সরকারের পদত্যাগের একদফা ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই দাবিতে আজ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগেরও ডাক দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ‘গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারও মানুষের সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বানের পর এই ঘোষণা আসলো সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা এই ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে।
শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাহিদ বলেন, ‘নাগরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে যেখানে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা হবে যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।’
‘এ লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি আগামীকাল সব জেলা, উপজেলা, পাড়ায়, মহল্লায় বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে,’ বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় সরকারের নেতৃত্বে সব খুনের বিচার এবং সব রাজবন্দীকে মুক্ত করা হবে। সর্বস্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রূপরেখা হাজির করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব।’
সব ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে হল খোলা না হলে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্ব হল খুলে প্রবেশ করবে।’
শহীদ মিনারে সামনের সারিতে নাহিদ ইসলাম এবং আরও অন্তত পাঁচজন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেনÑ সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের। নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে একদফা ঘোষণাপত্র গণমাধ্যমে পাঠান আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন। সেখানে গত কয়েকদিনের ঘটনার উল্লেখ করে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ‘গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবির কথা জানানো হয়।
জনগণকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে শনিবার নাহিদ বলেন, ‘এই খুনি সরকারকে কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দেয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৯ দফা এখন একদফায় পরিণত হয়েছে। সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামীকাল আমরা অসহযোগ আন্দোলন করব। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মমূচি পালিত হবে। শুধু শেখ হাসিনা নন, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। তারপর সংঘর্ষ ও সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক মানুষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় একত্র হয়েছেন হাজার, হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়ও শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ সমবেত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে শনিবার কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগের কথা জানা যায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন দলের পক্ষ থেকে তিনজনকেÑ দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফকে- আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আর আলোচনার ‘সুযোগ নেই, সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে’।
অসহযোগ আন্দোলনের যে রূপরেখা দিলো ছাত্ররা
সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে, তার রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে জরুরি সেবা ছাড়া সব ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘাত সরকারি হিসাবে দেড়শ’ মানুষের মৃত্যুর পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবারই কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন আজ থেকে অসহযোগের ডাক দেয়। তবে এই কর্মসূচির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
সংঘর্ষের সময় ছাত্র জনতা হত্যার বিচার ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে এই সিদ্ধান্তের পরই স্পষ্ট হয় সংগঠনটি সরকার পতনের দাবি জানাতে যাচ্ছে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে সেই দাবিই তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এখন আর ৯ দফা নেই, তাদের দাবি এক দফা।
এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন
* কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।
* বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।
* সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
* প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না।
* সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।
* বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।
* দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না!
* গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।
* জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।
* পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু মাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।
* দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
* বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।
* আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।
* বিলাস দ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
সমাবেশে আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছি। এই ‘খুনি সরকারকে’ কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না।
‘যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ জরুরি অবস্থা দেয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকারি যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম আপনারা মানবেন না।
‘আমরা এই বাংলার মাটিতে সকল ‘গণহত্যার’ বিচার করব। আমরা সরকার এবং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করছি। এর জন্য ছাত্র নাগরিকের অভ্যুত্থান আহ্বান করছি।’
রোববার, ০৪ আগস্ট ২০২৪
সরকারের পদত্যাগের একদফা ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই দাবিতে আজ থেকে সর্বাত্মক অসহযোগেরও ডাক দেয়া হয়েছে। একই সঙ্গে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ‘গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
শনিবার (৩ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে হাজারও মানুষের সমাবেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া সংগঠনটির সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এ ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বানের পর এই ঘোষণা আসলো সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা এই ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে।
শহীদ মিনারে সমবেত ছাত্র-জনতার উদ্দেশে নাহিদ বলেন, ‘নাগরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে একটি নতুন বাংলাদেশ গঠন করা হবে যেখানে সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করা হবে যাতে বাংলাদেশে আর কখনোই স্বৈরতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসতে না পারে।’
‘এ লক্ষ্যে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন চলবে। পাশাপাশি আগামীকাল সব জেলা, উপজেলা, পাড়ায়, মহল্লায় বিক্ষোভ ও গণঅবস্থান কর্মসূচি পালিত হবে,’ বলেন তিনি।
নাহিদ বলেন, ‘জাতীয় সরকারের নেতৃত্বে সব খুনের বিচার এবং সব রাজবন্দীকে মুক্ত করা হবে। সর্বস্তরের নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করে শীঘ্রই ক্ষমতা হস্তান্তরের জাতীয় রূপরেখা হাজির করা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ও দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সর্বস্তরের নাগরিকদের নিয়ে জাতীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হবে।’
নাহিদ আরও বলেন, ‘এই ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ করতে হবে। সবার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জাতীয় রূপরেখা আমরা সবার সামনে হাজির করব।’
সব ক্যাম্পাস ও হল খুলে দেয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে নাহিদ বলেন, ‘আগামীকালের মধ্যে হল খোলা না হলে শিক্ষার্থীরা নিজ দায়িত্ব হল খুলে প্রবেশ করবে।’
শহীদ মিনারে সামনের সারিতে নাহিদ ইসলাম এবং আরও অন্তত পাঁচজন সমন্বয়ক উপস্থিত ছিলেন। তারা হলেনÑ সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আসিফ মাহমুদ, আবু বাকের মজুমদার ও আবদুল কাদের। নাহিদসহ তিনজন বক্তব্য দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে একদফা ঘোষণাপত্র গণমাধ্যমে পাঠান আন্দোলনের সহসমন্বয়ক মো. মহিউদ্দিন। সেখানে গত কয়েকদিনের ঘটনার উল্লেখ করে ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তির নেতৃত্বে একটি ‘গ্রহণযোগ্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক জাতীয় সরকার’ গঠনের দাবির কথা জানানো হয়।
জনগণকে ‘সর্বাত্মক অসহযোগ’ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানিয়ে শনিবার নাহিদ বলেন, ‘এই খুনি সরকারকে কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না। যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ বা জরুরি অবস্থা দেয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের ৯ দফা এখন একদফায় পরিণত হয়েছে। সরকার পতনের একদফা দাবিতে আগামীকাল আমরা অসহযোগ আন্দোলন করব। পাশাপাশি দেশের সর্বত্র বিক্ষোভ ও অবস্থান কর্মমূচি পালিত হবে। শুধু শেখ হাসিনা নন, মন্ত্রিসভাসহ পুরো সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে।’
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই থেকে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা। সেই আন্দোলনের এক পর্যায়ে ১৬ জুলাই সংঘর্ষে ৬ জনের মৃত্যু হয়। তারপর সংঘর্ষ ও সংঘাতে এখন পর্যন্ত দুই শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অনেক মানুষ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শনিবার সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিল কর্মসূচি পালন করে। শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শহীদ মিনার এলাকায় একত্র হয়েছেন হাজার, হাজার শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ঢাকার বিভিন্ন জায়গায়ও শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ সমবেত হয়েছেন। ঢাকার বাইরে শনিবার কয়েকটি জেলায় সংঘর্ষ হয়েছে। বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে।
এর আগে শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের সঙ্গে আলোচনায় বসার উদ্যোগের কথা জানা যায় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে।
আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন দলের পক্ষ থেকে তিনজনকেÑ দলের সভাপতিম-লীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং দুই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাসিম ও মাহবুব উল আলম হানিফকে- আলোচনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আর আলোচনার ‘সুযোগ নেই, সিদ্ধান্ত আসবে রাজপথ থেকে’।
অসহযোগ আন্দোলনের যে রূপরেখা দিলো ছাত্ররা
সরকার পতনের একদফা দাবিতে আজ রোববার থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য সর্বাত্মক যে অসহযোগ আন্দোলনের ঘোষণা এসেছে, তার রূপরেখা কী হবে সে বিষয়ে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এই কর্মসূচিতে জরুরি সেবা ছাড়া সব ক্ষেত্রে সরকারকে অসহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন আন্দোলনের সমন্বয়করা।
শনিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিক্ষোভ সমাবেশের অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরেন আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মধ্যে গত ১৮ থেকে ২১ জুলাই সংঘাত সরকারি হিসাবে দেড়শ’ মানুষের মৃত্যুর পর উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শুক্রবারই কোটা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সংগঠন বৈষম্যমূলক ছাত্র আন্দোলন আজ থেকে অসহযোগের ডাক দেয়। তবে এই কর্মসূচির বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি।
সংঘর্ষের সময় ছাত্র জনতা হত্যার বিচার ও শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার দাবিতে ধারাবাহিক কর্মসূচির মধ্যে এই সিদ্ধান্তের পরই স্পষ্ট হয় সংগঠনটি সরকার পতনের দাবি জানাতে যাচ্ছে। শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে সেই দাবিই তুলে ধরা হয়। বলা হয়, এখন আর ৯ দফা নেই, তাদের দাবি এক দফা।
এই সমাবেশেই অসহযোগ আন্দোলনের রূপরেখা তুলে ধরা হয়।
আসিফ মাহমুদ বলেন
* কেউ কোনো ধরনের ট্যাক্স বা খাজনা প্রদান করবেন না।
* বিদ্যুৎ বিল, গ্যাস বিল, পানির বিলসহ কোনো ধরনের বিল পরিশোধ করবেন না।
* সব ধরনের সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত ও কল কারখানা বন্ধ থাকবে। আপনারা কেউ অফিসে যাবেন না, মাস শেষে বেতন তুলবেন।
* শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
* প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে কোনো ধরনের রেমিট্যান্স দেশে পাঠাবেন না।
* সব ধরনের সরকারি সভা, সেমিনার, আয়োজন বর্জন করবেন।
* বন্দরের কর্মীরা কাজে যোগ দেবেন না। কোনো ধরনের পণ্য খালাস করবেন না।
* দেশের কোনো কলকারখানা চলবে না, গার্মেন্টকর্মী ভাই বোনেরা কাজে যাবেন না!
* গণপরিবহন বন্ধ থাকবে, শ্রমিকরা কেউ কাজে যাবেন না।
* জরুরি ব্যক্তিগত লেনদেনের জন্য প্রতি সপ্তাহের রোববারে ব্যাংকগুলো খোলা থাকবে।
* পুলিশ সদস্যরা রুটিন ডিউটি ব্যতীত কোনো ধরনের প্রটোকল ডিউটি, রায়ট ডিউটি ও প্রটেস্ট ডিউটিতে যাবেন না। শুধু মাত্র থানা পুলিশ নিয়মিত থানার রুটিন ওয়ার্ক করবে।
* দেশ থেকে যেন একটি টাকাও পাচার না হয়, সব অফশোর ট্রানজেকশন বন্ধ থাকবে।
* বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যতীত অন্যান্য বাহিনী সেনানিবাসের বাইরে ডিউটি পালন করবে না। বিজিবি ও নৌবাহিনী ব্যারাক ও কোস্টাল এলাকায় থাকবে।
* আমলারা সচিবালয়ে যাবেন না, ডিসি বা উপজেলা কর্মকর্তারা নিজ নিজ কার্যালয়ে যাবেন না।
* বিলাস দ্রব্যের দোকান, শোরুম, বিপণি-বিতান, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
তবে হাসপাতাল, ফার্মেসি, ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পরিবহন, অ্যাম্বুলেন্স সেবা, ফায়ার সার্ভিস, গণমাধ্যম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহন, জরুরি ইন্টারনেট সেবা, জরুরি ত্রাণ সহায়তা এবং এই খাতে কর্তব্যরত কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবহন সেবা চালু থাকবে।
নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকান বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বলে জানান আসিফ মাহমুদ।
সমাবেশে আরেক সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা জনগণকে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনে নামার আহ্বান জানাচ্ছি। এই ‘খুনি সরকারকে’ কোনোভাবে আর সমর্থন দেবেন না।
‘যদি কোনোভাবে ইন্টারনেট বন্ধ করা হয়, কোনোভাবে কারফিউ জরুরি অবস্থা দেয়া হয়, আমরা বলে দিচ্ছি প্রয়োজনে গণভবন ঘেরাও করে শেখ হাসিনাকে উৎখাত করা হবে।’
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘নিরাপত্তা বাহিনী, সেনাবাহিনীসহ সরকারি কর্মকর্তা সবার কাছে আহ্বান থাকবে, জনগণ যদি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করে, সরকারি যদি জনগণের বিপক্ষে দাঁড়ায়, সেই সরকারের হুকুম আপনারা মানবেন না।
‘আমরা এই বাংলার মাটিতে সকল ‘গণহত্যার’ বিচার করব। আমরা সরকার এবং ফ্যাসিবাদী শাসনব্যবস্থার বিলোপ ঘোষণা করছি। এর জন্য ছাত্র নাগরিকের অভ্যুত্থান আহ্বান করছি।’