিস ছিলেন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত, জোসেফকে দেয়া হয়েছিল মৃত্যুদণ্ড।
আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার একমাস আগে ২০১৮ সালের ২৭ মে তোফায়েল আহমেদ জোসেফের সাজা মওকুফ করা হয়।
আজিজ আহমেদ সেনাপ্রধান হওয়ার পর ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ আনিস ও হারিসের সাজা মওকুফের প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান তখন জানিয়েছিলেন যে, নিয়ম মেনেই সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই আনিস আহমেদ ও হারিছ আহমেদের সাজা 'মওকুফ' করা হয়েছে।
২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে এক প্রতিবেদনে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরা সেনাপ্রধান আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতসহ বিভিন্ন অভিযোগ এনেছিল। তখন সেনা সদর এবং সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিবৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনকে ‘মিথ্যা’ ও ‘অপপ্রচার’ বলে জানিয়েছিলো।
আজিজ আহমেদও সে সময় বলেছিলেন, সেনাবাহিনীকে নিয়ে নানা ধরনের ‘অপপ্রচার’ চালানো হচ্ছে, যাতে ‘বিভ্রান্তি’ সৃষ্টি হয়।
২০২১ সালের ডিসেম্বরে ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র্যাব এবং এর সাবেক-বর্তমান সাত কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সাড়া মেলেনি। চলতি মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডনাল্ড লুর ঢাকা সফরের সময়ও নিষেধাজ্ঞা তোলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু লু ফিরে যাওয়ার পর মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মুখ্য উপ-মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল জানান, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা যুক্তরাষ্ট্র প্রত্যাহার করছে না।
দশম সংসদ নির্বাচনের আগে গতবছর যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচন প্রক্রিয়াকে ‘বাধাগ্রস্ত’ করে এমন কর্মকাণ্ডে জড়িতদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ বন্ধ করতে তারা ভিসানীতি কার্যকর করেছে। অর্থাৎ অনেকেই ভিসা নিষেধাজ্ঞার আওতায় আসতে পারে।
কতজন ব্যক্তি বা কাদের ক্ষেত্রে ওই ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে তা কখনও জানায়নি যুক্তরাষ্টের। তবে দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার ও অন্য কর্মকর্তারা বরাবরই বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ক্ষমতাসীন ও বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীরা রয়েছেন এর আওতায়। আর সেসময় যুক্তরাষ্টট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো তারা কখনও কারও নাম প্রকাশ করেন না।